নূনা আফরোজদের নাটক বন্ধে উড়োচিঠি, কেন

নূনা আফরোজদের নাটক বন্ধে পাঠানো হয়েছে উড়োচিঠি। চৈত্রসংক্রান্তি ও পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে বেইলি রোডের মহিলা সমিতিতে তাদের দল প্রাঙ্গণেমোর-এর মঞ্চনাটক ‘শেষের কবিতা’র দুটি প্রদর্শনীর প্রস্তুতি ছিল। ‘তৌহিদী জনতা’র নামে উড়োচিঠি পেয়ে দলটির নামে মিলনায়তনের বরাদ্দ বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ।
আজ (১৩ এপ্রিল) রোববার অভিনেত্রী ও নির্দেশক নূনা আফরোজ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমরা সব রকম প্রস্তুতি শেষ করে প্রদর্শনীর জন্য প্রস্তুত ছিলাম। সকালে আমাদের জানানো হলো, মিলনায়তনের বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। তৌহিদী জনতা নাকি হুমকি দিয়েছে।’
তিনি আরও লিখেছেন, প্রদর্শনীর সময় মহিলা সমিতিতে ভাঙচুর হলে সে দায় তৌহিদী জনতা নেবে না বলে ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে নিরাপত্তার কথা বিবেচানায় নিয়ে মহিলা সমিতি কর্তৃপক্ষ প্রাঙ্গণেমোরকে দেওয়া মিলনায়তন বরাদ্দ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।
এ প্রসঙ্গে মহিলা সমিতির নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা শারমিন আরা বলেন, ‘আমাদের কাছে একটা চিঠি এসেছে তৌহিদী জনতার নামে। মহিলা সমিতিতে অনেক ধরণের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। মহিলা সমিতির নিরাপত্তার কথা ভেবে প্রাঙ্গণেমোরকে দেওয়া মিলনায়তন বরাদ্দ বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে।’ পুলিশের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, পুলিশকে জানানো হয়নি। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তেই বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে।
ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় প্রাঙ্গণেমোর জানায়, হুট করে মিলনায়তন বরাদ্দ বাতিলের প্রতিবাদ জানাবে তারা। আজ বিকেল ৫টায় মহিলা সমিতির সামনে ‘শেষের কবিতা’ নাটকের কস্টিউম পরেই অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন দলটির কর্মীরা।
‘শেষের কবিতা’ নাটকের একটি মুহূর্ত
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শেষের কবিতা’ উপন্যাস থেকে একই নামে মঞ্চনাটকটি করে আসছে প্রাঙ্গণেমোর। এর নাট্যরূপ দিয়েছেন অনন্ত হিরা এবং নির্দেশনা দিয়েছেন নূনা আফরোজ। দলটির ষষ্ঠ প্রযোজনা এটি।
কেন নাটক বন্ধ হচ্ছে
চলতি মাসের শুরুতে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায়ও ঘটে নাটক বন্ধের ঘটনা। জানা যায় মসজিদ কমিটির লোকজন ও এলাকাবাসীর বাধায় রানীগঞ্জ উদয়ন সংঘের নাটক ‘আপন-দুলাল’-এর প্রদর্শনী বন্ধ হয়ে যায়। পরে জানা যায় ‘রাজনৈতিক নেতাদের দ্বন্দ্বে’ নাটক বন্ধ করা হয়েছিল। একদিন পর আবারও নাটকটি মঞ্চস্থ হয়।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে মহিলা সমিতি মিলনায়তনে একদল অজ্ঞাত ব্যক্তির হুমকির মুখে স্থগিত হয়েছিল ‘ঢাকা মহানগর নাট্যোৎসব’। পরে রোজা চলাকালে মহিলা সমিতি কর্তৃপক্ষ কোনো নাট্যদলকে তাদের নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনের বরাদ্দ দেয়নি।
গত বছরের নভেম্বর মাসে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় একদল ব্যক্তির বিক্ষোভের মুখে ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের প্রদর্শনী মাঝপথে বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিলেন আয়োজকরা। সেসময় বিক্ষোভকারীদের পক্ষ থেকে জানানো হয় ‘দেশ নাটক’ দলের অন্যতম সদস্য এহসানুল আজিজ বাবু ‘আওয়ামী লীগের দোসর’। অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ফেসবুকে কুৎসা ও অপপ্রচার ছড়ানোয় তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন তারা।
প্রাঙ্গণেমোর-এর নাটক বন্ধে কেন চিঠি পাঠালো ‘তৌহিদী জনতা’? জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে নাট্যাঙ্গনের অংশীজনদের অন্তত দুজন জানিয়েছেন, নূনা আফরোজ আওয়ামী সমর্থক বলে এটা করা হতে পারে। তা ছাড়া তিনি বিতর্কিত ‘আলো আসবেই’ গ্রুপে ছিলেন বলেও তাদের এই কাণ্ড করা হয়ে থাকতে পারে।
- আরও পড়ুন:
- ফারুকীকে আশাবাদী করেছে ‘আলো আসবেই’ গ্রুপ
- আত্মপক্ষ সমর্থন করলেন ক্ষুব্ধ সাইমন
- ভারতে নারীদের নাট্যোৎসবে নূনা আফরোজের দল
নূনা আফরোজ। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
ঘটনার পর সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে মেনশন করে নূনা আফরোজ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমরা মহিলা সমিতিকে দুই দিনের হলভাড়া দিয়ে দিয়েছি। প্রচার, প্রকাশনায় সকল খরচ করা হয়ে গেছে। আমাদের সকল প্রস্তুতি, সকল আয়োজন সম্পন্ন। আয়োজনের প্রতিটি সেক্টরে খরচ করা হয়ে গেছে। আমাদের ছেলেমেয়েরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছে এতদিন ধরে। আপনার জানবার কথা আমরা নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে, জীবন থেকে অনেক কিছু বিসর্জন দিয়ে থিয়েটার করি।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমরা মহিলা সমিতিকে বলেছি, আপনারা প্রশাসনের সাহায্য নেন, প্রশাসন অপারগতা প্রকাশ করলে নাহয় আমরা প্রদর্শনী নাইবা করলাম। মহিলা সমিতি জানালো কত কিছুই তো হচ্ছে, প্রশাসন তো বন্ধ করতে পারছে না। এ কথা বলার পর তো আর কিছু বলার থাকে না। আমরাও চাই না মহিলার সমিতির কোনো ক্ষতি হোক বা আমাদের ছেলেমেয়েদের কোনো ক্ষতি হোক। জনাব সংস্কৃতি উপদেষ্টা, বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি আপনাকে, আপনি কি কোনো ব্যবস্থা নেবেন, আমরা যেন আমাদের আজ এবং আগামীকালের প্রদর্শনী যাতে নির্বিঘ্নে করতে পারি? এ রকম করেই থিয়েটার বন্ধ করে দেওয়াকে প্রতিহত করুন প্লিজ।’