পাঁচবিবি সীমান্তে বিএসএফের ভূমি দখল


প্রকাশিত: ০৪:৩৬ এএম, ২৩ মার্চ ২০১৫

জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার হাটখোলা সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশিদের জমি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাঁচবিবি উপজেলার ধরঞ্জী ইউনিয়নের উচ্না (সোনা তলা) সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ তাদের এস পিলার সোজা করতে গিয়ে বাংলাদেশের প্রায় ৩ বিঘা জমি দখল করে নেয়। এ সময় বাংলাদেশের বিজিবি সদস্যরা কোন প্রতিবাদ করেনি বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সরেজমিনে জানা যায়, উচ্না (সোনাতলা) গ্রামের মৃত কুরানু মণ্ডলের ছেলে হাফিজ উদ্দিন মণ্ডল ভারত সীমান্তবর্তী উচ্না গ্রামের ২৮০ নং পিলারের ১০/১১এস পিলার থেকে শুরু করে ২৮০ নং পিলারের ১২/১৩ এস পিলার এলাকার ৩ বিঘা জমি পৈতৃক সূত্রে লাভ করে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সেই জমিতে চাষাবাদ করে আসছিলেন।

কিন্তু ভারতীয় বিএসএফ অন্যায়ভাবে ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমারেখা লঙ্ঘন করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরের সম্পত্তির উপর আইল দিয়ে তা ভারতের বলে দাবী করছে। যা বাংলাদেশের মৌজা নকশা এবং বিজিবি ও বিএসএফের স্টিপ ম্যাপের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক হাফিজ উদ্দিন জানান, তিনি বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে হাটখোলা বিওপি ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যদের অবগত করলেও তারা এখন পর্যন্ত নির্বিকার রয়েছেন।

শুধু হাফিজ উদ্দিনই নন আইল সোজা করার নামে এলাকার আরো অনেক কৃষক ভারতের কাছে তাদের সম্পত্তি হারাবে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন। উচ্না গ্রামের মজনুর রহমান, সানোয়ার হোসেন, উচ্না উত্তরপাড়া গ্রামের জয়নাল আবেদীনসহ এলাকাবাসীরা জানান, ২৮০ নং পিলারের ১০/১১এস পিলার থেকে শুরু করে ২৮০ নং পিলারের ১২/১৩ এস পিলারের মধ্যবর্তী জায়গা ৫৭ লিংক ভাঁজ থাকার পরেও ১০ এস পিলার থেকে শুরু করে ১২ এস পিলার সোজা করার কারণে হাফিজ উদ্দিনের প্রায় ৩ বিঘা সম্পত্তি তারা নিয়ে নেয়।

এছাড়াও বিএসএফ জোর করে উচ্না গ্রামের ২৩৯, ৮, ৬৩৫ এবং ৬৩৪ নম্বর দাগের বেশ কিছু জমির অনেক অংশই দখল করে নিচ্ছে। এ অবস্থায় হাফিজ উদ্দিনসহ ওই এলাকার জমির মালিকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অন্যদিকে ফসলি জমিগুলিতে ধান ও গম ক্ষেত নষ্ট করে একটি পিলার থেকে অপর একটি পিলার সোজা করার কারণে ফসল নষ্ট করেছে। জমির অন্য অংশে বিএসএফ ধান রোপন করতে বাঁধা প্রদান করে নিজেদের কব্জায়  নিয়েছে। আন্তর্জাতিক সীমান্ত রেখার আইন অনুযায়ী, ম্যাপে একটি পিলার থেকে অপর একটি পিলার সোজা করার কোন সুযোগ নেই।

ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক হাফিজ উদ্দিনের বড় ছেলে মাহাবুব আলম সাংবাদিকদের বলেন, গত ২১ জানুয়ারী দুপুর থেকে বিএসএফ আইল সোজা করার নামে তাদেরসহ কয়েক জন বাংলাদেশি কৃষকের সম্পত্তি জোর করে দখল করে নেয়।

এ ব্যাপারে গত ৫ মার্চ কয়া সীমান্তে দিনাজপুর সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায়ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। বাংলাদেশের এক ইঞ্চি জমিও দখল দেওয়া হবে না বলে তখন বিজিবি আশ্বস্ত করলেও আজো বিএসএফ দখল করা বাংলাদেশের ওই জমিগুলো ছেড়ে দেয়নি বা এ ব্যপারে বিজিবিও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

অনুষ্ঠিত ওই মত বিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন, দিনাজপুর সেক্টর কমান্ডার মহোদ্বয়, ৩ বিজিবির অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল আব্দুর রাজ্জাক তরফদার, অপস্ অফিসার মেজর রুমি, পাঁচবিবি উপজেলার নির্বাহী অফিসার নূর উদ্দিন আল ফারুখ, পাঁচবিবি থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) ফরিদ হোসেন, পাঁচবিবির পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান হাবিব প্রমূখ।

সংশ্লিষ্ট ধরঞ্জি ইউনিয়ন ভূমি অফিস এর তহশিলদার হায়দার আলী জানান, ‘আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। এখনো কাগজপত্র দেখা হয়নি, তবে অভিযোগ সম্পর্কে অবগত হয়ে কাগজপত্র যাচাই করে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাগণ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় এখনো পর্যন্ত এই জমি উদ্ধারের কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয় নাই। এ ব্যপারে জয়পুরহাট-৩ বিজিবি’র অধিনায়ক লেঃ কর্নেল আব্দুর রাজ্জাক তরফদার সাংবাদিকদের বলেন, জমির জরিপ কাজ চলছে, জরিপসহ কাগজপত্র অনুযায়ী জমির প্রকৃত মালিক নির্ধারণ পূর্বক পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এমজেড/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।