প্রশংসিত এক পৃথিবী প্রেম
বছরের মাঝামাঝিতে বেশ কিছু বিগ বাজেটের ছবি দিয়ে বক্স অফিসটা ঘুরে দাঁড়িয়েছিলো ঢাকাই চলচ্চিত্রের। আর গেল অক্টোবরের ৩০ তারিখ অমিতাভ রেজার ‘আয়নািবাজি’ তো রীতিমত রেকর্ড করে নিলো ব্যবসায়িক সাফল্যের।
তবে পরিতাপের বিষয় হলো ‘আয়নাবাজি’র সাফল্যে যারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন দর্শক আবারো হলে ফিরছেন বলে তাদের বিরক্ত ও হতাশ করেছে শফিক হাসানের ‘ধূমকেতু’ ছবিটি। মানহীন গল্পের এই ছবিটি পাল্টে দিয়েছে গেল কয়েক মাসের হিসেব নিকেশ। ছবিটি দেখতে এসে বিরক্ত হওয়া দর্শক বুঝে নিলেন হঠাৎ পাওয়া বৃষ্টির মতো কিছু ভালো ছবি এই বছরে এলেও চলচ্চিত্রের নির্মাণ ও ভাবনা রয়ে গেছে সেই পুরনো বোতলেই। তাই বিগ বাজেটের ‘আমি তোমার হতে চাই’ ছবিটিও হলে দর্শক পেলো না।
সেই মন্দার বাজারে বেশ প্রশংসিত হয়েছে ‘হৃদয়ের কথা’ ও ‘আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা’ খ্যাত নির্মাতা এস এ হক অলিকের ‘এক পৃথিবীর প্রেম’ ছবিটি। রোমান্টিক ছবির জনপ্রিয় নির্মাতার ভালো নির্মাণ, ভালো গল্পের প্রচারণায় ছবিটি দেখতে প্রথম দুই দিন হলে এসেছেন দর্শক। এবং তারা মুগ্ধও হয়েছেন। উৎরে গেলেন বলা চলে এই ছবি দিয়ে অভিষিক্ত হওয়া নায়ক আসিফ। তাকে দর্শক বেশ ভালোভোবেই গ্রহণ করেছন আইরিনের বিপরীতে।
গেলো ২৩ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছে ‘এক পৃথিবী প্রেম’ ছবিটি। মুক্তির পর গত পাঁচ দিনে যেসব হলে ছবিটি চলছে সেসব হলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে আশানুরূপ ব্যবসা না হলেও ছবিটির গল্প দর্শকদের মন ছুঁয়ে গেছে। এছাড়া ছবিটির নির্মাণশৈলীও বেশ প্রশংসিত দর্শকদের কাছে। দর্শকরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন ছবির শ্রুতিমধুর গানের জন্যও।
এ মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির ব্যবসায়িক বেহাল দশায় যে শংকা ছিলো সেটি অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে ‘এক পৃথিবী প্রেম’। ছবিটি দেখতে দর্শক হলে যাচ্ছেন। আগের দুই সপ্তাহে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির ‘স্টার কাস্টিং’ এবং বাজেটের তুলনায় ‘এক পৃথিবী প্রেম’ এগিয়েই থাকলো।
ছবিটি প্রসঙ্গে পরিচালক এস এ হক অলিকের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ‘আমাদের ছবির বাজারটা আবার পড়ে গেছে। মাঝখানে অনেক আশাবাদী ছিলাম আমরা। কিন্তু আমার ছবিটির আগে চলতি মাসে মুক্তি পাওয়া ছবিগুলোর নির্মাণ ও গল্পে হতাশ হয়েছেন দর্শক। তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ‘এক পৃথিবী প্রেম’ ছবিতে। চলতি বছরে মুক্তি পাওয়া অন্য ছবিগুলোর উপরও তার প্রভাব থাকবে। তবে যে কয়টি হলে আমি গিয়েছি দর্শকরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন ছবিটি দেখে। আসিফ নতুন মুখ। তাকে নিয়ে টেনশান ছিলো। কিন্তু দর্শক তাকে গ্রহণ করেছে তার সাবলীল অভিনয়ের জন্য। আর আইরিনের কিন্তু কিছু দর্শক আছে ইন্ডাস্ট্রিতে। তারা আইরিনকে অভিনন্দিত করেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘তবে ছবিটিতে সবাই দারুণ প্রশংসা করেছেন চার কিংবদন্তি অভিনেতা সৈয়দ হাসান ইমাম, আবুল হায়াত, এটিএম শামসুজ্জামান ও আমিরুল চৌধুরীর। তাদের হাস্যরস ও যাপিত জীবনের দহনে মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন দর্শক। আমি খুব একটা আশাবাদী নই। ছবির গল্প ও নির্মাণে মুন্সিয়ানাটা ধরে রাখতে হবে। দর্শকের বিশ্বাস নষ্ট করা যাবে না।’
নিজের মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম ছবিতে দর্শকদের কাছ থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন-এমন প্রশ্নের উত্তরে আসিফ বললেন, ‘সত্যি কথা বলতে আমি অভিভূত। অনেক ভয় ছিলো খুব খারাপ একটা সময়ে ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে। দর্শক ভালো ছবির উপর বিশ্বাস করে প্রতারিত হয়ে তার উপর বিশ্বাস হারিয়েছেন। তবে ‘এক পৃথিবী প্রেম’ ছবির প্রশংসা করেছেন দর্শক। বেশ কিছু হল মালিক নতুন করে ছবিটি নিতে চাইছেন। এটা আশা জাগানিয়া খবর।’
সবমিলিয়ে বলা চলে বছর শেষে হতাশ করেনি ‘এক পৃথিবী প্রেম’। এই ছবির উপর ভর করে বছরের শেষ সপ্তাহে মুক্তি পাওয়া ছবিগুলোও প্রশংসিত হোক, ব্যবসায়ের মুখ দেখুক- এটাই প্রত্যাশা।
আসিফ-আইরিন ও চার প্রবীন অভিনেতা ছাড়াও ‘এক পৃথিবী প্রেম’ ছবিতে আরো অভিনয় করেছেন তুষার খান, সাদেক বাচ্চু, শর্মিলী আহমেদ। একটি আইটেম গানে নাচতে দেখা যাবে বিপাশা কবিরকে।
যে সব হলে চলছে ‘এক পৃথিবী প্রেম’
বসুন্ধরা সিনেপ্লেক্স- ঢাকা, বলাকা- ঢাকা মধুমিতা- ঢাকা, শ্যামলি- ঢাকা, সনি- ঢাকা, গীত- ঢাকা, পূর্ণিমা- ঢাকা, চিত্রামহল- ঢাকা, শাহীন- ঢাকা, পূনম- ঢাকা,নিউ গুলশান- জিঞ্জিরা, রানী মহল- ডেমরা, চম্পাকলি- টঙ্গী।
চান্দনা- জয়দেবপুর, শাপলা- রংপুর, শঙ্খ- খুলনা, চিত্রালী- খুলনা, নবীন- মানিকগঞ্জ , বনানী- কুষ্টিয়া, সঙ্গীতা- সাতক্ষীরা, সেনা অডিটরিয়াম- ময়মনসিংহ , সেনা অডিটরিয়াম- সাভার, তাজ- নওগাঁ, শান্তনা- হাজীগঞ্জ, কেয়া- টাঙ্গাইল, কল্লোল- মধুপুর, বিজিবি- সিলেট ,আলমাস- চট্টগ্রাম, পূরবী- চট্টগ্রাম, অভিরুচি- বরিশাল,মোহনা- কোনাবাড়ী, উপহার- রাজশাহী, মনোয়ার- জামালপুর, মডার্ন- দিনাজপুর , হ্যাপী- লক্ষীপুর, মৌসুমী-সিরাজগঞ্জ , মনিহার- যশোর, মধুমিতা- কুমিল্লা, চাঁদমহল- কাঁচপুর , মমতা- মাধবদী, রূপকথা- পাবনা, রজনীগন্ধা- চালা।
এলএ/আরআইপি