বইমেলায় রাশেদ মেহেদীর ‘ফেসবুকে দেখি চাঁদ’
অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে কবি রাশেদ মেহেদীর প্রথম কবিতার বই ‘ফেসবুকে দেখি চাঁদ’। আধুনিক মানুষের যে অস্তিত্ব, মূল্যবোধ, যান্ত্রিক জীবনযাপনের সংকট, তা-ই তিনি তুলে ধরেছেন কবিতায়। বর্ণনাধর্মী ও বক্তব্যপ্রধান হলেও তার কবিতায় রূপক, প্রতীক ও ইমেজের ব্যবহার অভিনব।
‘ফেসবুকে দেখি চাঁদ’ কবিতাগ্রন্থের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়ে কবি নির্মলেন্দু গুণ লিখেছেন, ‘ফেসবুকে দেখা চাঁদ, আর আকাশে দেখা চাঁদ যে এক নয়, রাশেদ মেহেদী আমাদের সে কথা বিশেষভাবে স্মরণ করিয়ে দিয়ে একই সঙ্গে ফেসবুক এবং চাঁদের একটা আলাদা জগৎ নির্মাণ করেছেন। অনিবার্যভাবেই সেই নবজগৎ প্রেমের জগৎকেই উদ্ভাসিত করে।’
কবিতার বইয়ে প্রেম-প্রকৃতি-দ্রোহ ও মানুষের কথা উঠে এসেছে নানা ভঙ্গিমায়। উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; কিন্তু এই উন্নয়নের পথ ধরে আমরা যেন এগিয়ে যাচ্ছি মধ্যযুগের দিকে, সবুজ ব-দ্বীপে আজ মরু শ্মশানের ছায়া, এক কবির মুখ দিয়ে তিনি এই শঙ্কিত উচ্চারণ করেছেন।
হয়তো পৃথিবীর মানুষের এই ধ্বংসাত্মক প্রবণতা দেখেই কবি ছুটে যেতে চেয়েছেন অন্য কোনো সৌরমণ্ডলে। পৃথিবী ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য সঙ্গী হিসেবে তিনি পেতে চাইছেন ‘অমৃতা’ নামের কাউকে। এই অমৃতা ‘বনলতা সেন’র প্রতিরূপ হতে পারে। জীবনানন্দ দাশ যেমন মানুষের এ সভ্যতায় হাজার বছর ধরে পথ হেঁটে ক্লান্ত হয়ে বনলতা সেনের কাছে আশ্রয় খুঁজে ফিরেছেন, কবি রাশেদ মেহেদীও যেন তেমন অমৃতা নামের এক মানবীর প্রণয়-প্রর্থনা করেন। অর্থাৎ প্রেম প্রার্থনা কবির কাছে অস্তিত্ব ও সভ্যতার বর্বরতা থেকে ভারমুক্ত হওয়ার জন্যই এক পরম আশ্রয়।
আরও পড়ুন
• ঝুমকি বসুর প্রথম উপন্যাস ‘জোড়া শালিক’
• আমিরুল ইসলাম বাপনের ‘মস্তকের বিস্ফোরণ’
আলাদা করে প্রতিটি কবিতা নিয়েই দীর্ঘ আলোচনা করা যায়। অল্প কথায় বলা যায়, ‘ফেসবুকে দেখি চাঁদ’ কবিতাগ্রন্থ আমাদের বর্তমান বানোয়াট জীবনের আয়না। ফেসবুক, সাইবার দুনিয়া যেমন আমাদের বাস্তব পৃথিবী থেকে দূরে সরিয়ে কৃত্রিম-জীবনের রঙ্গরস উপস্থাপন করে, আমাদের বর্তমান সমগ্র সভ্যতাজুড়েই যেন তেমন এক ফাঁকির জীবন! ‘ফেসবুকে দেখি চাঁদ’ কবিতাগ্রন্থের কবিতাগুলো আমাদের সেই ফাঁকির-জীবনের দিকে ইঙ্গিত করে সচেতন হতে বলে।
রাশেদ মেহেদী ঔপন্যাসিক হিসেবে পরিচিত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেক্ষাপটে রচিত ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত তার প্রথম উপন্যাস ‘গনি আদমের ক্যাম্পাস’ পাঠকমহলে সাড়া ফেলেছিল। এরপর তার আরও দুটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়; ‘রাজপথের মহাকাব্য’ এবং ‘কংক্রিটের কালো বিড়াল’।
সাহিত্যজগতের চেয়ে তার অধিক পরিচিতি সাংবাদিক হিসেবে। ২৭ বছর ধরে তিনি সাংবাদিকতা পেশায় জড়িত। দৈনিক সংবাদ, ভোরের কাগজ, জনকণ্ঠ, সমকাল ও একুশে টেলিভিশনে সাফল্যের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি দেশের প্রথম বাইলিঙ্গুয়াল (বাংলা ও ইংরেজি) ভিউজ পোর্টাল ‘ভিউজ বাংলাদেশ’র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।
এসইউ/এমএস