এবার কাজের লোক জানালো গাঁজাও খেতেন সুশান্ত

বিনোদন ডেস্ক
বিনোদন ডেস্ক বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:৪৫ পিএম, ২৩ আগস্ট ২০২০

সুশান্ত সিংহ রাজপুতের ব্যক্তিগত কাজের লোক নীরজ সিংহ। তাকে বাবুর্চি হিসেবে পরিচয় দিলেও তিনি রান্না বান্না করতেন, ঘর পরিষ্কার করতেন। বলা চলে সুশান্তের ঘরদোর তিনিই দেখে রাখতেন। দীর্ঘদিন ধরেই সুশান্তের সঙ্গে থাকতেন তিনি। যেদিন সুশান্ত আত্মহত্যা করেন সেদিনও তিনি ছিলেন বাড়িতে। তাই এই মামলায় নীরজ অন্যতম প্রধান প্রত্যক্ষদর্শী। এই মামলায় নীরজের বয়ান যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

সেই গুরুত্ব বিবেচনা করে মুম্বাই পুলিশ তার বয়ান শুনেছিল। এবার সিবিআইও তাকে ডেকে পাঠিয়েছে তিন-তিন বার! কী জানেন নীরজ? কী হয়েছিল সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যুর দিন? কেমন ছিলেন ব্যক্তি সুশান্ত? সুশান্তের বাড়ির পার্টিতে কাদের দেখা যেত? ভাইয়ের মরদেহ দেখে প্রথম কী বলেছিলেন সুশান্তের দিদি মিতু সিংহ? এমন অনেক অজানা তথ্য জানিয়েছেন নীরজ। সেগুলো প্রকাশ হচ্ছে ভারতীয় গণমাধ্যমে।

‘ইন্ডিয়া টুডে’র বরাতে আনন্দবাজার জানিয়েছে, মুম্বাই পুলিশকে দেওয়া বয়ানে নীরজ বলেছেন, ২০১৯ সালের এপ্রিল মাস থেকে তিনি সুশান্ত সিংহ রাজপুতের বাড়ির কাজে যোগ দেন। কেপ্রি হাইটসের পালি মার্কেট আবাসনে তখন থাকতেন সুশান্ত। গত বছর ডিসেম্বরে ওই আবাসন থেকে বান্দ্রার এক আবাসনে চলে আসেন সুশান্ত।

নীরজ জানিয়েছেন, মাঝে মধ্যেই নাকি গাঁজা খেতেন সুশান্ত। মৃত্যুর কয়েক দিন আগেই নিজের হাতে সিগারেটের মধ্যে গাঁজা ভরে দিয়েছিলেন নীরজ। সুশান্তের মৃত্যুর পর সেই গাঁজা ভরা সিগারেটের কেসটি ছিল খালি। অর্থাৎ সবগুলো গাঁজাই ব্যবহার করেছিলেন হিন্দি সিনেমার প্রথম ‘ব্যোমকেশ বক্সী’খ্যাত এ নায়ক।

নীরজ তার বক্তব্যে আরও জানান, আগের ফ্ল্যাটে রাত বাড়লেই নাকি শুরু হতো অশরীরীর উপদ্রব। সুশান্ত বিরক্ত ছিল সেই বাড়িতে। নীরজের বয়ান অনুযায়ী, ‘সুশান্ত স্যারের আগের ফ্ল্যাটে আমাদের ওয়াকি টকি দেওয়া হয়েছিল। স্যারের কিছু প্রয়োজন হলে ওয়াকির মাধ্যমেই কথা বলতাম আমরা। এক রাতে আমি ঘুমোচ্ছিলাম। হঠাৎই ওয়াকি থেকে একটা আওয়াজ এল, ‘নীরজ লাইট বন্ধ কর’। আমি উঠে স্যারের ঘরে গিয়ে দেখি তিনি অঘোরে ঘুমোচ্ছেন এবং ঘরের লাইটও বন্ধ। আমি কিছু বুঝে উঠতে না পেরে এসে শুয়ে পড়তে যাব ঠিক এমন সময়ই আবার, ‘নীরজ, লাইট বন্ধ কর’। সে রাতে আর নাকি ঘুম আসেনি নীরজের। পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, গভীর রাতে ড্রামের আওয়াজ, লিফটের ওঠানামার শব্দও নাকি পাওয়া যেত সেখানে। সেই কারণেই নাকি ফ্ল্যাট পরিবর্তন করেন সুশান্ত।

কেমন ছিল রিয়া-সুশান্তের প্রেম? নীরজ জানিয়েছেন, রিয়া বেশিরভাগ সময় সুশান্তের বান্দ্রার ফ্ল্যাটেই থাকতেন। মাঝে মধ্যে এক-দুদিনের জন্য নিজের বাড়িতেও যেতেন। তার বাবা-মাও মাঝে মধ্যেই ওই ফ্ল্যাটে আসতেন। সকালে উঠেই রিয়া-সুশান্ত ব্ল্যাক কফি খেতেন। এর পর ছাদে গিয়ে ওয়ার্ক আউট। মাঝে মধ্যেই পার্টি হতো সেখানে। নীরজের দাবি, পার্টিতে মদ্যপান, গাঁজা সেবনও চলত।

তিনি আরও জানান, জুন মাসের ৮ তারিখ। সুশান্তের ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে এসে নিজের বাড়িতে থাকতে শুরু করেন রিয়া। ঠিক কী হয়েছিল সেদিন? নীরজ বলছেন, ‘আমরা স্যার-ম্যাডামকে খাবার পরিবেশনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এমন সময়ে রিয়া ম্যাডাম আমায় তার ব্যাগ গুছিয়ে দিতে বলেন। খুব রেগে ছিলেন তিনি। এর পর না খেয়েই বেরিয়ে যান রিয়া। তার ভাই শৌভিকও দিদির সঙ্গে বেরিয়ে যান। সুশান্ত স্যার একা ঘরে বসেছিলেন। রিয়া চলে যাওয়ার পরই সুশান্তের দিদি মিতু আসেন।’

যদিও রিয়ার আইনজীবী জানিয়েছিলেন, রেগে গিয়ে নয়, দিদি আসবে বলে সুশান্তই রিয়াকে বলেছিলেন কয়েক দিন নিজের বাড়িতে গিয়ে থাকতে।

মৃত্যুর আগের দু’দিন কেমন ছিলেন সুশান্ত তা জানিয়ে নীরজ বলেন, জুন মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখ ভাইয়ের বাড়িতে ছিলেন মিতু। নীরজকে তিনি নাকি বলে গিয়েছিলেন, সুশান্তের খেয়াল রাখতে; তিনি আবার আসবেন খুব তাড়াতাড়ি। এমনটা জানিয়েছেন নীরজ নিজেই। তার কথায়, ‘মিতু দিদি যখন এলেন তখন দিদির সঙ্গেই এক টেবিলে বসে খাওয়া দাওয়া করতেন সুশান্ত। কিন্তু দিদি চলে যেতেই স্যার ছাদে যাচ্ছিলেন বার বার। আমায় বললেন, ঘরটা পরিষ্কার করে দিতে। আমি তাই করি।’

মৃত্যুর ঠিক আগের দিন সকাল ৭টা নাগাদ ঘুম থেকে ওঠেন সুশান্ত, জানান নীরজ। তিনি আরও জানান, ‘সকাল ৯ নাগাদ আমি ফিরে আসি। খিচুড়ি বানাই। স্যারকে দিই। ঘর থেকে বেরিয়ে স্যার ছাদে চলে যান। এরপর ফিরে আসেন। কিন্তু খাবার ছুঁয়েও দেখেননি। আমের জুস খেয়ে ঘুমাতে চলে যান।’

মুম্বাই পুলিশের পর ইতিমধ্যে নীরজের বয়ান রেকর্ড করেছে সিবিআই। সেখানে নীরজ নতুন কিছু বলেছেন কি না- তা নিয়ে বাড়ছে কৌতূহল। হয়তো সেসব জানা যাবে দ্রুতই।

এলএ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।