জীবনকে রূপকথা মনে হয়

হাবীবাহ্ নাসরীন
হাবীবাহ্ নাসরীন হাবীবাহ্ নাসরীন , কবি ও সাংবাদিক
প্রকাশিত: ০৬:৫৮ এএম, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

ছেলেবেলায় হতে চেয়েছিলেন বাস ড্রাইভার। বড় হতে হতে হয়ে গেলেন কবি। মন্দ কী! একজন কবি, একজন চালকও বটে। জীবনকে রূপকথার মতো মনে হয় তার কাছে। তিনি আবিদ আজম। সাহিত্য নিয়ে যারা কাজ করছেন, তাদের কাছে খুবই পরিচিত এই নাম। বয়সে তরুণ হলেও লেখালেখিতে অভিজ্ঞতার ঝুলি বেশ সমৃদ্ধ। গল্প থেকে কবিতা- সাহিত্যের সব পথেই হেঁটেছেন এই তরুণ কবি। বর্তমানে নিউজরুম এডিটর হিসেবে কাজ করছেন একটি জনপ্রিয় রেডিও স্টেশনে। সম্প্রতি বইমেলা এবং লেখালেখির নানাদিক নিয়ে জাগোনিউজের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। লিখেছেন হাবীবাহ্ নাসরীন-

সেই থেকে শুরু
সম্ভবত ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তখন। সদ্য শৈশব পেরোনো চোখেই ভর করেছিল সাহিত্যের নেশা। অনুভব করেছিলেন সাহিত্যের প্রতি দুর্দমনীয় টান। সবার কাছ থেকে একটু বেশি ভালোবাসা আদায় করে নেয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকেই লিখে ফেলেছিলেন প্রথম লেখাটি। সেটি ছিল একটি কবিতা। পত্রিকার পাতায় প্রথম লেখা ছাপা হয় ২০০০ সালে। `শহর` নামের ছড়াটি ছাপা হয়েছিল দৈনিক ইনকিলাবের শিশুতোষ পাতা সোনালী আসরে। তারপর লেখালেখির জগতে কাটিয়ে দিয়েছেন প্রায় দেড় দশক। এরই মধ্যে তিন হাজারেরও বেশি লেখা প্রকাশিত হয়েছে তার।

কণ্টকময় পথ
সাহিত্যের ভুবনে তার পথচলা মসৃণ ছিলো না মোটেও। যতরকম বাঁধা আসতে পারে, তার সব ধাপ পেরিয়ে তারপরই এসেছেন বর্তমান অবস্থানে। বই জমিয়ে ঘর এমনভাবে ভরে ফেলেছিলেন যে হাঁটাচলার জায়গাও ছিল না। সেই কারণে বাবা-মায়ের বকুনি খেয়ে, সব বই বস্তাবন্দী করে ঘরও ছেড়েছিলেন একবার। সেসব কৈশোরের গল্প। তারপর আবারও ফিরে এসেছেন বইয়ের কাছে, নিজের পরিচিত ভুবনে। সাহিত্য যার রক্তে মিশেছে, সে কী করে আর বই থেকে দূরে থাকে!

এগিয়ে যাওয়ার গল্প
আবিদ আজমের কাছে এগিয়ে যাওয়ার গল্প মানেই যুদ্ধ, যুদ্ধ এবং যুদ্ধ। লেখালেখি করতে এসে প্রচুর মানুষের সহযোগিতা যেমন পেয়েছেন, পেয়েছেন অসহযোগিতাও। তবু পিছিয়ে পড়েননি। ছাত্রজীবনে `পার্টটাইম` স্টুডেন্ট ছিলেন আর `ফুলটাইম` ছিলেন রাইটার! তার ফলাফলও পেয়েছেন তিনি, এমনও হয়েছে, একইদিনে পাঁচ-ছয়টি জাতীয় দৈনিকে লেখা ছাপা হয়েছে তার, সেসব আরো বছর দশেক আগের কথা। অনেকেরই প্রতিহিংসার আগুনে পুড়েছেন, তবু এগিয়ে এসেছেন নিজের লক্ষ্যে।

যা কিছু অর্জন
লেখালেখি থেকে অর্জন বলতে আবিদ আজম বোঝেন মানুষের ভালোবাসাকে। এইযে প্রচুর মানুষের ভালোবাসা পেয়ে যাচ্ছেন, তার মূল্য পৃথিবীর আর কোনো অর্জনের সঙ্গেই তুলনা করা যাবে না। সাহিত্যের জগতে বাস করতে গিয়ে যেমন ছেড়ে আসতে হয়েছে অনেককিছু, তেমনি পেয়েছেনও দুহাত ভরে। সাহিত্য কাউকে বিমুখ করে না।

লেখালেখি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
মানুষের ভালোবাসা পাওয়াটাই তার একমাত্র লক্ষ্য। তারই সূত্র হিসেবে কবিতা ছাড়া সাহিত্যের সব শাখায় বিচরণ করতে চান এই কবি। কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পরও কবিতা কেন নয়? জানা গেলো, কবিতাকে এখনও বুঝে উঠতে পারেননি তিনি! বোঝা গেলো, এ এক বিনয়ী কবির কৌশলী উত্তর ছাড়া আর কিছুই নয়। অলৌকিক উপন্যাস লেখায় হাত দিচ্ছেন শীঘ্রই। ভীতু পাঠকেরা এখন থেকেই দূরে দূরে থাকা শুরু করুন!

নিজেকে যেভাবে দেখতে চান
মানুষের ভালোবাসা। হ্যাঁ। ঘুরেফিরে এই একটি আকাঙ্ক্ষার কথাই বলছিলেন তিনি। শুধু মানুষের মুখে মুখেই নয়, গঠনমূলক সাহিত্যকর্ম দিয়ে থেকে যেতে চান মানুষের হৃদয়ে। নিজেকে সংযোজন এবং বিয়োজনের এই খেলায় শেষ হাসিটি হাসতে চান তিনি।

বইমেলা এবং অন্যান্য
এবারের বইমেলায় তার লেখা কোনো বই না এলেও প্রথমবারের মত সম্পাদিত একটি বই প্রকাশিত হচ্ছে। `মুক্তিযুদ্ধের গল্প সংকলন` নামের এই বইটিতে লিখেছেন দেশবরেণ্য চল্লিশজন গল্পকার। আবিদ আজমের নিজেরও একটি গল্প থাকছে এই বইটিতে। এপর্যন্ত তার একক বই প্রকাশিত হয়েছে চারটি, দুটি গল্প এবং দুটি ছড়ার। এছাড়াও যৌথভাবে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা বারোটি।

নতুনদের জন্য পরামর্শ
নতুনদের জন্য তার প্রথম পরামর্শটি হলো, তারা যেন কারো পরামর্শ গ্রহণ না করে! তারপরও যদি পরামর্শ গ্রহণ করতেই চায়, তাহলে তাদের প্রতি পরামর্শ হলো, প্রচুর পড়তে হবে। সমসাময়িক থাকতে হবে। বিখ্যাত লেখকদের পাশাপাশি অগ্রজ যারা আছেন তাদের লেখা পড়তে হবে বেশি করে। আর লেখালেখিকে নেশা হিসেবে নেয়া যেতে পারে তবে পেশা হিসেবে কখনোই নয়।

এইচএন/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।