ঈদের চলচ্চিত্রে শাকিবেরই জিত


প্রকাশিত: ০৮:০৯ এএম, ১৪ জুলাই ২০১৬
ছবি : লয়েড তুহিন হালদার

শেষ হয়েছে ঈদের সাতদিন। সবাই ফিরছেন কর্ম ব্যস্ততায়। এদিকে শোবিজে চলছে হিসাব-নিকাশ কেমন গেল বিনোদনের ঈদ। বিশেষ করে এবারের ঈদে চলচ্চিত্রের বাজার নিয়ে আগ্রহ সবারই একটু বেশি। এর অন্যতম কারণ, বহুদিন পর দেশের প্রায় সবগুলো সিনেমা হলেই দেখা গেছে চলচ্চিত্রের সোনালি দিনের সেই দৃশ্য ‘হাউজফুল’। বলাবাহুল্য, ঈদের বক্স অফিস এবার বেশ জমজমাট। আর রমরমা এই বাজার উপহার দেয়ার জন্য অভিনন্দিত হচ্ছেন তরুণ নির্মাতারা, প্রশংসিত হচ্ছে নির্মাণের মুন্সিয়ানা, বাহবা পাচ্ছেন শাকিব খান। একথাও চলচ্চিত্র পাড়ায় বলতে শোনা যাচ্ছে, ঈদের ছবির বাজারে জিত হয়েছে শাকিবেরই।

ঈদে মুক্তি পেয়েছে মোট চারটি ছবি। সবগুলোই বিগ বাজেটের। তার মধ্যে তিনটি ছবির নায়ক শাকিব খান। তাই নির্মাতা-প্রযোজকদের অনেক হিসাব-নিকাশ কষতে হয়েছিল ছবিগুলোর মুক্তি দেয়া নিয়ে। এক তারকার তিন ছবি মুক্তি দেয়া ঠিক হবে কি না? এত বড় বড় বাজেটের ছবি একসঙ্গে মুক্তি দেয়া ঠিক হবে কি না? কলকাতার নায়ক জিতের সঙ্গে শাকিব পাল্লা দিতে পারবেন কি না? এই সেই আরো অনেক কিছু।

তবে দিন শেষে দেখা গেল সব শঙ্ক কেটে গেছে। দু-একটি ছবি গল্প, নির্মাণ, সংলাপের জন্য কিছুটা সমালোচিত হলেও প্রতিটি ছবিই ব্যবসা করতে সক্ষম হয়েছে। ঘরে তুলেছে লগ্নি করা টাকা। আর এই দৃশ্যটা ঢাকাই ছবির ইন্ডাস্ট্রিতে দেখা গেল অনেক দিন পর।

ঈদের দিন থেকেই চোখে পড়েছে হলে হলে উপচেপড়া দর্শক, আর ছবির টিকিটের জন্য হাহাকার! দর্শকের ঢল নেমেছিল যেন রাজধানীর প্রেক্ষাগৃহগুলোতে। কোনো কোনো হলে গত কয়েক বছরের ব্যবসার রেকর্ড ভেঙেছে। হল মালিক খুশি, প্রযোজক-পরিচালক খুশি। চলচ্চিত্রাঙ্গনেও তাই নতুন আশার হাতছানি।

এবারের ঈদে মুক্তির তালিকায় ছিল মোহাম্মাদ মোস্তফা কামাল রাজের ‘সম্রাট’ ও ‘মেন্টাল’। গল্প ও নির্মাণের মুন্সিয়ানায় এই দুটি ছবির মধ্যে কয়েক ধাপ এগিয়ে ‘সম্রাট’। ছবিতে শাকিবকে নতুন লুকে হাজির করেছেন রাজ। পাশাপাশি অপু বিশ্বাস ছিলেন অনবদ্য। তবে কলকাতার অভিনেতা ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তের চরিত্রটি দেখে মনে হলো তার সঠিক ব্যবহারটি হয়নি। তিনি যে মাপের অভিনেতা পরিচালক বা চিত্রনাট্যকার চাইলে আরো অনেক মুন্সিয়ানাই তাকে নিয়ে দেখাতে পারতেন। তবে যেটুকু নিয়ে ইন্দ্রনীল হাজির হয়েছেন, সেটুকুই মুগ্ধতা দিয়েছে। বরাবরের মতোই এই ছবিতেও ফাটিয়ে দিয়েছেন খল অভিনেতা মিশা সওদাগর।

অন্যদিকে ‘মেন্টাল’ ছবিটি পরিচালনা করেছেন শামীম আহমেদ রনি। ছবিটির নাম নিয়ে ঈদে মুক্তি না পাওয়ার আশংকা তৈরি হয়েছিল। তবে সবাইকে অবাক করে দিয়ে এই ছবিটিই ঈদের বাজারে সর্বাধিক হল দখলের বাহাদুরি দেখিয়েছে। ব্যবসাও হয়েছে বেশ। কিন্তু ছবিটির গল্প অনুযায়ী নির্মাণের দুর্বলতাও চোখে পড়েছে। শাকিব খানই ছিলেন ছবিটির প্রাণ। আঁচলকে কিছুটা সাবলীল লাগলেও তিশাকে যথেষ্ট বেমানান লেগেছে। জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীর জোর করে বাণিজ্যিক ছবির নায়িকা হওয়া চেষ্টাটাও দৃষ্টিকটু লেগেছে। আর পড়শি ছিলেন ছবিটির আকর্ষণ হিসেবেই। এর বেশি কিছু নয়।

অন্যদিকে ঈদের বাজারে মুক্তি পেয়েছে যৌথ প্রযোজনার দুই ছবি- ‘শিকারী’ এবং ‘বাদশা-দ্য ডন’। ‘শিকারী’তে নায়ক ‘কিং খান’ শাকিব খান এবং ‘বাদশা’ ছবির নায়ক ছিলেন ওপার বাংলার সুপারস্টার জিৎ। ভারতের এসকে মুভিজ ও বাংলাদেশের জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রযোজনায় ‘বাদশা’ ও ‘শিকারী’ ছবি দুটির মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবার কথা ছিলো। হলোও তাই। তবে গল্প, নির্মাণ আর অভিনয়ে এগিয়ে রইলেন শাকিবই। যদিও দর্শকদের কিছু অংশের অভিযোগ ছিলো ছবি দুটোতে বাংলাদেশি ছবির ফ্লেভার বলতে শাকিব আর নুসরাত ফারিয়া ছাড়া বিশেষ কিছু নেই। চোখ বন্ধ করে তাই এগুলোকে ভারতীয় ছবি বলা যেতে পারে। আবার এক অংশ বলছেন, ছবির ফ্লেভার যাই হোক দেখতে ভালো লেগেছে। উপভোগ্য হয়েছে।

‘বাদশা’ ছবিতে অভিনয় করেছেন জিৎ, নুসরাত ফারিয়া, ফেরদৌস, সুষমা, পুজা, রেবেকা প্রমুখ। ‘শিকারী’ ছবিতে অভিনয় করেছেন শাকিব খান, শ্রাবন্তী, রাহুল দেব, সুপ্রিয় দত্ত প্রমুখ।

ঈদে মুক্তি পাওয়া চারটি ছবি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি মহাসচিব মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, ‘ছবির ব্যবসা মন্দা যাচ্ছিল। চলচ্চিত্রের সবাই হা-হুতাশ করছিলেন। স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে এলো ঈদের এই চারটি ছবি। আমাকে হল মালিকরা জানিয়েছেন, ঈদে এখন পর্যন্ত ১৫ লাখ মানুষ ছবি দেখেছে। এটা শুভ লক্ষণ। এবারের ঈদের ছবি ব্যবসা করার প্রধান কারণ প্রচার-প্রচারণা। ছবিগুলোর মানও ভাল ছিলো।’

তিনি আরো বলেন, ‘চারটি ছবিই গ্রহণ করেছে দর্শক। জিৎ ও শ্রাবন্তীকে দর্শক নতুন শিল্পী হিসেবে গ্রহণ করেছে। আর হ্যাঁ, শাকিব খান এখনো সেরা। একাই তিনটি ছবি নিয়ে জিতের সঙ্গে ফাইট দিয়েছে। বাংলাদেশি নির্মাতা হিসেবে তাকে নিয়ে আমার গর্ব হয়।’

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত নির্মাতা জাকির হোসেন রাজু বলেন, ‘ঈদের ছবি প্রমাণ করেছে, ভালো ছবি উপভোগ্য হলে দর্শক হলে যেতে আপত্তি করেন না। অনেক কষ্ট করে লাইনে দাঁড়িয়ে তারা টিকিট কেটে ছবি দেখেছেন। বহুদিন পর এই দৃশ্য দেখে আমি আনন্দিত। বাংলা ছবির জয় হোক।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা চাই এই ধারা অব্যাহত থাকুক। এবং সরকার হলের পরিবেশ ঠিক করতে এগিয়ে আসুক।’

রাজধানীর বিখ্যাত সিনেমা হল ‘জোনাকি’র ম্যানেজার অহিদুল ইসলাম জানান, ‘আমাদের এখানে ‘শিকারী’ ছবিটি চলছে ঈদের দিন থেকে। জোনাকিতে গত আট বছরের রেকর্ড ভেঙে ব্যবসা করেছে ছবিটি। অনেকদিন পর আবারো প্রতিটি শো-ই হাউজ ফুল হচ্ছে।’

সবশেষে বলা চলে, থমকে থাকা সময়ের দেয়ালটাতে খুব বড় একটি ধাক্কা আমরা দিতে পেরেছি। এতে করে ভেঙে গেছে হতাশার প্রাচীর। বহুদিন পর মেঘ কাটিয়ে সাফল্যের যে রোদের ঝিলিক দেখা গেছে ঢাকাই ছবিতে, সেই ঝিলিকের ঝলকানি ছড়িয়ে দিতে হবে, বিস্তৃত করতে হবে। ভালো গল্পের ছবি নির্মাণের মুন্সিয়ানায় তৈরি করতে হবে। বাজেট বাড়াতে হবে। শ্রুতিমধুর গান রাখতে হবে। ছবিগুলোর প্রচারে ইতিবাচক থাকতে হবে। সব ভেদাভেদ আর সমালোচনাকে পাশ কাটিয়ে একসঙ্গে বলতে হবে ‘ঢাকাই ছবির জয় হোক’। যদি তা পারি তবে চলচ্চিত্রের সোনালি দিন ফিরিয়ে আনা খুব বেশি কঠিন হবে না। আর সেই দিনটি খুব বেশি দূরেও নয়- এমনটাই মনে করেন চলচ্চিত্র বোদ্ধারা।

জয়তু চলচ্চিত্র, জয় হোক ঢাকাই চলচ্চিত্রের।

এনই/এলএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।