রণবীর রাজ কাপুরের জন্মদিন আজ
প্রখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেতা ও হিন্দি চলচ্চিত্রের পরিচালক ছিলেন রণবীর রাজ কাপুর। ১৯২৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের পেশাওয়ারে জন্মগ্রহণ করেন এই মহান তারকার। তাকে ‘ভারতীয় চলচ্চিত্রের সেরা পথপ্রদর্শকরূপে’ আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে।
১৯৩৫ সালে দশ বছর বয়সে চলচ্চিত্রে পা রাখেন এই তারকা। পরবর্তী ১২ বছরে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে ছোট চরিত্রে অভিনয়ের পর ১৯৪৭ সালে তখনকার শীর্ষ অভিনেত্রী মধুবালার বিপরীতে কাজ করার সুযোগ পান তিনি। ১৯৪৮ সালে মাত্র ২৪ বছর বয়সে আর. কে. ফিল্মস নামে নিজস্ব স্টুডিও প্রতিষ্ঠা করেন এ অভিনেতা।
একই সঙ্গে ওই সময়ের সর্বকনিষ্ঠ পরিচালক হিসেবে তিনি পরিচিতি পান। তার চলচ্চিত্রে তিনিসহ নার্গিস, কামিনী কৌশল ও প্রেমনাথ অভিনয় করেন। ১৯৪৯ সালে মেহবুব খানের আন্দাজ চলচ্চিত্রে নার্গিস ও দিলীপ কুমারের সঙ্গে তিনিও অংশ নেন। ঐ চলচ্চিত্রটি ব্যবসায়িক সফলতা পায় যা অভিনেতা হিসেবে তার প্রথম সাফল্য লাভ। একই বছরে চলচ্চিত্র নির্মাতা, পরিচালক ও অভিনেতা হিসেবে বারসাত চলচ্চিত্রে প্রথমবারের মতো সফল হন তিনি।
আর.কে. ব্যানারের অধীনে ১৯৫১ সালে আওয়ারা, ১৯৫৫ সালে শ্রী ৪২০, ১৯৫৬ সালে ‘চোরি চোরি ও জাগতে রাহো’ এবং ১৯৬০ সালে ‘জিস দেশ মে গঙ্গা বেহতি হ্যায়ের’ মতো বেশকিছু ব্যবসা সফল চলচ্চিত্র উপহার দেন তিনি।
শুধু তাই নয়, সর্বশেষ চলচ্চিত্রটি তার দীর্ঘদিনের সিনেমাটোগ্রাফার রধু কর্মকারের নির্দেশনায় নির্মিত হয় ও ফিল্মফেয়ার সেরা চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। ঐ চলচ্চিত্রগুলোতে চার্লি চ্যাপলিনের বিখ্যাত পর্দার অভি
ব্যক্তি নিজের মধ্যে ফুটিয়ে তোলেন।
১৯৬৪ সালে তার নির্মিত, পরিচালিত ও অভিনীত আবেগঘন সংগীতধর্মী চলচ্চিত্র ‘সঙ্গম’ মুক্তিলাভ করে। এতে বৈজয়ন্তীমালা ও রাজেন্দ্র কুমারের সঙ্গে তিনিও ছিলেন। এটি তার প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র ছিল।
এছাড়াও চলচ্চিত্রটি তার সর্বশেষ ব্যবসায়ীক সফলতা পায়। পরবর্তীতে ১৯৬৬ সালে এরাউন্ড দি ওয়ার্ল্ড এবং ১৯৬৮ সালে স্বপ্ন কা সওদাগরে তরুণ অভিনেত্রী যথাক্রমে রাজশ্রী ও হেমা মালিনীকে নিয়ে অভিনয় করলেও বক্স অফিসে ব্যর্থতা তুলে ধরে।
১৯৭০ সালে তার পরিচালনায় ও অভিনয়ে উচ্চাভিলাষী চলচ্চিত্র ‘মেরা নাম জোকার’ মুক্তি পায়। এ চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে তার ছয় বছরের বেশি সময় লেগেছিল। কিন্তু ঐ চলচ্চিত্রটি বক্স অফিসে মুখ থুবরে পরে ও তার পরিবারে চরম আর্থিক বিপর্যয় নিয়ে আসে। কিন্তু পরবর্তীতে চলচ্চিত্রটি ধ্রুপদী চলচ্চিত্রের মর্যাদা পায়।
১৯৭১ সালে পারিবারিক নাট্যধর্মী চলচ্চিত্র ‘কাল আজ অউর কাল’ মুক্তি লাভ করে। এতে তার বড় ছেলে রণধীর কাপুরের অভিষেক ঘটে। এরপর ১৯৭৩ সালে ‘ববি’ সিনেমার মাধ্যমে দ্বিতীয় পুত্র ঋষি কাপুরকে সবার সামনে আনেন। সেই চলচ্চিত্রটি ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলে। ১৯৭৫ সালে রণধীরের পরিচালিত চলচ্চিত্রে তিনিও অভিনয় করেছিলেন।
১৯৭০-এর দশকের শেষ দিকে ও ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে কিছু চলচ্চিত্রে তাকে দেখা গিয়েছিল। ১৯৮৪ সালে শেষবারের মতো অভিনয় করেছেন এই গুণী অভিনেতা। কিম শিরোনামে ব্রিটিশ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেলিভিশন চলচ্চিত্রে স্বল্পসময়ের জন্য তাকে দেখা যায়।
১৯৮৮ সালে তার মৃত্যুর আগে ভারত-পাকিস্তানভিত্তিক ভালোবাসার নিটোল কাহিনি নির্ভর হেন্না পরিচালনায় অগ্রসর হন। এতে তার পুত্র ঋষি ও পাকিস্তানি অভিনেত্রী জেবা বখতিয়ার অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটি ১৯৯১ সালে রণধীরের পরিচালনায় মুক্তি পেয়েছিল।
১৯৮৮ ২ জুন মাত্র বয়স ৬৩ বছর বয়সে সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তিনি অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র নির্মাতা ও অভিনেতা রণবীর রাজ কাপুর।
এমএমএফ/জেআইএম