আরও বড় আন্দোলন নিয়ে আসছেন শিল্পী-নির্মাতারা


প্রকাশিত: ০৯:০৮ এএম, ২০ ডিসেম্বর ২০১৬
ছবি : ইমন

দেশের বিভিন্ন বেসরকারি চ্যানেলে বিদেশি সিরিয়াল বাংলায় ডাবিং করে প্রচার করা হয়েছে। তাও আবার প্রাইম টাইমে! ফলে দেশের সংস্কৃতি ধ্বংসের মুখে পড়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন দেশের শিল্পী-নির্মাতা ও টেলিভিশন পেশাজীবী সমাজ।

এসব সিরিয়াল প্রচার দিন দিন বাড়ছে। ফলে দেশীয় নির্মাতা-শিল্পীদের কাজ কমে যাচ্ছে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণে বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নেমেছে শিল্পী-কলাকুশলীদের ১৪টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনাল অর্গানাইজেশন (এফটিপিও)।

গতকাল সোমবার এফটিপিও দীপ্ত টেলিভিশনের সামনে ‘সুলতান সুলেমান’ অনতিবিলম্বে বন্ধের আন্দোলন করে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আজ মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) রাজধানীর কারওয়ানবাজারে একুশে টিভির সামনে বেলা ১১টায় জড়ো হন এফটিপিও’র সদস্যরা। কারণ এই চ্যানেলটিতে সপ্তাহজুড়ে একযোগে ‘সীমান্তের সুলতান’ ও ‘হাতিম’ নামে দুটি বিদেশি সিরিয়াল বাংলায় ডাবিং করে প্রচার করা হচ্ছে।

এ সময় ডিরেক্টর ডিল্ডের সভাপতি ও নির্মাতা গাজী রাকায়েত বলেন, ‘৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বিদেশি সিরিয়াল বাংলায় ডাবিং করা প্রচার বন্ধ করতে হবে। আগামী বছরের প্রথমদিন থেকেই আমরা বিদেশি সিরিয়ালমুক্ত বাংলাদেশ চাই। নইলে আরো বড় আন্দোলন করা হবে। প্রয়োজনে আমরা অনশনে যাবো। তবু এদেশের টিভিতে কোনো বিদেশি সিরিয়াল ডাবিং করে চালাতে দেয়া হবে না।’

অভিনেতা শহিদুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘মিডিয়া ইউনিটি নামে চ্যানেল মালিকদের একটি সংগঠন ছিল কিছুদিন আগে। যেটা বিদেশি চ্যানেলে বাংলাদেশে অবৈধ বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধের জন্য তৈরি হয়েছিল। আমরা শিল্পীরা তাদের এই সংগঠনের সঙ্গে একাত্ম ছিলাম। মিডিয়া ইউনিটি সরকারের সাহায্যে তাদের সমস্যা সমাধান করে সংগঠন বিলুপ্ত ঘোষণা করে। মিডিয়া ইউনিটির নেতারা বলেছিলেন আমাদের একটি দাবি এবং আপনাদের চারটি। মোট এই পাঁচটি দাবি নিয়ে আমরা একসঙ্গে কাজ করবো। দুঃখের বিষয় মিডিয়া ইউনিটি তাদের দাবি আদায় করে সরে যায়। এখন আমরা চাই আমাদের সমস্যা সমাধানে মিডিয়া ইউনিটির সদস্যরা এগিয়ে আসুক। আমরা যেমন তাদের পাশে থেকেছি, তারাও আমাদের পাশে থাকুন।’   

শিল্পী সংঘের সাধারন সম্পাদক ও অভিনেতা আহসান হাবিব নাসিম বলেন, ‘বিদেশি সিরিয়ালের কারণে আমাদের শিল্পীদের পেশাদারিত্ব হুমকির মুখে পড়ে যাচ্ছে। এই অবস্থা চলতে দেয়া যাবেনা।’

তিনি বলেন, ‘একুশে টিভির সম্প্রচার চালুর জন্য আমরা একসময় সংঘবদ্ধ হয়েছিলাম। অথচ আজ শুধুমাত্র এই বিদেশি সিরিয়ালের জন্য একুশের টিভির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে হচ্ছে।’

এফটিপিও’র আহবায়ক মামুনুর রশিদ বলেন, ‘একুশে টিভি যখন বন্ধ ছিল তখন তার প্রচারে আসার জন্য আমরা শহীদ মিনারে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। তাদের কান্না আমরা শুনেছিলাম। দুঃখের কথা হচ্ছে, সেই একুশে টিভির বিরুদ্ধে এখন কথা বলতে হচ্ছে। তারা এখন আমাদের কান্না দেখছেন না!’

তিনি বলেন, ‘একটি চক্র মিডিয়া থেকে বিতাড়িত। তারা এই ডাবিং সিরিয়াল নিয়ে আজেবাজে কথা ছড়াচ্ছে। পরিস্কার করে বলতে চাই- দেশের সংস্কৃতি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাঁচাতেই আমরা আজ রাস্তায় নেমে এসেছি। আমাদের এই দাবি না মানলে আরো বড় আন্দোলন করা হবে।’

এই নাট্যব্যক্তিত্ব আরো বলেন, ‘এখন যিনি প্রধানমন্ত্রী, তিনি এর আগেও একবার শিল্পীদের দাবির মুখে ১৭টি বিদেশি সিরিয়াল বন্ধ করেছিলেন। এখন তো ১৭টি নয়, খুবই কম। তবে কেন পারবেন না? কেন এই দেশের দর্শককে ঠকানো হচ্ছে বিনোদনের নামে? কেন আমরা আলিফ লায়লা, সুলতান সুলেমান, হাতিমের মতো সিরিয়াল দেখবো। বিদেশি কল্প-কাহিনী আর সংস্কৃতি কৌশলে আমাদের দেশে প্রবেশ করিয়ে দেশীয় সংস্কৃতিকে হুমকিতে ফেলা হচ্ছে। পরকীয়ার গল্প, নোংরামিতে ভরপুর বাদশাহি হেরেমের দৃশ্য দেখানো হচ্ছে। এসব বন্ধ করা জরুরি। আর নেপাল, শ্রীলঙ্কা যদি তাদের দেশে ভারতীয় চ্যানেল বন্ধ রাখতে পারে তবে আমরা কেন পারছি না। এটাও এখন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।’

আগামীতে বিদেশি সিরিয়াল বাংলায় ডাবিংকৃত প্রচার হওয়া আরো বেশ কিছু চ্যানেলের সামনে অবস্থান নেয়ার দিন ঘোষণা করেন মামুনুর রশীদ। তিনি বলেন, আগামী ২৮ তারিখ এসএ টিভি এবং ২৯ তারিখ মাছরাঙা টিভির সামনে অবস্থান নেবে এফটিপিও’র নেতাকর্মীরা।

এনই/এলএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।