জীবন যে দিকে নিয়ে যায়, সে দিকেই যাচ্ছি
বহুমুখী চরিত্রে অভিনয়ের জন্য বলিউডে আলাদা একটা অবস্থান রয়েছে অভিনেতা ইরফান খানের। ‘নিউরোএন্ডোক্রাইন টিউমার’ নামের এক ধরনের বিরল ক্যানসার বাসা বেঁধেছে তার শরীরে। সেই ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন তিনি। বর্তমানে রয়েছেন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
হাসপাতাল থেকেই তিনি সম্প্রতি ফোনে কথা বলেছেন সংবাদ সংস্থা এপির সঙ্গে।
নিজের চিকিৎসার প্রসঙ্গে ইরফান বলেছেন, কেমোর চতুর্থ পর্যায় শেষ। ছয়টি কেমোর পর স্ক্যান। তৃতীয় কেমোর পর স্ক্যানের রেজাল্ট পজিটিভ ছিল। ছয়টি কেমোর শেষে কী রকম থাকে, সেটাই আসল। তখন বোঝা যাবে। জীবনের কোনও নিশ্চয়তা নেই। কারও নেই। আমার মন যেন সব সময় কানের কাছে ফিসফিস করে বলছে, তোমার এই রোগ হয়েছে। যে কোনও সময় মৃত্যু হবে। কিংবা মাঝে মাঝে এই চিন্তাটা জাস্ট উড়িয়ে দিয়ে জীবন যেমন আছে, সে ভাবেই উপভোগ করছি।
হাসপাতালে প্রতিদিনের রুটিন নিয়ে বলেছেন, স্ক্রিপ্ট পড়া ছেড়ে দিয়েছি একেবারেই। প্রতিদিন আনপ্রেডিক্টবল। এই অভিজ্ঞতাটি ঠিক বলে বোঝানো সম্ভব নয়। আমি ভাবতাম একটা সময়, আমার জীবনটা আনপ্রেডিক্টবল হোক। গতিময়তায় কাটুক। কিন্তু কখনও উপলব্ধি করিনি, এখন করছি। কোনো প্ল্যান করি না। ব্রেকফাস্ট করার পর আর কোনো প্ল্যান থাকে না। জীবন যে দিকে নিয়ে যায়, সে দিকেই যাচ্ছি। আসলে জীবনটা একটা রহস্য। কোনও কিছু প্ল্যান করে হয় না। সম্ভব নয়। স্রোতে এগিয়ে যাচ্ছি। মনে আর কোনো দ্বিচারিতা নেই৷ আমি সত্যিই এখন মানসিকভাবে খুব ভালো আছি। ভাগ্যবানদেরই এই উপলব্ধির সুযোগ হয়।
জীবন অনেক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে উল্লেখ করে ইরফান বলেন, জীবন যেভাবে দেখাচ্ছে, সেভাবেই দেখছি। শারীরিক, মানসিক, আধ্যাত্মিক- সব দিক থেকে।
ইরফান বলেন, প্রথমে খবরটা শুনে কেঁপে উঠেছিলাম। কিন্তু ধীরে ধীরে অনুভব করলাম, অন্য ভাবেও জীবনকে দেখা যায়। মানসিকভাবে হালকা লাগে। জীবনটাকে একবার এইভাবে দেখার চেষ্টা করলেই বুঝবেন। একটা জানলা দিয়ে নিজেকে দেখা। জীবনের প্রতিচ্ছবিটা সিনেমার মতো.. দেখার আনন্দ প্রকাশ করা যায় না। ৩০ বছর মেডিটেশন করেছি, কখনও এমন উপলব্ধি হয়নি। বর্তমান পরিস্থিতি তৈরি না-হলে এই স্বর্গীয় উপলব্ধি হত না। এখন যা-ই হবে, ভালো হবে, সেরা হবে।
হলিউডে একটা দুর্দান্ত চরিত্রের অফার ছিল বলেও জানান তিনি। বলেন, চরিত্রটির প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম৷ ভারতে আমার কাজগুলিকে পিছিয়ে দিয়ে বলেছিলাম, আমি ছবিটায় কাজ করব৷ কিন্তু...
আর এখন? জীবনটাকে সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছি। একটি চেয়ারে বসে সামনে জীবনের অন্যদিকটা দেখার অভিজ্ঞতা অনবদ্য। একটি জার্নির মধ্যে আছি।
এনএফ/পিআর