বৈরি সময়েও মেলায় ভিড়


প্রকাশিত: ০২:০৭ পিএম, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

সোমবার বিকেল, ঘড়ির কাটা তখন ৫টা ২৪ মিনিট। ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধে ৭২ ঘণ্টার হরতাল চলছে। বইমেলার এক প্রান্ত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢুকতেই বেশ ক`জন তরুণ তরুণীর যেন বাধ ভাঙা উল্লাস। চিৎকার আর হুল্লোড়। বাদ যাচ্ছে না সেলফি।

তারা সবাই পোশাকে পেশাজীবী? পরে কথা বলেও বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেলো। ৬ জন খুব কাছের বন্ধু। সবাই চাকুরি করছেন। তবে রাজনৈতিক এই সংকট কালে অফিসে কাজের চাপ কম। তাই সুযোগ পেলেই যোগাযোগ করে বন্ধুরা চলে আসেন বই মেলা। বইপত্র কেনেন। আড্ডা দেন। জিজ্ঞেস করতেই বলল, ‘ঘুরছি, দেখছি, তালিকা করছি। তালিকা দেখে বাছাই করে পরে বই কিনছি।’

হ্যাঁ, দেখতে দেখতে ১৬ দিন পার করল অমর একুশে গ্রন্থমেলা। বৈরী রাজনৈতিক সময়ে মেলার এই অর্ধেক এর মধ্যে অবরোধ-হরতালের গুমোট পরিস্থিতি, পেট্রলবোমা আর দগ্ধ মানুষ এবং মানুষের আতঙ্কিত মন যেমন আছে, তেমনি আছে আশার জায়গাও। কারণ, দিনে দিনে ভিড় বাড়ছে মেলায়, মানুষ বই কিনছে।

সোমবার ১৬তম দিনে কেউ বই কিনছে, কেউবা স্টল থেকে স্টলে ব্যস্ত নতুন বইয়ের তালিকা সংগ্রহে।

মেলার বিগত দিন নিয়ে লেখক-প্রকাশকদের রয়েছে নানা অভিমত। যেমন আগামী প্রকাশনীর বিক্রয় কেন্দ্রের তনিমা রহমান বললেন, ‘ভালো বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে আসলে হরতাল-অবরোধের কারণে এবার বিক্রি কম হচ্ছে। কিন্তু আমরা আশাবাদী।’

বিভাস প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী রামশংকর দেবনাথ বললেন, ‘রাজনৈতিক খারাপ পরিস্থিতির কারণে ঢাকার বাইরের লোকেরা মেলায় আসতে পারছেন না।’

তবে এর মধ্যেও মেলার দুই অংশেই দেখা মিলেছে লেখক-সাহিত্যিকদের। চলছে আড্ডা আর গল্প। এতো বড় আয়োজন তো তাদেরকে ঘিরেই। তাদের আড্ডা দেখলে বাইরে যতই আতঙ্ক থাক, মেলা প্রাঙ্গণে এর প্রভাব তেমন নেই এমনটাই বুঝা যাবে।

এবারে হরতালেই মেলার শুরু হয়েছে। চলছে এর মধ্যেই। সন্ধ্যার পর ভিড় ছিল বেশ ভালো। কেউ একা, কেউ আবার দলবেঁধে মেলায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। বিভিন্ন বয়সী পাঠক-ক্রেতার মধ্যে শিশুদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো।

ধানমন্ডি থেকে স্ত্রী আরিফা জাহানকে নিয়ে মেলায় এসেছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা রিয়াজুর রহমান তার স্ত্রী। আরিফা জাহান বলেন, মেলার পরিবেশ ভালো লাগছে। কোনো ঠেলাঠেলি নেই। স্বচ্ছন্দে বই দেখা ও কেনা যাচ্ছে। পরিসর বাড়ায় আমাদের মতো বৃদ্ধদের জন্য বেশ সুবিধা হলো।

এবার মেলায় স্টলের ৫৬৫টি ইউনিট করা হয়েছে, এই ৫৬৫ ইউনিটের মধ্যে ৩৫১টি প্রতিষ্ঠানকে জায়গা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একাডেমি প্রাঙ্গণে ৯২টি প্রতিষ্ঠানকে ১২৮টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২৫৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৪৩৭টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাংলা একাডেমিসহ মোট ১১টি প্রতিষ্ঠানকে ৪০০ বর্গফুটের প্যাভিলিয়ন দেওয়া হয়েছে। বেশিরভাগ প্যাভিলিয়ন সাজানো হয়েছে নান্দনিকভাবে।
 
অন্যপ্রকাশ তাদের প্যাভিলিয়ন সাজিয়েছে হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্ট চরিত্র `হিমু`কে কেন্দ্র করে। কাকলী প্রকাশনীও তাদের প্যাভিলিয়ন সাজিয়েছে হুমায়ূন আহমেদের ছবি দিয়ে।

নীতিমালা ভঙ্গ করায় ১টি স্টল নিষিদ্ধ
অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৫’র নীতিমালা ভঙ্গ করায় অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫-এর ‘নীতিমালা ও নিয়মাবলি’র ১৩.১৩ ও ১৩.১৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সোমবার রোদেলা প্রকাশনী’র স্টল নিষিদ্ধ করা হয়।

এসএ/আরএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।