বইমেলার প্রত্যেকটি প্রবেশপথ খোলা রাখা জরুরি: মোহাম্মদ অংকন

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ সালাহ উদ্দিন মাহমুদ , লেখক ও সাংবাদিক
প্রকাশিত: ০৩:৫২ পিএম, ১৭ অক্টোবর ২০২৩

মোহাম্মদ অংকনের লেখালেখির হাতেখড়ি শৈশব-কৈশোরে। নিয়মিত লিখছেন পত্রিকা, ম্যাগাজিন ও সাময়িকীতে। এরই মধ্যে তার ১৭টি বই প্রকাশিত হয়েছে। তিনি নাটোরের সিংড়া উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। দৈনিক মানবকণ্ঠের সাব-এডিটর হিসেবে কাজ করেছেন। বর্তমানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কম্পিউটার বিভাগে কর্মরত।

তার প্রকাশিত বইসমূহ—‘দুষ্টুদেরও বুদ্ধি আছে’, ‘এক রাজ্যে দুই রাজা’, ‘ছোটোরাও দুষ্টু ভীষণ’, ‘বাঘ-সিংহের বন্ধুত্ব’, ‘দুষ্টু কিশোরদের কাণ্ড’, ‘দুষ্টু ছেলের দল’, ‘অ্যা কমপ্লিট রুটিন অব অ্যা চাইল্ড’, ‘শহরের অসম প্রেম’, ‘দেখা শহরের অদেখা গল্প’, ‘এই শহরের দিনরাত্রি’, ‘আলোমতি’, ‘মায়ামতি’, ‘মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একশো কবিতা’ (সম্পাদিত), ‘করোনার দিনগুলিতে প্রেম’, ‘মেঘে ঢাকা চাঁদ’, ‘কঙ্কাল রহস্য’ ও ‘ভালোবেসে দুঃখ ছুঁয়েছি’ (ই-বুক)। সাহিত্যচর্চার স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন ‘পাপড়ি-করামত আলী পাণ্ডুলিপি পুরস্কার-২০১৯’, ‘রূপচাঁদা: অদেখা বাংলাদেশ সেরা গল্পকার-২০১৯’, ‘চয়েন বার্তা সম্মাননা-২০২০’, ‘লিখিয়ে পাণ্ডুলিপি পুরস্কার-২০২০’, ‘প্রিয় বাংলা পাণ্ডুলিপি পুরস্কার-২০২২’।

সম্প্রতি বইমেলা ও বই প্রকাশ সম্পর্কে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি ও কথাশিল্পী সালাহ উদ্দিন মাহমুদ

আরও পড়ুন: অনুবাদ-সেল নামে আলাদা কর্নার হোক: আবু আফজাল সালেহ

জাগো নিউজ: আগামী বইমেলায় আপনার কয়টি বই প্রকাশিত হচ্ছে?
মোহাম্মদ অংকন: আসন্ন বইমেলায় একাধিক বই প্রকাশিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এখনো কোনো প্রকাশনীর সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি হয়নি বলে শতভাগ নিশ্চিত করে বলতে পারছি না যে কয়টি বই আসবে। বেশ কয়েকটি প্রকাশনী আগ্রহ জানিয়ে পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করতে বলেছেন। যদি ইচ্ছার কথা বলি, তবে ‘আমার একটা তুমি চাই’ শিরোনামে উপন্যাস, ‘ভালোবেসে দুঃখ ছুঁয়েছি’ শিরোনামে কাব্যগ্রন্থসহ দুটি শিশু-কিশোর উপযোগী বই প্রকাশ হতে পারে।

জাগো নিউজ: বাংলা একাডেমি আয়োজিত আগামী বইমেলা কেমন দেখতে চান?
মোহাম্মদ অংকন: প্রতি বছরই প্রত্যাশা থাকে, বাংলা একাডেমি আয়োজিত বইমেলা সুশৃঙ্খল ও পরিপাটি হওয়ার। এবারও এর ব্যতিক্রম প্রত্যাশা করছি না। স্টল বিন্যাস হওয়া চাই আরও সুসজ্জিত। যাতে পাঠক প্রচণ্ড ভিড়ের মাঝেও কাঙ্ক্ষিত বইয়ের স্টলটি খুঁজে পান। এছাড়া বইমেলার প্রত্যেকটি প্রবেশ ও বাহির হওয়ার পথ একই সঙ্গে খোলা রাখা জরুরি। গত মেলায় রমনা পার্ক সংলগ্ন গেটটি শুধু বাহির হওয়ার গেট হিসেবে খোলা রাখায় প্রবেশে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল।

জাগো নিউজ: আপনার দেখা বিগত বইমেলায় কোনো অসঙ্গতি চোখে পড়েছে?
মোহাম্মদ অংকন: বড় কোনো আয়োজন করতে গেলে তাতে যৎসামান্য অসঙ্গতি থাকা স্বাভাবিক বিষয়। মেলায় বিরাট বিরাট খাবারের দোকান বসানোটা আমার কাছে অসঙ্গতিই মনে হয়। বইমেলায় এসে বই না কিনে চড়া দামে খাবার খেয়ে পকেট শূন্য করে বাসায় ফেরে। বইমেলায় থাকা বাহারি খাবারের দোকান খাবার কেনার প্রতি বেশি প্রভাবিত করে। যা আমার কাছে দৃষ্টিকটু মনে হয়। তখন মনে হয়, বাংলা একাডেমি হয়তো খাবারের দোকান থেকেই বেশি রাজস্ব সংগ্রহ করে। কর্তৃপক্ষের মনোযোগটাও ঠিক ওদিকে কি না কে জানে!

আরও পড়ুন: পাঠকের ঘাড়ে বই চাপিয়ে দেওয়াটা দোষের: রফিকুজ্জামান রণি

জাগো নিউজ: বইমেলায় বইয়ের বিক্রি বাড়ছে নাকি কমছে?
মোহাম্মদ অংকন: আমার অবজারভেশনে বই বিক্রির পরিমাণ কমছে বলেই মনে হয়। এর কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে, প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কারণে সবার হাতেই এখন স্মার্টফোন, বাসা-অফিসে কম্পিউটার। যারা সারাক্ষণ স্ক্রিনে চোখ রেখে অভ্যস্ত, তারা পিডিএফ ও ই-বুক পড়ার দিকে মনোযোগী হচ্ছেন। যখন দেখছেন একই বই অনলাইনে মিলছে; তখন কাগজের বই কেনার প্রতি অনেকেই আগ্রহ হারাচ্ছেন। আজকাল অ্যাপভিত্তিক অনেক প্রতিষ্ঠান কম মূল্যে ই-বুক বাজারে আনছে। এছাড়া অনেক রিসোর্সে ফ্রিও পড়া যায়। তবে এ কথা সত্য যে বই বিক্রির হার কমলেও কাগজের বইয়ের প্রভাব শিগগিরই শেষ হবে না। কিছু অন্তঃপ্রাণ পাঠক আছেন, যারা কাগজের বইয়ে মুগ্ধতা খোঁজেন। বই বিক্রিতে মন্দা হলেও বই সংরক্ষণ প্রবণতা থেকে কাগজের বইয়ের গ্রহণযোগ্যতা থাকবেই।

জাগো নিউজ: বইয়ের প্রচারণাকে কোন দৃষ্টিতে দেখেন?
মোহাম্মদ অংকন: বইয়ের প্রচারণাকে আমি সব সময় পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করি। একজন লেখক যখন কিছু লিখে জমা করেন, তখন তা পাণ্ডুলিপি। সেই পাণ্ডুলিপি যখন প্রকাশক প্রকাশ করেন, তা হয়ে যায় বই। প্রকাশকের উদ্দেশ্য যখন মুনাফা অর্জন, তখন বই একটি পণ্য। এই পণ্য নিয়ে প্রচারণা করা লেখক-প্রকাশক উভয়েরই দায়িত্ব। প্রচার না হলে বইটি সম্পর্কে পাঠক অবগত হতে পারবেন না। পাঠক অবগত না হলে বইটি বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। এছাড়া লেখক সব শ্রেণির পাঠকের কাছে পৌঁছাতে বইয়ের প্রচারণার কোনো বিকল্প নেই।

জাগো নিউজ: বইমেলার পাঠকের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?
মোহাম্মদ অংকন: পাঠকদের জন্য পরামর্শ দেওয়ার মতো সাধ্য আমার নেই। তবে একটি কথা না বললেই নয়, আজকাল অনেক পাঠক স্যোশাল মিডিয়ায় যেই লেখকের আনাগোনা বেশি; সেই লেখকের বই কেনার প্রতি ঝুঁকে পড়েন। মানে তারা ‘সেলিব্রিটি লেখক’ খোঁজেন। কিন্তু এটি বিচার করেন না যে, তিনি যা লিখেছেন, তাতে সাহিত্যমান কতটা আছে। ওই সেলিব্রিটি কি ভাইরাল হওয়ার পর লেখক হয়েছেন? তাও বিচার করেন না। তাই বলতে চাই, মুখ দেখে নয়, লেখা দেখে বই কেনা উচিত। শুধু লেখকের সঙ্গে সেলফি তুলতে বা অটোগ্রাফের জন্য যারা বই কেনেন, তাদের আমি পাঠক মানতে নারাজ। তাদের জন্য পরামর্শ নিষ্প্রয়োজন।

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।