তিন নায়িকার অপেক্ষায়
একসময় রূপালী পর্দা কাঁপানো তিন নায়িকা ছিলেন তারা। তাদের নামে ছবি চলতো, হলে যেতেন দর্শক। তিনজনই তুমুল জনপ্রিয়তার পাশাপাশি জয় করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। বলছি শাবনূর, পপি এবং পূর্ণিমার কথা।
এক দশক আগেও ঢাকাই ছবির এই তিন আবেদনময়ী নায়িকা বড়পর্দায় নিয়মিত ছিলেন। সমসাময়িক মৌসুমী ও কেয়াকে মাঝে মধ্যে পর্দায় দেখা গেলেও গেল কয়েক বছর শাবনূর, পূর্ণিমা ও পপির দেখা চলচ্চিত্রে নেই বললেই চলে!
তবে আশার কথা হচ্ছে, প্রত্যেকেই তারা বিভিন্ন সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে অভিনয়ে আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। বলেছেন, ভালো গল্প আর আগের মতো চ্যালেঞ্জিং চরিত্র পেলে আবারো ঘুরে দাঁড়াতে পারেন তারা। অভিনয়ের মানুষ হয়ে অভিনয় থেকে দূরে থাকা বেশ কষ্টসাধ্য।
এদিকে এই তিন নায়িকার উত্তরসূরি হিসেবে ডজন খানেক নায়িকা নাম লিখিয়েছেন ইন্ডাস্ট্রিতে। অনেকে নিজেদের প্রমাণ করেছেন ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র উপহার দিয়ে। তবে এই তিন নায়িকার আবেদন আজো কেউ দখল করতে পারেননি। দর্শক আজো শাবনূর, পূর্ণিমা, পপির নাম শুনলে আবেগতাড়িত হন।
হুটহাট শোনা গেছে বহুবার তিন নায়িকা ছবিতে ফিরছেন। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো নায়িকাই ক্যামেরার সামনে দাঁড়াননি। মানহীন গল্প আর নির্মাণের দায় দিয়ে তারা নিজেদের সরিয়ে রেখেছেন। তবে সম্প্রতি চলচ্চিত্রে একটা পরিবর্তন এনেছেন নতুন প্রজন্মের চলচ্চিত্রের মানুষরা। অনেকেই নতুন আশায় বুক বেঁধেছেন। অভিমান ভেঙে ফিরে আসছেন অনেক সিনিয়র তারকারা। নিশ্চয়, ভালো গল্প আর চরিত্রের দেখা পেলে ফিরবেন শাবনূর, পূর্ণিমা ও পপিরাও। তাদের সঙ্গে ফিরে আসতেও পারেন রিয়াজ, ফেরদৌস, আমিন খানের মতো সুপারস্টাররা।
এদিকে সর্বশেষ ‘পাগল মানুষ’ ছবির শুটিং করেছেন চিত্রনায়িকা শাবনূর। তারপর একটি বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ে অংশ নেন। সেটা গত বছরের শেষ দিকে। অনেকদিন পর ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে অনেকটা বেমানান লাগে শাবনূরের কাছে। সে কারণে তিনি জানিয়েছিলেন নিজেকে শারীরিকভাবে ফিট করে আবার পর্দায় নিয়মিত হবেন। তার মধ্যেই মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের ‘এতো প্রেম এতো মায়া’ ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হন শাবনূর। চলতি বছর ছবির শুটিং শুরু হওয়ার কথা থাকলেও শাবনূরের মুটিয়ে যাওয়া এবং দেশে না থাকায় ছবির কাজ শুরু করতে পারেননি নির্মাতা।
বর্তমানে শাবনূর অস্ট্রেলিয়াতে। ফিরবেন আগামী বছর। সঙ্গে রয়েছে তার স্বামী ও একমাত্র পুত্র আইজান। শাবনূর অনেকবার জানিয়েছেন তিনি নিজেকে আগের মত স্লিম করে আবারো চলচ্চিত্রে ফিরতে চান। তিনি বলেছিলেন, ছয় মাস দেশে থেকে চলচ্চিত্রে কাজ করবেন। বাকি ছয় মাস দেশের বাইরে থাকবেন। শুধু তাই নয়, পরিচালক শাবনূরের প্রত্যাবর্তনের কথাও শোনা গিয়েছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অপেক্ষাতেই থাকতে হচ্ছে ভক্তদের।
চিত্রনায়িকা পূর্ণিমা অভিনীত সর্বশেষ ‘লোভে পাপ পাপে মৃত্যু’ ছবিটি ২০১৪ সালে মুক্তি পায়। এরপর থেকে আর বড় পর্দায় পাওয়া যায়নি পূর্ণিমাকে। সংসারে মনোযোগী হওয়ার পাশাপাশি পূর্ণিমা টুকটাক নাটক-বিজ্ঞাপনে কাজ করতে থাকেন। বর্তমানে ক্যান্ডি ক্রাশ নামের একটি ধারাবাহিক নাটকে কাজ করছেন। তবে কিছুদিন আগে জাগো নিউজের কাছে দেয়া এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছিলেন, আবারো চলচ্চিত্রে কাজ করতে আগ্রহী পূর্ণিমা। ফিরে আসতে চান বড় পর্দার ভক্তদের কাছে। অপেক্ষা কেবল ব্যাট-বলের টাইমিংয়ের।
তিনি বলেন, ‘চলচ্চিত্র আমার পরিবারের মতো। যেখান থেকে আমি পূর্ণিমা হয়েছি, সেখানে সারা জীবন থাকতে চেয়েছি।’ তিনি জানান, ‘মনের মাঝে তুমি’, ‘হৃদয়ের কথা’ ছবির মতো ছবি, ভালো গল্প, বড় বাজেটের ছবিতে কাজের সুযোগ পেলেই কাজ করবেন। মাত্র দুই মাস সময় দিলেই কাজের জন্য নিজেকে ফিট করে ফেলতে পারবেন তিনি। এখনো সেই ধরনের কোনো প্রস্তাব না পেলেও মনে মনে চলচ্চিত্রের জন্য নিজেকে তৈরি করতে শুরু করেছেন পূর্ণিমা। আগামীতে তার অভিনীত ‘টু বি কন্টিনিউ’ ছবিটি মুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে।
রূপালী পর্দার বাইরে বেশ সরব চিত্রনায়িকা পপি। ছোটপর্দার বিভিন্ন বিনোদন মূলক টক-শোতে প্রায়ই দেখা মেলে তার। এছাড়া নাটক-বিজ্ঞাপনেও পপির উপস্থিতি চোখে পড়ে। সর্বশেষ কিছুদিন আগে পপির ‘পৌষ মাসের পিরিতি’ ছবিটি মুক্তি পায়। কিন্তু কোনো এক গোপন অভিমানে ছবির প্রচার-প্রচারণা থেকে আড়ালে ছিলেন তিনি।
আগামীতে পপি অভিনীত ‘সোনা বন্ধু’ ছবিটি মুক্তির কথা রয়েছে। আগের মতো চলচ্চিত্রে ফেরার কথা জানতে চাইলে ‘গার্মেন্টস কন্যা’ ছবির এই নায়িকা বলেন, আমি চাই নিয়মিত চলচ্চিত্রে কাজ করতে; কিন্তু মনের মতো গল্প আর চরিত্র পাই না। সেকারণে ছবির অফার আসলেও ফিরিয়ে দিতে হয়।
কেমন ছবিতে কাজ করতে চান জানতে চাইলে পপি বলেন, ‘প্রথমত ছবিটি হবে গল্প প্রধান। তারপর ছবিতে আমার চরিত্রের গুরুত্ব থাকতে হবে। একইসঙ্গে ভালো পরিচালক ও ভালো বাজেট থাকতে হবে।’
এদিকে চলচ্চিত্র বোদ্ধারা চাইছেন, আগের মতো আবারো শাবনূর-পূর্ণিমা-পপি চলচ্চিত্রে নিয়মিত হোন। তাদের মত, হলিউড-বলিউডের নায়িকারা চল্লিশ বছর পার হয়েও নায়কদের সঙ্গে পর্দায় আসছেন গ্ল্যামার নিয়ে। সেই দিক থেকে আমাদের দেশের অভিনেত্রীরা ত্রিশ পার করলেই পরিচালক-প্রযোজকরা মনে করেন ক্যারিয়ারে গোধূলি নেমেছে। এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। গুণী অভিনেত্রীদের মূল্যায়ণ করতে হবে। শ্রীদেবীরা যদি এখনো ছবির মূল চরিত্র হয়ে হাজির হয়ে সবাইকে চমকে দিতে পারেন তবে আমাদের শাবনূর, পপি, পূর্ণিমারা কেন নয়? চলচ্চিত্রের স্বার্থে সেই চেষ্টাটা একবার হয়ে যাক।
এনই/এলএ/এবিএস