অমরখানা সীমান্তে দুই বাংলার মিলন মেলা


প্রকাশিত: ১০:৩৪ এএম, ১৪ এপ্রিল ২০১৫

আত্মীয়তার বন্ধনে বাঁধা ভারত-বাংলাদেশের বাঙালিরা সুযোগ পেলেই মিশে যান একে অন্যের সঙ্গে। এরপর বছর জুড়ে চলে অপেক্ষা। আবার পহেলা বৈশাখ কবে আসবে? প্রতি বছরের মতো এবারও নববর্ষ উপলক্ষে পহেলা বৈশাখের (মঙ্গলবার) সকালে পঞ্চগড়ের অমরখানা সীমান্তে জড়ো হন দুই বাংলার লাখো মানুষ।

সীমান্তের প্রায় সাত কিলোমিটার এলাকা জুড়ে শুরু হয় বাঙালিদের এই মিলন মেলা। বেড়ার দুই পাশে দুই দেশের নাগরিক হলেও জাতিতে তারা এক। তারা সবাই বাঙালি। একে অন্যের আত্মীয়। দীর্ঘদিন পর কাছের মানুষদের দেখতে পেয়ে তারা ভুলে যান সীমান্তের কাঁটা তারের বেড়া। বেড়ার ফাঁক গলিয়ে একে অন্যের হাত ধরেন, কথা বলেন। বিনিময় করেন নানান উপহার সামগ্রী। কেউ কেউ কেঁদে ফেলেন আবেগে। তিন ঘণ্টার এই মিলন মেলায় সীমান্তে আবেগঘন এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

সরেজমিনে অমরখানা সীমান্তে গিয়ে দেখা গেছে, মঙ্গলবার সকাল হতে না হতেই হাজার হাজার মানুষ জড়ো হতে থাকেন অমরখানা সীমান্তে। সীমান্তের ৭৪৪ নম্বর মেইন পিলার ঘেঁষে প্রায় সাত কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বসেছিল এই মিলনমেলা। এ যেন দুই বাংলার মহা মিলনস্থল। সকাল সাড়ে ১০টায় বিএসএফের অনুমতি পেয়েই ওপারের হাজার হাজার মানুষ সীমান্ত গেট পেরিয়ে কাঁটাতারের কাছে আসেন।

দীর্ঘদিন পর কাছের মানুষ পেয়ে মাঝের কাঁটা তারের বেড়া তারা ভুলে যান। প্রতি বছরের মতো এবারও নববর্ষ উপলক্ষে বিজিবি এবং বিএসএফের সহায়তায় অনির্ধারিত এই মিলন মেলা শুরু হয়। মিলন মেলায় আসা দুই দেশের এই মানুষদের অধিকাংশই নিম্ন আয়ের। ভিসা এবং পাসপোর্ট করে আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ নেই তাদের। তাই বছর জুড়ে এই পহেলা বৈশাখের অপেক্ষায় থাকেন এসব মানুষ।

জেলার বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী ও দিনাজপুর থেকে বিভিন্ন বয়সী অসংখ্য মানুষ এই মিলন মেলায় জড়ো হন প্রাণের টানে। সীমান্তের ওপারে ভারতের শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং জেলাসহ কোচবিহার এলাকার ভারতীয়রা আসেন কাঁটা তারের বেড়ার কাছে। তবে অনেকে তাদের আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা করতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরেছেন।

পঞ্চগড় পৌরসভার ইসলামবাগ এলাকার ইসমাইল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ভারতে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সময় আমাদের পূর্ব পুরুষরা বাংলাদেশে আসেন। ভারতে আমাদের অনেক আত্মীয় রয়েছেন। এভাবেই প্রতি বছর আমরা তাদের সঙ্গে দেখা করি।

মাকে দেখতে আসা ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার ভক্তিনগর থানার আশিঘর এলাকার ফুলমতি (৪০) জাগো নিউজকে বলেন, আমার মা সরলা রানী (৮৫) পঞ্চগড়ের উৎকুড়া বানিয়াপাড়া গ্রামে থাকেন। ২০ বছর আগে বিয়ের পর জামাইসহ ভারতে চলে আসি। এরপর থেকে আর মা মেয়ের দেখা নেই।

ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার কোতয়ালী থানার কনপাখুরী থেকে আসা তফাজ উদ্দিন (৬৫) জাগো নিউজকে বলেন, আমার বড় বোন হামিদা খাতুন (৭০) পঞ্চগড় জেলা সদরের মোলানী বোদাপাড়া গ্রামে থাকেন। ভাই-বোনে দেখা হলো দীর্ঘ ১৮ বছর পর।

পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ আরিফুল হক জাগো নিউজকে জানান, বিজিবি-বিএসএফের সহযোগিতায় অমরখানা সীমান্তে প্রতি বছরের মত এবারও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দুই বাংলার নাগরিকদের মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়। শুরুতে বিএসএফ রাজী না থাকলেও তাদের দেশের নাগরিকদের চাপে তারা বেড়ার কাছে আসতে দেয়। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় পর্যাপ্ত বিজিবি সদস্য মোতায়েন ছিল। প্রায় তিন ঘণ্টা পর সবাই যে যার গন্তব্যে চলে যান।

এমজেড/একে/আরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।