চাঁদনী সন্ধ্যায় তারকাদের হাট


প্রকাশিত: ০৭:৪৬ এএম, ২০ নভেম্বর ২০১৬

নব্বই দশকের জনপ্রিয় জুটি নাইম-শাবনাজের আমন্ত্রণে একে একে যখন সব তারকা মঞ্চে উঠে এলেন চিত্রনায়ক ওমর সানি বলে উঠলেন, ‘আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে এতো তারকাকে একসঙ্গে একমঞ্চে দেখা এই প্রথম।’ সত্যি ব্যাপারটা তাই ছিল। বাকের ভাই খ্যাত অভিনেতা ও বর্তমান সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, চম্পা, নাইম-শাবনাজ, মৌসুমী-সানি, ফেরদৌস, বাপ্পারাজ, পপি, পূর্ণিমা, বিদ্যা সিনহা মিম, কেয়া, আমিন খান, ইমন- এমনই ডজন খানেকেরও বেশি নাম। স্বভাবতই হলরুমে তখন উল্লাসধ্বনি আর আলোকচিত্রীদের ক্যামেরার আলোর ঝলকানিতে নেমে এসেছিল আনন্দের অনন্য এক মুহূর্ত।

chadni

গতকাল শনিবার (১৯ নভেম্বর) নাইম-শাবনাজের আয়োজনে ‘চাঁদনী’ সন্ধ্যায় গুলশানের এমানুয়েলস ব্যানকুটে ঠিক যেন তারার হাট বসেছিল। উপলক্ষ ঢাকাই চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি এহতেশাম পরিচালিত নাইম-শাবনাজ জুটির প্রথম ছবি ‘চাঁদনী’ মুক্তির ২৫ বছর অর্থাৎ রজতজয়ন্তী উদযাপন। ১৯৯১ সালের ৪ অক্টোবর ‘চাঁদনী’ ছবির মাধ্যমে এই তারকা জুটির অভিষেক হয় চলচ্চিত্রে। সে হিসাবে ৪ অক্টোবর ছবিটি মুক্তির ২৫ বছর অতিক্রম করেছে। তাকে ঘিরেই ‘চাঁদনী’ সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্র, নাটক ও সংগীতাঙ্গনের নানা প্রজন্মের তারকারা এসেছিলেন নাইম-শাবনাজ দম্পতিকে শুভেচ্ছা জানাতে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চিত্রপরিচালক আজিজুর রহমান। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সেখানে বিভিন্ন প্রজন্মের নায়কদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন, ওমর সানি, ফেরদৌস, আমিন খান, রিয়াজ,  বাপ্পারাজ, সম্রাট, জায়েদ খান, ইমন, আরেফিন শুভসহ আরও অনেকে। নায়িকাদের মধ্যে ছিলেন কবরী, অঞ্জনা, চম্পা, অরুণা বিশ্বাস, শিল্পী, মৌসুমী, কেয়া, নিপুণ, পপি, পূর্ণিমা, বিদ্যা সিনহা মিম, শাবনাজের ছোট বোন তাহমিনা সুলতানা মৌসহ অনেকেই।

chadni

আরো ছিলেন এটিএম শামসুজ্জামান, মতিন রহমান, সাদেক বাচ্চু, মিশা সওদাগর, নকীব খান, আফসানা মিমি, তারিন, মৌসুমী নাগ, দীপা খন্দকার, তানভীন সুইটি, নওশীন, হিল্লোল, ফারহানা নিশো, দিঠি আনোয়ার, প্রতীক হাসানসহ দেড় শতাধিক তারকা। উপস্থিত ছিলেন নাইম-শাবনাজের দুই মেয়ে মাহাদিয়া ও নামিরা এবং এহতেশামের পরিবারের সদস্যরাও। অনুষ্ঠানের নতুন মাত্রা যোগ করে উপস্থিত ছিলেন দেশের বিভিন্ন মাধ্যমের বিনোদন সাংবাদিকরাও।

অনুষ্ঠানে ‘চাঁদনী’ ছবির পরিচালক এহতেশামের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। প্রদর্শিত হয় দুটি তথ্যচিত্রও। এর একটি ছিল চলচ্চিত্রে এহতেশামের বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের এক ঝলক। অন্যটিতে ছিল নাইম ও শাবনাজের সংক্ষিপ্ত বায়োগ্রাফি। দুটি তথ্যচিত্রের ধারা বর্ণনা দেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুবর্ণা মুস্তাফা।

chadni

আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘চলচ্চিত্রে কী দারুণ দিন ছিল আমাদের। কতো অভাব-অভিযোগের মাঝেও আমরা উর্দু-হিন্দি ভাষার চলচ্চিত্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে নান্দনিক ছবি বানিয়েছি। হঠাৎ মাঝপথে আমাদের চলচ্চিত্রে কেমন যেন ভাটা নেমে এলো। তবে সেই সোনালি দিনে যারা আমাদের দেশীয় চলচ্চিত্রকে জমজমাট করে তুলেছিলেন আজকের অনুষ্ঠানের আয়োজক নাইম-শাবনাজ দম্পতি তাদের মধ্যে অন্যতম। এতো প্রিয় মুখ, এতোসব সংস্কৃতির মানুষ একসঙ্গে দেখলেই মনটা ভালো হয়ে যায়। আরো অনেক দিন বেঁচে থাকার ইচ্ছা জাগে। এমন আয়োজনের জন্য এই দম্পতিকে আমি ধন্যবাদ জানাই। সেই সঙ্গে আজকের ‘চাঁদনী’ সন্ধ্যায় তাদের অভিনন্দিত করছি, তাদের প্রথম ছবিটির রজতজয়ন্তীতে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এ আয়োজনে এসে অনেক কথাই মনে পড়ছে। এই ছবির জুটি এখন আর অভিনয় করেন না। ভালো লাগার বিষয় হলো তারা এখনও চলচ্চিত্র নিয়ে ভাবেন। আমার মনে হয়, তারা চলচ্চিত্রে ফিরে আসতে পারেন। আরো অনেকেই দূরে সরে আছেন, যারা একসময় চলচ্চিত্র কাঁপিয়েছেন জনপ্রিয়তা-দর্শকপ্রিয়তা দিয়ে। সবাইকে বলবো, ফিরে আসুন। রাগ, ক্ষোভ, অভিমান মনে চেপে রাখতে হয়। অভিজ্ঞরা মুখ ফিরিয়ে নিলে পরবর্তী প্রজন্ম সঠিক নির্দেশনা কোথায় পাবে। সবাই ভালো থাকুন। নাইম-শাবনাজ ভালো থাকুন। তার এবং কিংবদন্তি এহতেশামের পরিবারের সদস্যরাও ভালো থাকুক।’

chadni

অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে শাবনাজ-নাইম তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। শাবনাজ বলেন, ‘২৫ বছর যে কীভাবে পার হয়ে গেলো, বুঝতেই পারলাম না। আজকের এ আয়োজনে আমার চলচ্চিত্র পরিবারের মানুষদের ভালোবাসা পেয়ে আমরা মুগ্ধ।’

নাইম বলেন, ‘এই ছবিটির জন্য আমরা আজকের শাবনাজ-নাইম। এ ছবিটিই আমাদের দুজনকে সারা জীবনের জন্য এক করে দিয়েছে। এখন আমরা অভিনয় না করলেও এই সিনেমার কারণেই সম্মানিত হই মানুষের কাছে। সিনেমার প্রতি ভালোবাসা ও এসব ভালো লাগার বহিঃপ্রকাশ বলা যেতে পারে আজকের আয়োজনটিকে। আপনাদের ধন্যবাদ আসার জন্য। আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’

এ অনুষ্ঠানে ‘চাঁদনী’ ছবির গান পরিবেশন করেন ছবিটির একাধিক গানে কণ্ঠ দেয়া প্রয়াত কণ্ঠশিল্পী খালিদ হাসান মিলুর ছেলে কণ্ঠশিল্পী প্রতীক হাসান এবং এ ছবির সব গানের গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মেয়ে কণ্ঠশিল্পী দিঠি আনোয়ার।

অনুষ্ঠানটি বাস্তবায়ন করার জন্য শাবনাজ-নাঈমকে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন চিত্রপরিচালক মতিন রহমান ও সাংবাদিক অভি মঈনুদ্দীন।

প্রসঙ্গত, ১৯৯১ সালে ‘চাঁদনী’ ছবি দিয়ে অভিষেক ঘটে নাইম-শাবনাজ জুটির। এরপর তারা বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পান। তাদের অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো হলো- ‘দিল’, ‘সোনিয়া’, ‘চোখে চোখে’, ‘বিষের বাঁশি’, ‘ফুল আর কাঁটা’, ‘আগুন জ্বলে’, ‘লাভ’ ‘অনুতপ্ত’, ‘টাকার অহংকার’, ‘সাক্ষাৎ’, ‘জিদ’।

chadni

আর নিজেদের বাইরে গিয়েও অন্য নায়ক-নায়িকাদের সঙ্গে জুটি বেঁধে সাফল্য পেয়েছেন নাইম-শাবনাজ। সে তালিকায় এগিয়ে থাকবেন শাবনাজ। তিনি বাপ্পারাজের সঙ্গে ‘প্রেমের সমাধি’, ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে ‘বদসুরত’ ও সালমান শাহের সঙ্গে ‘মায়ের অধিকার’, ‘আঞ্জুমান’ ছবিতে অভিনয় করে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন।

তবে নাইম-শাবনাজ জুটি একসঙ্গে অভিনয় করেছেন ‘ঘরে ঘরে যুদ্ধ’ ছবিতে। বর্তমানে এই জুটি চলচ্চিত্র নিয়ে নতুন করে ভাবছেন। মুখ ফুটে তেমন নির্দিষ্ট করে না জানালেও ইঙ্গিত দিলেন নতুন কিছু নিয়ে ফিরছেন তারা।

এলএ/এনএইচ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।