তৌকীরের ছবি দেখে যা বললেন তারকারা


প্রকাশিত: ১২:০৬ পিএম, ১৬ আগস্ট ২০১৬
ছবি : মাহবুব আলম

ক্যারিয়ারের চতুর্থ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন নন্দিত অভিনেতা ও নির্মাতা তৌকীর আহমেদ। আগামী শুক্রবার, ১৯ আগস্ট মুক্তি পাচ্ছে তার ‘অজ্ঞাতনামা’ ছবিটি। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ইমপ্রেস টেলিফিল্মের এই ছবিটি পরিচালনার পাশাপাশি ছবিটির গল্প, চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচনাও করেছেন তৌকীর।

আজ মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্সে ‘অজ্ঞাতনামা’র প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ‘অজ্ঞাতনামা’র পরিচালক তৌকীর আহমেদ, ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, ছবিটির অভিনয়শিল্পী ফজলুর রহমান বাবু, নিপুণ। এছাড়াও অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আফজাল হোসেন ও তার স্ত্রী তাজিন হালিম, অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা ও নির্মাতা বদরুল আনাম সৌদ দম্পতি। আরো ছিলেন বদরুল আনাম সৌদ, বিপাশা হায়াত, নাতাশা হায়াত, শাহেদ শরীফ খান, শহীদুল আলম সাচ্চু, আনন্দ আলো ম্যাগাজিনের সম্পাদক রেজানুর রহমান প্রমুখ।

ছবিটির প্রিমিয়ার শেষে এর গল্প ‍ও নির্মাণের প্রশংসা করেছেন উপস্থিত তারকা ও অতিথিরা। বিশেষ করে সবার মুখে মুখে ছিলো নির্মাতা তৌকীর আহমেদ ও অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবুর বন্দনা। ছবিটি সম্পর্কে বলতে গিয়ে আফজাল হোসেন বলেন, ‘আমি এক কথায় বলবো অসাধারণ। তৌকীর আহমেদ আমাদের কাছে অনেক আগে থেকেই একজন মেধাবী মানুষ ও শিল্পী হিসেবে সমাদৃত। যেমনি তার অভিনয় দক্ষতা তেমনি তার পরিচালনার হাত। এই ছবিটি দেখতে দেখতে মনে মনে বলেছি পরিচালক তৌকীরের জয় হোক।’

ogatonama

তিনি আরো বলেন, ‘ছবি নির্মাণের জন্য তৌকীর অসাধারণ একটি বিষয় বেছে নিয়েছেন। আর গল্পটাকে তিনি সেলুলয়েডে একেবারে জীবন্ত করে তুলেছেন। বিশেষ করে তার ছবির প্রাণ হিসেবে হাজির হয়েছে ফজলুর রহমান বাবুর চরিত্রটি। অনবদ্য। এই ছবি দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া উচিত। কেননা, এটা কেবল বিনোদন নয়; আমাদের দেশের জন্য খুবই গুরত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে ‘অজ্ঞাতনামা’য়। ফুটে উঠেছে মানিবকতার সৌন্দর্যের দিকটি। দিনশেষে মানুষই মহান আর মানুষের আসল পরিচয় সে মানুষ এটা নতুন করে ভাবতে শিখাবে এই ছবিটি। আমি ‘অজ্ঞাতনামা’ এবং এর সঙ্গে জড়িত সকলের জন্য শুভকামনা রাখছি।’

অজ্ঞাতনামা নিয়ে বিপাশা হায়াত বলেন, ‘যখন এই ছবিটি বানাবে বলে চিত্রনাট্য করছিলো তৌকীর তখন আসলে এত চমৎকার কিছু হবে টেরই পাইনি। ছবি আঁকা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। এই ছবির সঙ্গেও খুব একটা জড়িত হতে পারিনি নানা ব্যস্ততায। কিন্তু আমি যেদিন ছবিটি প্রথম দেখেছি সেদিনই বুঝেছি একটা দারুণ কিছু করতে পেরেছে ‘অজ্ঞাতনামা’র টিম। তাদেরকে অভিনন্দন।’

তৌকীর আহমেদের প্রশংসা করে সুবর্ণা মুস্তাফা বলেন, ‘জয়যাত্রা দিয়ে শুরু হয়েছিলো তৌকীর আহমেদের চলচ্চিত্র পরিচালনা। শুরুতেই তিনি প্রমাণ দিয়েছিলেন নির্মাণের মুন্সিয়ানা। দিনকে দিন সেই মুন্সিয়ানায় রঙ লেগেছে। আজকের ছবিটি দেখে আমি ‘ইমপ্রেসড’। চমৎকার একটি গল্প। চমৎকার হয়েছে তার নির্মাণও। মানুষ ও মনুষত্বের উপর প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি রাষ্ট্র ও ব্যক্তি দায়বদ্ধতার জায়গাটিতেও একটা পরিবর্তনের ইঙ্গিত রয়েছে। আসলে সবকিছুর উপস্থাপন এত নান্দনিক হয়েছে যে মনকে ছুঁয়ে যাবে।’

ছবিতে অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে সুবর্ণা বলেন, ‘গল্পটা সুন্দর বলেই এর চরিত্ররাও সুন্দর হয়ে উঠেছে। প্রতিটি চরিত্রই প্রাসঙ্গিক এবং দুর্দান্ত লেগেছে। বিশেষ করে ফজলুর রহমান বাবুর চরিত্রটি তো মনে দাগ কেটে দিয়েছে। তিনি অসাধারণ কাজ করেছেন। আমার বিশ্বাস এই চরিত্র দর্শকদেরও মুগ্ধ করবে। এছাড়াও শহীদুজ্জামান সেলিম, শতাব্দী ওয়াদুদ, মোশাররফ করিম এবং নিপুণ দারুণ কাজ করেছেন।’

ogatonama

বদরুল আনাম সৌদ বলেন, ‘আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে ‘অজ্ঞাতনামা’। হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া করুণ এক গল্প। বৃদ্ধ বাবার ছেলের লাশ ফিরে পাওয়ার আকুলতা যে কোনো মনকেই নাড়া দিয়ে যাবে। তবে বেশি ভালো লেগেছে এই ছবির চরিত্রদের উপস্থাপন।’

প্রিমিয়ার শেষে নিজের চরিত্রটি নিয়ে ফজলুর রহমান বাবু বলেন, ‘এই ছবিতে আমার যে চরিত্র সেটি করতে গিয়ে বেশ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। কারণ, এখানে যে চরিত্র আমার তার সঙ্গে আমি একেবারেই পরিচিত নই। বিদেশে নাম-পিতৃপরিচয় গোপন করে বিদেশ যাওয়া ছেলের লাশ ফিরে পাওয়ার জন্য বাবার যে আকুলতা সেটি ফুটিয়ে তুলতে কষ্ট করতে হয়েছে আমাকে। তবে কাজটি বেশ উপভোগও করেছি। এখন পর্যন্ত সবাই প্রশংসা করছেন। ভালো লাগছে। আশা করি দর্শকদেরও ভালো লাগবে।’

বাবু যোগ করে আরো বলেন, ‘যাদের জীবন যাপন ও করুণ পরিণতি নিয়ে এই ছবিটি নির্মাণ করা হয়েছে সেইসব প্রান্তিক মানুষের কাছে ছবিটি পৌঁছালে ভালো লাগতো।’

ছবিটিতে বিদেশ গমনে ইচ্ছুক বিধবা বিউটি চরিত্রে অভিনয় করা নিপুণ বলেন, ‘সবসময়ই চেষ্টা করি ব্যতিক্রম গল্প ও চরিত্রে কাজ করতে। সেদিক থেকে এই ছবিটি আমাকে তৃপ্তি দিয়েছে। পুরো গল্পটাই ভালো লাগার মতো। প্রত্যেকেই খুব ভালো কাজ করেছেন। আমিও চেষ্টা করেছি নিজের সাধ্যমতো। এবার দর্শকের বিচারের পালা।’

পরিচালক তৌকীর আহমেদ জানালেন, প্রাথমিকভাবে অল্প কিছু সিনেমা হলে ‘অজ্ঞাতনামা’ মুক্তি পাচ্ছে। তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলগুলো হচ্ছে- রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্স, ব্লকবাস্টার সিনেমাস ও শ্যামলী। পরবর্তীতে আরো বেশ কিছু হলে ছবিটি মুক্তি দেয়া হবে বলে জানালেন নির্মাতা।

‘অজ্ঞাতনামা’ ছবিতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফজলুর রহমান বাবু, মোশাররফ করিম, নিপুণ, আবুল হায়াত, শতাব্দী ওয়াদুদ, শাহেদ আলী সুজন, শহীদুজ্জামান সেলিম, শাহেদ শরীফ খান প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালে ‘জয়যাত্রা’ ছবি দিয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তৌকীর আহমেদ। ছবিটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে বেশ কিছু স্বীকৃতি অর্জন করে নেয়। এরপর তিনি ‘রূপকথার গল্প’ ও ‘দারুচিনি দ্বীপ’ নামে আরো দুটি ছবি নির্মাণ করেন। প্রতিটি ছবিই দর্শক এবং সমালোচকদের মন জয় করতে সমর্থ হয়।

সর্বশেষ তিনি নির্মাণ করেছেন ‘অজ্ঞাতনামা’। এটি এরইমধ্যে ইতালির গাল্ফ অফ নেপলস ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম ফেস্টিভলে অর্জন করেছে জুরি মেনশন অ্যাওয়ার্ডও অর্জন করেছে। প্রিমিয়ার দেখে অনেকেই আশা প্রকাশ করেছেন চলতি বছরের চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে এই ছবিটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রতিযোগিতায় অনেক সম্ভাবনা নিয়েই এগিয়ে থাকবে।

এলএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।