মানোত্তীর্ণ লেখার বিকল্প নেই : হুসাইন আজাদ


প্রকাশিত: ০৬:৪৫ এএম, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সাংবাদিক, ফিচারিস্ট, গল্পকার কিংবা কবি যেকোনো নামেই তাকে ডাকা যেতে পারে। এই সময়ের প্রতিভাবান তরুণদের ভেতরে যার নামটি না রাখলেই নয়, তিনি হুসাইন আজাদ। তার বইয়ের জন্য পাঠকের দীর্ঘ প্রতীক্ষাই বলে দেয়, তিনি চলে যেতে আসেননি। সাহিত্যের এই সুনীল সাগরে দু`ফোঁটা জল তিনিও দিয়ে যেতে চান। সদা হাসিমুখ আর বিনয়ী স্বভাবের কারণে দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন তিনি। সম্প্রতি কথা বলেছেন নিজের প্রথম বই, বইমেলা ও সাহিত্যভাবনা নিয়ে। সঙ্গে ছিলেন হাবীবাহ্ নাসরীন।

জাগো নিউজ : এবার কোনো নতুন বই আসছে কি না?

হুসাইন আজাদ : এবারই প্রথম বই এলো। লোকে বলছে কবিতার বই। ‘কবিতা’র বই কিনা কে জানে, নাম ‘অক্ষত আয়না’। নিজের প্রেম-প্রীতি বা মান-অভিমান বেড়ে গেলে অথবা কমে গেলে, কখনো ক্ষোভ-দুঃখে চাপা পড়লে কিছু লিখে হালকা হওয়ার চেষ্টা করি। কাছের মানুষরা সেসব লেখাকে কবিতা বলে সংজ্ঞায়িত করেন। কাছের মানুষদেরই তাগাদায় সেই কবিতাগুলো এবার বই আকারে প্রকাশ করেছে দেশ পাবলিকেশন্স। একুশে বইমেলার ৫০২-৫০৩ নম্বর স্টলে পাওয়া যাচ্ছে বইটি। এর প্রচ্ছদ করেছেন তরুণ চিত্রশিল্পী লিমন মেহেদী।

জাগো নিউজ : বইমেলা সম্পর্কে প্রাপ্তি, প্রত্যাশা।

হুসাইন আজাদ : সামগ্রিক প্রাপ্তি বলতে গেলে আসলে বইমেলা কিছু বই কেনার সুযোগ করে দেয়। ছোট্ট পরিসরে পাঠক যেকোনো প্রকাশনী থেকে তার পছন্দের বইটি কিনে নিতে পারছে। বইমেলা না থাকলে কোনো বই কেনার জন্য পাঠককে একবার বাংলাবাজার ছুটতে হবে, একবার নীলক্ষেত, একবার কাঁটাবন আবার একবার পুরানা পল্টন। তাছাড়া লেখক-পাঠকের মেলবন্ধনের জায়গা এই বইমেলা। দেখা গেলো বহুদিন ধরে আল মাহমুদ পড়ি। মনে প্রশ্ন আসে এই যে এতো সুন্দর কবিতা লেখেন, লোকটি দেখতে কেমন। একদিন হঠাৎ লোকটার সঙ্গে দেখা হয়ে গেলো, আহ মানুষটাতো আমাদেরই মতো, তাহলে মগজ এতো উর্বর কেনো? একরকমের মুগ্ধতায় বইয়ে আরও মনোযোগ বেড়ে যায়। আর ব্যক্তিগত প্রাপ্তিও অনেকটা এরকম, নিজে কিছু বই কেনার সুযোগ পাই। যেমন রাজীব হাসান ভাইয়ের লেখালেখির প্রতি মুগ্ধতা থেকে একবার তাকে জিজ্ঞেস করি ভাই কোন কোন বই পড়া যায় যে আপনার মতো লিখতে পারবো? তিনি আমাকে সৈয়দ শামসুল হকের ‘মার্জিনে মন্তব্য’ পড়ার পরামর্শ দিলেন। প্রায় বছর গড়িয়ে যায়, পেশাগত বাস্তবতায় আমার অন্যপ্রকাশে যাওয়া হলো না। এবার বইমেলায় এলাম, বইটা কিনে নিলাম। আরেকটু আলাদা ছোট্ট করে বললে এবারের বইমেলায় আমার প্রথম সন্তান ‘অক্ষত আয়না’ প্রকাশ হলো। প্রত্যাশাটা সবসময়ই আমরা ভালো করি। ভালোটাই হোক। ভালো ব্যবস্থাপনা, ভালো বই প্রকাশ, লেখকের ভালো সম্মানি এবং ভালোয় ভালোয় এগিয়ে চলা। আর বইমেলাটা দু’ভাগ হয়ে যাওয়ায় পাঠকের দু’অংশে যেতে খানিকটা অস্বস্তি পোহাতে হয়। বিশেষত ছুটির দিনগুলোতে এই অস্বস্তি বেশি বেশি চোখে পড়ে। এই বাংলা একাডেমিতে ঢুকলাম তো, সব শেষ করে আসতে আসতে এদিকে সিরিয়ালের বাগড়ায় পড়ে গেলাম, অথবা সময় শেষ হয়ে আসতে থাকলো। এক জায়গায় বইমেলা আয়োজনের বিষয়ে চিন্তা করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে রেওয়াজ ভাঙার প্রসঙ্গ আসলে সেটা উড়িয়ে দেওয়া উচিত হবে না বোধ করি। বইমেলার আয়োজন আরও সুন্দর হোক, সেটাই সর্বোপরি প্রত্যাশা।

জাগো নিউজ : সমকালীন সাহিত্য নিয়ে চিন্তা।

হুসাইন আজাদ : সাহিত্যের এখন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে গেছে স্মার্টফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। অর্থাৎ আগে যে ছেলে বা মেয়েটি খানিক অবসর পেলে বই হাতে নিতো, সে এখন স্মার্টফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পড়ে থাকছে। আসক্তির বিষয়টা একপাশে রাখলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিনোদন বা সময় কাটানোর অন্যতম ক্ষেত্র। এখান থেকে পাঠককে টানতে হলে দরকার তেমনই সাহিত্য। আমাদের একজন জাদুকর ছিলেন, হুমায়ূন আহমেদ। তার ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ পড়ার নেশায় আমি একদিন অনার্সের মার্কস-বরাদ্দ ক্লাসে পর্যন্ত যাইনি। পাঠককে এমনভাবেই টানতে হবে। উপন্যাস, রম্য, ভ্রমণ বা ইতিহাসনির্ভর বই সাধারণত সহজবোধ্য হয় বিধায় এসব লেখার ভাষা সাবলীল ও সুন্দর হলে পাঠক পড়তে উৎসাহবোধ করেন। কিন্তু লেখার জন্য লিখে গেলে পাঠক দু’চার লাইন পড়েই রেখে দেবেন। কিছু না থাকলে পড়ে শেষ করেও বলবেন, ধুর সময় নষ্ট। কবিতার ক্ষেত্রে এ বিষয়টা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কবিতা সাধারণত সবাই পড়েন না, যারা পড়েন তারা অভিজাত পাঠক। তাদের শব্দজ্ঞান, বাক্যজ্ঞান অন্যদের চেয়ে বেশি থাকে, থাকে চিত্রকল্প তৈরির অসম্ভব ক্ষমতা। এই পাঠকরা একটি কবিতা পড়েই বুঝে ফেলেন তিনি যে বইটি হাতে নিয়েছেন তাতে কী আছে। সুতরাং মানোত্তীর্ণ হওয়ার বিকল্প নেই। নতুবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কাছে হেরে যেতে হবে সাহিত্যকে।

জাগো নিউজ : সমকালীন লেখকদের মধ্যে কাদের লেখা ভালো লাগে?

হুসাইন আজাদ : একটা উপন্যাস বা গল্পের বাক্য অথবা একটা কবিতার শব্দই যেকোনো লেখকের প্রতি পাঠকের ভালোবাসা তৈরি করে ফেলে। বর্তমান সময়ে আমার এমন ভালোবাসার লেখক অনেক। কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকারদের পাশাপাশি সাংবাদিকতা বা ফিচারের অনেক লেখকের প্রতি আমার ভালোবাসা আছে। এই হুমায়ূন আহমেদ যুগেই এমন অনেক লেখক তৈরি হয়েছেন, যাদের লেখা পড়ে আমার মনে হয়েছে, কিছু তৃপ্তিভরে খাচ্ছি, আর ঈর্ষা করছি, ‘আহা, কবে এমন কলম দিয়ে বেরোবে’? আবার গুটিকয় ‘বইসংখ্যাধারী’ লেখকও আছেন, যারা কী লিখছেন সেটার চেয়ে, কয়টা বই লিখছেন তাতে গুরুত্ব দিচ্ছেন বেশি।

জাগো নিউজ : সাহিত্য নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।

হুসাইন আজাদ : কোনো পরিকল্পনা নেই। মগজ সচল থাকলে যখন মন যা চাইবে, তা-ই লিখবো। সে কবিতা, গল্প, উপন্যাস অথবা অন্য কিছু। হয়তো কিছু হবে, অথবা না। না হলে কী হবে? রবীন্দ্রনাথ তো আর প্রথম টেবিলে বসেই ‘গীতাঞ্জলী’ লিখে ফেলেননি, ‘বিদ্রোহী’ও নিশ্চয়ই নজরুলের প্রথম কবিতা নয়। না হলেও, ওই যে আগেই বলেছি, নিজের প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসা তো প্রকাশ হবে। মান-অভিমান অথবা দুঃখ-ক্ষোভটা তো কিছুটা কমবে। লেখালেখি যদি নিজেকে প্রকাশের মাধ্যম হয়, তবে সেটার আর পরিকল্পনা থাকবে কেন? নিজের মনেরই তো রূপ বদলায় ক্ষণে ক্ষণে!

এইচএন/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।