স্বীকৃতি অহংকারের নয়, আত্মবিশ্বাসের : শর্মীমালা
দেশের ইতিহাসে রেকর্ডসংখ্যক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া ছবি ‘মৃত্তিকা মায়া’। গাজী রাকায়েতের পরিচালনায় ছবিটিতে ‘পদ্ম’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন শর্মীমালা। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ছবিটি দিয়েই তিনি জয় করে নিয়েছেন ২০১৩ সালের জাতীয় চলচ্চিত্রের পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার। মেধাবী এই অভিনেত্রী জাগোনিউজের সাথে ফোনালাপে জানালেন না জানা অনেক কথা-
জাগোনিউজ : দ্বিতীয় ছবিতেই বাজিমাত। অনুভূতি কি?
শর্মীমালা : (খানিক নীরবতা। একটু হেসে) এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করবার মতো নয়। আমার চলচ্চিত্রের পরিচালক গাজী রাকায়েত স্যারের কাছ থেকে খবরটি শুনেই অনুভূতিহীন হয়ে পড়েছিলাম। আমি ‘মৃত্তিকা মায়া’ পরিবার ও ইমপ্রেস পরিবারের কাছে কৃতজ্ঞ।
জাগোনিউজ : ৪ এপ্রিল পুরস্কার নিবেন প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে। ওই মুহূর্তটি ভাবতে কেমন লাগছে?
শর্মীমালা : সেই মুহূর্তটা হবে অসাধারণ। তবে আগাম ভেবে রোমাঞ্চটা ফিকে করতে চাই না।
জাগোনিউজ : প্রথম ছবিটা গৌতম ঘোষের মতো উপমহাদেশের প্রখ্যাত পরিচালকের। দ্বিতীয়টাতে সেরা অভিনেত্রীর স্বীকৃতি। নিজেকে নিয়ে হিংসা হয় না?
শর্মীমালা : একদমই না। নিজেকে হিংসে করার কোনো সুযোগ নেই। তবে আমি সত্যি ভাগ্যবান। ক্যারিয়ারের দু’টি চলচ্চিত্রেই দুই গুণী মানুষের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। মনের মানুষে অভিনয়ের বিস্তৃতি নিয়ে একটা আক্ষেপ ছিলো। মৃত্তিকা মায়া সেটা পূরণ করে দিয়েছে।
জাগোনিউজ : নিজেকে হিংসে তো হয় না বললেন, অহংকারী মনে হয়?
শর্মীমালা : (মুখ টিপা হাসি) কখনো না। আমি সবসময় ধৈর্য্যশীল একটা মানুষ। অভিনয় করতে চাই বলেই অভিনয় করি। ভালো একজন অভিনেত্রী হওয়ার প্রত্যাশায়। আমাদের দেশে অনেক গুণী অভিনয়শিল্পীরা আছেন। তারা অনেকেই হয়তো কোনো স্বীকৃতি পাননি। তার মানে তার অভিজ্ঞতা, পরিশ্রম, মেধা, অবদান খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। এই স্বীকৃতি অহংকারের নয়, অনুপ্রেরণার। আমি জেনেছি আমার ক্ষমতা আর যোগ্যতার পরিধি। এটা আত্মবিশ্বাস।
জাগোনিউজ : আপনার কাজে অনুপ্রেরণা কে কে দেন?
শর্মীমালা : আমার চাচা ড. হায়াৎ মামুদের কথা প্রথমেই বলতে হয়। ছোটবেলা থেকেই তার কাছ থেকে শিখেছি শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করে কথা বলা। তিনিই মূলত বাংলা ভাষাকে সঠিকভাবে প্রয়োগের বিষয়টি শিখিয়েছেন। ছোটবেলায় আমার বই পড়া শুরু বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের ‘চাঁদের পাহাড়’ দিয়ে। স্বাভাবিকভাবেই আমার চিন্তা-ভাবনাটা ছিল একটু বড় লেখকদের বইয়ের প্রতিই। আর আমার মা হাসিনা বেগম পাশে থেকে উৎসাহ না দিলে আজকের শর্মীমালা হয়ে ওঠা হতো না।
জাগোনিউজ : অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ কখন থেকে?
শর্মীমালা : ছোটবেলায় খেলাধুলার প্রতি আমার আগ্রহ ছিল তুলনামূলক বেশি। ২০০৬ সালে ‘প্রাচ্যনাট’-এ যখন অভিনয়ে স্কুলিংয়ের জন্য ভর্তি হলাম, তখন আজাদ আবুল কালাম স্যারকে দেখে অভিনয়ে অনুপ্রাণিত হলাম। আমি দেখলাম যে আসলে এটাই আমার জায়গা। তাই পরবর্তীতে একমাস পর একই বছরে ‘পালাকার’-এ ভর্তি হলাম। সেই থেকে পালাকারের সাথেই আছি। এখন পর্যন্ত দশটি নাটকের মঞ্চায়নের সাথে আছি আমি।
জাগোনিউজ : মঞ্চে আপনার উল্লেখযোগ্য কাজ কী কী?
শর্মীমালা : আমিনুর রহমান মুকুলের ‘তাইর আলীর বুকে মিজু মুন্সির পাও’ নাটকে তাইর আলীর ৬০ বছর বয়সী মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছি। এরপর একে একে ‘ডাকঘর’, ‘মানগুলা’, ‘মৃত্তিকাকুমারী’, ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’, ‘বিসর্জন’, ‘বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি’, ‘জুলিয়াস সিজার’, ‘রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’ ও ‘সোনাটা’সহ আরো কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেছি।
জাগোনিউজ : টিভিতে আপনাকে খুব বেশি নিয়মিত দেখা যায় না। বিশেষ কোনো কারণ?
শর্মীমালা : (আবার চোরা হাসি) না, তেমন কোনো বিশেষ কারণ নেই। আগেই বলেছি, অভিনয় করি নিজের তৃপ্তির জন্য। একটু একটু করেই চলছে। এভাবেই অনেকটা পথ পাড়ি দেয়ার চেষ্টা। জানি শিল্পী মনের তৃপ্তি নেই। আমিও চলবো অবিরাম। দেখি জীবনে ভালোবাসার এই অঙ্গন থেকে কতোটুকু সন্তুষ্টি নিতে পারি।
জাগোনিউজ : প্রথম অভিনীত প্রথম টিভি নাটক কোনটি? সেটির অভিজ্ঞতা?
শর্মীমালা : টিভি নাটকে আমার অভিষেক হয় মান্নান হীরার রচনা ও আমিনুর রহমান মুকুলের নির্দেশনায় ‘বকুল ফুল’ নাটকে অভিনয়ের মধ্যদিয়ে। টেলিভিশনের ক্যামেরার সামনে প্রথম দাঁড়ানোর অনুভূতি আজীবন মনে রাখার মতোই রোমাঞ্চকর।
জাগোনিউজ : বর্তমানে কী কী কাজ করছেন?
শর্মীমালা : আমার প্রথম ধারাবাহিক নাটক ছিল গোলাম সোহরাব দোদুলের ‘সাতকাহন’। কিছুদিন আগে মাছরাঙা টিভিতে প্রচার শেষ হয়েছে বদরুল আনাম সৌদের ধারাবাহিক নাটক ‘পিঞ্জর’ ও নিয়াজ মাহমুদের ‘কালো মখমল’ ধারবাহিক দু’টি। বর্তমানে আফসানা মিমির ‘সাতটি তারার তিমির’ এবং গোলাম সোহরাব দোদুলের ‘হল্লাবাজি’ ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করছি।
জাগোনিউজ : নতুন কোনো চলচ্চিত্র?
শর্মীমালা : আবু শাহেদ ইমনের ‘জালালের গল্প’ ও শাহনাজ কাকলীর ‘নদী জল’ সেন্সর ছাড়পত্র পেয়েছে। বুসান উৎসবে জালালের গল্পের প্রিমিয়ারও হয়েছে। শিগগিরই ছবিগুলো মুক্তি দেয়া হবে।
জাগোনিউজ : আপনার শুনেছি চায়ের দোকান আছে?
শর্মীমালা : হ্যাঁ, দোকান আছে, তবে ঠিক চায়ের দোকান নয়। শিল্পকলা একাডেমিতে বান্ধবী জয়িতাকে নিয়ে একটি ফুডকার্ট চালাই। গাড়িতে করে খাবার বিক্রি করা হয় এ ফুডকার্টে। যখন যে খাবারের অর্ডার দেয়, সেটি তৈরি করে দেয়া হয়। তবে, এ ফুডকার্টে চাও পাওয়া যায়। দিনের বেশিরভাগ সময়টাতো ওখানেই থাকা হয়। তাই কাজ ও আয় দুটোরই সম্মিলন ঘটানোর চেষ্টা আর কি....(আত্মবিশ্বাসী হাসি)
জাগোনিউজ : চায়ের দাওয়াত দিলেন না যে!
শর্মীমালা : হা হা হা...চেয়ে দাওয়াত নেয়া অনেক মজার। আমি হলে এটাই করতাম। তবে আপনাকে দাওয়াত দিচ্ছি। এদিকে আসলে এককাপ চা পরখ করে যাবেন।
জাগোনিউজ : ধন্যবাদ। সেইসাথে জাগোনিউজের পক্ষ থেকে ৪ এপ্রিলের মাহেন্দ্রক্ষণটির জন্য আগাম অভিনন্দন...
শর্মীমালা : জাগোনিউজকে ধন্যবাদ। জাগোনিউজের সকল পাঠকদের বলছি, বেশি করে বাংলা ছবি দেখুন, বাংলাকে ভালোবাসুন।
এলএ/আরআই