আমি খুব আনলাকি : নিরব
মডেল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বাজিমাত করেছেন অভিনয়েও। বর্তমানে তিনি ঢাকাই চলচ্চিত্রের ব্যস্ততম অভিনেতা। প্রতিনিয়ত নিত্য নতুন চরিত্রে নিজেকে উপস্থাপনের মাধ্যমে চেষ্টা করে চলেছেন দর্শকদের হৃদয়ে স্থায়ী আসন গড়ে নেয়ার। আজ সন্ধ্যায় জাপানের ওসাকা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ওয়ার্ল্ড রিলিজ হচ্ছে মডেল ও অভিনেতা নিরব অভিনীত মালয়েশিয়ান চলচ্চিত্র ‘বাংলাশিয়া’। জাগোনিউজের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় জানালেন এই ছবিসহ সাম্প্রতিক সময়ের নানা কথা-
জাগোনিউজ : কেমন আছেন?
নিরব : এমনিতে ভালো আছি, তবে মনটা খুব খারাপ। এই মুহূর্তে (আজ সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিট) জাপানের ওসাকা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে আমার অভিনীত ছবির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হচ্ছে। কিন্তু আমি উপস্থিত থাকতে পরিনি। খুব খারাপ লাগছে। অনেক কিছু মিস করলাম।
জাগোনিউজ : গেলেই পারতেন.....
নিরব : যেতে তো চেয়েইছিলাম। কিন্তু ভিসা সংক্রান্ত জটিলতায় তা হলো কই! যাক, আমি নিজে না থাকি, আমার চরিত্রটাতো রয়ে গেছে। আমিই ছবিটির হিরো। আমি কাউকে না দেখলেও সবাই আমাকে দেখবে-এই বেশ (হা হা হা)। আর আমি কল্পনার দৃষ্টিতে যতদূর পারি দেখার চেষ্টা করবো।
জাগোনিউজ : বাংলাশিয়া-ছবিটি সম্পর্কে বলুন?
নিরব : এই ছবিতে কাজ করাটা আমার জন্য দারুণ একটি সুযোগ। মালয়েশিয়ার চলচ্চিত্র নির্মাতা সংস্থা ‘প্রডিজি মিডিয়া এন্টারটেইনমেন্ট’ এর ব্যানারে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যায়ে সিনেমাটি নির্মাণ করা হয়েছে। দৃশ্যধারণের কাজ হয়েছে মালয়েশিয়ার পুচং, সেরামবান, কালাং, চায়না টাউন, পোর্টকালংসহ বিভিন্ন জায়গায়। ৯২ মিনিটের এ সিনেমাটির নাম প্রথমে ‘মাংগালা কাউবয়’ থাকলেও এখন এর নামকরণ করা হয়েছে ‘বাংলাশিয়া’। চলচ্চিত্রটি বাংলা ভাষাসহ মোট ৬টি ভাষায় ডাবিং হয়েছে। ভাষাগুলো হলো- মালে, চায়না, তামিল, থাই, ইংরেজী এবং বাংলা।
জাগোনিউজ : ছবিটিতে আপনার চরিত্রটি কেমন ছিলো?
নিরব : ছবিটি মালয়েশিয়ার প্রেক্ষাপটে ‘এন্টি-গভমেন্ট’ বার্তা নিয়ে তৈরি। দেশটিতে নানা ধরনের অপরাধ এবং প্রবাসীদের সাথে আচরণ নিয়ে অসাধারণ গল্পের ছবি। এখানে আমাকে দেখা যাবে বাংলাদেশ থেকে ভাগ্যের সন্ধানে মালয়েশিয়া যাওয়া এক যুবকের চরিত্রে। যে কখনও বাবুর্চি, কখনও আবার আকাশ ছোঁয়া দালানে চুনকাম করছে। ঘটনাক্রমে সে দুর্ভাগ্যের শিকার হয়ে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলে। শেষভাগে তার মৃত্যু হয়। তবে মৃত্যুর আগে চরিত্রটি একটি বার্তা দিয়ে যায় মালয়েশিয়ানদের। সেটি হলো-ঝগড়া নয়, মানুষের সাথে মিলেমিশে থাকো।
জাগোনিউজ : ছবিটি নাকি নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো?
নিরব : হ্যাঁ। ওই যে বললাম সরকারের বিপক্ষে যায় এমন কিছু বিষয় এতে উঠে এসেছে। তাই মালয়েশিয়া সরকার এটি নিষিদ্ধ করে। কিন্তু ছবির পরিচালক নেম উইর সেখানে খুব জনপ্রিয় আর প্রভাবশালী মিডিয়াব্যক্তিত্ব। তিনি ছবিটি রিলিজের সব রকমের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আমি জেনেছি, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটি প্রদর্শন করা হবে।
জাগোনিউজ : বাংলাশিয়া বাংলাদেশে আসছে কবে?
নিরব : এ বছরে সম্ভব নয়। এ বিষয়ে ছবিটির প্রোডিউসারের সাথে আমার কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন আগামী বছর ছবিটি আমাদের এখানে রিলিজ দেয়া হতে পারে।
জাগোনিউজ : ছবিটিতে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ছিলো?
নিরব : এককথায় অসাধারণ। দুই বছর আগে আমি এ সিনেমায় অভিনয় করেছিলাম। বিদেশিরা কাজের প্রতি অনেক সিরিয়াস আর হেল্পফুল। এটি একটি আন্তর্জাতিক মানের চলচ্চিত্র। কাজ করতে করতে তা মনেই হয়নি। এ সিনেমায় বিদেশী ক্রু ও শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করে অনেক কিছু শিখেছি। প্রায়ই ভোর ৪টায় শুটিং এর জন্য কল থাকতো। সিনেমা নির্মাণের ব্যাপারে তারা বেশ যত্নবান। তাদের কাছ থেকে যা শেখেছি, তা অন্য সিনেমায় কাজে লাগানোর চেষ্টা থাকবে। পরিচালক নেম উইর খুব পপুলার মানুষ। সে মূলত সঙ্গীত পরিচালক। শূটিং করতে পারতাম না ওর জন্য। সবাই এসে ওর অটোগ্রাফ চাইত। এ নিয়ে যেমন বিরক্তি ছিলো, তেমনি মজাও ছিলো। আর আমার নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেছে সিঙ্গাপুরের মডেল-অভিনেত্রী আতিকা সোহাইমি। খুব মিশুক আর মেধাবী ও।
জাগোনিউজ : বর্তমানে ব্যস্ততা কেমন?
নিরব : আগামীকাল (১২ মার্চ) রফিক শিকদারের পরিচালনায় ‘ভোলা তো যায় না তারে’ ছবির শূটিং করতে ঢাকার বাইরে যাচ্ছি। এখানে আমার বিপরীতে তানহা নামের এক নবাগতা অভিনয় করছেন। এছাড়াও শুটিং করবো সাঈফ চন্দনের ‘টার্গেট’ ছবিতে। এতে আমি অমৃতা খানের হিরো হিসেবে কাজ করছি। পাশাপাশি মুক্তির অপেক্ষায় আছে ওয়াকিল আহমেদের ‘লাভ ইন কোরিয়া’, জাকির খানের ‘রাঙা মন’সহ বেশ কিছু ছবি।
জাগোনিউজ : আজকাল ছোট পর্দাতে আপনাকে দেখাই যায় না। তবে কী বড় পর্দাতেই নিয়মিত হচ্ছেন?
নিরব : ব্যাপারটি আসলে সেইরকমই। আমি চেষ্টা করছি বড়পর্দাতেই নিজেকে থিতু করতে। যদিও এটা খুব সহজ হবে না আমার জন্য। অনেক প্রতিযোগীতা আছে, দর্শকদের হলবিমুখতার সমস্যা আছে, পাইরেসীর সমস্যা আছে, গল্প ও চরিত্রে মানের সমস্যা আছে। তবুও লড়াই করছি। দেখা যাক সময় কোথায় নিয়ে দাঁড় করায়। তবে মাঝে মাঝে মনে হয় আমি খুব আনলাকি। ভালো কিছু হাতে পেয়েও ফস্কে যায়। এর আগে কলকাতার এক ছবির জন্য আমি আর রাইমা সেন চুক্তি করলাম। সুচিত্রা সেন আর উত্তমকুমারকে নিয়ে ছবির গল্পটি ছিলো অসাধারণ। এটি হলে আসলেই দর্শকের মাঝে সাড়া ফেলতো। ছবিটা আমার ক্যারিয়ারের জন্য ইতিবাচক তিছু হতে পারতো। কিন্তু সুচিত্রা সেনের মৃত্যুতে কাজটি আটকে গেলো। এরপর অঞ্জন দত্তের ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হলাম। সেখানেও ঝামেলা হচ্ছে। সর্বশেষ দেখুন, আমার ছবি আন্তর্জাতিক বাজারে প্রদর্শিত হচ্ছে অথচ আমি নিজে সেখানে হাজির হতে পারিন। দুর্ভাগ্য আর কাকে বলবেন! এর ফাঁকেই নতুন জীবন শুরু করেছি (বিয়ে)। দোয়া করবেন আমার জন্য।
জাগোনিউজ : আপনার পথচলা সাফল্যমণ্ডিত হোক। জাগোনিউজের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ। সেইসাথে নতুন জীবনের জন্য অভিনন্দন....
নিরব : ধন্যবাদ আপনাকে। জাগোনিউজ পরিবার এবং তার পাঠকদের জন্য ভালোবাসা।
এলএ/পিআর