মিল্টন বিশ্বাসের ‘সাব-অল্টার্ন তত্ত্ব : উদ্ভব, বিকাশ ও প্রভাব’
বাংলা একাডেমির বইমেলায় এসেছে প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট, সাহিত্য-সমালোচক ও কবি মিল্টন বিশ্বাসের নতুন বই ‘‘সাব-অল্টার্ন তত্ত্ব : উদ্ভব, বিকাশ ও প্রভাব’’। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় জনসংযোগ তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তর থেকে ২৮৮ পৃষ্ঠার গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে । বাংলা একাডেমি চত্বরের ৭২১ নং স্টলে বইটি পাওয়া যাবে । বইটির মূল্য রাখা হয়েছে ৪৫০ টাকা।
বইমেলায় প্রকাশিত সাব-অল্টার্ন তত্ত্ব : উদ্ভব, বিকাশ ও প্রভাব (Subaltern Theory : Origin, development and influence) গ্রন্থটিতে সাব-অল্টার্ন স্টাডিজ গোষ্ঠীর তত্ত্বকে ফিরে দেখা হয়েছে, একইসঙ্গে তার প্রভাব ও প্রবণতা। সাব-অল্টার্ন স্টাডিজ ছিল আশির দশকে তৈরি একটি প্রকল্প, হয়ত অন্য সময়ে অন্য ধরনের আরেক প্রকল্প চালু হবে।কিন্তু সাব-অল্টার্ন গবেষণা কী পেয়েছিল তা খুঁজে বের করা, কোন কোন বিষয় নিয়ে গবেষকরা প্রশ্ন তুলেছিলেন-তার অনুপুঙ্খ বিবরণ লিপিবদ্ধ করা আছে এ গ্রন্থে। ১৯৮২ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত মোট ১২ খণ্ডের সাব-অল্টার্ন স্টাডিজ সংকলন নিবিড় পর্যবেক্ষণে প্রাসঙ্গিকতার সূত্রে ব্যবহৃত হয়েছে।উপরন্তু রণজিৎ গুহ থেকে শুরু করে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, দীপেশ চক্রবর্তী, গৌতম ভদ্র প্রমুখ তাত্ত্বিকের গ্রন্থ ও প্রবন্ধসমূহও ড. মিল্টন বিশ্বাস সচেতনভাবে পর্যালোচনা করেছেন।এমনকি এই গোষ্ঠীর তত্ত্ব নিয়ে যারা বিতর্কে অবতীর্ণ হয়েছেন তাদের মতামতও বিশ্লেষণ করেছেন।
ইংরেজি ভাষায় বেশিরভাগ গ্রন্থ প্রকাশিত হওয়ায় ইউরোপ-আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়াতে সাব-অল্টার্ন স্টাডিজ গোষ্ঠীর লেখকদের নাম প্রায়ই উচ্চারিত হয়ে থাকে। মূলত দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসতত্ত্ব বিশ্ব জয় করেছে সাব-অল্টার্ন স্টাডিজ প্রকাশনার মধ্য দিয়ে।নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চার সূচনা থেকে কেবল কৃষক বিদ্রোহ নয় সাহিত্য, সমাজ, নৃতত্ত্ব, দর্শন, ন্যায়শাস্ত্র, ধর্ম, বর্ণ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। অর্থাৎ নিম্নবর্গের ইতিহাস কোনো একক অথবা পৃথক জ্ঞানকাণ্ড নয়। ২০১২ সালে এ গোষ্ঠীর প্রকাশনা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। সাব-অল্টার্ন স্টাডিজ সংকলন আর বের হচ্ছে না। কিন্তু ২০২১ সালে এসেও সাব-অল্টার্ন তত্ত্বের আলোচনা-সমালোচনা-ব্যবহার লক্ষ করা যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী এ তত্ত্বের প্রভাব এখনো বহাল আছে তা এই গ্রন্থ পাঠ করলে জানা যাবে। বইটি বই মেলায় প্রকাশের ব্যাপারে অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস বলেন, আমি আশা করি বাংলাদেশের নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চায় এই গবেষণা গ্রন্থটি ব্যাপকভাবে সমাদৃত হবে। সেই সাথে সাহিত্য সমালোচনার তত্ত্বে সাব-অল্টার্ন তত্ত্ব : উদ্ভব, বিকাশ ও প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
বর্তমানে ইউজিসি পোস্ট ডক ফেলো হিসেবে গবেষণা কাজে নিয়োজিত প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট, সাহিত্য-সমালোচক ও কবি ড. মিল্টন বিশ্বাস বাংলাদেশে বাংলা ভাষায় সাব-অল্টার্ন তত্ত্ব নিয়ে পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ রচনার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তরের সাবেক পরিচালক। তাঁর জন্ম ৮ ফেব্রুয়ারি, পাবনা ব্যাপ্টিস্ট মিশন। পিতা- সঞ্জয় বিশ্বাস, মাতা- মুক্তি বিশ্বাস।তাঁর শিক্ষাজীবন কেটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি বাংলায় বিএ (অনার্স) ও এম এ ডিগ্রি শেষে একই প্রতিষ্ঠান থেকে এম ফিল (জীবনানন্দ দাশ ও বুদ্ধদেব বসুর কাব্যচিন্তা) ও পিএইচডি (তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোটগল্পে নিম্নবর্গের মানুষ)ডিগ্রি লাভ করেছেন। ‘বাংলা সাহিত্য গবেষণা কেন্দ্র’ নামক অনলাইন গবেষণা ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা মিল্টন বিশ্বাস ব্যক্তিগত জীবনে নানা সংগঠন ও সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জয় বাংলা শিক্ষক সমাজে’র প্রতিষ্ঠাতা ও আহ্বায়ক। বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরামের সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশের নির্বাহী কমিটির সদস্য, পিসিবি ট্রাস্ট ও পিসিবি মিশন স্কুলের পরিচালনা পরিষদের সদস্য, শ্যালোম ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, দিশারি ফাউন্ডেশন ও ইসিটি’র সাধারণ সম্পাদক এবং সিসিডিবি’র কমিশন সদস্য ও পিদিম ফাউন্ডেশনের নির্বাহী কমিটির সদস্য। তিনি বাংলা একাডেমির জীবন সদস্য। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৭, গবেষণা প্রবন্ধ ২৫ টি । এছাড়াও তিনি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে নিয়মিত কলাম লেখা-লেখি করেন ।
মিল্টন বিশ্বাসের প্রকাশিত কয়েকটি গ্রন্থের নাম- শওকত আলী ও সেলিনা হোসেনের উপন্যাস : প্রসঙ্গ রাজনীতি (বাংলা একাডেমি, ১৯৯৬), তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোটগল্পে নিম্নবর্গের মানুষ (বাংলা একাডেমি, ২০০৯), উপন্যাসে বঙ্গবন্ধু (বাংলা একাডেমি, ২০২০), রবীন্দ্রনাথ ও ব্রিটিশরাজ (মূর্ধন্য, ২০১১), রবীন্দ্রনাথের কবিতা : শেষ দশকের পটভূমি (মূর্ধন্য, ২০১১), রবীন্দ্রনাথ : নবজাতক (মূর্ধন্য, ২০১১), শেখ হাসিনা : নেতা ও রাষ্ট্রচিন্তক (দেশ পাবলিকেশন্স, ২০১৫), শিল্প–সাহিত্যে বঙ্গবন্ধু (নবযুগ প্রকাশনী, ২০১৭) এবং নন্দিনী (কাব্য, নবযুগ প্রকাশনী, ২০১৮)। তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে আরো কিছু গ্রন্থ। এগুলো হলো- জলসাঘর, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়(২০১৩), নির্বাচিত গল্প, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়(২০১৩), নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ছোটগল্প (২০১৪), জাগরী, সতীনাথ ভাদুড়ী (২০১৫), অরণ্য–বহ্নি, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়(২০১৫), হাঁসুলী বাঁকের উপকথা, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় (২০১৬), তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প (২০২০)।
এইচআর/এএসএম