শ্রোতারা চাইলে আবার জেমসের সঙ্গে গান হবে : আইয়ুব বাচ্চু

বিনোদন ডেস্ক
বিনোদন ডেস্ক বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:০১ এএম, ১৭ আগস্ট ২০১৬
ছবি : আরিফ আহমেদ

আইয়ুব বাচ্চু, বাংলা ব্যান্ড সংগীতের এক বিস্ময় পুরুষ। তার হাত ধরে এ দেশীয় ব্যান্ড সংগীত অনন্য মাত্রা পেয়েছে। সেই আশির দশক থেকে আজ অবধি গানের সুরে ও কথায় তিনি মন জয় করে চলেছেন বাঙালি হৃদয়। ফেরারি মন, চলো বদলে যাই, এখন অনেক রাত, হকার, আমি বারো মাস তোমায় ভালোবাসি এবং বাংলাদেশসহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা তিনি।

গতকাল ১৬ আগস্ট ছিলো গানের এই কিংবদন্তি মানুষটির জন্মদিন। তার জীবনের বিশেষ এই দিনটিকে সম্মান জানিয়ে গেল রোজার ঈদে প্রকাশিত ঈদ সংখ্যায় ছাপানো আইয়ুব বাচ্চুর সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হলো। জাগো নিউজের সঙ্গে প্রাণ খুলে আড্ডা দিয়েছেন এবি; তার জীবন ও সংগীতাঙ্গনের নানা প্রসঙ্গ নিয়ে। আলাপচারিতায় ছিলেন মিতুল আহমেদ। ছবি তুলেছেন আরিফ আহমেদ

ab

জাগো নিউজ : সুরে-কণ্ঠে-লেখায়, গিটারিস্ট, সংগীত পরিচালক সব পরিচয়েই কৃতিত্বের সাথে সফল এবং জননন্দিত এবি; কিন্তু কোনটিতে তার স্বস্তি?
এবি : মানুষে। আমি মানুষ, ভালো মানুষ হতে পারলে আমার জন্য একটা স্বস্তির জায়গা তৈরি হয়। এবং আমি নিজেকে মানুষ ভাবতেই ভালোবাসি। মানুষ হতে চাই। বাকিগুলো সব বাহ্যিক।

জাগো নিউজ : ‘লিটল রিভার ব্যান্ড’ থেকে ‘লাভ রানস ব্লাইন্ড’ কেন রাখা হলো, পেছনের গল্প থাকলে জানতে চাই...
এবি : নট রিয়েলি, আমাদের আসলে কখনোই নাম নিয়ে টেনশন ছিলো না। নাম নিয়ে টেনশন ছিলো না এই কারণে, কারণ আমরা এটা চিন্তাও করিনি। আন্তর্জাতিকভাবে চলার জন্য নিজস্ব ঢঙ করে নেয়া ছাড়া নাম পাল্টানোতে আর কোনো বড় চিন্তাভাবনা বা গভীর গবেষণা কাজ করেনি। মন চেয়েছে যখন আমরা রেখেছিলাম ‘ওয়াইআরবি’, তারপর কিছুদিন পরে গিয়ে দেখলাম এটা হয়ে গেলো এলআরবি। কেউ কেউ ‘লিটল রিভার ব্যান্ড’ ডাকা শুরু করলো, তারপর আসলেই হয়ে গেলো ‘এলআরবি’। কিন্তু আমরা ‘এলআরবি’ নামটা চাইনি। কারণ আমরা রেখেছিলাম ‘ওয়াইআরবি’। মানে ‘ইয়েলো রিভার ব্যান্ড’, একটা গান থেকে নেয়া নাম। তারপর আমি চিন্তা করলাম আন্তর্জাতিকভাবে যদি আমাদের মুভ করতে হয়, তাহলে ‘উই নিড অ্যা আওয়ার ওউন নেইম’। তারপর আমরা ডাকতে শুরু করলাম ‘লাভ রানস ব্লাইন্ড’। বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায় ভালোবাসার কোনো চোখ নাই।

জাগো নিউজ : ‘সোলস’র গিটার বাদক ছিলেন টানা ১০ বছর। তারপর কেন মনে হলো নিজেকেই একটা দল গড়া উচিত?
এবি : সোলস অবশ্যই এখনো জনপ্রিয়। সোলসে আমি ১০ বছর ছিলাম, কিন্তু শুধু একজন গিটারিস্ট হিসেবে নয়। একজন সুরকার, কম্পোজার হিসেবেও। এখনো কিছু সুর করা গান আমার রয়ে গেছে সোলসে। এবং ওরা গাইছেও হয়তোবা। আর আমি গানগুলোর সুর কম্পোজিশন করতাম নকীব ভাই যাওয়ার পরে। ১০ বছর আমরা একসাথে কাটিয়েছি। কেন চলে আসছি? চলে এসেছি, হয়তো বা ভিন্ন কোনো স্বাদের আশায়। হয়তো বা নিজের সাথে প্রতারণা করতে চাইনি। হয়তো বা তেমনটি হচ্ছিলো না যেটা আমার মন চাইছিলো। কিংবা আমার ভাগ্যেই ছিলো না একসাথে থাকার। এর যে কোনো একটা কিছু।

জাগো নিউজ : এলআরবি ছাড়াও আপনার গড়া ‘এবি ব্লুজ ক্লাব’ বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। এটা নিয়ে কিছু বলুন...
এবি : এবি ব্লুজের বয়স আট বছর হল। আর এই আট বছরে ‘জ্যাজ এন্ড ব্লুজ ফেস্টিভাল ঢাকা ২০১৫’-এর আসরে বাজানোটাই ছিল আমাদের জন্য বড় অর্জন। যেখানে একই মঞ্চে জ্যাজ ও ব্লুজ নিয়ে বাজিয়েছে বিশ্বের বড় বড় ব্যান্ড দলগুলো।

ab জাগো নিউজ : বাংলাদেশে ব্লুজ চর্চা কি আগে থেকেই ছিল, নাকি কেবল শুরু?
এবি : বাংলাদেশে ব্লুজের চর্চা টুকটাক আগে থেকেই হচ্ছে। জেনে কিংবা না জেনে ব্লুজটা আমাদের অনেকের গানেই ঢুকে যাচ্ছে। হয়তো তা কেউ স্বীকার করছে, হয়তো কেউ স্বীকার করছে না। কেউ জেনে বাজাচ্ছে, কেউ না জেনে বাজাচ্ছি; অনেক আগে থেকেই। কিন্তু, ব্লুজটা এ কারণে হচ্ছে মানে গিটার যারা বাজাচ্ছে বা বাজায় তাদের কিন্তু দুটো স্কেল কমন, প্যান্টাটনিক মাইনর, প্যান্টাটনিক মেজর। এই দিয়ে কিন্তু পুরো জীবন কাটিয়ে ফেলা যায়। হেভি মেটাল, জ্যাজ, ব্লুজ, রক যাই বলো না কেন, সবারই জানতে হয় গিটারের এই স্কেলগুলো। এই দুটোকে সাথে নিয়েই সাড়া জীবন কাটাতে হবে। অন্তত আমার মত একজন অখ্যাত গিটারিস্ট পুরোজীবন কাটিয়ে দিতে পেরেছি এই প্যান্টাটনিক মেজর, প্যান্টাটনিক মাইনর ব্লুজ দিয়ে। আসলে এটার বাইরে কিছু নাইও, আর যা আছে তা টেকনিক, মানে বাকিসব টেকনিক। টেকনিক যতোটা ব্যবহার করা যায় আরকি! তবে মেজর-মাইনরের এই খেলাটা খুবই ইন্টারেস্টিং।

জাগো নিউজ : রক ব্যান্ডের সাথে ‘জ্যাজ এন্ড ব্লুজ’ মিউজিকের পার্থক্যটা আমরা যারা সাধারণ শ্রোতা তারা কীভাবে চিহ্নিত করব?
এবি : জ্যাজ মিউজিকটা কিন্তু একেবারেই রক এন্ড ব্লুজ থেকে আলাদা। জ্যাজের সাথে রক কিংবা ব্লুজ মিউজিকের কোনো সম্পর্ক নেই। একটা থেকে আরেকটা অনেক দূরে, একটা এক না। ব্লুজ থেকে বড় হয়েই কিন্তু এটা রকে ঢুকেছে। ব্লুজটা হচ্ছে হাউজ, এটা মেইন হাউজ। ওইটার রিডগুলোকে রকে নিয়ে আসা হয়েছে। যেমন ধরো জেমি হেন্ড্রিক্স, তিনি একজন অসাধারণ ব্লুজ প্লেয়ার। এরপরও তিনি রক বাজাচ্ছেন। আর এখন পৃথিবীতে বড় যে ব্যান্ড কিংবা গ্রুপগুলো আছে, তাদের বেশির ভাগই ব্লুজ মিউজিক ওরিয়েন্টেড। এখন আমি কি করে বলব যে রকের মধ্যে ব্লুজ নেই। ব্লুজের ম্যক্সিমাম জিনিসই চলে গেছে রকে।

জাগো নিউজ : তাহলে ব্লুজ মিউজিক বিষয়টা আমরা কীভাবে আলাদা করবো?
এবি : প্রকৃতঅর্থে ব্লুজ কিছুই না। তোমাকে সিম্পলিফাই করে দেই, ব্লুজ হচ্ছে কান্না। কাঁদতে থাকো। অন্তর দিয়ে কাঁদতে থাকো। প্রাণ দিয়ে গিটার বাজাও, গান গাও।

জাগো নিউজ : হ্যাঁ, ব্লুজ মিউজিকটা নাকি আফ্রিকান কালো ক্রীতদাসের বেদনা সংগীত?
এবি : ঠিক তাই। এটা হচ্ছে একজন ক্রীতদাসের আর্তনাদ। তুমি গুগলেও ব্লুজের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারো। সত্যিকার অর্থে ব্লুজটা হচ্ছে আত্মার কান্না সংগীত। এটা না দেখলে বোঝা যাবে না। যেমন ধরো, আমাদের নিজস্ব জারি সারি ভাটিয়ালি যখন মাঠে ময়দানে শিল্পীরা গেয়ে থাকেন তখন পাটি বিছিয়ে সারা রাত শুয়ে যেমন গান শুনেন, ঠিক ব্লুজটাও তাদেরই একটা অংশ। ব্লুজটা ওয়েস্টার্নদের একটা কষ্টের জায়গা, আর জারি সারি ভাটিয়ালি আমাদের নিজস্ব।

ব্লুজটা আমাদের কাছে হচ্ছে নিজেদের মাঝে বিলিয়ে দেয়া। আমাদের কাছে ব্লুজটা হচ্ছে নিজেদেরকে উৎসর্গ করা। যন্ত্রের সাথে, গানের সাথে, দর্শকের সাথে একাত্ম ঘোষণা করা। রক, ব্লুজ একই। রকে আমরা যেমন হারিয়ে যাই, ব্লুজেও ঠিক তেমনি। একদম খোলা মাঠে হয়তো দেখা গেল আমি গিটার বাজিয়ে যাচ্ছি, আশপাশে কেউ নেই। এই যে অনুভূতিটা, এটা ব্লুজ মিউজিকের জন্য আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ এবং আকর্ষণীয় বলে মনে হয়। কারণ ব্লুজটা একটা নির্দিষ্ট ডিজাইনের উপর চলে।

জাগো নিউজ : ‘এবি ব্লুজ ক্লাব’ কি বাংলাদেশে শুধুমাত্র ‘ব্লুজ মিউজিক’ নিয়ে অ্যালবাম প্রকাশ করবে?
এবি : না, এখন পর্যন্ত এরকম কোনো পরিকল্পনা নেই। আসলে নকল প্রতিরোধ না হওয়া পর্যন্ত কোনো ধরণের অ্যালবামই আমরা প্রকাশ করছি না। টুকটাক অনুষ্ঠান কিংবা ফেস্টিভালে গাইবো।

জাগো নিউজ : দীর্ঘ আট বছর পর গত বছর অ্যালবাম প্রকাশ করলেন? এই দীর্ঘ গ্যাপটা কেনো?  দায় কার, মানুষের রুচির নাকি প্রযুক্তির?
এবি : প্রথমত অ্যালবামতো আমি ফ্রি তে কোথাও বিক্রি করবো না। দ্বিতীয়ত এই অ্যালবামটা একটি টেলিকম কোম্পানির মাধ্যমে রিলিজ হয়েছে, ওখান থেকে গ্রাহকরা গানগুলি শুনতে পারছেন। আর কেনো এতোদিন করিনি, সেটা খুবই সিম্পল। আমার মনে হয়েছে আসলে, যদি গান অ্যালবাম আকারে বের করতে হয় সেটা আসলে কোথায় বের করবো। কার কাছে বের করবো, কিভাবে বের করবো, কারা শুনবে, কারা কিনবে? সিডি প্লেয়ারও নাই, ক্যাসেট প্লেয়ারও নাই, কিছুই নাই। পেনড্রাইভ পর্যন্ত চলে গেছে, তারপর কি? হোয়াট ইজ নেক্সট? তাহলে আলটিমেটলি আমি যেটা হিসেব করেছি এবং আমার কাছে ভালো একটা দিক মনে হলো যে আইটিউনস। অ্যামাজন এইরকম আরো বিভিন্ন ক্যাটরম রয়েছে; বাংলাদেশের টেলকোগুলো সেরকম একটা কিছু করতে পারে। তো সেভাবেই একটা টেলিকমের সাথে কাজ করলাম।

জাগো নিউজ : তো এই যে পাইরেসির জন্য শিল্পীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এটা বন্ধে আইনটা জরুরি নাকি শ্রোতার মানসিকতার পরিবর্তন দরকার?
এবি : প্রথমত, শ্রোতাকে তো এইখানে কোনোভাবেই দোষ দেয়া যাচ্ছে না। আর আইনটা কিসের উপর করবো? পাইরেসি বন্ধে আইনটা কি, এটা আমার জানা দরকার আছে। দ্বিতীয়ত, যে বিষয়টার কথা বলছো, সচেতনতাবোধ! এইটা আসলে কারা তৈরি করবে? এটা কি শিল্পী তৈরি করবে, না শ্রোতা, না গ্রাহক, না যে কিনবে সে, না যে বিক্রি করবে সে..?

জাগো নিউজ : তাহলে উত্তরণটা কিভাবে সম্ভব?
এবি : সততা ইজ এ বেডলি ইম্পোর্টেন্ট, খুবই খুবই প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। মেনেই নিতে হবে যে, গানের স্রষ্টাই তার গানের মালিক। এটা মেনেই যারা বাজারজাত করে থাকেন কোম্পানিগুলি, উনারা নিশ্চয় সে কথাটা মাথায় রেখে পুনরায় যদি চড়া মূল্যে সিডি বিক্রি করতে পারেন তাহলে খুবই ভালো। একেকটা সিডি যদি কারো শ্রোতা এমনও থাকেন যে এক হাজার টাকা হোক আমি কিনবই, তাহলে এটা খুবই ভালো লক্ষণ। আবার যদি কেউ মনে করেন, না আমি যাবো, তাও ভালো লক্ষণ। বাট আনফরচুনেটলি পৃথিবী এগিয়ে যায় সামনের দিকে, পেছনে যায় না।

সিডি এখন পুরনো হয়ে গেছে, যেহেতু পেনড্রাইভ চেনানো হয়ে গেছে। পেনড্রাইভটা একটা অবলম্বন হিসেবে ধরা হতো, যেটাতে চুরি করা যায়। তাইলে সেটা কি শিল্পীরা করেছিলো? সেটা কি শ্রোতারা করেছিলো? যারা গান পাগল মানুষ তারা করেছিলো? না, মোটেও না...! এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে পাইরেসি বন্ধ করবে কারা? পাইরেসিটা তারাই বন্ধ করবে, যারা শুরু করেছিলো।

জাগো নিউজ : প্রশাসন কি এই বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে?
এবি : সবচেয়ে ওয়ান্ডার হচ্ছে, একজন আর্টিস্ট, একজন মানুষের পয়েন্ট অব ভিউ থেকে তোমাকে ফ্রেন্ডলি বলি। আমরা কথায় কথায় সরকার, প্রশাসন কিংবা সরকার যে না তাকে দোষ দিচ্ছি। কেউ কাউকে না কাউকে ব্ল্যাম করেই যাচ্ছি। নিজের দিকে একবারো তাকাই না। নিজের দিকে একবারো তাকিয়ে বলি না যে, হ্যাঁ এটা আমার দোষ। এটা আমার ক্ষতি হয়েছে, আমার দ্বারা পুরো দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিল্পীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই আত্মশুদ্ধি, এই আত্মপলব্ধি যতোক্ষণ পর্যন্ত আমাদের না আসবে কারো কারো মনে, ততদিন পর্যন্ত এখানে সরকার কিছু করতে পারবে না। বিস্কিটতো নকল হয় না, সাইকেলতো নকল হচ্ছে না, গাড়ীর টায়ারতো নকল হচ্ছে না, সিগেরেটতো নকল হচ্ছে না; শুধু গানই নকল হওয়ার জিনিস পাওয়া গেলো! তাও আবার বাংলাদেশি শিল্পীদের গানই! এটা এতো মজা যে এটা নকল করে খেতে হবে। অথচ এর জন্য সংগীত জগৎ বিপর্যস্ত হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শিল্পীগুলো অভিমানী হয়ে যাচ্ছে। ভালো কিছু সৃষ্টির ইচ্ছা থাকলেও সে আর সৃষ্টি করবে না। তাতে ক্ষতি কার হচ্ছে? সেই শিল্পীর কিছু পার্টিকোলার লিসেনার, লাভার তথা বাংলাদেশসহ পুরো পৃথিবীতে বাংলা ভাষাভাষি মানুষ যারা আছেন, যারা বাংলা গানকে ভালবাসেন, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

abজাগো নিউজ : আশি-নব্বইর দশককেই বাংলা সংগীতের স্বর্ণযুগ বলছেন অনেকে; এই সময় কি বাংলা সংগীতে ফিরে আসবে বলে মনে করেন?
এবি : আশি-নব্বইর দশকে কিন্তু বাংলাদেশে একটা সাকিব আল হাসান ছিলো না। আশি নব্বই দশকে কিন্তু এরকম আরো অনেক কিছু ছিলো না যেগুলো এখন আসছে, হচ্ছে। অনেক নাম, আমরা চিনি সবাইকে একনামে। বড় বড় কোম্পানি আসছে, বড় বড় প্রতিষ্ঠান আসছে, বড় বড় কর্পোরেট আসছে; মানে আমি এক্সাম্পল দিলাম উনাদের কথা। হ্যাঁ, কিন্তু বড় তারকাও ছিলেন, রকিবুল হাসান ছিলেন, আতাহার আলী খান ছিলেন, আকরাম খান ছিলেন, সুজন ছিলেন এরকম অনেকেই ছিলেন। তারাও ভালো খেলতেন, কিন্তু সাকিব ছিলেন না। সাকিব যে বাংলার প্রাণ, এটা ছিলেন না। এটা এসেছে কয়েকদিন আগে।

একটা যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রত্যেকটা জিনিসের কিন্তু পরিবর্তন হয়। আমরা শুধু পেছন দিকে চলে যেতে চাইছি যে, ওটা কেনো আর হচ্ছে না। ওটা হওয়ার তো কথা না। আমার যে জামাটা আজকে পরে এসেছি, এ জামাটা হয়তো সামনের রোজার ঈদে আর নাও পরতে পারি। তারমানে এই নয় যে ওটা বাজে ছিলো। এইটা তো ক্লাসিক হয়ে যাবে, এটা ক্লাসিকের পর্যায়ে সম্মান দিতে হবে।

আর আরেকটা জিনিস মিতুল, এটা তোমার সাথে শেয়ার করি। সম্মান বা অনারটা বা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করাটা শুধু ক্ষেত্র বিশেষে, গোত্র বিশেষে বা ব্যক্তি বিশেষের জন্য নয়; এটা সবার জন্য। এ দেশটা প্রতিটা মানুষের, এ দেশে যে কয়টা মানুষ জন্ম নিয়েছে, এ দেশের যে কয়টা মানুষের পাসপোর্ট আছে, মানে বাংলাদেশের নামে পাসপোর্ট আছে যাদের কিংবা আজকে যে শিশুটা জন্ম নিলো এই বাংলাদেশটা তার। এ দেশটাকে ভালোবাসার দায়িত্ব তার, এই প্রতিটা মানুষের। কোনো ব্যক্তি বিশেষের নয়। আর যদি এভাবে বলতে চাই, তুমি যদি জানতে চাও কেন, তাহলে আমি এভাবে সিম্পলিফাই করবো যে, দেশকে ভালোবাসলেই মা’কে ভালোবাসা হবে, আর মা’কে ভালোবাসলেই দেশকে ভালোবাসা হবে।

আর দেশকে ভালাবাসলেই নিজেকে ভালোবাসা হবে। মানে আমার দেশের রাস্তা ভাঙা, কিন্তু দেশটাতো আমার। আমার সামনে একটা কলার ছোগলা পড়ে আছে, এইটা যদি উঠিয়ে আমি সরিয়ে দেই এবং এইরকম প্র্যাক্টিসটা ভেতর থেকে আমাদের নিজেদের আত্মস্থ করা দরকার। আমি চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি একটা লোক দাঁড়িয়ে রাস্তার মধ্যে প্রস্রাব করছে, তাকে নিষেধ করার দায়িত্বটা আমার। কারণ দেশটা যেমন আমার, তেমন তারও দেশ। সেতো আর বিদেশ থেকে এখানে এসে প্রস্রাব করছে না। তাকে মনে করিয়ে দেয়া যে এ দেশের এ জায়গাটা আপনার। একে পরিস্কার রাখুন, সুন্দর রাখুন, আদরে রাখুন।

জাগো নিউজ : আপনাদের পরবর্তী সময়ে প্রচুর মেধাবী ব্যান্ড দল এগিয়ে আসছে, তাদের জার্নিটা কেমন হওয়া উচিত বলে মনে করেন?
এবি : ফার্স্ট অব অল তোমাকে ধন্যবাদ। এই প্রথম কোনো সাংবাদিককে বলতে শুনলাম যে নতুন প্রজন্ম এগিয়ে আসছে এবং ভালো করছে। তোমাকে ধন্যবাদ মিতুল, নতুনদের পক্ষে বলার জন্য আমার তরফ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ তোমাকে। আমি সারাটা জীবন এটাই শুনতে চেয়েছি, এই বিশ্বাস এই ভালোবাসা এই জায়গাটাতো আমার ছিলো এবং এখনো আছে, সারা জীবন থাকবে। নতুন প্রজন্ম আসছে, যাদের কথা তুমি বলছো, মানে নতুন প্রজন্মই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। কিন্তু সবসময় একটা অভিযোগ অন্যান্যরা করে থাকে যে ‘তরুণ প্রজন্মের গান কেনো আপনাদের মতোন হচ্ছে না? কেনো হচ্ছে না?’ আরে আমাদের মতো হওয়ার কথা নাতো, ও তো এ যুগের সন্তান। ওকে এ যুগের মতো করে দিতে হবে। এবং এ যুগের যারা ব্যান্ড আসছে, সবাই খুব ভালো করছে। তাদের নিজস্ব স্টাইলে ভালো করছে। শুধু তাদের প্রতি আমাদের উদারতার প্রয়োজন। মানসিকতার পরিবর্তনও দরকার। শোনার অভ্যাসের পরিবর্তন দরকার। আমি এক টাইপের গান শুনতাম, এখন আমাকে নতুনত্বটা বরণ করতে হবে। নতুনকে স্বীকারোক্তি দিতে হবে। তারপরে রবীন্দ্রনাথের অনেক কথায় মিলে যাবে। রবীন্দ্রনাথ কিন্তু অনেক আগেই নতুনকে বরণ করে নিতে অনেক কথায় বলে গেছেন। এটা জানতে হবে, বুঝতে হবে।

জাগো নিউজ : আপনার প্রচুর গান আছে যেগুলোর কথা যেনো একটা গল্পের বয়ান, বিশেষ করে ‘হকার’ গানটিতো বটেই; গীতিকার আইয়ুব বাচ্চুর কথা জানতে চাই?
এবি : আমার সমস্যা হচ্ছে, আমি এমনি গান লিখতে পারি না। আমি ঠিক তোমার সাথে যেরকমভাবে কথা বলছি, আমার গানগুলিও প্রায় অনেকটা এরকম। আমি জীবনে বাস্তবে দেখা কিছু গল্প নিয়ে গান লিখি। ‘ফেরারি এ মনটা আমার’ গানটা কেনো? আসলে এটা অ্যাবসুলেটলি লেখা এ কারণে, আমার স্ত্রীকে যখন মানে এখন যে আমার স্ত্রী, সে একসময় আমার প্রেমিকা ছিলো। তাকে অনেকদিন দেখতে দেয়নি আমাকে। ওর পরিবার থেকে আটকে রাখা হতো। ওই দুঃখ থেকে গানটা লেখা। তো ওই গানটা যে এতো বিখ্যাত হয়ে যাবে, এটা আমি কখনোই চিন্তা করিনি।

জাগো নিউজ : ভাবির বাড়িও কি চট্টগ্রাম ছিলো?
এবি : না না, ওর বাড়ি ঢাকাতেই। আর যে গান জীবনের কথা বলবে না, সে গান কিসের কথা বলবে তা আমি জানি না। আর যারা গান লিখে তারাতো জানেই; কিন্তু যারা লিখে না, শুধু অনুভব করে তাদের জন্য এই মেসেজটা যেটা হচ্ছে, সুখটা খুবই ক্ষণিকের। এই আছেতো এই নেই। সুখ, যেটার আশায় মানুষ মরে যায়। সুখ সুখ সুখ করতে করতে মানুষ একদম শেষ, কিন্তু দুঃখটা অবধারিত। জন্মলগ্নে কান্না, বিদায়লগ্নে কান্না। এর মাঝখানের বাকী জীবনটাও পুরোটা কান্না। দুঃখ অবধারিত, এটা মেনে নিয়েই চলতে হবে। সুখটা কদাচিৎ আসতেও পারে, নাও আসতে পারে। একটা আম খেয়েও সুখী হতে পারো, একটা আইসক্রিম খেয়েও সুখী হতে পারো, একটা ঘুড়ি উড়িয়েও সুখী হতে পারো, একটা সাইকেল চালিয়েও সুখী হতে পারো, একটা মোটর সাইকেল চালিয়েও পারো, কিংবা একটা বিশাল নদী সাঁতরিয়েও সুখী হতে পারো; কিন্তু দুঃখ তোমার সাথে সাথে আছে। পদে পদে মানুষের জীবনে দুঃখ, ছায়ার মতো। দুঃখই মানুষের প্রকৃত বন্ধু। তাই মানুষ সুখের আশায় পাগল থাকে। ঘুম থেকে উঠেই পাগলামি করে, সবসময় আমার হয়নি, ব্রেকফাস্টটা ঠিকমতো জমলো না, এই যে দুঃখ। আসলে ব্রেকফাস্ট জমেছে, উনি বুঝতে পারে নাই। আসলে দুঃখতো তার সাথে বসে আছে, ফলে তারতো সুখী হওয়ার সুযোগ নেই।

অথবা গুলশানে কারো একটা বাড়ি আছে পাঁচতলা, আবার তারই বন্ধুর বাড়িধারায় দেখা গেলো ১০তলা একটা বাড়ি। এটা দেখে পাঁচতলা মালিক বন্ধুটির কি দুঃখবোধ! তার বন্ধুর মতো বারিধারায় তার একটা বাড়ি নেই! স্ট্রেঞ্জ! আহ দুঃখ! অথচ কতো মানুষ মাথার উপর খোলা আকাশ নিয়ে ঘুমায়। এই দুঃখবোধ মানুষের অবধারিত। এটা থেকেই যাবে। এজনই বোধকরি সুখের গানের চেয়ে বেদনা, না পাওয়ার গানগুলোই মানুষকে বেশি স্পর্শ করে!

জাগো নিউজ : গত দশকেও গ্রামগঞ্জের অলিগলিতে হরহামেশায় বেজে উঠতো বাংলা ব্যান্ডের অসাধারণ সব গান, অথচ সেগুলো এখন হিন্দির দখলে। এই অচেনা পরিবর্তন সম্পর্কে বলুন...
এবি : এটাই মুক্ত বাজার অর্থনীতি। এটার একটাই শব্দ ‘মুক্তবাজার অর্থনীতি’। এবং এটার ভালো, খারাপ দুটি দিকই আছে। খারাপ দিক হচ্ছে যারা আগের মতো অবস্থাটা না পেরে হতাশাগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে, তাদের জন্য দুঃখ লাগছে। আবার আরেক দিকে ভালো লাগছে, যে গান আগে শুনতো না, সে গান শুনছে। খারাপ কি, মন্দ কি!
জাগো নিউজ : গেল বছরে নিজের গড়া ব্যান্ড দল ‘এলআরবি’র দুই যুগ পূর্ণ হল এবার এপ্রিলে ২৫ বছর পূর্ণ করলেন। এই দীর্ঘ যাত্রায় সাফল্য ও ব্যর্থতার জায়গাগুলো জানবো?
এবি : এলআরবির সাফল্য বলতে গেলে পুরোটাই ‘সাফল্য’। ইন এ সেন্স বলতে গেলে সারাক্ষণ তোমরাই ছিলা এলআরবির পাশে। যারা বর্তমানে অনলাইন পত্রিকা করছে, আগে যারা হার্ড পত্রিকা ছিলো তারা, সাংবাদিক ভাই বন্ধুরা সবসময় আমাদের পাশে ছিলো। এলআরবির বন্ধু তারা। আর ছিলো এলআরবির অগনিত ভক্ত, ফ্যানসরা। এছাড়া এর বেশি কিছু আমাদের চাওয়াও ছিলো না, অনেক কিছু চাওয়ার ছিলো না। আর এলআরবির ব্যর্থতা বলতে, মানে না পাওয়া বলতে একটা জিনিস আছে। সেটা হচ্ছে আমরা জানি না আসলে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের গান রিকগনেশন পেতে আর কতোকাল অপেক্ষা করতে হতে পারে। এটা আমাদের জন্য একটা দুঃখ হয়ে থাকবে। 


জাগো নিউজ : আপনার কথার রেশ ধরেই বলি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলা ব্যান্ডের ভবিষ্যৎ কেমন দেখছেন?
এবি : সম্ভাবনা দুইশত ভাগ। কারণ, এখন অনেকেই ইন্টারন্যাশনাললি মুভ করছে। সব জায়গায় বাংলা গান মানুষ শুনছে, আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। এই যেমন গত মার্চে আমরা দিল্লীতে গিয়ে গান গেয়ে এসেছি। সেখানে বাংলা ভাষাভাষি মানুষ কম, কিন্তু অনেকেই যারা বাংলা ভাষা জানে না তারাও বাংলা গানের প্রতি এক ধরনের আগ্রহ দেখিয়েছে, শুনেছে। তো এগুলি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলা গানের দ্বার খুলে দেয়ার জন্য সহায়ক। এছাড়া এখন বাংলা গান নিয়ে বিশ্বে অনেকেই খুব ভালো কাজ করে যাচ্ছেন। এসব আমাদের বাংলা গানের জন্য সত্যিই সম্ভাবনার দুয়ার খোলে দেয়ার মত ঘটনা।

জাগো নিউজ : বিশ্বশান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে গেল মার্চ মাসে ভারতে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হয়ে গেয়ে এলেন, সেখানে গাওয়ার অভিজ্ঞতা যদি শেয়ার করেন আমাদের সাথে...?
এবি : হ্যাঁ। বিশ্ব শান্তির দিবসের আয়োজনে ভারতের দিল্লীতে আমরা এলআরবি পারফর্ম করেছি। পরিক্রমাসহ ইন্ডিয়ার আরো অন্যান্য ব্যান্ড, নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কারও ব্যান্ড ছিল। মানে চমৎকার একটা আয়োজন ছিল। তাদের সাথেই আমরা সেখানে পারফর্ম করেছি। উপস্থিত সবারই একই উপলব্ধি ছিল, একই চাওয়া ছিল যে বিশ্বজুড়ে আগামি প্রজন্ম যেন সুন্দরভাবে বেড়ে উঠে। আসলে শান্তি ছাড়া সেখানে আমাদের কারোর কিছুই চাওয়ার ছিল না। মিউজিকের মাধ্যমে সবার কাছে শান্তির বার্তাটা ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যেই ‘নেশনস ফর পিস’ নামে দিল্লীতে প্রতি বছর এমন কনসার্টের আয়োজন করা হয়।

ab

জাগো নিউজ : এর আগে ২০১৩-তে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে গান করেছেন আপনি। রাষ্ট্রপতির আপ্যায়নে মুগ্ধতার কথাও জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন ‘সংগীত জীবনের অপ্রাপ্তিটুকু ঘুচে গেছে’। সেই মধুর স্মৃতিটুকু আপনার মুখ থেকে ফের শুনতে চাই?
এবি : এখানে সত্যি ইন্টারেস্টিং হচ্ছে আমরা শুধু যে ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতি ভবনে বাজিয়েছি তা নয়। ওই বারই প্রথম কোনো রক কনসার্ট রাষ্ট্রপতি ভবনে হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশ থেকে আমরা, আর ভারত থেকে আদ্রিয়েতা, এবং স্ট্রিংস ছিলো পাকিস্তান থেকে। তাছাড়া বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতির জন্যও আমরা বাজিয়েছি, যিনি এখন প্রয়াত জিল্লুর রহমান। তিনি থাকা অবস্থা আমরা বঙ্গভবনে বাজিয়েছি। আমরা এদিক দিয়ে বলতে পারি যে আমরা খুব ভাগ্যবান ব্যান্ড যে দু-দুইটা রাষ্ট্রপতি ভবনে আমরা বাজিয়েছি। আর আমরা সেই সৌভাগ্যবান ব্যান্ডদের একটি, যারা লন্ডনে বাজিয়েছে, যারা অ্যালেন গার্ডেনে আশি হাজার সাদা গানপাগল মানুষের জন্য বাজিয়েছে। যারা বাংলা গান বোঝে না, ভাষা বোঝে না কিন্তু আমার মিউজিক এরা বুঝেছে। আর এখানে এটা না বললেই নয়, মিউজিকের কোনো দেশ নেই, মানচিত্র নেই তাই ভাষাও নেই। একটি মিউজিক যে কোনো ভাষার শ্রোতাকেই মুগ্ধ করে যায়। যাই হোক, আমরা নিউইয়র্কে ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে বাজিয়েছি। বাংলা ব্যান্ড হিসেবে একমাত্র বোধয় আমরাই যারা ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে বাজিয়েছি। আমরা অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন জায়গায় বাজিয়েছি। মানে আমি বলতে চাইছি, কিছু কিছু স্মৃতি কখনো কোনো অবস্থায় ভোলার নয়। এই স্টেজগুলো হয়তো তাদেরই একটি।

জাগো নিউজ : সম্প্রতি সোশ্যাল সাইটে প্রথমবারের মত জেমস ভাই ও আপনাকে একসঙ্গে দেখা গেল। একফ্রেমে গানের দুই কিংবদন্তি! দর্শক-ভক্ত যাতে আপ্লুত
এবি : আমরাতো বরাবরই একসঙ্গে ছিলাম।

জাগো নিউজ : না, তাতো ছিলেনই! কিন্তু সোশ্যাল সাইটে আপনাদের দুজনকে কখনোই এভাবে কেউ দেখে অভ্যস্ত না?
এবি : হয়তো ব্যক্তিগত জীবনে দুজনই খুব ব্যস্ততার জন্য সাক্ষাৎ হয়ে উঠে না। আমি যেমন ব্যস্ত, সেও তার কাজ নিয়ে দারুণ ব্যস্ত থাকে। ফলে একত্রিত হওয়া বা দুজনের একটু কোথাও অলস সময় কাটানো হয়ে উঠে না। তো দুজনের অনেক দিন পর দেখা হল, একটু পাগলামি হল। এইতো! আসলে আমরা এরকমই ছিলাম। সেই ১৯৯১ থেকে বা তারও আগে থেকেই!

জাগো নিউজ : অতীতে দুজন একসঙ্গে বহু কাজ করেছেন, আপনাদের একাধিক মিশ্র অ্যালবাম তুমুল হিটও হয়েছে একসময়। ভবিষ্যতে কী তেমন কোনো পরিকল্পনা আছে আপনাদের?  
এবি : অ্যালবাম যেহেতু বের হচ্ছে না, ফিতা নষ্ট হয়ে গেছে, সিডি নষ্ট হয়ে গেছে তাই সেই ভাবনায় আর কী হবে বলো। এখন ডিজিটাল যুগ চলছে, এ যুগে কেউ যদি আমাদের একত্রিত করে কিছু করতে চায় নিশ্চয় আমরা করবো। আসলে সময়ই বলে দিবে, আগ বাড়িয়ে বলা কিছু ঠিক না।   


জাগো নিউজ : আপনার ছেলে আহনাফ তাজোয়ারকে এখন প্রায়শই এলআরবির সঙ্গে বাজাতে দেখা যায়। পেশা হিসেবে কি তাহলে ছেলেও সংগীতকেই বেছে নিবে?
এবি : মোটও না। আমার মনে হয় ও সংগীতকে পেশা হিসেবে নিবে না। জন্মের পর থেকেই সে তার বাবার পথচলা দেখেছে। আমি চাইবো পড়াশোনা শেষ করে যদি ইচ্ছে করে মিউজিক করবে, কোনো আপত্তি নেই। যদিও ওর মন চায়। শখে কিছুদিন এলআরবির সঙ্গে বাজাচ্ছিল, কিন্তু এখন সে খুব ব্যস্ত লেখাপড়া নিয়ে।

জাগো নিউজ : ইদানিং ভিনদেশি শিল্পীদের প্রায়শই দেশের অনুষ্ঠানগুলোতে নিয়ে আসা হচ্ছে। এই চর্চাটাকে কীভাবে দেখছেন? এতে কি দেশীয় শিল্পীদের অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে বলে মনে হয় আপনার?
এবি : আমার তা মনে হয় না। যদি দেশীয় কোনো শিল্পীর অভিযোগ থাকে তবে সেটা আমাদের অর্গানাইজাররা ভালো বলতে পারবেন, তারা এগুলো কেন করছেন, কিভাবে করছেন। কিন্তু আমাদেরকেও মনে রাখতে হবে, ভিনদেশি শিল্পীরাও নিজেদের যেভাবে চমৎকার করে উপস্থাপন করতে পারেন, সেটা আমাদেরকেও রপ্ত করতে হবে। আসলে আমার মতে কম্পিটিশন থাকতে হবে, নাহলে মিউজিক ভালো হবে না। তাই ভিনদেশি শিল্পী আসলেই আক্ষেপ করে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করার কোনো দরকার নেই। আমি ভিনদেশে যেতে পারলেই ভালো, আর অন্য কেউ এদেশে আসলেই খারাপ? ব্যাপারটা এরকম নাকি? যদি এরকম হয়, তাহলে সংগীতের আর দরকার নেই। সেটা শিল্পীর রূপ নয়।

শিল্পীর রূপ হচ্ছে, আপনি আমার জন্য এই গানটি গেয়েছেন, এই রাগটি গেয়েছেন আমি আরো চমৎকার একটি গান গেয়ে আপনার মন জয় করবো। এটা হচ্ছে শিল্পীর কাজ। আপনি কেনো আমার শহরে আসছেন এটা নিয়ে তর্কাতর্কি করার এখানে কোনো প্রয়োজন নেই। এটা আয়োজকদের ব্যাপার, ওরা লোকাল আর্টিস্টদের কিভাবে উপস্থাপন করবে। আয়োজকরা জানেন ভিনদেশি শিল্পীর সাথে লোকাল আর্টিস্ট কাদের কিভাবে সম্মাননা করবে। আয়োজকরা চিন্তা ভাবনা করে যে লোকাল কোনো শিল্পী নেবে না, সে নাও নিতে পারে; আমার টাকা আমি যাকে খুশি তাকে দিয়ে শো করবো। তাই নয় কি! কিন্তু এইজন্য আমরা শিল্পীরা যদি মনে করি অমুককে কেনো আনা হলো, এটাতো আয়োজকদের একদম উচিত হয়নি; তাহলে এটা হয়তো আমার বোঝার ভুল আছে। কিংবা আমি আমার কথা বলতে পারি, আমি মূর্খ-সূর্খ মানুষ আমি তাই একটু ভিন্নভাবে দেখি বিষয়টা। আমি মনে করি ‘শিল্পীদের একটু উদারতারও প্রয়োজন আছে। শুধু গান গাইলেই হবে না, একটু মানুষও হতে হবে।

জাগো নিউজ : বহুদিন আগে আপনার কোনো টিভি ইন্টারভ্যুতে আপনাকে বলতে শুনেছিলাম যে আপনি একটি মিউজিক্যাল একাডেমি করার ইচ্ছে পোষণ করেছিলেন, ওটার কি খবর?
এবি : আসলে এই জীবনে অনেক স্বপ্নই শুকনো বালুচরের মত শুকিয়ে গেছে। তো আমারও হয়তো এরকম স্বপ্ন ছিল, এখনো আছে একটা মিউজিক্যাল স্কুল কিংবা গীটার স্কুল দেয়ার কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণের লোকবল এবং সাপোর্ট আর ফিন্যানসিয়াল সাপোর্ট ছাড়া তা হয়ে উঠে না। আর আমার কাছে আমার যেটা স্বপ্ন ছিল তা হচ্ছে বাইরের কোনো একটা স্কুলের সাথে অ্যাফলিয়েশন করে সুন্দর একটা স্কুল প্রতিষ্ঠা করা। একটু গুছিয়ে উঠতে পারলে হয়তো বা এটা নিয়ে আবার ভাববো। তবে আগাম কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়া আমার জন্য ঠিক হবে না।

জাগো নিউজ : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ....
এবি : তোমাকে এবং জাগো নিউজকেও অনেক ধন্যবাদ। ভালো থেকো। আমার জন্য দোয়া করো।

এলএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।