তারেক-মিশুক নিহতের মামলার রায়ে ঘনিষ্ঠজনদের প্রতিক্রিয়া


প্রকাশিত: ০৮:৪৬ এএম, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচজন নিহত হয়েছিলেন ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা নাড়া দিয়েছিল সারা দেশ। ঘটনার পরপর তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ একটি মামলা করেছিলেন গাড়ি চালকের বিরুদ্ধে।

অবশেষে দীর্ঘ প্রায় ছয় বছর ওই দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে বাস চালক জামির হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন মানিকগঞ্জ জেলা আদালত। এই রায় নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তারেক মাসুদের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন। জানিয়েছেন তাদের প্রতিক্রিয়াও। তবে আমেরিকা থাকায় এ রায় নিয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদের।

ঢালী আল মামুন (অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়)
দুর্ঘটনার সময় আমি নিজে ও আমার স্ত্রী বেগম জলি তারেক মাসুদের সঙ্গে ছিলাম। তারেকের স্ত্রী ক্যাথরিনসহ আরো অনেকেই ছিলেন সেদিন। সবাই মিলে গিয়েছিলাম ‘কাগজের ফুল’ নামে একটি চলচ্চিত্রের শুটিং স্পট দেখতে। অনেক স্বপ্ন নিয়ে যাওয়া ভ্রমণটি অবশেষে ফেরার পথে দুঃস্বপ্নে পরিণত হলো। ওখানে পাঁচজনের মৃত্যু হয়। আমরা বেঁচে যাই অল্পের জন্য। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরেই বেপরোয়া ওই গাড়ি চালকের বিচারের অপেক্ষায় ছিলাম। অবশেষে তার যাবজ্জীবন সাজা হবার রায় ঘোষণার খবরটা জেনে মনটা ভরে গেল। আদালতের প্রতি আরও শ্রদ্ধা বেড়ে গেল। এই রায় আগামীতে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে আমি মনে করি। তারেক-মিশুকসহ ওইদিন নিহত সকলের আত্মা শান্তিতে থাকুক।

প্রসূন রহমান (চলচ্চিত্র নির্মাতা)
সড়ক দুর্ঘটনাকে আমি বলি সড়কে হত্যাকান্ড। তেমনি একটি নির্মম হত্যাকান্ডে তারেক মাসুদ (তারেক মাসুদের সহকারী পরিচালক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন প্রসূন রহমান) ও মিশুক মুনিরের মতো মানুষের অকালে ঝরে যাওয়ার ক্ষতি অপূরণীয়। তাদের চলে যাওয়ার এতগুলো বছর পর আজ দোষী চালকের শাস্তি দিয়েছেন আদালত। এই বিষয়টি ভেবে কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছি। তবে প্রতিনিয়ত সড়কেই হত্যাকাণ্ড ঘটছে। সঠিক বিচার হয় না বলেই এর নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। প্রতিটি প্রাণই অমূল্য। তাই দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি বলতে চাই, সড়ক হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত সকল দোষীর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রের এ বিষয়ে মনযোগী হতে হবে।

রোকেয়া  প্রাচী (তারেক মাসুদের মাটির ময়না ছবির অভিনেত্রী)
আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইন যেটা বিচার-বিশ্লেষণ করে মনে করেছেন সেটাই করেছেন। আবারও প্রমাণ হলো আমাদের এখানে সঠিক আইনের পরিচর্যা আছে। এই সরকারের আমলে আমরা স্বচ্ছ বিচার প্রক্রিয়া বেশি দেখতে পাচ্ছি। তারেক মাসুদ-মিশুক মনির ভাই দুজনের আত্মার শান্তি মাকনা করছি।

জয়ন্ত চট্টপাধ্যায় (তারেক মাসুদের মাটির ময়না ছবির অভিনেতা)
দোষীকে আইন যে শাস্তিটা দিয়েছে আমি সন্তুষ্ঠ। বেপরোয়াভাবে যারা গাড়ি চালায় তাদের জন্য কঠিন শাস্তির বিধান করা উচিত। প্রতিনিয়ত সগকে যেসব দুর্ঘটনা ঘটছে সেগুলোরও সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীকে শাস্তি দেয়া উচিত। তারেক মাসুদ-মিশুক মুনীর আমাদের দেশের গুনী দুজন মানুষ ছিলেন। তাদের আত্মা শান্তিতে থাকুক।

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটে। মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার শালজানা গ্রামে কাগজের ফুল সিনেমার শুটিং স্পট দেখে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ কয়েকজন মাইক্রোবাস যোগে ঢাকায় ফিরছিলেন। এসময় মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। পথিমধ্যে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের জোকা এলাকায় তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসের সঙ্গে বিপরীতমুখি চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স পরিবহনের সংর্ঘষ হয়। কিছু বুঝে উঠার আগেই প্রাণ হারান তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন। নিহত অন্য তিনজন হলেন- তারেক মাসুদের চলচ্চিত্র প্রডাকশন সহকারী ওয়াসিম ও জামাল এবং মাইক্রোবাস চালক।

এই দুর্ঘটনায় আহত হন তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিল্পী ঢালী আল মামুন ও তার স্ত্রী দেলোয়ারা বেগম জলি।

এ ঘটনায় ঘিওর থানা পুলিশের তৎকালীন এসআই লুৎফর রহমান বাদী হয়ে একটি দুর্ঘটনাজনিত মামলা দায়ের করেন। পরে ডিবি ইন্সপেক্টর আশরাফ-উল ইসলাম মামলার তদন্ত করে চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের বাস চালক জামির হোসেনের বিরুদ্ধে ২৭৯,৩৩৭,৩৩৮(ক),৩০৪ ও ৪২৭ ধারায় আদালতে চার্জশিট দেন।

দুর্ঘটনার পর বাস চালক পালিয়ে গেলেও পরে মেহেরপুরে এক আত্মীয়ের বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। আদালত তার জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠিয়েছিলেন। সে সময় তার মুক্তির দাবিতে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল বিভিন্ন বাস মালিক ও শ্রমিক সংগঠন।পরে তিনি জামিনে মুক্ত হন। বর্তমানেও তিনি জামিনে রয়েছেন।

এনই/এলএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।