ভারতের তিন নায়ক ঠেকাতে চান শাকিব খান!

বিনোদন ডেস্ক
বিনোদন ডেস্ক বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:৪৪ এএম, ০৩ মে ২০১৭

এখনও শুরু হয়নি রমজান মাস, ঈদের তো মেলা বাকি। তবে এরইমধ্যে শুরু হয়ে গেছে ঈদের চলচ্চিত্র নিয়ে আলোচনা। হল মালিকরা হিসেব কষছেন কার কোন ছবি দিয়ে ঘরে তুলবেন ঈদের চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর মুনাফা। ব্যস্ত রয়েছেন বুকিং এজেন্টরাও হিসেব নিকেষের খাতায়। ঈদের চলচ্চিত্রের সেই সোনালী ব্যবসায়ের দিন আর নেই। তবে ধীরে ধীরে আবাওর ঘুরছে বাজার। চাঙা হচ্ছে ইন্ডাস্ট্রি।

এখন পর্যন্ত খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গেল দুই বছরের তুলনায় এবার ঈদে সর্বাধিক চলচ্চিত্র মুক্তি পেতে যাচ্ছে। সেই তালিকায় বরাবরের মতো রয়েছে ঢালিউডের আলোচিত-সমালোচিত চিত্রনায়ক শাকিব খান। মজার ব্যাপার হলো, শাকিবকে এবার ঈদের বাজারে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই করতে হবে ভারতের তিন নায়কের সঙ্গে। তারা হলেন জিৎ, ওম ও বনি।

তবে ঈদে শাকিবের প্রতিদ্বন্দ্বীতায় থাকছেন না দেশের কোনো নায়ক। এই বিষয়টিকে দেশীয় ইন্ডাস্ট্রির জন্য অশনি সংকেত হিসেবে দেখছেন চলচ্চিত্রবোদ্ধারা। তাদের দাবি, দেশীয় প্রযোজকদের উচিত ঈদের বাজারে শাকিবের পরের প্রজন্মের নায়কদের নিয়ে আসা। ঈদের সময় সাধারণত সব ছবিই ব্যবসা করে থাকে। তাই ঝুঁকিও কম। পুরো বাজারটি শাকিবের উপর ছেড়ে না দিয়ে অন্য নায়কদেরকে দিয়েও এক্সপেরিমেন্ট করা প্রয়োজন। এক শাকিব তো চিরকাল ইন্ডাস্ট্রিতে থাকবেন না। তবে তার বিকল্প কেন ভাবছেন না প্রযোজক ও নির্মাতারা?

কেউ কেউ হল মালিকরা ঈদে শাকিবের ছবি ছাড়া অন্য ছবি চালাতে চায় না বলে অজুহাত দিলেও চলচ্চিত্রবোদ্ধারা বলছেন, ‘এটা মিথ্যে গুজব বলা যেতে পারে। ভালো ও আলোচিত ছবি হলে হল মালিকরা যে কোনো নায়কের ছবিই চালাতে আগ্রহী হবে। সাইমন-বাপ্পীরা এরইমধ্যে নিজেদের সামর্থ্য প্রমাণ করেছেন। গেল দুই বছরে শাকিবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিযোগিতা করেছে তারা। কিছু কিছু ছবি দিয়ে শাকিবকে ছাড়িয়েও গেছে। তাই এখানে ইচ্ছেশক্তিটাকেই বড় করে দেখতে চাইছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে কাকরাইল পাড়ায় ঘুরে জানা গেছে, ঈদে মুক্তি পাবার কথা থাকলেও পিছিয়ে গেছে শাকিব-বুবলীর ‘অহংকার’ ছবিটি। তাই পাঁচটির সুযোগ থাকলেও আসছে ঈদে কলকাতার তিন তারকার ‘বস ২’, ‘পাষাণ’ ও ‘মনে রেখো’ ছবির বিপরীতে শাকিব খানের চারটি ছবিই মুক্তি পাচ্ছে। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম বুলবুল বিশ্বাস পরিচালিত একক প্রযোজনার একমাত্র ছবি ‘রাজনীতি’। বাকি ‘নবাব’, ‘রংবাজ’ ও নাম ঠিক না হওয়া তিনটিই সিনেমাই নির্মিত হয়েছে যৌথ প্রযোজনায়। তারমধ্যে ‘নবাব’র প্রযোজনায় রয়েছে বাংলাদেশের জাজ মাল্টিমিডিয়া ও কলকাতার এসকে মুভিজ। অন্যদুটির কলকাতার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আছে ভেঙ্কটেশ ফিল্মস লিমিটেড।

এই চারটি ছবিতে শাকিবের নায়িকা পাঁচজন। তারমধ্যে ‘রাজনীতি’ ছবিতে থাকছেন শাকিবের স্ত্রী অপু বিশ্বাস। আর শামীম আহমেদ রনির (পরিচালক পরিবর্তন হতে পারে) ‘রংবাজ’ ছবিতে দেখা যাবে জনপ্রিয় নায়িকা বুবলীকে। এবং কলকাতার নির্মাতা কলকাতার জয়দেব মুখার্জি ও বাংলাদেশের আবদুল আজিজ পরিচালিত ‘নবাব’ ছবিতে শাকিবের নায়িকা হয়ে প্রথমবার হাজির হচ্ছেন শুভশ্রী। ভেঙ্কটেশের নাম ঠিক না হওয়া ছবিতে খান সাহেবের দুই নায়িকা হলেন নুসরাত ও সায়ন্তিকা। এই দুজনের সঙ্গেও প্রথমবারের মত কাজ করলেন শাকিব। এটি পরিচালনা করেছেন ওপার বাংলার নির্মাতা রাজীব বিশ্বাস।

অন্যদিকে আসছে রোজা ঈদে কলকাতার সুপারস্টার জিৎ হাজির হবেন বাবা যাদবের ‘বস ২’ ছবি নিয়ে। জাজ ও এসকে মুভিজের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ছবিটি একযোগে মুক্তি পাবে দুই বাংলার প্রেক্ষাগৃহেই। এই ছবিতে জিতের নায়িকা হিসেবে আছেন বাংলাদেশের নুসরাত ফারিয়া ও শুভশ্রী।

বাংলাদেশের সৈকত নাসির পরিচালিত ‘পাষাণ’ নামের ছবিটিও ঈদে মুক্তি পাবে বলে শোনা যাচ্ছে। এতে জুটি বেঁধে প্রথমবারের মতো দর্শকের সামনে আসছেন দুই বাংলার দুই তারকা ওম ও বিদ্যা সিনহা মিম। একইসঙ্গে ওয়াজেদ আলী সুমনও শামিল হবে ঈদ ধামাকায়, নতুন চমক নিয়ে। তিনি কলকাতার তরুণ সুপারস্টার বনি ও ঢালিউডের শীর্ষ নায়িকা মাহিয়া মাহিকে নিয়ে নির্মাণ করছেন ‘মনে রেখো’ নামের একটি প্রেমের ছবি।

চার নায়কের সাতটি ছবির মধ্যে একমাত্র ‘রাজনীতি’রই শুটিং ও ডাবিং শেষ হয়েছে। পেয়ে গেছে সেন্সর ছাড়পত্রও। ছবিটি এখন মুক্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাকি ছয়টি ছবিই রয়েছে নির্মাণাধীন। তাই চলছে তাড়াহুড়ো। ১৫ রোজার আগেই সবকয়টি ছবি সেন্সরে জমা পড়বে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

বিগ বাজেট ও বড় তারকাদের সাতটি ছবিতে জমজমাট হয়ে উঠবে ঈদের লড়াই, সেটা অনুমান করা যাচ্ছে। তবে চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টরা আপাতত এগিয়ে রাখছেন শাকিবের ‘রাজনীতি’কে। গেল কোরবানী জিৎ-শাকিব প্রথমবার মুখোমুখি হয়েছিলেন ঈদের বাজারে। সেখানে জিৎ তার ‘বাদশা’ দিয়ে পেছনে ফেলেছিলেন শাকিবের ‘শিকারী’কে। তবে এবার আর সেই সুযোগ পাবেন না বলেই ধারণা।

সম্প্রতি শাকিব-অপুর বিয়ের খবরে তোলপাড় হয়ে গেছে ঢাকাই ছবিতে। এখনও সব আলোচনার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে সর্বাধিক ছবিতে জুটি হিসেবে অভিনয় করা দ্বিতীয় স্থানে থাকা শাকিব-অপু। এক অনুষ্ঠানে শাকিব ঘোষণা দিয়েছেন অপুকে নিয়ে তিনি আর ছবি করবেন না। সে প্রেক্ষিতে বলা যায়, ‘রাজনীতি’ হবে শাকিব-অপুর শেষ ছবি। স্বাভাবিকভাবেই এই ছবি থাকবে সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। তাই ‘রাজনীতি’র সামনে জিৎ, ওম ও বনিকে কঠিন প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হবে।

এর বাইরে বলা যায় আলোচনা ও ছবির গল্প-নির্মাণে ঈদের ব্যবসায় এগিয়ে থাকবেন জিৎ তার ‘বস ২’ নিয়ে। এটি জিতের সুপারহিট ছবি ‘বস’র সিক্যুয়েল। এরপরের সারিতে যথাক্রমে শাকিবের ‘নবাব’, বনির ‘মনে রেখো’, শাকিবের ‘রংবাজ’ ও ওমের ‘পাষাণ’ ছবির ঠাঁই হবে বলে আশা করা যায়।

যার অবস্থান যাই হোক, রোজা ঈদ যে জমে উঠবে সুপারস্টারদের মহারণে সেটা এখনই আঁচ করা যাচ্ছে। এই রণে দিনশেষে লাভবান হোক ঢাকাই ছবি ও দেশের হল মালিকরা সেটাই সবার প্রত্যাশা। এবং ধারাবাহিক হোক বড় বাজেটে চমৎকার গল্প ‍ও নির্মাণের মুন্সিয়ানায় সমৃদ্ধ সব চলচ্চিত্র। আগামীতে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে শামিল হোক সাইমন, বাপ্পীসহ বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় সব তারাকরা।

এলএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।