চলচ্চিত্র দিবসেও এলেন না শাকিব খান!


প্রকাশিত: ০৯:৩২ এএম, ০৩ এপ্রিল ২০১৭

দেশের শীর্ষ চিত্রনায়ক তিনি। সদ্য মেয়াদ শেষ হওয়া চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতিও। অথচ দায়হীনতার অভিযোগের শেষ নেই তার বিরুদ্ধে। সমিতির সভাগুলোতে তার উপস্থিতির হার করুণ। শিল্পীদের স্বার্থে কোনো উদ্যোগ বা পরিকল্পনাতেও দেখা যায়নি কখনো। হাজির হন না চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট মানুষদের জন্মোৎসব কিংবা মৃত্যু দিবসের কোনো আয়োজনেও। নিজের পুরস্কার না পেলে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানেও থাকেন না তিনি।

কোনো শিল্পী-পরিচালকের জানাজাতেও তাকে শেষ কবে দেখা গেছে বলতে পারবেন না কেউ। কেবলই চেয়ার দখল করে রেখেছেন। আর গণমাধ্যমে এসব নিয়ে প্রশ্নের মুখে একটা জবাবই ঘুরে ফিরে দেন তিনি। সেটি হলো- শুটিংয়ের ব্যস্ততা। ভাবটা এমন, এই ইন্ডাস্ট্রিতে তার মত ব্যস্ততা আর কোনো নায়কের ছিল না। বলছি ঢালিউড কিং বলে খ্যাত শাকিব খানের কথা।

সর্বশেষ তাকে দেখা গিয়েছিল গেল মাসে অনুষ্ঠিত শিল্পী সমিতির বনভোজনে। অবশ্য বনভোজনে শাকিবের উপস্থিতি নিয়েও অনেকে অনেক কথা বলেছেন। কেউ বলেছেন নিজের ইমেজকে নতুন করে ভালো করা প্রত্যাশাতেই গিয়েছিলেন শাকিব। কেউ বলছেন শিল্পী সমিতির কার্যকরী কমিটির জোরাজুরিতে।

স্বেচ্ছায় যে তিনি যাননি তার প্রমাণ পাওয়া গেল আজ সোমবার চলচ্চিত্র দিবসে উপস্থিত না হয়ে। জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস দেশের ইন্ডাস্ট্রির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু এমন দিনে এফডিসিতে নবীন-প্রবীন শিল্পী আর চলচ্চিত্রের নানা পেশার মানুষদের মিলনমেলা হলেও শাকিব নেই। দিবসটি উপলক্ষে তার কোনো বাণী বা মন্তব্যও পাওয়া গেল না। এফডিসির ক্যান্টিন, কড়ইতলা, মান্না কমপ্লেক্স, জহির রায়হান কালার ল্যাবের সামনের চত্বর, পরিচালক সমিতি থেকে শুরু করে সবখানেই ঘুরে ফিরে উঠছে এই আলোচনা। অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, ‌‘শাকিব অকৃতজ্ঞ। এই চলচ্চিত্র তাকে অনেক কিছু দিলেও সে কিছুই দিতে পারেনি বিনিময়ে; অহংকার আর মিথ্যে আশ্বাস ছাড়া। আজকাল মনে হয়, অভিনয়কে টাকা কামানোর হাতিয়ার হিসেবেই নিয়েছেন শাকিব। কোনো সমালোচনাকেই তিনি গায়ে মাখছেন না।’

শেষ পর্যন্ত তিনি ভারতের নায়ক বনে যাওয়ার চেষ্টায় আছেন। তাই নিজের দেশে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস ফেলে কলকাতায় পড়ে আছেন। এমন একটি গুরুত্ববহ দিনে তিনি কেমন করে অনুপস্থিত থাকেন! অন্য কারো আসা না আসার সঙ্গে শাকিবের আসা মেলানো যায় না। দেশের শীর্ষ নায়ক, শিল্পী সমিতির সভাপতি হিসেবে তার উপস্থিতি খুবই জরুরি এবং গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিনিয়র নির্মাতা বলেন, ‘শাকিব বরাবরই সবকিছুর দায় থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে চলেন। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়ক হওয়া সত্বেও এই একটি কারণে তুমুল সমালোচিত তিনি চলচ্চিত্রের মানুষদের কাছে। পাশাপাশি হারিয়েছেন শিল্পী সমিতির হয়ে নির্বাচনের সাহসটাও। সেটা আঁচ করতে পেরে আগে ভাগেই নির্বাচন করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কোন মুখে আর ভোট চাইবেন তিনি। প্রতিশ্রুতির কোনো কথাই তিনি রাখতে পারেননি।’

শাকিব বর্তমানে কলকাতায় আছেন। সেখানে একটি ছবির কাজ করছেন। শাকিবের অনুরাগীরা শুটিংয়ের ব্যস্ততার জন্য আসতে পারেননি বলে দাবি করছেন। কিন্তু এই দাবিটাকে অযৌক্তিক বলে মানছেন চলচ্চিত্রের শিল্পী ও কলাকুশলীরা। কলকাতা থেকে শাকিব চাইলেই একদিনের বিরতি নিয়ে আসতে পারতেন। এক জীবনে শাকিব খান কম পরিচালকের শিডিউল ফাঁসাননি। ইচ্ছেটাই নেই শাকিবের মধ্যে। চরমতর দায়হীন তিনি। এমন নায়ক আর কোনো দেশে আছে বলে দেখা যায় না। সবদেশের ইন্ডাস্ট্রিতেই সুপারস্টাররা ইন্ডাস্ট্রির আয়োজনে নানা অনুষ্ঠানে হাজির থাকেন। অথচ, যত অজুহাত শাকিব খানেরই। কিন্তু চলচ্চিত্র দিবসেও যদি তিনি আসতে না পারেন তবে আসবেন কোথায়? কবে? কে দেবে জবাব?

জাতীয় চলচ্চিত্র দিবসকে ঘিরে দিনব্যাপি অনুষ্ঠান সাজিয়েছে তথ্য মন্ত্রানালয় ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন। রবিবার (৩ এপ্রিল) সকালে উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস আয়োজনের আহ্বায়ক কিংবদন্তী অভিনেতা নায়ক রাজ রাজ্জাক, হাসান ইমাম ছাড়াও এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন কুমার ঘোষ, তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মুরতুজা আহমেদ ছাড়াও চলচ্চিত্র সংশিষ্ট অনেকেই।

এফডিসির কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন চলচ্চিত্র সংগঠনের নেতাদের দেখা গেলেও দেশীয় চলচ্চিত্রের প্রথমশ্রেণির তারকা শাকিব খান ও অনন্ত জলিল নেই। নেই আরও অনেকেই। এ প্রসঙ্গ বরেণ্য অভিনেতা রাজ্জাক বলেন, ‘আমাদের চলচ্চিত্র তারকারা এতো ব্যস্ত যে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবসেও তাদের আসার সময় হয় না। এটা দু:খজনক। চলচ্চিত্রকে ভালবাসতে না পারলে চলচ্চিত্র তারকাখ্যাতি বেশিদিন থাকবে না।’

বিষয়টি নিয়ে ভীষণ চটেছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি বলেছেন, সকালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রীর পাশে মঞ্চে অচেনা অজানা লোকদের আনাগোনা দেখলাম। শোভাযাত্রা যখন বের হলো তখনো আমাদের ডাকা হলো না। আমরা শিল্পী, শিল্পীদের একটা সন্মান আছে। আমি তো নিজে গিয়ে বলতে পারিনা যে ভাই আমাকে সামনে দাঁড়ানোর একটু জায়গা দেন। তাই ভবিষ্যতে আর এ অনুষ্ঠানে আসব না।’

চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহা সচিব মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, ‘অনেকেই জিরো থেকে এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে হিরো হয়েছেন। সিনেমার টাকা দিয়ে গাড়ি বাড়ি করেছেন। তারপর যদি কেউ চলচ্চিত্রের কথা ভুলে যান তাহলে বলার কিছুই নেই। এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে চেয়েছিলাম যেসব শিল্পী ঢাকায় থেকেও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন না। তাদেরকে পরবর্তীতে আর এফডিসিতে ঢুকতে দেয়া হবে না। পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়। কারণ শিল্পীরা এতে অপমানিত হতে পারেন। তবে সবশিল্পীর নিজ দায়িত্বে অনুষ্ঠানে আসা উচিত বলে আমি মনে করি।’

এলএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।