রঙিন পোশাকে নির্মাতা-শিল্পীদের সমাবেশ কাল


প্রকাশিত: ০৭:৫১ এএম, ২৯ নভেম্বর ২০১৬

দেশীয় চ্যানেলে বিদেশি সিরিয়াল বন্ধ করাসহ পাঁচ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশনের (এফটিপিও)। এটি হলো টেলিভিশনে পেশাজীবী সংগঠনগুলোর স্বার্থ সংরক্ষণে মিডিয়ার ১২টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত একটি সংগঠন। যাকে কেন্দ্র করেই টেলিভিশন মালিকদের নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে এক হয়েছে সমগ্র শোবিজ। এখানে আছেন শিল্পী, নাট্যকার, নির্মাতা, প্রযোজক, ক্যামেরামেন, টেকনিশিয়ানসহ নানা টেলিভিশনের সঙ্গে জড়িত নানা পেশাজীবীরা।

তাদের পাঁচটি দাবি হচ্ছে- দেশের বেসরকারি চ্যানেলে বাংলায় ডাবিংকৃত বিদেশি সিরিয়াল বা অনুষ্ঠান বন্ধ, টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাণ, ক্রয় ও প্রচারের ক্ষেত্রে ক্লায়েন্ট/এজেন্সির হস্তক্ষেপ ব্যতীত চ্যানেলের অনুষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ, দেশের টেলিভিশন শিল্পে বিদেশি শিল্পী ও কলাকুশলীদের অবৈধভাবে কাজ করা বন্ধ, টেলিভিশন শিল্পের সর্বক্ষেত্রে এআইটির ন্যূনতম ও যৌক্তিক হার পুনর্নির্ধারণ ও ডাউন লিঙ্ক চ্যানেলের মাধ্যমে বিদেশি চ্যানেলে দেশীয় বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ করা।

এই দাবি আদায়ের লক্ষে এফটিপিও’র নেতৃত্বে আগামীকাল ৩০ নভেম্বর রাজধানীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উপস্থিত হবেন সবাই। সকাল ১০টা থেকে জমায়েত হবেন সবাই। থাকবেন সারাদিন। গেল কয়েকদিন ধরে চলছে তারই প্রস্তুতি-প্রচারণা। প্রচারণার জন্য সবাই ব্যবহার করছেন ফেসবুককে। সেখানে সমাবেশের তথ্য সম্বলিত ছবি ও ভিডিও’র মাধ্যমে নির্মাতা-শিল্পীরা শোবিজের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকেই শহীদ মিনারে উপস্থিত থাকার আহ্বান জানাচ্ছেন।

সমাবেশকে ঘিরে আজকে চলছে প্রস্তুতি। বানানো হচ্ছে ব্যানার ফেস্টুন। বন্টন করা হচ্ছে দায়িত্ব। কোনোরকম বিশৃঙ্খলা ছাড়াই প্রায় ১৫-২০ হাজার মানুষের সমাবেশ আশা করছে এফটিপিও। সমাবেশের নেতৃত্বে থাকবেন সংগঠনটির আহ্বায়ক নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ। তিনি বলেন, ‘এটা কোনো রক্তক্ষয়ী আন্দোলন হবে না। আমরা শিল্পীরা কেবল এক হবো নিজেদের দাবিগুলো নিয়ে। দেশের দর্শকদের জানা উচিত কেন, কীভাবে ধ্বংস হচ্ছে দেশীয় নাটক-অনুষ্ঠান। আমরা সরকার ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। জানাতে চাই টেলিভিশন মালিকেরা কীভাবে জিম্মি করে রেখেছে নির্মাণ প্রক্রিয়াকে! জানাতে চাই, এই শিল্পে কতো অনিয়ম আর দুর্নীতি। আমরা কোনো রকম বিশৃঙ্খলা আশা করি না। তাই সব রকম দুর্ঘটনা এড়াতে আমাদের সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সমাবেশের জন্য রাষ্ট্রীয় আইনের যে ব্যবস্থা সেটিও মেনে চলেছি আমার। আমাদের বিশ্বাস, এই সমাবেশ অনেক ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে টেলিভিশন শিল্পের জন্য।’

এদিকে এফটিপিও’র সদস্য সচিব এবং ডিরেক্টর’স গিল্ডের গাজী রাকায়েত বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত সুষ্ঠু এবং পরিচ্ছন্ন একটি আন্দোলন করতে যাচ্ছি আমাদের দাবি আদায়ের লক্ষে। সত্যি, আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আজকের সবার যে ক্ষোভ তা এমনি এমনি হয়ে যায়নি। এটা দিনে দিনে বঞ্চিত হতে হতে মাত্রা ছাড়িয়ে তৈরি হয়েছে। এই ক্ষোভকে কেন্দ্র করেই আমরা এক হতে যাচ্ছি। যারা আসবে না, তারা অবশ্যই আমাদের বিরুদ্ধে। তাদের আমরা মনে রেখে দেবো কালো কালিতে দাগ দিয়ে। যে কোনো চ্যানেল চাইলে তারাও এসে আমাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করতে পারে। দেশীয় শিল্প-সংস্কৃতি ধ্বংস করে কোনোদিন ব্যবসা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। এটা বোঝতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘সবার কাছে অনুরোধ থাকবে অনেকেই চাইবে এই সমাবেশ ভন্ডুল করতে, ব্যর্থ করে দিতে। আমাদের সচেতন থাকতে হবে। নিজেদের মধ্যে দায়িত্ববোধ জাগ্রত করে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সাহায্য করতে হবে। আর নগরবাসীদের কাছেও আমরা সাহায্য কামনা করি।’

এদিকে অভিনয় শিল্পী সংঘের সদস্য সচিব আহসান হাবিব নাসিম জানালেন, রঙ্গিন পোশাকে সমাবেশ করবেন অভিনয় শিল্পী, পরিচালক, প্রযোজক ও নাট্যকাররা। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগামীকালের সমাবেশের জোটে অন্তর্ভুক্ত সংগঠনগুলোর সদস্যরা সমাবেশে বিভিন্ন রঙের পোশাক পরে উপস্থিত হবেন। লাল পোশাকে থাকবেন অভিনয়শিল্পী সংঘের সদস্যরা। পরিচালকরা পরবেন সবুজ, নাট্যকাররা সাদা ও প্রযোজকরা নীল পোশাকে উপস্থিত হবেন।’

অভিনেতা শহীদুল আলম সাচ্চু বলেন, ‘শিল্পী ও কলাকুশলীদের কোনঠাসা করে কখনোই শিল্প দাঁড়াতে পারে না। সেই প্রতিবাদ নিয়েই আমরা সবাই কাল শহীদ মিনারে আসছি। আশা করবো এই সংশ্লিষ্ট সবাই উপস্থিত থাকবেন। একসাথে এক হয়ে বলতে চাই, শিল্প বাঁচি-শিল্প বাঁচাই।’

সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন সৈয়দ হাসান ইমাম, ড. ইনামুল হক, জাহিদ হাসান, তৌকির আহমেদ, শহীদুজ্জামান সেলিম, আজিজুল হাকিম, মাহফুজ আহমেদ, তারিন, দীপা খন্দকার, তানভীন সুইটি, চয়নিকা চৌধুরী, চঞ্চল চৌধুরী, বৃন্দাবন দাস, শাহনাজ খুশি, ফজলুর রহমান বাবু, আ খ ম হাসান, বন্যা মির্জা, মাজনুন মিজান, মীর সাব্বির, ফারহানা মিলি, রিয়াজ, পূর্ণিমা, রওনক হাসান, মৌসুমি হামিদ, মিশু সাব্বির, ভাবনা, মনোয়ার পাঠান, আলী বশিরসহ প্রায় সব শিল্পী ও কলাকুশলীরা।

সমাবেশ হোক শিল্প ও সংস্কৃতিতে বৈদেশিক আগ্রাসন রোধে হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালার সুর। সেই সুরে ভেসে যাক সকল অসুন্দর, অনিশ্চিত, অনিয়ম। দুধে ভাতে থাকুক আমাদের শিল্পী ও কলাকুশলীরা। তবেই বিনোদিত থাকবে দেশের দর্শক, সফল হবে টেলিভিশনকে ঘিরে সকল বাণিজ্য ও সেবা। জয় হোক বিপ্লবের!

এলএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।