গল্প নকল প্রমাণ দিতে পারলে পরিচালনা ছেড়ে দেবো : পি এ কাজল


প্রকাশিত: ১২:৪১ পিএম, ০৪ অক্টোবর ২০১৬

পি এ কাজল ১৯৯৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘সাব্বাশ বাঙালি’ ছবিটি দিয়ে প্রথম পরিচালনাতে নাম লেখান। তবে এর আগে থেকেও চলচ্চিত্র পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। ১৯৯১ সালে ‘গোধূলী’ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ক্যাটাগরীতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছিলেন। দীর্ঘদিন কাজ করেছেন চাষী নজরুল ইসলামের সহকারি হিসেবে।

আগামী ১৪ অক্টোবর মুক্তি পেতে যাচ্ছে পি এ কাজলের নতুন ছবি ‘চোখের দেখা’। এখানে প্রথমবারের মতো জুটি হিসেবে কাজ করেছেন সাইমন ও অহনা। কুশলী মাল্টিমিডিয়া প্রযোজিত ছবিটির পরিচালনার পাশাপাশি এর কাহিনি, সংলাপ, চিত্রনাট্য রচনা করেছেন পি এ কাজল। ছবিটির নির্মাণ ভাবনা-অভিজ্ঞতা, নতুন জুটি, প্রত্যাশাসহ আরো অনেক কিছু নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বললেন এই নির্মাতা-

জাগো নিউজ : প্রথমেই ছবির গল্প সম্পর্কে জানতে চাই-
পি এ কাজল : এটি মৌলিক গল্পের ছবি, প্রেমের ছবি। সংগ্রাম, হাসি, কান্না, উত্থানের গল্প আছে এখানে। সাইমনকে দেখা যাবে `স্প্রিটেড ইয়াং বয়` হিসেবে। যে কি না একজন ক্রিকেটার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। তার চরিত্রটি ভালো লাগবে দর্শকের। পাশাপাশি অহনার চরিত্রটিও বেশ চমৎকার। নারী দর্শকেরা এ চরিত্রের মাঝে নিজের স্বপ্নগুলোকে দেখতে পাবে। মূলত তারুণ্যের কথা মাথায় রেখেই ছবিটি করা। তবে যে কোনো বয়সের দর্শককেই ছবিটি মুগ্ধ করবে।

জাগো নিউজ : ছবি মুক্তির আছে সবাই নিজের ছবিটিকে ভালো, চমৎকার বলেই প্রমোট করে। কিন্তু হলে গেলে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। আপনার ছবির ক্ষেত্রেও এমনটি হবে না তো?
পি এ কাজল : আমার মনে পড়ে না শেষ কবে আমার কোনো ছবি নিয়ে আমি নিজে প্রচারণায় নেমেছি। এই ছবিটি সত্যি ভালো। অনেক যত্ন নিয়ে আমি ছবিটি বানিয়েছি। সেন্সর বোর্ডসহ বিভিন্ন জায়গায় এটি প্রদর্শনী করতে হয়েছে। সবাই খুব প্রশংসা করেছেন। সেই বিশ্বাস থেকেই জোর গলায় বলছি ‘চোখের দেখা’ দর্শক মুগ্ধ করবে।

Kajol

জাগো নিউজ : সে অপেক্ষায় থাকলাম। কিন্তু এদিকে আপনার ছবিটির পোস্টার ডিজাইন ও গল্প নকল নিয়ে কথা উঠেছে। এ বিষয়ে কী বলবেন?
পি এ কাজল : পোস্টারের ব্যাপারে বলবো, আমার এই ছবির পোস্টারে এমন কোনো ছবি নেই যেটি আমার চলচ্চিত্রের দৃশ্য নয়। আজকাল অনেকেই ছবির বাইরের দৃশ্য দিয়ে পোস্টার করেন। কেউ কেউ শরীর কেটে বসিয়েও এমনটি করছেন। কিন্তু আমার পোস্টারে সেটি হয়নি। হয়তো কারো আইডিয়া বা কারো উপস্থাপনের সঙ্গে মিলে যেতে পারে। এটা অপরাধ নয়। আর ছবির গল্প নিয়ে একটা কথাই বলবো- যদি কেউ প্রমাণ দিতে পারে আমার ছবি নকল তবে আমি ছবি বানানো ছেড়ে দিবো। একদম তাই, ইস্তফা দিয়ে দিবো। আজেবাজে কথা আড়ালে বলে লাভ কী। কেউ আমাকে চ্যালেঞ্জ করুক।

জাগো নিউজ : এই ছবিতে নতুন জুটি হিসেবে সাইমন-অহনাকে অভিষিক্ত করতে যাচ্ছেন। তাদের সাফল্য নিয়ে কতোটা আশাবাদী আপনি?
পি এ কাজল : জুটি কতোটা সফল হবে সেটি হচ্ছে দর্শকদের উপর। অনেক সময় দেখা যায়, ছবি হিট করলো কিন্তু জুটি হিট হলো না। আবার অনেক সময় জুটি আলোচনায় আসলেও ছবি মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে। এখানে কী হবে আমি এখনই বলতে পারছি না। তবে অনেক প্রত্যাশা নিয়েই আমি নতুন এই জুটিকে নিয়ে কাজ করেছি। এরইমধ্যে সব জায়গায় সাইমন-অহনাকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তাদের জন্য আমার শুভকামনা আছে।

জাগো নিউজ : আপনার অভিজ্ঞতার তুলনায় সাইমন-অহনা বেশ নতুন। তারা এই প্রথম আপনার ছবিতে কাজ করেছে। তাদের কাজের প্রতি আপনার সন্তুষ্টি কতটুুকু?
পি এ কাজল : ওরা চেষ্টা করেছে ওদের সাধ্যমতো। আসলে সন্তুষ্টির কোনো শেষ নেই। আমি বলবো আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে একমাত্র শাবনূর ছিলেন যিনি নির্মাতাদের সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি করতে পারতেন। কী যে অসাধারণ তার অভিনয় দক্ষতা বলে বুঝানো যাবে না। শাবনূর যদি ফিট থাকতো এই ছবিতে সাইমনের নায়িকা করে তাকে অভিনয় করাতাম। এই ছবিতে শাবনূর নায়িকা হলে দেখতেন দেশের নারী দর্শকদের কেমন সাড়া পড়তো। এগুলো চলচ্চিত্রের টুইস্ট। যাই হোক, সাইমন-অহনারা এখনো শিখছে। আমি ওদেরকে বলতে পারি বারবার যে, এই শটটা এভাবে দাও। কিন্তু সেটি ক্যামেরায় তাদেরকেই করে দেখাতে হবে। তারা সেই চেষ্টা করে গেছে। আমি তাদের অভিনয়কে ষাট থেকে সত্তুর শতাংশ নাম্বার দেবো। দর্শকের চোখে এর চেয়ে বেশিও হতে পারে।

Kajol

জাগো নিউজ : আপনার ছবিতে আইটেম গান আছে একটি। সেটি নিয়েও অনেক সমালোচনা হচ্ছে। এ বিষয়ে কী বলেবন?
পি এ কাজল : সমালোচনা হয় না কী নিয়ে সেটি খুঁজে বের করতে লোক নিয়োগ দিতে হবে। যারা এই আইটেম গানের সমালোচনা করছেন তারাই ক্যাটরিনা-সানি লিওনের আইটেম গানের দারুণ ভক্ত। আমাকে বলুন তো সানি লিওন কোন দিক থেকে ময়ূরী নয়। জাস্ট উপস্থাপনা। ফিল্মে আইটেম গান অনেক পুরনো ব্যাপার। বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘মোঘলে আজম’ ছবিতে ‘পেয়ার কিয়া তো ডর না কিয়া’ গানটিকেও আমার কাছে আইটেম মনে হয়েছে। ভারতের অধীশ্বর সম্রাট আকবরের সামনে একজন মেয়ে এমন ভঙ্গিতে নাচ করতে পারে এটা কাল্পনিক লাগে। কিন্তু এটি সিনেমা ছিলো বলেই সম্ভব হয়েছে। পরিচালক দর্শককে মসলা দিতে চেয়েছেন। কমার্শিয়াল ভাবনা থেকে এইসব আইটেম রাখা হয় ছবিতে। আমাদের ফিল্মেও অনেক আগে থেকে আইটেম গানের চল প্রচলিত। নায়িকারা ভিলেনদের সঙ্গে নেচে দর্শকদের মনোরঞ্জন করেছেন। সেখানে আমার ছবিতে জ্যাকলিন মিথিলার আইটেম গানটি নিয়ে সমালোচনার কিছু দেখছি না। আর যদি সমালোচনার বিষয় জ্যাকলিন মিথিলা হয় তবে বলবো এই ইন্ডাস্ট্রিতে আরো অনেকেই সমালোচনার দাবি রাখেন। আর এই যে সচেতনতা সেটা আরো আগেই দরকার ছিলো। তবে শাবানার মতো কালজয়ী অভিনেত্রী ইন্ডাস্ট্রি ত্যাগ করে আমাদের অকূলে ভাসাতেন না। আরো অনেক গুণী শিল্পীরা আছেন যারা অশ্লীল সময়টাতে চলচ্চিত্র ত্যাগ করেছেন। তাই এইসব না দেখে, জ্যাকলিন মিথিলার উপস্থাপন, গানটির প্রাসঙ্গিকতার দিকে নজর দিলে ভালো হয়।

Kajol

জাগো নিউজ : আপনার ছবিটিতে শতাব্দী ওয়াদুদ এবং শামস সুমন অভিনয় করেছেন। দুজনেই চমৎকার অভিনেতা। আপনার সঙ্গে প্রথম কাজ। উনাদের অভিনয় কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
পি এ কাজল : আমাদের উপমহাদেশে হুমায়ূন ফরিদীর মতো খল অভিনেতা খুঁজে পাওয়া যাবে না।  না, তামিল, তেলেগু, হিন্দি, বলিউড কোথাও সম্ভব নয় আরেকজন ফরিদীকে তৈরি করা কিংবা খুঁজে পাওয়া। আমি শতাব্দীকে স্পষ্ট করে বলেছি তোমার যে চরিত্র ফরিদী ভাই থাকলে তিনি করতেন। এটুকু শুনেই শতাব্দী চেষ্টা করেছে নিজের মতো চরিত্রটাকে সাবলীল ও নান্দনিক করে তুলতে। আর এটা সত্যি যে, শতাব্দী ওয়াদুদ দুর্দান্ত একজন অভিনেতার নাম। পাশাপাশি শামস সুমনের অভিনয় আমার ভালো লাগে। উনার অভিনয় আইডল প্রবীর মিত্র। উনি প্রবীর মিত্রের মতোই একটি চরিত্রে কাজ করেছেন। দর্শকদের ভালো লাগবে।

জাগো নিউজ : একটা ভিন্ন প্রশ্ন। আপনার ছবিটিতে নায়ক হিসেবে সাইমন-অহনাকে বাছাই করলেন কেন?
পি এ কাজল : প্রথমে অহনার ব্যাপারে বলি। অনেক আগে অহনা দুটি ছবিতে কাজ করেছিলো। তার অভিনয় আমার কাছে মোটামুটি ভালো লেগেছিলো। কিন্তু তেমন করে সুযোগের অভাবে নিজেকে আলোচনায় আনতে পারেনি। আমি যখন ছবিটির কাজ শুরু করতে গেলাম তখন আমার মনে হলো এখানে নতুন একটি জুটি নিয়ে কাজ করবো। তো সাইমনকে নেয়ার পর তার সঙ্গে মানিয়ে অহনাকে নেয়। আর সাইমনের ব্যপারে বলতে গেলে একটু পেছনে যেতে হবে। আজকের সুপারস্টার শাকিব খানের জীবনের টার্নিং ছবি ‘আমার প্রাণের স্বামী’ আমার পরিচালিত। ওই ছবিই শাকিবের ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে এটা ফিল্মের সবাই জানে। শাকিব আজ ঢাকাই ছবির সুপারস্টার। গোটা মিডিয়া জানে শাকিব অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। অনেকের ধারণা শাকিব খানই ইন্ডাস্ট্রিতে একমাত্র কর্ণধার। শাকিব ছাড়া ইন্ডাস্ট্রি অচল। এটা ঠিক নয়। এটা মস্ত বড় ভুল। একজন নায়ক কখনো সবকিছুর মূলে হতে পারে না। ভালো গল্প, চরিত্রের গাঁথুনি থাকলে মানুষ ছবি দেখবে। সুপারস্টার হলে বেশি দেখবে, নতুন হলে কম দেখবে। আবার অনেক সময় নতুনরাও অনেক বেশি বাজিমাত করে দেয়। এইসব ভাবনা থেকেই সাইমনকে নেয়া। আমি ওকে দিয়েই এটা প্রমাণ করে দিতে চাই- শাকিব ছাড়া ছবি চলে না এই কথা যারা বলেন ও ভাবেন তারা আবেগ এবং বোকার স্বর্গে বাস করেন।

Kajol

জাগো নিউজ : তবে কী শাকিবের প্রতীদ্বন্দ্বী হিসেবে সাইমনকে দাঁড় করাতে চাইছেন?
পি এ কাজল : দুজনেই যেহেতু এক ইন্ডাস্ট্রির নায়ক প্রতিদ্বন্দ্বীতা তো আছেই। এটা নতুন করে দাঁড় করানোর কিছু নেই। আর শাকিবের অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী। সাইমনেরও। একটি ভালো গল্প, একটি ভালো চরিত্র যা শাকিব-সাইমনরা করতে পারেননি সেটাই তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী। যে কোনো সময় সেটি সুপারহিট হতে পারে। এই যেমন এখন সবাই ‘আয়নাবাজি’ নিয়ে মেতেছে। তো এই ছবিটিও শাকিব-সাইমনের প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু এই প্রতিযোগিতাটা হতে হবে ইতিবাচক। কেবল আমিই থাকবো একা, বাকী সবাই কিচ্ছু না এটা তো হতে পারে না। অনেকে ইন্ডাস্ট্রিটাকে শাকিব কেন্দ্রিক ভাবেন। এটা ঠিক নয় কোনো ভাবেই। আরো কিছু বলার থাকলে আগামী ১৪ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। দীর্ঘদিন থেকে আমরা ইন্ডাস্ট্রিতে আছি। কিছুটা হিসেবে-নিকেশ আমরা বুঝি। একটা কিছু ইতিবাচক ঘটবেই।

এলএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।