আমি বঙ্গবন্ধুর দেশের লোক, কাপুরুষ নই : শাকিব খান


প্রকাশিত: ১০:১৪ এএম, ২৩ এপ্রিল ২০১৭
ছবি : লয়েড তুহিন হালদার

শাকিব খান। ঢালিউডের সুপারস্টার তিনি। গেল কয়েক বছর ধরেই প্রায় একাই টেনে নিয়ে যাচ্ছেন মূল ধারার চলচ্চিত্রশিল্পকে। সম্প্রতি বেশ কিছু বিষয়ে তিনি আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছেন। সবকিছুর পরও বর্তমানে ব্যস্ত আছেন নতুন ছবি ‘রংবাজ’র শুটিং নিয়ে। তবে অভিনয়ে তিনি মন দিতে পারছেন না। বারবার মনোসংযোগ বিচ্ছিন্ন হচ্ছে এফডিসি ও চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির নানা ভাবনায়। জাগো নিউজকে মুঠোফোনে তাই জানালেন শাকিব। বললেন অনেক কথা। লিখেছেন লিমন আহমেদ

জাগো নিউজ : কেমন আছেন?
শাকিব খান : ভালো আর থাকা যাচ্ছে কই। আমি শিল্পী সমিতির বর্তমান প্রেসিডেন্ট। এফডিসিতে পুলিশ ও ডিবি কেন, সেই জবাবদিহিতা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি। সব সিনিয়র শিল্পী আমাকে ফোন দিয়ে এটা জানতে চাইছেন। কী জবাব দেব আমি। ভাবতেই পারছি না দিনে দিনে কোথায় গিয়ে ঠেকছি আমরা। আজকাল এফডিসির ভেতরে পুলিশ দেখতে হচ্ছে!

জাগো নিউজ : আপনি তো গেল শুক্রবার (২২ এপ্রিল) এফডিসিতে ছিলেন। কেন পুলিশ এসেছিলে বুঝতে পারেননি?
শাকিব খান : না। বিকেলের পরপর আমি এফডিসিতে যাই। সেখানে শিল্পীদের নিয়ে নির্বাচনের কিছু বিষয়ে জরুরি সভা ছিল। কিন্তু গিয়ে অসম্মান হতে হলো। এফডিসির গেটে পুলিশ ও ডিবি মোতায়েন ছিল। কিন্তু কেন? সব শিল্পীর গাড়ি থেকে নামিয়ে হেঁটে ভেতরে প্রবেশ করতে বাধ্য করা হয়েছে। এটা খুবই দৃষ্টিকটু ছিল। অনেক সিনিয়র শিল্পী বিব্রত হয়েছেন। আমাদের এফডিসিতে আমরাই কেন চোরের মতো প্রবেশ করব? কারা এ অশোভন কাজটা করিয়েছে? গণমাধ্যম বা এফডিসির প্রশাসন কী তা খোঁজ নিয়েছে?’

জাগো নিউজ : শিল্পী সমিতির প্রেসিডেন্ট হিসেবে আপনারও খোঁজ নেয়া উচিত। নিয়েছিলেন?
শাকিব খান : আমি খোঁজ নিয়েছি। জেনেছি এফডিসির এমডি নিজেও জানেন না পুলিশ প্রবেশের কারণ। সবাই এখন ভাবছি কেমন করে কী উদ্দেশ্যে পুলিশ আসল? কোনো সমস্যা থাকলে সেটা সুন্দর করে মিটমাট করা যেত। নির্বাচন নিয়ে ঝামেলা থাকলে আদালত ছিল, সেখানে যাওয়া যেত। কিন্তু অকারণে পুলিশ এনে এফডিসিতে সবাইকে আতঙ্কিত করার প্রয়োজন ছিল না। কেন এটা করা হলো আমি এর তদন্ত চাই। শিল্পী সমিতির পরবর্তী সভায় এ নিয়ে আলোচনা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা এফডিসির কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হব।

জাগো নিউজ : আপনাকে গ্রেফতারের গুজব শোনা গিয়েছিল সেদিন। কেন?
শাকিব খান : আমি নিজেও জানি না কী এমন করেছি, যার জন্য আমাকে উকিল নোটিশ পাঠাতে হবে, গ্রেফতার করাতে হবে। ওইদিন এফডিসিতে ঢুকে শুনলাম, গুজব ছড়ানো হয়েছে আমাকে গ্রেফতার করা হবে। কেন? কী করেছি আমি? অন্যায়ভাবে কেন আমার সম্মানহানি করা হচ্ছে। গত ১২টা বছর ধরে একাই ইন্ডাস্ট্রি টানছি। আমিই বিশ্ব দরবারে ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রিকে তুলে ধরতে যাচ্ছি। কৃতজ্ঞতার বদলে সবাই আমাকে উল্টো এখান থেকে সরিয়ে দিতে উঠে পড়ে লেগেছে। সাধারণ শিল্পীরা তা কখনো হতে দেবে না। আর আমিও ভয় করি না। মরণেও না। আমি শাকিব খান বঙ্গবন্ধুর দেশের (এলাকার) লোক, কাপুরুষ নই।

জাগো নিউজ : শুক্রবার আপনি নাকি একজন প্রযোজকের সহযোগিতায় বহিরাগতদের নিয়ে প্রবেশ করেছেন। কেউ কেউ বলছেন তারা ছিল ভাড়াটে সন্ত্রাস। তারা হোন্ডায় চড়ে এফডিসিতে মহড়া দিয়ে ভীতি সঞ্চার করেছে। এ বিষয়ে কী বলবেন?
শাকিব খান : এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট। আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে বাহাদুরি করি না। কিন্তু তার আদর্শকে লালন করি মনে প্রাণে। আমার সাহস যথেষ্ট আছে। আমার ভাড়াটে গুন্ডা লাগে না। আমি জানি যে আমি অসৎ নই। বঙ্গবন্ধুর মতো মানুষের ভালোবাসাই আমার শক্তি ও বল। ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থে জীবনের অনেক কিছুই ত্যাগ করেছি। আরও করে যাব। এ দেশে জাতির পিতাকে জীবন দিতে হয়েছে অকৃতজ্ঞ লোকদের হাতে। এখানে আমার মতো একটা শাকিব কোনো বিষয়ই নয় আমি জানি। তবে যতদিন আছি চলচ্চিত্রের জন্যই আছি, থাকব।

জাগো নিউজ : তবে বলছেন ওইসব বহিরাগতকে আপনি নিয়ে যাননি?
শাকিব খান : প্রশ্নই আসে না। এফডিসিতে সিসি ক্যামেরা আছে। সেখানে দেখে তদন্ত করা হোক কে বা কারা এসব লোক নিয়ে এসেছে। আমি একজন সুপারস্টার। আমি এফডিসিতে আসলে অনেকেই আমার খবর পেয়ে আসতে পারেন। তারা বহিরাগত নয়, ফিল্মেরই লোক। বহিরাগত যদি কেউ থাকে তার দায় আমার নয়। তারা কারা তদন্ত করে বের করা হোক।

Shakib Khan

জাগো নিউজ : আপনার মিটিং ছিল এফডিসিতে। কীসের?
শাকিব খান :
আমি শিল্পীদের নিয়ে মিটিং করতে যাই। আসন্ন নির্বাচনসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। কিন্তু পুলিশ দেখে অবাক হয়েছি। আমাকে নাকি গ্রেফতার করা হবে। পুলিশ তো ২০ কোটি মানুষের। কারও একার নয়। আমিও তো ২০ কোটি মানুষের নায়ক। অন্যায়ভাবে তারা আমাকে কেন ধরবে। কে বা কারা এসব করছে আমি জানি। ক্ষমতার অপব্যবহার করলে তার ফল নিজেকেও ভোগ করতে হয়।

জাগো নিউজ : আসন্ন শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
শাকিব খান :
আমি বর্তমান কমিটির প্রেসিডেন্ট। আমিও চেয়েছি সময়মতো নির্বাচন হোক। যোগ্যরা ক্ষমতায় আসুক। কিন্তু শুক্রবার এফডিসিতে যা কিছু হলো সবকিছুর সঙ্গেই নির্বাচন জড়িয়ে আছে বলেই ধারণা। ক্ষমতার লোভে কিছু লোক উন্মাদ হয়ে গেছে। শিগগিরই আবার শিল্পী সমিতির বর্তমান কমিটির সভা হবে। সেখানে সিদ্ধান্ত হবে নির্বাচন কোনদিকে যাবে। আমি প্রেসিডেন্ট। পদাধিকারবলে প্রয়োজন মনে করলে রুল জারি করে নির্বাচন স্থগিত রাখার অধিকার আমার আছে। হট্টগোল যারা তৈরি করেছে দায় তাদেরই নিতে হবে। কেননা অনেক শিল্পী শুক্রবার বিকালে এফডিসির গেটে রিকশা নিয়ে ঢুকতেও পারেননি। অনেকে এ ঘটনা জেনে আতঙ্কিত হয়ে ফিরেও গেছেন। নির্বাচনের আগে এমন পরিবেশ কারও কাম্য নয়। পরিবেশ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না।

জাগো নিউজ : দেশীয় পরিচালকদের ও সমিতির কার্যক্রম নিয়ে আপত্তিজনক মন্তব্যের জন্য আপনাকে উকিল নোটিশ পাঠানোর প্রসঙ্গ উঠেছে। এ বিষয়ে কী ভাবছেন?
শাকিব খান : এ বিষয়টি নিয়েও শুক্রবার শিল্পী সমিতির রুমে জরুরি সভায় আলোচনা হয়েছে। তবে পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার দেশের বাইরে থাকার কারণে উকিল নোটিশ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনও নেয়া হয়নি। উনি আসলে উনার সঙ্গে কথা বলা হবে। আমি কাউকে হেয় করতে চাইনি। দেশের ইন্ডাস্ট্রি আমার কাছে সবার আগে। আমি এখানকার সবাইকে সমান চোখে দেখি ও সম্মান করি। ভুল বুঝে আমার ওপর রেগে গেলে আমার করার কিছু থাকে না। বর্তমানে ইন্ডাস্ট্রিতে ছবি কম, বেকার মানুষের সংখ্যা বেশি। আমি এটাইতো বলেছি। এখানে মিথ্যা বা হেয় করার মতো কিছু তো নেই।

জাগো নিউজ : আপনি দাবি করেন ইন্ডাস্ট্রিতে একজন হিরো। সেটা আপনি। কিন্তু এখানে তো আরও অনেক হিরো আছেন। তারা ছবিও করছেন। তাদের ছবি তুলনামূলক দেখছেনও দর্শক। তবে একজন হিরোর প্রসঙ্গটা কেন আসে?
শাকিব খান : সেটা আমি বলতে পারব না। একজন হিরো বলেন দর্শক ও হল মালিকরা। আমার নামে ছবি চলে এদেশে। হয়তো ব্রান্ডিংয়ের এই ব্যাপারটাকেই সবাই প্রাধান্য দেন। প্রযোজকরা আমার ওপর ভরসা রাখেন। সবার ভাবনায় অনুপ্রাণিত হয়েই আমি বলি। তাছাড়া আমি এখন দেশের বাইরেও কাজ করছি। কলকাতায় বর্তমানে সবচেয়ে বড় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজ করছি আমি। শিগগিরই বলিউডেও কাজ করব। আমার পথ ধরেই আমার পরের প্রজন্মের নায়করা এগিয়ে আসবেন। এটা তো অস্বীকার করার কিছু নেই। তারাও একদিন সুপারস্টার হবে।

জাগো নিউজ : আপনার সংসার নিয়েও নানা কথা হচ্ছে। এ বিষয়ে কী বলবেন?
শাকিব খান : সবখানেই ষড়যন্ত্রের ফাঁদ পাতা হয়েছে। সবকিছু মোকাবেলা করেই আমি টিকে থাকব ইনশাআল্লাহ। আমার স্ত্রী ও পুত্রকে নিয়ে আমি সুখী মানুষ হতে চাই। কিন্তু অনেকেই সেখানে নাক গলাচ্ছেন। কিন্তু আমি এসব নিয়ে ভাবছি না। ক্যারিয়ার নিয়েই আমি মনোযোগী থাকতে চাই। বর্তমানে পাবনায় ছবির শুটিং করছি। খুব চমৎকার একটি ছবি হবে ‘রংবাজ’।

এলএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।