বইয়ের মূল্য সাশ্রয়ী হওয়া উচিত: রাসেদ শিকদার
রাসেদ শিকদার জাদুশিল্পী ও কৌতুক অভিনেতা। পাশাপাশি টিভি নাটকেও অভিনয় করেছেন। যুক্ত আছেন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে। লিখেছেন আত্মোন্নয়নমূলক ও অনুপ্রেরণামূলক বই। সব ধরনের অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে সুস্থ ধারার বিনোদন নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেন। তার জন্মস্থান পাবনা। সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। পেশার কারণে বর্তমানে রাজধানীতে অবস্থান করছেন।
সম্প্রতি বইমেলা ও বই প্রকাশ সম্পর্কে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি ও কথাশিল্পী সালাহ উদ্দিন মাহমুদ—
জাগো নিউজ: আগামী বইমেলায় আপনার কয়টি বই প্রকাশিত হচ্ছে?
রাসেদ শিকদার: দীর্ঘদিন চর্চার ফলস্বরূপ আগামী বইমেলায় আমার প্রথম বই ‘দ্য পাসওয়ার্ড অব সাকসেস’ প্রকাশিত হচ্ছে। বইটি আত্মোন্নয়নমূলক ও অনুপ্রেরণামূলক। প্রকাশ করছে অনুজ প্রকাশন। প্রচ্ছদ করেছেন সজীব ওয়ার্সী। বইটি বইমেলা ছাড়াও বিভিন্ন অনলাইন বুকশপে পাওয়া যাবে। আশা করি তরুণ প্রজন্ম বইটি থেকে ভালো কিছু শিখতে পারবে।
জাগো নিউজ: বাংলা একাডেমি আয়োজিত আগামী বইমেলা কেমন দেখতে চান?
রাসেদ শিকদার: আমি চাই আগামী বইমেলা হোক একটি জ্ঞানভিত্তিক, সমৃদ্ধ ও প্রাণবন্ত উৎসব। যেখানে সব শ্রেণিপেশার মানুষ বইপ্রেম, শিক্ষা ও জ্ঞানচর্চার জন্য একত্রিত হবেন। তাই বইমেলায় সব ধরনের বইয়ের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা জরুরি। যেমন- সাহিত্য, বিজ্ঞান, ইতিহাস, সমাজ, ধর্ম, দর্শন, প্রযুক্তি, শিল্প-সংস্কৃতি, শিশু-কিশোর ইত্যাদির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। বইয়ের মূল্য সাশ্রয়ী হওয়া উচিত। যাতে সবাই তাদের আর্থিক সামর্থ অনুযায়ী বই কিনতে পারেন। বইমেলায় নতুন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি করা উচিত। যাতে নতুন লেখকদের বই প্রকাশের সুযোগ তৈরি হয়। বইমেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা উচিত। যাতে বইমেলাকে আরও প্রাণবন্ত ও আকর্ষণীয় করে তোলা যায়।
আরও পড়ুন: বইয়ের বিক্রি নির্ভর করে প্রচারণার ওপর: মাসুম আওয়াল
এছাড়া বইমেলায় সব দর্শনার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা উচিত। পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহার করা উচিত। প্রচার ও প্রসারের জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে। আশা করি বাংলা একাডেমি আগামী বইমেলাকে একটি জ্ঞানভিত্তিক, সমৃদ্ধ ও প্রাণবন্ত উৎসবে পরিণত করবে।
জাগো নিউজ: আপনার দেখা বিগত বইমেলায় কোনো অসংগতি চোখে পড়েছে?
রাসেদ শিকদার: বেশ কিছু অসংগতি চোখে পড়েছে। বইয়ের মূল্য অনেক সময়ই অত্যাধিক হয়ে থাকে। তাতে সবাই তাদের আর্থিক সামর্থ অনুযায়ী বই কিনতে পারেন না। বইমেলায় নতুন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণের সুযোগ খুবই কম। তাতে নতুন লেখকদের বই প্রকাশের সুযোগ তৈরি হয় না। বইমেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালার আয়োজন খুবই সীমিত। বইমেলায় নিরাপত্তার অপ্রতুলতায় দুর্ঘটনা বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে। বইমেলায় পরিবেশ দূষণের সম্ভাবনা থাকে। প্রচার ও প্রসারের পর্যাপ্ত উদ্যোগের অভাবে সবাই বইমেলার সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। আমি মনে করি, অসংগতিগুলো দূর করা হলে আগামী বইমেলা আরও উন্নত ও সমৃদ্ধ হবে।
জাগো নিউজ: বইমেলায় বইয়ের বিক্রি বাড়ছে নাকি কমছে?
রাসেদ শিকদার: এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়া কঠিন। কারণ বইমেলায় বইয়ের বিক্রির সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। তবে বিভিন্ন প্রকাশক ও লেখকের মতামত অনুযায়ী, বইমেলায় বইয়ের বিক্রি ধীরে ধীরে কমছে। এর মূল কারণ বর্তমানে মানুষ বইয়ের বদলে ই-বুক পড়তে বেশি পছন্দ করে। দেশে অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে মানুষ বই কেনার জন্য কম অর্থ ব্যয় করতে চান। শিক্ষার মান কমে যাওয়ায় মানুষ বইপড়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
জাগো নিউজ: বইয়ের প্রচারণাকে কোন দৃষ্টিতে দেখেন?
রাসেদ শিকদার: আমি বইয়ের প্রচারণাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে দেখি। কারণ ভালো লেখা হলেও যদি পাঠকের কাছে পৌঁছানো না যায়, তাহলে সেটি মূল্যহীন হয়ে যায়। প্রচারণা পাঠকদের বই সম্পর্কে সচেতন করে এবং বইপড়ার আগ্রহ জাগিয়ে তোলে। তাই প্রচারণার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। পত্রপত্রিকা, টেলিভিশন, রেডিও ইত্যাদির মাধ্যমে প্রচার করা যেতে পারে। ফেসবুক, এক্স (টুইটার), ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদির মাধ্যমেও প্রচার করা যায়। এমনকি লেখক, প্রকাশক বা অন্য ব্যক্তির মাধ্যমে প্রচার করা যেতে পারে। তবে প্রচারণা সঠিক তথ্যভিত্তিক, আকর্ষণীয় এবং লক্ষ্যবস্তু নির্দিষ্ট হওয়া উচিত। আমি মনে করি, প্রচারণার মাধ্যমে বইয়ের বিক্রি বাড়ানো সম্ভব। পাশাপাশি বইপড়ার আগ্রহ বাড়বে।
আরও পড়ুন: মনোজগতের সঙ্গে মিল রেখে বই খুঁজুন: মনদীপ ঘরাই
জাগো নিউজ: বইমেলার পাঠকের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?
রাসেদ শিকদার: বইমেলা একটি জ্ঞান ও সংস্কৃতির মিলনমেলা। এটি পাঠকদের জন্য একটি দুর্দান্ত সুযোগ নতুন বই আবিষ্কার করার, লেখকের সঙ্গে দেখা করার এবং তাদের পছন্দের লেখকের বই কেনার। তাই কোন ধরনের বই পছন্দ করেন, কোন লেখকের বই পড়তে চান, কোন বিষয়ের বই পড়তে চান? এগুলোর উত্তর দিয়ে যাত্রা শুরু করতে পারেন। আগে সময় নিন। কারণ বইমেলায় প্রচুর বই রয়েছে। তাই সবকিছু একসাথে দেখতে বা কেনার চেষ্টা করবেন না। প্রতিটি স্টলে কিছু সময় নিয়ে ঘুরে দেখুন। বইগুলো দেখে, পড়ে এবং লেখকের সঙ্গে কথা বলে নিন। যদি কোনো ভালো বই খুঁজে পান, তাহলে অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করুন। এতে অন্যরাও সেই বই পড়ার সুযোগ পাবেন।
এছাড়া মেলার আগেই বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ঘুরে দেখুন। সেখানে মেলার তালিকা, লেখকদের তালিকা, বইমেলার সময়সূচি এবং অন্য তথ্য পাবেন। মেলায় যাওয়ার আগে একটি টু-ডু লিস্ট তৈরি করুন। এতে আপনি যা করতে চান, তা লিখে রাখতে পারেন। যাওয়ার সময় হালকা খাবার এবং পানীয় নিন। মেলায় খাবার ও পানীয়ের দাম বেশি হতে পারে। আরামদায়ক জুতা পরুন। কারণ মেলায় অনেক হাঁটতে হবে। আশা করি পরামর্শগুলো আপনাকে বইমেলা উপভোগ করতে সাহায্য করবে। সবশেষে বলবো, বই কিনুন, বই পড়ুন। অপসংস্কৃতি থেকে দূরে, সুস্থ ও সামাজিক সংস্কৃতিচর্চার সঙ্গে থাকুন।
এসইউ/জেআইএম