নদী বাঁচানোর গল্পের ছবি হালদা
এশিয়ার একমাত্র বৃহৎ প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে চট্টগ্রামের হালদা নদী বিখ্যাত। বর্তমানে বিপন্ন এই নদী জৌলুস হারিয়েছে নদীর দুই পাড়ের জেলে ও গ্রামবাসীর জীবন যাপনও। হালদা পাড়ের মানুষ গর্ভবতী নারীকে যেরকম মমতার চোখে দেখে, ডিমওয়ালা মাছকে একইরকম ভালোবাসে তারা। সেই ভাবনা থেকেই গল্পকার আজাদ বুলবুল লিখেছেন ‘হালদা’ গল্পটি। এ নিয়ে চলচ্চিত্র পরিচালনা করতে যাচ্ছেন অভিনেতা-নির্মাতা তৌকীর আহমেদ।
অবশ্য এই খবর বেশ পুরনো। এবার এলো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। গতকাল মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) ঢাকা ক্লাবে এর মহরত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে তৌকীর আহমেদ ঘোষণা করলেন তার ছবির আনুষ্ঠানিক নাম এবং পরিচয় করিয়ে দিলেন পাত্র-পাত্রীদের।
তিনি জানালেন তার ‘হালদা’ ছবিটির প্রধান তিনটি চরিত্রে অভিনয় করবেন জাহিদ হাসান, নুসরাত ইমরোজ তিশা ও মোশাররফ করিম। আরো অভিনয় করবেন রুনা খান, ফজলুর রহমান বাবু, দিলারা জামান, শাহেদ আলী প্রমুখ। ‘হালদা’ প্রযোজনা করছে আমরা ক’জন। ছবিটির গল্প লিখেছেন আজাদ বুলবুল। চিত্রনাট্য লিখেছেন তৌকীর নিজেই।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। চলচ্চিত্র ‘হালদা’ ও তার পরিচালক-কলাকুশলীদের শুভেচ্ছা জানাতে সেদিন হাজির হয়েছিলেন অভিনেতা-নির্মাতা আবুল হায়াত, গুণী নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, নির্মাতা সামিয়া জামান, নির্মাতা বদরুল আনাম সৌদ, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির যুগ্ম-আহ্বায়ক খোরশেদ আলম খসরু এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া।
স্বাগত বক্তব্যে তৌকীর আহমেদ বলেন, ‘নদী ও পরিবেশ দুষণ মুক্ত রাখার যে প্রচেষ্টা তাকেই আমি নতুন ছবির বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছি। খুব শিগগিরই ছবিটির শুটিং শুরু করতে যাচ্ছি আমরা। সবাই প্রার্থনা রাখবেন যেন সুন্দরভাবে সবকিছু শেষ করতে পারি।’
‘হালদা’ ছবি নিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘সেই ১৯৫৮ সাল থেকে আমি ব্যক্তিগতভাবে হালদাকে চিনি। নদীটার ওপর যখন সেতু হলো, সেটার নির্মাণ দেখেছি। ওই সেতুর ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে এসেছি। সময় অনেক দূর গড়িয়েছে। দিনে দিনে জৌলুস হারিয়েছে হালদা নদী। এমন গুরুত্বপূর্ণ নদী নিয়ে ছবি নির্মাণের মধ্য দিয়ে পরিবেশ সচেতনতার যে দায়িত্ব তৌকীর আহমেদ নিয়েছেন তার জন্য তাকে সাধুবাদ জানাই। আমি সুযোগ পেলে ছবিটা দেখার চেষ্টা করবো।’
অভিনেতা আবুল হায়াত বলেন, ‘তৌকীর যে ছবিগুলো বানায় তা বেশ জীবনঘনিষ্ঠ হয়। সেজন্য তার ছবিগুলো খুব সহজেই মানুষের কাছে পৌঁছায়। এটা তার সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব বলে আমি মনে করি। তার আগের ছবিগুলোর মতো ‘হালদা’ও ভালো একটি ছবি হবে আশা করছি। এর মাধ্যমে মানুষ হালদা ও নদী পাড়ের মানুষের সুখ-দুঃখের কথা জানবে।’
শুভেচ্ছা জানিয়ে নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম বলেন, ‘তৌকীর এমন একটি বিষয় নিয়ে ছবি করতে যাচ্ছে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি ছবিটা আমাদেরকে একই সঙ্গে আনন্দ ও তথ্য দেবে। হালদা নদীসহ বাংলাদেশের সকল নদী সম্পর্কে আমাদের সচেতন করবে।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘নদীমাতৃক বাংলাদেশ শব্দটি আজকাল আর শুনিই না বলা চলে। নগরায়ন আর সভ্যতার ভিড়ে মরে যাচ্ছে নদীগুলো। হালদা নদীর ভূমিকা অর্থনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই নদীটি নিয়ে ছবি হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত এবং উচ্ছ্বসিত। এ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আমাদের নতুন প্রজন্ম হালদা নদীকে আরো অনেক বেশি জানবে ও আগ্রহী হবে।’
ছবিটি নিয়ে গল্পকার আজাদ বুলবুল বলেন, ‘গল্পে দেখাতে চেয়েছি নদীটি এ দেশের ঐতিহ্যবাহী একটি বিষয়। এর কথা অনেকেই জানে না। এটা অনেকেই জানেন না যে এই নদীতে প্রাকৃতিকভাবে মাছ ডিম ছাড়ে। নদীদূষণ, নদী দখল- নানা কারণে নদীটি এখন বিপদে রয়েছে। এইসব ফুটে উঠবে গল্পে। পাশাপাশি হালদার দুই পাড়ের মানুষের লোকজীবন, লোকসংস্কৃতি, তাদের বিবাহ, উৎসব, বলীখেলা, কুস্তিখেলা, গরুর লড়াই, কবিগান, তৎকালীন নাট্য আন্দোলন- এসব বিষয়ও এই গল্পে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।’
ছবিটি নিয়ে অভিনেতা জাহিদ হাসান বলেন, ‘অনেকদিন পর চলচ্চিত্রে কাজ করছি। ভালো লাগার একটা ব্যাপার কাজ করছে। তবে এই ছবিটি নিয়ে উৎসাহের অনেক কারণ আছে আমার। প্রথমত ছবিটির গল্পের বিষয় একটি নদী। তারপর এই ছবি দিয়ে বন্ধু তৌকীরের পরিচালনায় কাজ করতে যাচ্ছি। অনেক ভালো লাগা কাজ করছে আসলে সবকিছু মিলিয়ে। আশা করছি বাংলা চলচ্চিত্রের ভাণ্ডারে দারুণ এক সংযোজন হবে ‘হালদা’।
চরিত্র নিয়ে তিনি বলেন, ‘ছবিতে আমার চরিত্রের নাদের। লোকটা বনেদি। তার বড় ব্যবসা আছে। নাদের চরিত্রটি একটু জটিল। এক ধরনের জটিলতা আছে তার মধ্যে। মানুষ সাধারণত আমাকে যেভাবে দেখে, এখানে সেভাবে পাওয়া যাবে না। সম্ভবত দর্শকের রাগ হবে আমার প্রতি!’
অভিনেত্রী তিশা বলেন, ‘এই ছবির গল্পে আমার চরিত্রটি বেশ চ্যালেঞ্জিং। অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে গ্রামীন এক নারীর সংগ্রাম ফুটে উঠবে।’
অভিনেতা মোশাররফ করিম বলেন, ‘হালদা’য় আমাকে দেখা যাবে জেলে সম্প্রদায়ের মানুষ বদিউজ্জামান চরিত্রে। বৈচিত্রময় একটি চরিত্র এটি। খুব ভালো লাগবে দর্শকের।’
বক্তব্য প্রদান শেষে ছবিটির একটি গান গেয়ে শোনান সংগীতশিল্পী পিন্টু ঘোষ। এর কথা-সুরও তার। গানটির কথা এমন- ‘দেখি কতো ডুবে হায়/স্বপ্ন সাগরে ভাসাই/পোড়া বাঁশির মতো প্রেম আমারে জ্বালায়/প্রেমের আগুন কি সবারে পোড়ায়।’ পিন্টুর সঙ্গে অনুষ্ঠানে বাজিয়েছেন সংগীতশিল্পী রোকন ইমন।
এলএ/আরআইপি