চৌরাসিয়ার বাঁশিতে শেষ হলো এবারের উৎসব
সুরের সমঝদারদের মন মজাতে শুরু হয়েছিলো বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সংগীত উৎসব। পাঁচ দিনব্যাপী এই উৎসবের পঞ্চম আসরে এসেছিলেন দেশ-বিদেশের বিখ্যাত সব শিল্পী ও বাদকেরা।
বিশ্ব বরেণ্য বংশীবাদক হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার বাঁশির সুরের মূর্ছনা নিয়েই শেষ হলো উৎসব। হেমন্তের রাতে তার বাঁশির সুরে মন্ত্রমুগ্ধ হয়েছিলো ঢাকার আর্মি স্টেডিয়াম। শেষ দিনের আকর্ষণ ছিলেন ৭৮ বছর বয়সী এই কিংবদন্তি। আর তিনি ছিলেন সর্বশেষ শিল্পী। তাই উৎসবে মানুষের ভিড় সন্ধ্যা থেকে কম থাকলেও ১১টা থেকেই জমে উঠতে থাকে প্রাঙ্গণ।
সোমবার বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের পঞ্চম আসরের শেষ শিল্পী হিসেবে হরিপ্রসাদ মঞ্চে আসেন যখন ঘড়ির কাঁটা রাত ৩টা ৪০ মিনিটের ঘরে। ততোক্ষণে মূলমঞ্চের সামনে-পেছনে, স্টেডিয়ামের এখানে সেখানে কেবলই মানুষেরই ঢল!
শেষ রাতে বাঁশি বাজিয়ে ভোরকে আমন্ত্রণ জানালেন আর উৎসবকে বিদায় দিলেন হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া। উৎসব শেষ হয় তার পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। ঘড়ির কাঁটা তখন ভোর ৫টা ৫ মিনিট। কিন্তু শ্রোতারা যেতে দিতে নারাজ! তিনি বললেন- আমি পুরোদিন বাজাতে পারবো! শেষমেষ সবাই দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানান তাকে। এই ভালোবাসাকে জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওয়া বলে বাংলােদেশের বাঁশি প্রেমিকদের সামনে হৃদয় নত করে ফিরে গেলেন চৌরাসিয়া।
তার আগে মঞ্চে এসে হরিপ্রসাদের হাতে উৎসব স্মারক তুলে দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
সমাপনী দিনে শিল্পী তালিকায় ছিলো শাস্ত্রীয়সংগীতের বড় বড় দিকপালের নাম। সন্তুরে শিবকুমার শর্মা তো ছিলেনই, ছিলেন পন্ডিত যোগেশ শামসি, পন্ডিত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ও আজিঙ্কা যোশি (তবলা), আরতী আঙ্কালিকার ও কুমার মারদুর (খেয়াল), পন্ডিত কুশল দাস (সেতার)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের দলীয় কণ্ঠসংগীতও ছিলো শেষ দিনের বিশেষ পরিবেশনা।
উৎসব শেষে সবার চোখে মুখে দারুণ এক দীপ্তি। নতুন দিনকে বরণ করে ঘরে ফেরার পথে সবাই। অন্তরে রইলো সুর আর সুর। ব্যস্ত-নাগরিক জীবনে বন্দি হাজার হাজার মানুষকে একটু বৈচিত্র দিতে, হৃদয়কে প্রফুল্ল করে দিতে পাঁচ দিনের এই সুরের উৎসব নিয়ে এসে হেমন্তকে রঙিন করে দেয়ার জন্য বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সংগীতের আয়োজকদের ধন্যবাদ দেয়াই যায়।
এলএ