মাগো তুমি ভালো থেকো : দেবাশীষ বিশ্বাস


প্রকাশিত: ০৬:২৬ এএম, ১৪ মে ২০১৭

সারা বছরই ব্যস্ত থাকেন চলচ্চিত্র নির্মাতা দেবাশীষ বিশ্বাস। চলচ্চিত্র নির্মাণ, উপস্থাপনা কিংবা অন্য কোনো ক্ষেত্র- ব্যস্ততা থেকে তার মুক্তি নেই। এরপরও মা দিবসে শ্বশুর বাড়ি জিন্দাবাদ ছবির এই নির্মাতা সময় নিয়ে, সময় খুঁজে সঙ্গ দেন মাকে। মায়ের সঙ্গে রান্না, ঘোরাঘুরি কিংবা না জানিয়ে কোনো অনন্য উপহার দিয়ে মাকে চমকেও দেন।

বিশ্ব মা দিবস উপলক্ষে জনপ্রিয় এই নির্মাতা নিজের ফেসবুকে তার মা গায়েত্রী বিশ্বাসকে নিয়ে আবেগঘন একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস পোস্ট করেন। স্ট্যাটাসে মায়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসা আছড়ে পড়েছে। মা দিবসে জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য লেখাটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

আমি লিখি ভালো, লেখা বের হয় অবলীলায়, কিন্তু ‘মা’- তোমার সম্পর্কে কিছু লিখবো লিখবো করে কিছুই লিখতে পারছিলাম না। আসলে সাহস হচ্ছিল না। কি লিখবো আমি? কোথা থেকে শুরু করবো? আমার পৃথিবীর শুরুও তো তোমাকে দিয়েই। ‘অ’, ‘আ’- এর হাতেখড়িও তোমার কাছেই। অথচ এই বর্ণমালা দিয়ে শব্দ বানিয়ে বাক্য সাজাবো, সেটা কেন জানি হয়ে উঠছিলো না। তবে আজ হলো। হয়তো আজ তোমার দিবস তাই।

‘মা’- তুমি মানেই নিশ্চয়তা, তুমি মানেই নিরাপত্তা, তুমি মানেই অস্তিত্ব, তুমি মানেই আশ্রয়।

ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি মাছ খেতে ভালোবাসি বলে খাবার সময় মাছের সবচেয়ে বড় টুকরোটা কেমন করে জানি আমার পাত্রেই চলে আসতো। বাবার যখন অল্প উপার্জন ছিল, তখন নিজের জন্য শাড়ি, গয়নার কথা কখনোই চিন্তা না করে আমার জন্য ভেবেছো, সংসারের জন্য ভেবেছো। বই পড়তে ভালোবাসতাম বলে অন্য কিছু কেনার আগে আমার জন্য বই কেনা তোমার চাই-ই-চাই।

‘লিমকা’ নামের একটি কোমল পানীয় যেটি বাংলাদেশে পাওয়া যায় না, সেটি খেতে ভীষণ ভালোবাসি বলে, ভারতবর্ষ থেকে বাইরোডে সারা রাস্তা কষ্টকর ভ্রমণের সময় ২ লিটারের ভরা বোতলের ওজন তোমার কাছে কোনো ভারই মনে হয়নি কখনো।

পূজোর সময় তোমার কপালে নতুন শাড়ি জুটুক না জুটুক, আমার যেন পূজোর প্রতিটা দিন অর্থ্যাৎ সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী আর বিজয়া দশমীতে আলাদা আলাদা নতুন জামা জোটে; সেটার খেয়ালেই বিভোর ছিলে সারাজীবন।

বড় হবার পর জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাতে পিষ্ট হয়ে যখন এক পর্যায়ে মৃত্যুর কাছাকাছি চলে গিয়েছিলাম, সেখান থেকেও তোমার মাতৃশক্তিতে দ্বিতীয় জীবন পেয়েছি আমি। সব মা-তো সন্তানকে একবার জীবন দান করে। তুমি দিয়েছো দু’বার!

মাঝে মাঝে মনে হয়, কি করতে পেরেছি তোমার জন্যে? সারাজীবন গরম ঠান্ডা উপেক্ষা করে রান্নাঘরের উনুনের তপ্ত আগুনে আমার জন্য তোমার মুখ পোড়ানোর বিনিময়ে আমি পেয়েছি পেট পুড়ে সুস্বাদু খাবার আস্বাদনের আনন্দ। বিপরীতে আমি কি দিয়েছি তোমায়?

তোমার মতো মা পেয়ে আমার মতো সৌভাগ্যবান আর ক’জন আছে, বলতে পারো?

মা- তুমি আমার এমন একটা ব্যাংক যেখানে আমি আমার সব যন্ত্রণা, কষ্ট, অভিমান কোন ভ্যাট ছাড়াই জমা রাখতে পারি, আর বিনিময়ে ইন্টারেস্ট হিসেবে পাই সাহস, ভালোবাসা আর বেঁচে থাকার সুখ। মা-গো তুমি ভালো থেকো। তোমার কোলে জন্মেছি, তোমার কোলেই যেন আমার মৃত্যু হয়।

এনই/এইচএন/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।