বই আলোচনা

সুদিন ফিরে আসছে: যে যাত্রা পাঠকের

সাহিত্য ডেস্ক
সাহিত্য ডেস্ক সাহিত্য ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:২৯ পিএম, ০৩ অক্টোবর ২০২৫

মো. ইসহাক ফারুকী

বুকের বামপাশে চিন চিন করে ব্যথা অনুভূত হচ্ছে। না। হৃদযন্ত্র গ্রেপ্তার হওয়ার আশঙ্কা নেই। এ যেন অদ্ভুত উদ্বেগ! হুট করেই অস্থির হয়ে পড়ছে মনযন্ত্র। কারণটা কবি আরফান হোসাইন রাফি। তার ‘সুদিন ফিরে আসছে’ কাব্যগ্রন্থটির কবিতাগুলো রীতিমতো আমার মনে আন্দোলন করছে। এতটা দুঃখবাদ আবার এতটা আশার বাণী খুব কমই দেখা যায়।

একদিকে কবি বলছেন, ‘আমি একজন ভেঙে যাওয়া মানুষ- সদ্য বিবাহিতা অদক্ষ এক বধূর হাত থেকে পড়ে গিয়ে ভেঙে গেছি একদিন’ বা ‘আমি কি যুদ্ধক্ষেত্রে নিরুপায় অশ্ব’ অথবা ‘মানুষের পৃথিবীতে আমি একা’, ‘আকস্মিক শোকসংবাদে ঘুম ভাঙার মতো ভয়ংকর’; ‘সহসা প্লাবনে দুমড়ে পড়ার ভয়’। আবার অন্যদিকে কবি বলছেন, ‘আমাকে কেউ জুড়ে দেবে?’ ‘আমাকে স্থির করো, হে বিশ্বস্ত প্রেমিকা’; ‘খোদার কাছে চাইবো, এই তাকিয়ে থাকা যেন শেষ না হয়’; ‘আস্তে করে চুমু খেয়ে আশ্রয় খুঁজছে কপালে ভাঁজে ভাঁজে’।

কবি হিসেবে আরফান হোসাইন রাফি এমন ইম্যাজারি (সাহিত্যের এমন এক কৌশল, যেখানে কবি শব্দ ও ভাষার মাধ্যমে পাঠকের মনে পঞ্চ ইন্দ্রিয়-সম্পর্কিত (দৃষ্টি, শ্রবণ, ঘ্রাণ, স্বাদ, স্পর্শ) চিত্রকল্প বা ধারণা সৃষ্টি করেন। এর মাধ্যমে কবি প্রাণবন্ত বর্ণনা দিয়ে পাঠককে কবিতার জগতে নিয়ে যান এবং তার নিজের অভিজ্ঞতার সঙ্গে যোগাযোগ সৃষ্টি করতে সহায়তা করেন) সৃষ্টি করেছেন, যা তার কবিতাগুলোতে পাঠক নিজের জীবনের সঙ্গে মেলাতে সক্ষম হবেন।

একদিকে কিছু কবিতায় প্রেমিকা, বান্ধবী, সখীর সঙ্গে প্রণয়, বিরাগ, অনুরাগ, বিচ্ছেদ, আশা-নিরাশার ব্যঞ্জনা যেমন ধরা দিয়েছে। অন্যদিকে কিছু কবিতায় মায়ের প্রতি ভালোবাসা, বাবার প্রেম ও অনুভূতিকে খুব ভালোভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

অনেক কেনর উত্তর জানা যাবে কবি আরফান হোসাইর রাফির কবিতাগুলো থেকে। ‘বাবা নিজেকে বিক্রি করতে চান’; ‘বাবা আতর কেনেন না কতদিন’; ‘জানি, মা রাজি হবেন না’ ‘তিনি আমার থেকে দূরত্ব সৃষ্টি করেন’ এবং আরও অনেক কিছুই।

আরও পড়ুন
শূন্য রথের ঘোড়া: হৃদয়ে গেঁথে থাকা উপাখ্যান 
হাজার রঙের ক্যানভাস: আলো-অন্ধকারের কথা 

শিল্পী যেমন বড় ক্যানভাসে ছবি আঁকেন; সেখানে প্রতিটি আঁচড়ে প্রকৃতির ছোঁয়া থাকে; হোক পরিচ্ছন্ন অথবা অপরিষ্কার। তেমনই কবির তুলিতে প্রকৃতি ধরা দিয়েছে আনমনে, অগোচরে, সম্পর্কের সঙ্গমে। আপন মনেই ‘সোনালু ফুলের সকাল’; ‘তুরাগের কালো জল’; ‘শিশিরভেজা শেফালীর রাতে’; ‘নিয়মিত কুকুর ডাকা মধ্যরাতে’; ‘এই আশ্বিনের মঙ্গল তিথিতে’, ‘আমি বর্ষা হতেও রাজি আছি’—কী অদ্ভুত চিন্তার শেকল। ছিঁড়ে ফেলার জো নেই।

কবি পাঠকের মনের ভেতরে শব্দগুলোকে গেঁথে দিতে দিতে এগিয়ে চলেন। এক কবিতা থেকে অন্য কবিতায় পাঠক যাত্রা করেন; স্ট্যান্ডিং সিটের টিকিট কেটে সিট খোঁজা যাত্রীর মতো রেলগাড়ির প্রতিটি বগিতে।

বর্ষাদুপুর প্রকাশনীর ‘সুদিন ফিরে আসছে’ কাব্যগ্রন্থটির ‘দাবিদার’ বগি থেকে পাঠকরা এগোতে এগোতে থিতু হন ‘ক্ষুধার্ত প্রেমিক’ বগিতে। মনে আন্দোলিত হতে থাাকে ৫৬টি বগি। স্মৃতিকাতর হতে থাকেন, যেমনটা স্মৃতির পাতা খোঁজেন কবিও। এ দ্যোতনা সৃষ্টিতে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন কবি আরফান হোসাইন রাফি।

প্রথম কাব্যগ্রন্থটি কেমন হয়েছে—তা বলার চেয়ে এই যাত্রার জন্য আহ্বান জানাতে চাই সব পাঠককে। আর কবির উদ্দেশ্যে আবেদন, তার কবিতার পঙ্‌ক্তির মতো করেই বলি, ‘তুমি নির্ভয়ে এগিয়ে নাও ইলেকট্রনিক বগি’।

এসইউ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।