নীরবেই কেটেছে হাসন রাজার মৃত্যুবার্ষিকী


প্রকাশিত: ০৯:২৮ এএম, ০৬ ডিসেম্বর ২০১৬

নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের শৈশব কেটেছে সিলেটে। আর ওই অঞ্চলের মরমি কবি দেওয়ান হাসন রাজা। হতে পারে লেখকের শৈশবের কোনো মধুর স্মৃতিতে হাছন রাজা জড়িয়ে আছেন। সেই স্মৃতিই বারবার টেনে নিয়ে গেছে হুমায়ূনকে জমিদার কবি হাসন রাজার কাছে।

হুমায়ূন আহমেদের নাটক-ছবিসহ নানা সৃষ্টিতে হাসন রাজার গানের আলাদা একটা কদর ছিল। এই সংগীত সাধকের গানকে তিনি উপস্থাপন করেছেন নান্দনিকতায়। অনেকেই বলেন হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্টির মধ্য দিয়ে নতুন করে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছিল হাসন রাজার গানের। বিশেষ করে একটা সময় আধুনিক শহুরে তরুণরা হাসন রাজার গানের প্রতি মনোযোগী হয়েছেন ঝুঁকেছেন ‌‘আজ রবিবার’র মতো নাটক দেখে দেখে। হুমায়ূন আহমেদের মতো আরো অনেক লেখক-নির্মাতা, সংগীত অনুরাগীরাই প্রভাবিত হয়েছেন হাসন রাজার গান-সৃষ্টিকর্মে।

বিশ্ব লোকগানে উজ্জ্বল নক্ষত্র হাসন রাজা। বাউল সাধক লালনের সঙ্গেই উচ্চারিত হয় হাছনের নাম। লোকমুখে তিনি কিংবদন্তি। তাই আপন আলোয় চিরভাস্বর রইবেন তিনি ‘আমি না লইলাম আল্লাজীর নাম রে’, ‘বাউলা কে বানাইল রে’, ‘লোকে বলে বলে রে ঘর বাড়ি বালা নায় আমার’, ‘নেশা লাগিলো রে’, ‘মাটিরও পিঞ্জিরার মাঝে’ সহ অসংখ্য গানের রচয়িতা হিসেবে।

তার প্রমাণ, আজও পথে ঘাটে, মাঠে-প্রান্তরে শুনতে পাওয়া যায় হাসনের গান। পরিতাপের বিষয় আনুষ্ঠানিকতায় নেই কবি হাসন রাজা। নীরবেই আসে তার জন্মদিন, নীরবেই চলে যায় মৃত্যুবার্ষিকীও। এককালে যে জমিদারের চোখের ইশারায় হাজার হাজার মানুষের মজমা বসতো, যে কবি-সাধকের আড্ডায় মেতে থাকতো এলাকার মানুষজন সেই হাছন রাজা এখন উপেক্ষিত রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়। লালন সাঁইয়ের মতো গুরু-শিষ্যের পরম্পরা তিনি তৈরি করে যাননি। তাই তার মাজারকে ঘিরে শিষ্যদের তেমন আনুষ্ঠানিকতাও চোখে পড়ে না, কর্পোরেট ব্যবসাও জমে ওঠে না।

সেই করুণ প্রমাণই মিললো আজ মঙ্গলবার হাসন রাজার মৃত্যুবার্ষিকীতে। ১৯২২ সালের ৬ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন এই বিখ্যাত সাধক পুরুষ। আজ বেলা ২টা পর্যন্ত সুনামগঞ্জ জেলা শহর ঘুরে দেখা গেছে, হাসন রাজার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে উল্লেখ করার মতো কোনো অনুষ্ঠান নেই। অনেকটা নীরবেই কাটছে তার মৃত্যুবার্ষিকী।

হাসন রাজার প্রপৌত্র দেওয়ান গণিউল সালাদীন জাগো নিউজকে বলেন, ‘হাছন রাজা ট্রাস্টের উদ্যোগে স্থানীয় হাসন রাজা মিউজিয়ামে সন্ধ্যায় এ উপলক্ষে ছোট পরিসরে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়েছে।’

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় কোনো কর্মসূচি পালন হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগামী ২১ ডিসেম্বর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সরকারিভাবে নানা কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানতে পেরেছি। আমি নিশ্চিত নই।’

এদিকে জেলা শিল্পকলায়ও দিনটিকে ঘিরে কোনো আয়োজন চোখে পড়েনি।

জানা যায়, ১৮৫৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ শহরের লক্ষণশ্রী গ্রামের এক ধনাঢ্য জমিদার পরিবারে জন্ম নেয়া হাসন রাজা তার জীবনের বিভিন্ন সময়ে অসংখ্য গান রচনা করেছেন। তার গানে সহজ-সরল স্বাভাবিক ভাষায় মানবতার চিরন্তনী বাণী যেমন উচ্চারিত হয়েছিল তেমনি আধ্যাত্মিক কবিও ছিলেন তিনি। সব ধর্মের বিভেদ ভুলে গেয়েছেন মাটি ও মানুষের গান।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯২৫ সালে কলকাতায় এবং ১৯৩৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এক সভায় দেয়া বক্তব্যে হাসন রাজার গানের প্রশংসা করেছিলেন। কিন্তু বিখ্যাত এই মরমী সাধকের জীবন-দর্শন ও গানের চর্চা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে হয় না বললেই চলে।

হাসন রাজার মৃত্যু ও জন্মবার্ষিকী ঘিরে প্রতি বছর সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পালন ও হাসন মেলার দাবি তুলেছেন হাওর জনপদের বাসিন্দারা।

রাজু আহমেদ রমজান/এলএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।