শাবনূরের সেরা ১০ চলচ্চিত্র


প্রকাশিত: ০৭:৪২ এএম, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৬

একজন মানুষ যখন সফল হন, তখন তার সবকিছু সফল হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি বিখ্যাত বানী। তাই প্রায় দেড় শতাধিক ছবিতে অভিনয় করা শাবনূরের মতো নন্দিত অভিনেত্রীর সেরা ১০টি চলচ্চিত্র বাছাই করা যথেষ্ট কঠিন এবং হাস্যকর কাজ।

তবুও, কিছু কাজ থেকে যায় মানুষের যা তাকে অমর করে রাখে। সবার থেকে আলাদা করে অনন্য করে রাখে। তেমনি যাছাই বিশ্লেষণ করে শাবনূরের সেরা ১০টি ছবির তালিকা তৈরির মতো কঠিন একটি কাজ করা হলো।

শাবনূর বর্তমানে অভিনয় না করলেও নতুন প্রজন্মের কাছে তার আবেদন মোটেও অনুপস্থিত নয়। বরং এই সময়ের নায়িকাদের চেয়ে অনেক বেশিই আবেদন রয়েছে শাবনূরের। মাঝেমধ্যে সিনেমা হলগুলোতে শাবনূরের পুরনো ছবি প্রদর্শিত হলে তার প্রমাণ মেলে। সেই ভাবনা থেকেই শাবনূরের সেরা ১০টি ছবির তালিকা দেয়া হলো। যা শাবনূরের নতুন ভক্তদের বিনোদিত করবে।

তোমাকে চাই (১৯৯৪) : এটি মূলত সালমান শাহর চলচ্চিত্র। স্টাইলিশ, মুডি সালমানকে দেখতে এ ছবি আপনাকে দেখতেই হবে। অন্যদিকে শাবনূরকে দেখতে হবে কী করে তিনি পরিণত হচ্ছেন। ধনী-গরীব প্রেমের চলচ্চিত্রটিতে দারুণ কিছু আবেগী মুহূর্ত রয়েছে। আর রয়েছে অসাধারণ কিছু গান। যা এখনো শ্রোতাদের আবিষ্ট করে রাখে। এ চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত হয়েছে বিখ্যাত ‘ভাল আছি ভাল থেকো’ গানটি। গানটির অসাধারণ দৃশ্যায়নে সবাইকে চমকে দিয়েছেন পরিচালক মতিন রহমান।

স্বপ্নের ঠিকানা (১৯৯৫) : সালমান শাহ-শাবনূর জুটির অন্যতম সফল চলচ্চিত্র এটি। এম এ খালেক অতি প্রচলিত ধনী-গরীব ফর্মূলায় ছবিটি নির্মাণ করেন। কিন্তু টানটান চিত্রনাট্য, সফল কিছু গান ও অভিনয়ের কারণে ছবিটি মোটামুটি ক্লাসিক হয়ে গেছে। এ ছাড়া পাবেন পরিণত শাবনূরকে।

বিয়ের ফুল (১৯৯৮) : মতিন রহমান পরিচালিত এ চলচ্চিত্রটি মুম্বাইয়ের ‘দিওয়ানা’র অফিসিয়াল রিমেক। শাবনূরের অভিনয় ও গানই এ ছবির প্রাণ। আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল হিন্দি ছবির গানগুলো না রেখে নতুন কিছু সুর তৈরি করেছেন। এর মধ্যে ‘তোমায় দেখলে মনে হয়’ গানটি এখনো জনপ্রিয়। শাবনূরের সঙ্গে অভিনয় করেছেন রিয়াজ ও শাকিল খান। এ ছবিতে পরিণত অভিনয়শৈলীতে শাবনূরের ভিন্ন দুটি দিক দর্শকের মনে দাগ কাটে। ছবির প্রথম অর্ধেকের চপলতা ও দ্বিতীয় অর্ধেকের টানাপোড়ন দর্শককে ধরে রাখে।

নারীর মন (১৯৯৯) : বিয়ের ফুল ছবির অভাবনীয় সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে মতিন রহমান পরের বছরই নির্মাণ করেন ‘নারীর মন’ ছবি। এটিও বলিউডের একটি ছবির কপিরাইট নিয়ে তৈরি করা। এই ছবিতেও শাবনূরের নায়ক হিসেবে পর্দায় আসেন রিয়াজ ও শাকিল খান। একজন নারীর মন পেতে দুই বন্ধুর সাধনা করে যাবার গল্প নিয়েই এই ছবি। ছবিটি একদিকে যেমন ব্যবসায়িক সাফল্য পেয়েছিলো তেমনি অন্যদিকে জনপ্রিয়তার আঁকাশ ছুঁয়েছিলেন শাবনূর। তার সাবলীল অভিনয় দিয়ে তিনি পরিণত হয়েছিলেন ইন্ডাস্ট্রির তুরুপের তাস।  

শ্বশুরবাড়ী জিন্দাবাদ (২০০১) : কমেডি, রোমান্টিক ঘরানার এই ছবিটি শাবনূরকে দিয়েছিলো অন্যরকম জনপ্রিয়তা। এর পরিচালক ছিলেন দেবাশীষ বিশ্বাস। রিয়াজের বিপরীতে শাবনূরের এই ছবিটি দারুণ ব্যবসা সফল হয়েছিলো। ছবির গল্পে দেখা যায় মিসেস দিলরুবা চৌধুরী ব্যবসায় টাকা খাটিয়ে আলিশান বাড়ী ও চৌধুরী এন্ড কোম্পনী নামে বিরাট ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান করেছেন। স্বভাবে তিনি রাগী, বদমেজাজী। অফিস ও বাড়িতে নিজের মনগড়া নিয়মে সবাইকে চলতে বাধ্য করেন। তার স্বামী আরমান চৌধুরী বিশিষ্ট ভদ্রলোক। কলিজার জোর কম থাকায় স্ত্রীর ইচ্ছে মত তাকে চলতে হয়। বড় মেয়ে শাবনূর প্রেমা চৌধুরী স্বভাবে নম্র ভদ্র, অনেকটা বাবার মত। মিসেস দিলরুবা চৌধুরীর বিজনেস পার্টনার মি. মজুমদার এর প্রচুর অর্থ থাকায় তার আধপাগল একমাত্র ছেলে ইমনের সাথে প্রেমার বিয়ে ঠিক করে। প্রতিবাদ করতে না পেরে আরমান চৌধুরী প্রেমাকে পলাশপুরে বন্ধু রাজিব খন্দকার এর বাড়ীতে পাঠিয়ে দেন। রাজিব খন্দকার নিঃসন্তান থাকায় মটর মেকানিক বাঁধন চরিত্রের রিয়াজকে ছোটবলা থেকেই সন্তান স্নেহে বড় করেছেন। একসময় বাঁধন ও প্রেমা দুজন দুজনার কাছে চলে আসে। আরমান চৌধুরী ওদের ভালবাসা পরখ করে তাদের বিয়ে দিয়ে দেন। কিন্তু দিলরুবা চৌধুরী এ বিয়েটা কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। তা নিয়েই হাস্যরসে ছবিটির গল্প।

ভালবাসা কারে কয় (২০০২) : জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক জাকির হোসেন রাজুর ভিন্ন ধরনের ভালবাসার গল্প এটি। সন্ত্রাসী রিয়াজের অতি আবেগ ও তার হাত থেকে রেহাই পেতে শাবনূরের প্রত্যাখ্যান এ ছবিতে প্রেমের নতুন ব্যাঞ্জনা তৈরি করে। বিয়োগান্তিক পরিণতির চলচ্চিত্রটি দর্শক বেশ পছন্দ করেন। এ ছবিতে আরো অভিনয় করেন রাজিব ও বাপ্পারাজ।

সুন্দরী বধূ (২০০২) : জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘বৈকুণ্ঠের উইল’ উপন্যাস অবলম্বনে ছবিটি নির্মাণ করেছিলেন প্রখ্যাত পরিচালক আমজাদ হোসেন। ছবিটিতে চিরায়ত বাঙালি বধূর চরিত্রে হাজির হন শাবনূর। রোমান্টিক নায়িকাকে স্বামী-সংসার দরদী আদর্শ গৃহবধু রূপে পেয়ে দর্শক হলে গিয়েছিলো মনের আনন্দে। ছবিতে শাবনূরের বিপরীতে ছিলেন তার প্রিয় নায়ক রিয়াজ। সেইসময়ের বাজারে দারুণ ব্যবসা করেছিলো ‘সুন্দরী বধূ’।

মোল্লা বাড়ির বউ (২০০৫) : এটিএম শামসুজ্জামানের গল্পে নির্মিত একটি জনপ্রিয় চলচ্চিত্র। ‘মোল্লা বাড়ির বউ’ নির্মাণ করেন টেলিভিশন নাটকের জনপ্রিয় নির্মাতা সালাউদ্দিন লাভলু। রিয়াজের বিপরীতে অভিনয় করেন শাবনূর ও মৌসুমী। শাবনূরের সহজাত কমিক সবাইকে হাসায়। বিশেষ করে মৌসুমীর বিষাদের বিপরীতে এটি ছিল স্বস্তির জায়গা। কিন্তু পরিণতিতে সবার মন আর্দ্র করে দেন শাবনূর।

দুই নয়নের আলো (২০০৬) : মোস্তাফিজুর রহমান মানিক পরিচালিত এ চলচ্চিত্রে শাবনূরের বিপরীতে ছিলেন তিন তিনজন নায়ক। ফেরদৌস, শাকিল খান ও রিয়াজ। কিন্তু শাবনূরের দাপটে কারও কিছু করারই ছিল না। অবশ্য কাহিনিও কাহিনিনির্ভর। নিম্নবিত্ত একটি মেয়ের জীবন-সংগ্রাম ও মর্যাদার লড়াই নিয়ে ‘দুই নয়নের আলো’র কাহিনি আবর্তিত হয়েছে। শাবনূর ভালোভাবে উৎরে গেছেন। এই ছবিটি দিয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন শাবনূর।

নিরন্তর (২০০৬) : হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস ‘জনম জনম’ অবলম্বনে আবু সাইয়ীদের অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র ‘নিরন্তর’। বাবার অন্ধত্বের কারণে তিথিদের পরিবারে আকস্মিক দুর্যোগ নেমে আসে। কোনো চাকরি যোগাড় করতে না পেরে তিথি অন্ধকার পথে পা বাড়ায়। ছোট ভাইয়ের ব্যবসায় এক সময় তিথিদের পরিবার সচ্ছলতা ফিরে পায়। তিথিও দেহব্যবসা ছেড়ে দেয়। কিন্তু তার জীবন দিন দিন ফ্যাকাসে হতে থাকে। অফ ট্র্যাক পরিচালকের চাহিদার কারণে শাবনূর খানিক নিষ্প্রভ। তারপরও শাবনূরকে চিনতে ভুল হয় না।

এলএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।