সুস্থ থাকলে কবি নজরুল মুক্তিযুদ্ধেরও গান লিখতেন


প্রকাশিত: ১১:০৪ এএম, ২৫ আগস্ট ২০১৬
ছবি : মাহবুব আলম

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের চারটি গানের ভিডিওচিত্র নির্মাণ করেছেন দেশের প্রখ্যাত চারজন চলচ্চিত্র নির্মাতা। তারা হলেন মতিন রহমান, কাজী হায়াৎ, সোহানুর রহমান সোহান ও আমজাদ হোসেন। ভিডিওচিত্রের এই চারটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন দেশের প্রখ্যাত নজরুল সংগীতশিল্পী ফেরদৌস আরা।

কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে অনন্যা রুমার পরিচালনায় ‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন’ শিরোনামে একটি গানের অনুষ্ঠানে প্রচার হবে চারটি ভিডিও। চ্যানেল আইতে আগামী ২৭ আগস্ট রাত ৭টা ৫০ মিনিটে প্রচারিত হবে অনুষ্ঠানটি।

Nazrul

এই উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) রাজধানীর তেজগাঁয়ে অবস্থিত চ্যানেল আই ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে কাজী নজরুল ইসলামের গানের চিত্রায়ণের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন চলচ্চিত্র পরিচালক মতিন রহমান, কাজী হায়াৎ, সোহানুর রহমান সোহান ও আমজাদ হোসেনের ছেলে সোহেল আরমান এবং শিল্পী ফেরদৌস আরা।

‘নাইয়া ফিরে চালাও তরণী’ গানের চিত্রায়ণ করেছেন কাজী হায়াৎ। এই গানের চিত্রে অভিনয় করেছেন মেহমুদ ও মীম। গানের চিত্রায়ণ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত এই চলচ্চিত্র নির্মাতা জানালেন, ‘নজরুলের গানের চিত্রায়ণ করা হয়েছে নজরুলের ভাবনা থেকে। যেন নজরুল সামনে বসে আছেন। গতানুগতিক ধারায় নির্মিত এই গানের ভিডিওচিত্রটি নজরুলপ্রেমীদের কাছে বিশেষ উপভোগ্য হবে। সিনেমা ফরমেটে গানের চিত্রায়ণ হওয়ায় ছোট পর্দার পাশাপাশি বড় পর্দাতেও ভালোভাবে দেখা যাবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘নজরুলকে নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি তার কবিতার ভাব ও অর্থ বহুমাত্রিক। এত সমৃদ্ধ তার শব্দ ভাণ্ডার যা বলে প্রকাশ যোগ্য নয়। আমাকে যখন এই কাজটির জন্য বলা হলো আমি তো বেশ উত্তেজনায় ছিলাম। কিন্তু গান বাছাই করতে গিয়ে বুঝেছি যতোটা সহজ ভেবেছিলাম ততোটা নয়। অনেকের সাহায্য নিতে হয়েছে। বিশেষ করে আমার স্ত্রী খুব নজরুল ভক্ত। তিনি একসময় নজরুলের গান করতেনও। তার কাছ থেকে অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। গানের শিল্পী ফেরদৌস আরার সাহায্যও পেয়েছি। আমি চেষ্টা করেছি কবি নজরুলকে নিজের মতো করে ভিডিওচিত্রে তুলে ধরার। এবার বিচারের পালা দর্শকের।’

Nazrul

কাজী নজরুল ইসলামের গল্প অবলম্বনে ‘রাক্ষুসী’ চলচ্চিত্রের নির্মাতা ১২ বছর পর আবার নির্মাণে ফিরলেন মতিন রহমান। অনেকগুলো গান থেকে বেছে নেন নজরুলের প্রেম পর্যায়ের গান ‘প্রিয়া মোছ এ আঁখি জল’। গানের কথার সঙ্গে চিত্রায়ণ করেছে সুনিপুন হাতে। তিনি জানালেন, ‘আগস্ট আমাদের শোকের মাস। এই মাসে আমরা জাতির জনককে হারিয়েছি। এই মাসেই জাতীয় কবির চলে যাওয়া। এমন একটি মাসে আজকে এত মানুষকে নিয়ে জাতীয় কবির জন্যই বসতে পেরে ভালো লাগছে। কবির গানের কথার সঙ্গে মিল রেখে চিত্রায়ণ করা খুব একটা সহজ ছিল না। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নির্মিত হয়ে গানের চিত্রায়ণ। প্রয়োজনের খাতিরে সাদা-কালো ও রঙিন চিত্র ব্যবহার করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করার চেষ্টা করেছি। আমাদের জাতীয় কবি ছিলেন স্বাধীনচেতা মানুষ। তিনি মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন নীরবতায়। আমার বিশ্বাস, সুস্থ থাকলে তিনি বহু আগুন ঝড়া গান লিখতেন। হয়তো যুদ্ধেও যেতেন। সেই ভাবনায় আমি এই প্রেমের গানটিকে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মাণ করেছি। আশা করছি সবার ভালো লাগবে।’

সচেতনভাবে মুক্তিযুদ্ধের চিত্রায়ণে রঙের ব্যবহার করেছেন তিনি। এই গানে মডেল হয়েছেন সালমান ডেভিড ও নওশীন নদী।

এদিকে সোহানুর রহমান সোহান নির্মাণ করেছেন ‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন’ গানটি। এই গানের মডেল হয়েছেন মারিয়া মিষ্টি ও বাপ্পি। নির্মাণের অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘নজরুলকে আমরা জীবনে বহুবার পড়েছি। আমিও পড়েছি। কিন্তু তাকে নিয়ে কখনো কাজ করা হয়নি আমার। আমাকে সেই সুযোগটি করে দেয়ার জন্য চ্যানেল আইকে ধন্যবাদ। সেইসঙ্গে ফেরদৌস আরাকেও ধন্যবাদ দিতে চাই তিনি নানাভাবে এই চিত্র নির্মাণে সাহায্য করেছেন। তিনি আমাদের কাছে গর্বের একজন শিল্পী। তার সঙ্গে কাজ করাটাও আমার জন্য একটা প্রাপ্তি বটে।’

Nazrul-islam

‘এ ঘর ভোলানো সুর’ গানের চিত্রায়ণ করার কথা ছিলো আমজাদ হোসেনের। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতায় এর পুরো কাজ তিনি শেষ করতে পারেননি। তার হয় বাকি কাজ সম্পন্ন করেছেন তরুণ প্রজন্মের নির্মাতা সোহেল আরমান। তার গানটিতে মডেল হয়েছেন জায়ান ও সিনি স্নিগ্ধা। সোহেল আরমানে বলেন, ‘দেশের প্রথম মিউজিক ভিডিওটি আমি নির্মাণ করেছিলাম ১৯৯৪ সালে। বিটিভির একটি ম্যাগাজিনের জন্য সেটি নির্মাণ করে পুরস্কৃতও হয়েছিলাম। সেইদিক থেকে এই কাজটির সঙ্গে আমার একটা বিশেষ ভালো লাগা আছে। তবে কাজী নজরুল ইসলামের গানে মিউজিক ভিডিও করবো এটা কখনো ভাবিনি। চ্যানেল আই এবং আমার বাবাকে ধন্যবাদ এই সুযোগটি করে দেয়ার জন্য।’

সবশেষে ফেরদৌস আরা নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘আর আগে গেল রোজা ঈদে আমার গাওয়া চারটি নজরুলসংগীত নিয়ে চারজন নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা ভিডিওচিত্র নির্মাণ করেছিলেন। এবার দেশের কিংবদন্তি চার পরিচালককে পেয়ে আমি সত্যি আবেগ আপ্লুত। প্রতিটি ভিডিও খুবই চমৎকার হয়েছে। আশা করছি প্রচারে আসলে মন ছুঁয়ে যাবে সবার।’

এলএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।