হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে তারকাদের স্মৃতিকথা
প্রয়াত কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের আজ চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী। আজকের এই দিনে শিল্প-সাহিত্যের সবখানে আলোচনার বিষয় তিনি। তাকে সবাই স্মরণ করছেন শ্রদ্ধায়। তাদের ভিড়ে যোগ দিয়েছেন বেশ ক’জন তারকাও। তারা বিভিন্ন সময় হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে কাজ করেছেন।
খুব কাছ থেকে দেখেছেন শিল্পী হুমায়ূনকে। পেয়েছেন ভালোবাসা ও আশীর্বাদ। প্রিয় মানুষটির প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলিতে তারা স্মৃতির জানালা খুলে জানালেন অনেক কথা।
রিয়াজ, চিত্রনায়ক
স্যার আমাদের মাঝে বেঁচে নেই এটা আমি বিশ্বাস করি না। তিনি সবখানেই আছেন। আমরা তাকে অনুভব করি সবসময়। হয়তো ধরতে পারি না। তার সঙ্গে কাটানো সময়গুলো খুব মিস করি। তার ডিরেকশন মিস করি, তার অ্যাকশন বলা, কাট বলা, তার সঙ্গে আড্ডা দেয়া মিস করি। আমি মনে করি, বাংলা ভাষার সাহিত্যপ্রেমী, সংস্কৃতিপ্রেমীরা সবাই মহান একজন শিল্পী ও শিল্পের স্রষ্টাকে মিস করেন। আর সাংবাদিক ভাইদেরও ধন্যবাদ জানাই যে, তারা এই নন্দিত সৃষ্টির কারিগরকে মনে রেখেছেন। আশা করি সারাজীবন মনে রাখবেন। অদেখা ভুবনে ভালো থাকুন আমাদের সবার প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ।
কুদ্দুস বয়াতি, সংগীত ব্যক্তিত্ব
তিনি আমার ওস্তাদ। আজ আমার যা কিছু পরিচিতি সব উনার জন্য। আমার মত একজন অসহায়-অবহেলিত মানুষকে রাস্তা থেকে তুলে এনে তিনি তারকা বানিয়েছেন। আমার জীবন ও ভাগ্য বদলে গেছে তার উসিলয়। আমার কাছে তার ঋণ ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। স্যার আমার জন্য যা করেছেন, সেটা আমার গায়ের চামড়া কেটে তার জুতা বানিয়ে দিলেও শোধ হবে না। সন্ধ্যায় কুদ্দুস বয়াতি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে স্যারের জন্য কল্যাণপুরে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছি। যে যেখানেই থাকুন ভালো এই মানুষটির জন্য দোয়া করবেন। আমার স্যার ছিলেন খুব ভালো মানুষ। আজকাল এমন ভালো মানুষ দেখি না। তার মতো সত্যবাদীও নেই। আল্লাহ তাকে বেহেশত নসিব করুক।
মিম, চিত্রনায়িকা
আমার বড়পর্দায় অভিষেক হুমায়ুন স্যারের হাত ধরে। এটা যে কত বড় পাওয়া আমার মত ক্ষুদ্র একজন শিল্পীর জন্য সেটা কাউকে বোঝাতে পারব না। তিনি আমাকে অভিনয়ের সাহসটা দিয়েছিলেন। আমার মনে হয় তিনি ঈশ্বরের বিশেষ আশীর্বাদ নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিলেন। নইলে একজন মানুষ কী করে এমনভাবে সফল হতে পারেন। আমরা শিল্প-সাহিত্যে অনেক সব্যসাচী কিংবদন্তির কথা শুনি। কিন্তু হুমায়ূন স্যারের মতো কেউ নন। কী আশ্চর্য রকমের রহস্যময় একটা মানুষ। যাকে কেবল ভালোই বাসা যায়! তিনি ঈশ্বরের কাছে গেছেন, নিশ্চয়ই ঈশ্বর তাকে ভালো রেখেছেন। স্যারের প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
মাহফুজ আহমেদ, অভিনেতা ও পরিচালক
স্যারের হাত ধরে আমি অভিনয়ে এসেছিলাম। এরপর বহুবার তার সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। এখন আমি নির্মাণে এসেছি। সেখানেও তাকে ফলো করি। আমার সবকিছু জুড়ে কারিগর হুমায়ূন মিশে আছেন। তিনি নেই চোখের দেখাতে। কিন্তু তিনি আমার এবং তার সকল ভক্তের অন্তরে অমর। আজকে স্যারের চলে যাবার দিনে অশ্রুসিক্ত ভালোবাসা আর নত হৃদয়ের শ্রদ্ধা জানাই।
প্রাণ রায়, অভিনেতা
আমি নিজেকে ধন্য মনে করি যে হুমায়ূন আহমেদের মত এমন একজন কিংবদন্তি মানুষের সংস্পর্শে গিয়ে কাজ করেছি। এমন ভাগ্য অনেক অভিনয় শিল্পীরই নেই। তিনি ছিলেন একাধারে অলরাউন্ডার এক ব্যক্তি। ম্যাজিক দেখাতে জানতেন, ডিরেকশন দিতে জানতেন, গান লিখতে জানতেন, হাত দেখতেন, ভালোবাসতে পারতেন। আর যা তিনি করতেন সেটা দুর্দান্তভাবেই করতেন। সেই প্রমাণ সবাই পেয়েছে অনেক আগেই। চৌধুরী খালেকুজ্জামান নামের একটি চরিত্র তিনি আমার জন্য সৃষ্টি করেছিলেন, যেটা ছিল আমার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। আমি স্যারের এই ভালোবাসা আজীবন বুকে আগলে রেখে অভিনয়টা করে যাবো। তাছাড়া ঘেটুপুত্র কমলা ছবিতে তিনি শুধু আমার জন্য নতুন একটি ক্যারেকটার তৈরি করেন যেটা ছিল আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। স্যারের শূন্যতা কোনোদিনই পূরণ হবে না। হুমায়ূন আহমেদ আর আসবেন না।
ডা. এজাজ, অভিনেতা
স্যারের মতো মানুষ আমি আর পাবো না। কোথায় ছিলাম, আর স্যার আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছেন। তার সোনার কাঠির স্পর্শেই তো বদলে গেল সব। একজন চিকিৎসক হয়ে উঠলাম অভিনেতা। মোহাম্মাদ মোস্তফা কামাল রাজের ‘তার কাঁটা’ ছবিতে অভিনয় করে আমি চলতি বছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছি। আমার কষ্ট কেউ বুঝবে না। জীবনের সেরা এই পুরস্কারটি নিয়ে আমি স্যারের সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। এই আক্ষেপ আমার কোনোদিন ঘুচবে না। স্যারের সঙ্গে একেকটা কাজ ছিল আমার জীবনে একেকটা উৎসবের মতো। উনার সাথে কাটানো সময়ের অনেক সুখস্মৃতি রয়েছে। কোনটা ছেড়ে কোনটা বলি। আজ স্যার আমাদের মাঝে বেঁচে নেই, কিন্তু তার স্মৃতিগুলো জলজল করে ভাসছে আমার চোখে। ইচ্ছে আছে আজ একবারের জন্য হলেও তার কবর জিয়ারত করবো। তার আত্মার শান্তি কামনা করি।
মনিরা মিঠু, অভিনেত্রী
আমাদের পরিবারে হুমায়ূন আহমেদের সম্মান অন্যরকম। আমার অভিনয়ের অভিষেক স্যারের হাত ধরে। আমার বড় ভাই, প্রয়াত অভিনেতা চ্যালেঞ্জারকেও তিনি অভিনয়ে নিয়ে এসেছিলেন। বলা হয়ে থাকে, হুমায়ূন আহমেদের হাত ধরে যে ক’জন শিল্পী অভিনয়ে এসেছেন, তাদের মধ্যে চ্যালেঞ্জার অন্যতম। স্যারের সঙ্গে আমার ভাইজানের সম্পর্ক ছিলো দারুণ। আজ তারা দুজনই চলে গেছেন দৃষ্টির সীমানার বাইরে। আল্লাহ তাদের ভালো রাখুন। বিশেষ করে স্যারের মৃত্যুবার্ষিকীতে তার রেখে যাওয়া সৃষ্টির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই আমি।
এলএ/আরআইপি