বাউল উন্মাদনায় সন্ধ্যা মেলা
কেউ বলে তারাই বাঁশি। কেউ বলে বাশেঁর বাঁশি। কূল হারিয়ে অনেকে বলে বিষের বাঁশি। কি জাদু তাতে! অমন বাঁশির সুর ভেসে আসছে বাংলা একাডেমির মূল মঞ্চ থেকে। সঙ্গে ঢোল-তবলার মাখামাখি। আছে দোতরা, মন্দিরার তালে মেশানো ঝনঝনানিও।
শুক্রবারের মেলা। সন্ধ্যার পর মেলার সমস্ত গতিপথ যেন মিশে গেল বাংলা একাডেমির মূল মঞ্চে। বাউলগানের পসরা নিয়ে বসেছেন বাংলার সেরা বাউলেরা। মনকাড়া সুরে মেলার দর্শনার্থীদের অনায়াসেই কাছে টানছে। ক্ষণিকের মধ্যেই ভরে গেল মঞ্চের চারপাশ।
বাউলরা গাইছেন, শ্রোতারা মজছেন। বাউলদের গানের তালে মন-শরীর নাচিয়ে তাতে সায় দিচ্ছেন হাজারো ভক্ত-শ্রোতা। যেন গান উন্মাদনায় অন্যরকম এক মেলা। তখন আবাল-বৃদ্ধা সবাই গানমেলার খরিদ্দার। বই দেখা, কেনার কথা ভুলে গিয়ে গানেই মনের খোড়াক মেটাতে মাতোয়ারা তারা। কেউ নড়ছেন না, টু শব্দও করছে না। ঠাঁয় দাঁড়িয়েই সঙ্গীতলগ্ন পার।
প্রাণ উজার করে গাইলেন বিখ্যাত বাউল সম্প্রাট শফি মণ্ডল, আবদুল লতিফ শাহ, রণজিত দাস বাউল, মমতা দাসী বাউল, ভজন কুমার ব্যাধ এবং কোহিনুর আকতার গোলাপী।
যন্ত্রে মন কাড়লেন বেণু চক্রবর্তী (তবলা) শহিদুল ইসলাম (বাঁশি), এমএম রেজা বাবু (ঢোল) আব্দুর রব হাওলাদা (দোতরা) এবং নির্মল কুমার দাস (মন্দিরা)। গান শেষে কথা হয়, বাউল সম্প্রাট শফি মণ্ডলের সঙ্গে। অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘বইমেলা হচ্ছে শিক্ষিত জনের মেলা। যারা বইকে ভালোবাসেন, তারা মানুষকে ভালোবাসেন। লালন সাঁইজির কাছে মানুষই ছিল মূল প্রতিপাদ্য। তিনি মানুষের মাঝেই ঈশ্বরের ভালোবাসা খুঁজতেন। সাঁইজির দুটি গান আজকের মঞ্চে করতে পেরে আমি ধন্য। কারণ এমন মঞ্চ তো পাওয়াই ভার।’
লালন শিল্পী কোহিনুর আকতার গোলাপী বলেন, ‘প্রাণের মেলায় সাঁইজির গান করার সুযোগ পেয়েছি। এর চেয়ে সৌভাগ্যের আর কি হতে পারে। এমন মঞ্চে বাউল গান। আহ! দর্শক-শ্রোতা গানে যেভাবে মগ্ন হলেন, তা অন্য কোথাও মেলে না। বাংলার মেলায় বাংলার গান, সত্যিই অপূর্ব।
এএসএস/জেএইচ