তরুণ কবি ইমরান মাহফুজ ও তার সাহিত্যকর্ম

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:৩৭ পিএম, ১০ অক্টোবর ২০২৪

তানজিদ শুভ্র

কবি হেলাল হাফিজ বলেছেন, ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’। তাই তো সৃজনশীল নানা কাজে নবীন-তরুণরা এগিয়ে চলছেন বীরদর্পে। নিজেদের চেষ্টার সবটুকু নিংড়ে দিচ্ছেন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ কিংবা চিত্রনাট্য পরিচালনায়। পরিশ্রমী কেউ আবার মননশীলতার পরিচয় দিচ্ছেন জ্ঞান গবেষণার মাধ্যমে। তেমনই এক আলোকিত তরুণ ইমরান মাহফুজ। গৃহিণী মা বিলকিস বেগম ও শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবা নুরুল আলমের অত্যন্ত স্নেহ এবং ভালোবাসায় এগিয়ে চলেছেন জীবনের বহমান গতিতে।

প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা উদ্ভিদবিদ্যায়, লেখালেখি করেন বাংলায়, কাজ করেন ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারে। গবেষণা ক্লাসিক সাহিত্যে আর সম্পাদনা করেন ‘কালের ধ্বনি’। কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কোমাল্লা গ্রামে ১৯৯০ সালের ১০ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন ইমরান মাহফুজ। পেশায় সাংবাদিক হয়ে কবিতাচর্চা ও গবেষণায় স্বাক্ষর রাখায় পরিচিত ‘কবি ও গবেষক’ হিসেবে। দেশের সর্বকনিষ্ঠ গবেষক হিসেবে তার গবেষণা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের পাঠ্যসূচিতে। তার সম্পাদনা ও গবেষণাগ্রন্থ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স, মাস্টার্স ও এমফিলে সহায়কগ্রন্থ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে ৭ বছর ধরে।

২০১৭ সালের বইমেলায় মা, মাটি, মানুষ, সমাজ, রাষ্ট্র বিষয়ের সমন্বয়ে প্রকাশ করেছেন প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘দীর্ঘস্থায়ী শোকসভা’। ইমরান মাহফুজ তার সেরা শিল্পকর্ম দেখিয়েছেন গবেষণায়। দ্যুতিমান সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক আবুল মনসুর আহমদ এবং নজরুল গবেষক ও প্রাবন্ধিক আবদুল কাদিরকে নিয়ে সম্পন্ন করেছেন গবেষণা। গবেষণা করছেন কবি জসীম উদ্্দীনকে নিয়েও। এভাবে সমকাল আর চিরকালের মেলবন্ধনে চলছে সৃজন সংসারে।

বাড়ি থেকে পালিয়ে আসা ইমরান মাহফুজের লেখালেখির সূচনা হয়েছিল ২০০৫ সালে। তার লেখালেখির হাতেখড়ি ভগ্নিপতি সাইফুল ইসলাম মনিরের হাত ধরে। শুরুতে স্থানীয় পত্রিকায় বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করার পর ধীরে ধীরে ফেনীর দৈনিক ফেনীর সময়, স্বপ্তনীল, কবিস্বরের সাথে যুক্ত হন। সেই থেকেই অনবদ্য লিখে চলেছেন এবং ২০১০ সাল থেকে নিজেই সম্পাদনা করছেন ‘কালের ধ্বনি’। দেশবরেণ্য কীর্তিমান ব্যক্তিদের নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে ‘কালের ধ্বনির’ বিভিন্ন সংখ্যা। সবশেষ চলতি বছর কালের ধ্বনির বিশেষ সংখ্যা ‘বাংলাদেশের কবিতার ৫০’ প্রকাশিত হয়। তার মৌলিক কবিতার বই ‘দীর্ঘস্থায়ী শোকসভা’, ‘কায়দা করে বেঁচে থাকো’, ‘মুখোশপরা পাঠশালা’সহ প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি।

তার সম্পাদিত গ্রন্থসমূহের মধ্য অন্যতম হচ্ছে ‘কষ্টের ফেরিওয়ালা: হেলাল হাফিজ’ এবং ‘আবুল মনসুর আহমদ স্মারকগ্রন্থ’, ‘জীবনশিল্পী আবুল মনসুর আহমদ’, ‘মুক্তিযুদ্ধ: অজানা অধ্যায়’, ‘দ্য ইক্যুয়েশন অব লাইফ’, ‘শতবছরের সংগ্রামে একাত্তরের আলমডাঙ্গা’, গবেষণা গ্রন্থ ‘লালব্রিজ গণহত্যা’, যেটি প্রকাশ করেছে ‘১৯৭১: গণহত্যা ও নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্ট’।

তবে নব যৌবনা এই তরুণের কাজের পরিধি কেবল কবিতা আর গবেষণাতেই সীমাবদ্ধ নয়। জীবনশিল্পী আবুল মনসুর আহমদেকে নিয়ে নির্মাণ করেছেন ‘দুর্লভ এই আলো’ নামের ২৩ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র। তার নিজের পরিকল্পনা ও গ্রন্থনায় আবুল মনসুর আহমদের জীবনের মূলধারা ফুটিয়ে তুলেছেন তথ্যচিত্রে। তথ্যচিত্রে আবুল মনসুর আহমদের রাজনীতি নিয়ে কথা বলছেন এমিরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, সাংবাদিকতা নিয়ে কামাল লোহানী, কথাসাহিত্য নিয়ে সেলিনা হোসেন, জীবনদর্শন নিয়ে কথা বলেছেন লেখকপুত্র মাহ্ফুজ আনাম ও তার পরিবারসহ গ্রামবাসী।

ইমরান মাহফুজ শুধু লেখালেখিই করেন তা কিন্তু নয়; নাট্য পরিচালনাতেও বেশ পটু তিনি। সহকারী পরিচালক ও পরিচালক হিসেবে বেশ কয়েকটি টিভি নাটকে কাজ করেছেন। সমকালীন বিষয়কে উপজীব্য করে রচিত ইমরানের কাব্যগ্রন্থ ‘কায়দা করে বেঁচে থাকো’ নামটি কিংবদন্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে। দেওয়াল লিখন ও গ্রাফিতির মাধ্যমে কথাটি পরিণত হয়েছে গণমানুষের প্রিয় ভাষণে। মা, মাটি, মানুষকে জানতে বাংলাদেশের পঞ্চাশের বেশি জেলা ভ্রমণসহ ভারত, নেপাল ও ভুটানে রয়েছে তার চমৎকার পদচারণা।

নিজ গ্রামে ইমরান মাহফুজ প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘বিলকিছ আলম পাঠাগার’। ‘বই পড়ি নিজেকে জানি’ স্লোগানে সমাজের সব বয়সীদের জন্য পাঠাগারটি কাজ করে যাচ্ছে ২০১৭ সাল থেকে। বই বিনিময়, পাঠচক্র, লেখকের মুখোমুখি পাঠক, বাড়ি বাড়ি পাঠকের খোঁজে- এমন নতুন নতুন চিন্তায় গতানুগতিক পাঠাগারের ধারণাকেই পাল্টে দিচ্ছে। বিলকিছ আলম পাঠাগার বই বিমুখ শিক্ষার্থীদের বইমুখী করার চেষ্টা করছে। বর্তমানে পাঠাগারে বইয়ের সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। এর পাঠক স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে কৃষক ও গৃহিণী। শুধু গল্প-উপন্যাস নয়। নারীর মাতৃত্বকালীন জীবন-যাপন, কৃষকের চাষবাস ও জমি পরিমাপের বইও রয়েছে। ইমরান মাহফুজ তার বইপ্রেমী বাবা-মায়ের নামে গড়েছেন পাঠাগারটি।

পাঠাগার প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘আমি লেখালেখি করি। লেখালেখির কারণে মনে হয়েছে, কিছু পাঠক সৃষ্টি করা দরকার। সেই ইচ্ছে থেকে পাঠাগার শুরু করা। আগে অন্য বই পড়ে অভ্যাস হোক। পরে হয়তো আমার বইও পড়বে। সীমান্তবর্তী এই এলাকায় অন্ধকারে আমরা জোনাক পোকার মতো আলো জ্বালিয়েছি। এটা হয়তো একসময় বড় আলোর মশাল হয়ে উঠবে।’

ছোটবেলা থেকেই অনুসন্ধানী চোখের দূরদৃষ্টি নিয়ে বেড়ে ওঠা তরুণ এই লেখক ও গবেষক কাজ করে যাচ্ছেন এই দেশ, এই ঐতিহ্য নিয়ে। এগিয়ে চলা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে চান গৌরবের ইতিহাসকে। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সাথে ভাবনা, চিন্তা ও ভালোবাসায় গড়ে তুলতে চান সমৃদ্ধশীল সোনার বাংলাদেশ। তিনি বলেন, ‘আমি সবার ভালোবাসায় হাঁটতে চাই কুয়াশাভেজা পথ! স্বপ্ন দেখি ভালোবেসে ঘর সংসারের।’

কবি, গবেষক, কালের ধ্বনি সম্পাদক ও মিডিয়ার পরিচিত মুখ হিসেবে খুব অল্প সময়েই সাড়া জাগানো এই তরুণ ইতোমধ্যেই তার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ অর্জন করেছেন পশ্চিমবঙ্গের ‘যুগ সাগ্নিক একুশে সম্মাননা’, ‘কমনওয়েলথ ইয়ুথ ফিউচার সামিট স্মারক’, ‘অল ইন্ডিয়া রেডিও আকাশবাণী কলকাতা স্মারক’, ‘সিএনসি-আবুল মনসুর আহমদ গবেষণা পুরস্কার’, ‘আবুল মনসুর আহমদ গবেষণা পুরস্কার (২০১৫)’, ‘শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন স্মৃতি পুরস্কার (২০১৩)’সহ নানা সম্মাননা।

এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।