কেমন হবে গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বইমেলা
দরজায় কড়া নাড়ছে বাঙালির প্রাণের উৎসব অমর একুশে বইমেলা। বরাবরের মতো এবারও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই অনুষ্ঠিত হবে বইমেলা। এমনটিই জানিয়েছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। ফলে সব আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে লেখক, প্রকাশক এবং আয়োজকরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জানুয়ারি মাসের মধ্যেই স্টল বিন্যাস, নির্মাণসহ সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। ২০২৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বইমেলার দ্বার উন্মোচিত হবে।
সবাই আশা করছেন, গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে নতুন আমেজে অনুষ্ঠিত হবে বইমেলা। এরই মধ্যে আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমির কাছে নানাবিধ প্রস্তাব রেখেছেন প্রকাশকরা। বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির প্রকাশকরা বেশ কিছু দাবি নিয়ে মানববন্ধনও করেছেন। গত ২৩ নভেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে তারা এ মানববন্ধন করেন। সেখানে প্রকাশকরা জানান, অমর একুশে বইমেলার স্টল ভাড়া অর্ধেক কমানো, প্যাভিলিয়ন বাতিল, কাগজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির রোধ, দালাল প্রকাশকদের বিচার এবং তাদের লুটপাটের শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে। এমনকি ফ্যাসিবাদ প্রকাশকদের লুটপাটের নামে প্যাভিলিয়ন পদ্ধতি বাতিল ও লেখকদের বর্জনের দাবি জানান।
বাংলা একাডেমির ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের অমর একুশে বইমেলার স্টল বিন্যাসে মোট বরাদ্দ হয় ৯৭৩টি ইউনিট। এর মধ্যে ১৭১টি ইউনিট বাংলা একাডেমি মাঠে, যেখানে প্রতিষ্ঠান সংখ্যা ছিল ১১৮টি। ৮০২টি ইউনিট সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, যেখানে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৫১৭টি। প্যাভিলিয়ন সংখ্যা ছিল ৩৭টি। তবে এবার স্টল বিন্যাস কেমন হবে, তা এখনই প্রকাশিত হয়নি। প্রকাশকদের আবেদন এবং যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমেই প্রকাশিত হবে।
বইমেলা সম্পর্কে কথাসাহিত্যিক ফরিদুল ইসলাম নির্জন বলেন, ‘আমার কাছে বইমেলা মানেই পাঠক আর লেখকদের আত্মার মিলবন্ধন। বছরজুড়ে অপেক্ষার প্রহরের অবসান, নতুন বই সংগ্রহের দুয়ার খোলা। প্রিয় মানুষদের নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নিতে পারার বাঁধভাঙা উৎসবে মেতে ওঠা, বহুদিন পর দেখতে পারা প্রিয় লেখকদের মায়াময় মুখ। একজন নগণ্য লেখক হিসেবে আমার কাছে মনে হয়, এবারের বইমেলা আরও বেশি ভালো হবে, প্রাণবন্ত হবে। নতুন নতুন লেখক-পাঠকের মিলনমেলায় কলতানে মুখরিত হবে। এটাও সত্য, অনেকের ভেতর হয়তো ভয় বা শঙ্কা থাকতে পারে নিরাপত্তা নিয়ে। তবে আমার মনে সেই ভয় কাজ করছে না। সরকারের দায়িত্ব তাদের ভয়কে উপেক্ষা না করে নিরাপত্তার ব্যাপারে জোরদার ব্যবস্থা করা। যেখানে সবাই স্বাধীনভাবে বইমেলায় প্রবেশ করতে পারবেন।’
কবি ও গীতিকার মোহাম্মদ ফখরুল হাসান বলেন, ‘চারপাশে ভীষণ অস্থিরতা। তাই হয়তো বইমেলা তার যৌবন কিছুটা হারাবে। ডিসেম্বর মাস এসেছে। তবুও লেখক-প্রকাশকদের কর্মব্যস্ততা চোখে পড়ছে না। অথচ বিগত পঁচিশ বছর এমন ঘ্রাণহীন ডিসেম্বর চোখে পড়েনি। ডিসেম্বর নয়, নভেম্বর মাস থেকে শুরু হয়ে যায় লেখকদের প্রচার-প্রসার। কিন্তু এবার পরিবেশ ভিন্ন মনে হয় আমার কাছে। সবকিছুর পরেও আমি আশাবাদী, আমাদের প্রাণের বইমেলা লেখক-পাঠকের কোলাহলে পূর্ণতা পাবে।’
প্রকাশক ও ঔপন্যাসিক অঞ্জন হাসান পবন বলেন, ‘এককথায়, আমরা শান্তিপূর্ণ একটা বইমেলা চাই। আমরা কোনো উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার বইমেলা চাই না। আমরা স্টল বরাদ্দ নিয়ে কোনো বৈষম্য চাই না। আমরা মানসম্মত বই পাঠকের হাতে তুলে দিতে চাই। প্রাণের বইমেলা লেখক-পাঠকের পদচারণে আরও বেশি সমৃদ্ধ হোক। বাংলা একাডেমির দক্ষ ব্যবস্থাপনায় স্মরণীয় একটি বইমেলার আয়োজন হোক—এমনটাই প্রত্যাশা।’
প্রকাশক ও কবি অচিন্ত্য চয়ন বলেন, ‘অমর একুশে বইমেলা খুব নিকটে। সব ঠিক থাকলে চলতি সপ্তাহে স্টল বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হতে পারে। সবাই আশা করছেন, এবারের বইমেলা বেশ ভালো হবে। আমিও ইতিবাচক চিন্তাই করছি। তবে সব মিলিয়ে মেলা ভালো হওয়ার পরিবেশ তৈরি করা কঠিন, তারপরেও আশাবাদি। এবার স্টল ও প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ নিয়ে কিছু দাবি উঠেছে, যা যৌক্তিক।’
তিনি বলেন, ‘বইমেলা নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা করা যেতে পারে। আমার ছোট চিন্তায় একটি বিষয় শেয়ার করছি। এবারের পরিবর্তন হিসেবে যেভাবে করা যেতে পারে—কোনো স্টল না রেখে সবই প্যাভিলিয়ন করা উচিত। কাঠামো হতে পারে—১২×১২, ১৪×১৪, ১৬×১৬, ২০×২০, ২৪×২৪। যার চতুর্দিক খোলা থাকবে। আমার মনে হয়, সবাই একমত হবেন। এভাবে করতে পারলে বইমেলার পরিবেশ ও ব্যবসায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করছি।’
এসইউ/জিকেএস