বই বিক্রিকে বাণিজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা জরুরি

সায়েম সাবু
সায়েম সাবু সায়েম সাবু , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৪৩ পিএম, ১১ মার্চ ২০২২
ছবি: কামরুল হাসান

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ। জন্ম মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায়। কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করেছেন। পেশা সাংবাদিকতা। লিখছেন গল্প, কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, কলাম, শিশুতোষ গল্প ও সাহিত্য সমালোচনা।

২০০৭ সালে দৈনিক দেশবাংলার মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু করেন। বর্তমানে শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে ফিচার ইনচার্জ (জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক) পদে কর্মরত। সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ইতোমধ্যে সুনীল সাহিত্য পুরস্কার, কালকিনি প্রেসক্লাব সম্মাননা, কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ বাংলা বিভাগ সম্মাননা, এসইএল লেখক সম্মাননা, লেখকবাড়ি সাহিত্য পুরস্কার, রকমারি সংবাদ স্টার অ্যাওয়ার্ড, এসবিএসপি-আরপি ফাউন্ডেশন সম্মাননা, সাহিত্য দিগন্ত সম্মাননা, আবুল মনসুর আহমদ প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা পুরস্কার ও আমার বঙ্গবন্ধু লেখক সম্মাননা লাভ করেছেন।

‘সার্কাসসুন্দরী’, ‘নিশিসুন্দরী’, ‘সুন্দরী সমগ্র’ ও ‘এখানে কয়েকটি জীবন’ তার গল্পগ্রন্থ। ‘মিথিলার জন্য কাব্য’ ও ‘তুমি চাইলে’ তার কাব্যগ্রন্থ। সম্পাদনা করেছেন তরুণ লেখক সাদাত হোসাইনের সাক্ষাৎকার সংকলন ‘আমার আমি’। রয়েছে সচেতনতামূলক বই ‘অগ্নিকাণ্ড সতর্কতা ও নির্বাপণ কৌশল’। তার প্রথম উপন্যাস ‘মমতা’।

নিজের লেখালেখি, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও বইমেলা সম্পর্কে কথা বলেছেন সালাহ উদ্দিন মাহমুদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।

জাগো নিউজ: মহামারির সময়ে বইমেলা হচ্ছে। মেলার খবর রাখছেন নিশ্চয়ই। আবহ নিয়ে কী বলবেন?

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: অনেক অনিশ্চয়তার পরও বইমেলা হচ্ছে, এটা আশাব্যঞ্জক। এখন পর্যন্ত বইমেলা সুষ্ঠুভাবেই হচ্ছে। এ ছাড়া করোনা সংক্রমণ কমে আসায় সবাই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছে। মেলার সময়সীমাও বাড়ানো হয়েছে। লেখক-প্রকাশকরা খুশি। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তাই আশঙ্কা করার মতো পরিস্থিতি চোখে পড়ছে না।

জাগো নিউজ: বই লিখছেন অনবরত। বলা হয়, লেখার জগতে তারুণ্যের দাপট চলছে এখন। আবার লেখার মান নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। এ নিয়ে অবশ্যই বিশ্লেষণ আছে?

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: নিয়মিত লিখছি, এটা বলতে পারি। তার মধ্য থেকেই বছরে দু-একটা বই প্রকাশ হচ্ছে। এখনকার পাঠকরা বেশিরভাগই তরুণ। তাই তরুণ লেখকদের দাপট থাকতেই পারে। আর প্রবীণ পাঠকরা বুঝেশুনে বই কেনেন। তবে ভালো-মন্দ মিলিয়েই তো পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে। লেখালেখিতেও ভালো-মন্দ থাকবে। পাঠককে তাই মান বিচার করেই বই কিনতে হবে। যে পাঠক যে মানের, তিনি সে মানের বইই কিনবেন।

জাগো নিউজ: সাহিত্যের পতনপর্ব চলছে বলে অভিযোগ করা হয়। এর জন্য বিশেষত কোন বিষয়কে দায়ী করবেন?

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: অভিযোগটি সঠিক না-ও হতে পারে। সাহিত্যের পতন এত সহজ নয়। প্রাচীনযুগ থেকে বর্তমান পর্যন্ত যেসব কালজয়ী সাহিত্য আছে, তা টিকে থাকবে অন্তত আরও একশ বছর। আজ থেকে যদি আর সাহিত্য রচনা না-ও হয়, তবুও সাহিত্যের পতন অবশ্যম্ভাবী নয়। আর পতন যদি হয়েও থাকে, সেক্ষেত্রে দায় সবারই। লেখক, পাঠক ও প্রকাশক সমন্বিতভাবে দায়ী থাকবেন। সাহিত্যচর্চায় যুগযুগ ধরে সংবাদপত্রের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সেই সংবাদপত্র যদি লেখক তৈরি করতে না পারে, খুঁজে আনতে না পারে; তবে তো সাহিত্যজগতের জন্য অশনিসংকেত বয়ে আনবেই। সাহিত্যচর্চায় সংবাদপত্রের পৃষ্ঠপোষকতা খুবই জরুরি।

জাগো নিউজ: শিল্প-সাহিত্যের মান বিচারে পাঠক দুষছেন লেখককে, লেখক দুষছেন পাঠককে। আসলে দায় নিয়ে কী বলা যায়?

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: দেখুন, আগেই বলেছি—পাঠকের রুচির ওপর নির্ভর করছে লেখকের জনপ্রিয়তা। লেখা ভালো না হলে পাঠক প্রত্যাখ্যান করার অধিকার রাখেন। তবে লেখক হিসেবে পাঠককে দোষারোপ করার কোনো সুযোগ নেই। আমার বই ক্ল্যাসিক। এটা পাঠক কেন কিনছে না? এমন হাপিত্যেস করা লেখকের জন্য শোভনীয় নয়। পাঠকের যা ভালো লাগবে, পাঠক তাই কিনবে। তার যদি রান্না শেখার বই প্রয়োজন হয়, সে সেটাই কিনবে। কারো যদি উপন্যাস পড়তে ভালো লাগে, সে উপন্যাস কিনবে। আবার বই কেনার পর যদি পাঠক দেখেন যে, প্রলুব্ধ হয়ে কেনা বই মোটেও আত্মতৃপ্তি দিতে পারছে না। তখন তিনি তো লেখকের বিষোদগার করবেনই। মূলত মান বিচার করেন সাহিত্যবোদ্ধা বা সমালোচকরা। পাঠক রুচি সম্পর্কে ধারণা তাদের না থাকলেও চলে। বলতে গেলে, বই পড়া আনন্দের বিষয়; এখানে লেখক-পাঠকের রেষারেষির সুযোগ নেই। যদিও কেউ করে থাকেন, সেটা বোকামি।

জাগো নিউজ: বইমেলা আয়োজনের বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল। যার মধ্যে দেশীয় লেখক-পাঠক তৈরি করা ছিল অন্যতম। এই প্রশ্নে মেলার সার্থকতা নিয়ে কী বলা যায়?

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: সব আয়োজনই বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে করা হয়। মেলা শেষে আমরা যে হিসাব পাই বাংলা একাডেমির তরফে, তাতে আমার মনে হয় লেখক-পাঠক তৈরি হচ্ছে। প্রতিবছর অসংখ্য বই আসে, কোটি কোটি টাকা বিক্রি হয়। তবে কোন লেখক কতদিন টিকে থাকেন, সেটা ধর্তব্য হতে পারে। আবার পাঠকেরও শেণিবিভাগ আছে। সব পাঠক সব সময় বই কেনেন না। কেউ কেউ উপলক্ষ্য খোঁজেন। সম্পর্কের কারণে লেখকের বই কেনেন। সবমিলিয়ে বই বিক্রি হচ্ছে, এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। শুধু শিল্প-সাহিত্য চর্চা বলে হাত গুটিয়ে থাকলে চলে না। বই বিক্রিকে বাণিজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা জরুরি। তাহলে লেখকও বাঁচবেন, প্রকাশকও দেউলিয়া হবেন না।

জাগো নিউজ: বাজারি বিজ্ঞাপন, প্রযুক্তির বিকাশ সাহিত্যের জন্য কতটুকু চ্যালেঞ্জ তৈরি করলো?

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: প্রত্যেক কাজেই চ্যালেঞ্জ নিতে হয়। দিন দিন চ্যালেঞ্জের ধরনও বদলে যায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও তার বইয়ের বিজ্ঞাপন দিতেন। এখন লেখকরা ফেসবুক-টুইটারের মাধ্যমে বইয়ের প্রচার করেন। একটি বিষয় ভাবতে হবে, কাগজের বই থেকে ই-বুক, ই-বুক থেকে অডিও বুক—এভাবে ধরন পাল্টে যেতে পারে। একসময় হয়তো কাগজের বই থাকবেই না। সবাই ই-বুক পড়বে বা অডিও বুক শুনবে। যখন যে ট্রেন্ড আসবে, সেটাকে গ্রহণ করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। মূলত লেখালেখিকে আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়ে থাকি। আসুক না চ্যালেঞ্জ। আমরাও প্রস্তুত তা মোকাবিলা করার জন্য।

জাগো নিউজ: এবার প্রকাশিত আপনার বই নিয়ে যদি কিছু বলেন...

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: এবার একটি গল্পের বই এসেছে। বইটির নাম ‘এখানে কয়েকটি জীবন’। বইটি প্রকাশ করেছে কিংবদন্তী পাবলিকেশন। প্রচ্ছদ করেছেন গুণী চিত্রশিল্পী আইয়ুব আল আমিন। এটি আমার নবম বই। বইটি রকমারিসহ বইমেলার ৭৪ নম্বর স্টলে পাওয়া যাচ্ছে। বইটিতে ১১টি গল্প স্থান পেয়েছে। গল্পগুলো আমাদেরই জীবনের গল্প। হাসি-কান্নার গল্প। আনন্দ-বেদনার গল্প। পাওয়া-না পাওয়ার গল্প। এখানে গল্পজুড়ে জীবনের বিস্তার। তাই তো নাম রাখা হয়েছে ‘এখানে কয়েকটি জীবন’। এটি আমার চতুর্থ গল্পের বই। বইয়ের গল্পগুলো পুরোনো-নতুন মিলিয়ে। দু-চারটা এখানে-সেখানে প্রকাশও হয়েছে। তবে বেশিরভাগই ছিল ফাইলবন্দি। তিন বছর পর গল্পগুলো বই আকারে প্রকাশ করতে পেরে ভালো লাগছে। তবে পারিবারিক বিপদ-আপদের কারণে মেলায় খুব বেশি যেতে পারিনি। তাই খুব বেশি সাড়া ফেলেছে একথাও বলবো না। আমার নীরব কিছু পাঠক আছেন, তারাই আমার অনুপ্রেরণার উৎস।

জাগো নিউজ: সাংবাদিকতা করছেন। বই-ও লিখছেন। সাংবাদিকতা পেশা হলে সাহিত্যচর্চা অবশ্যই নেশা। আনন্দ কোন জায়গায়?

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: আমি আনন্দপ্রিয় মানুষ। দুঃখ-কষ্ট মোটেই নিতে পারি না। পেশা ও নেশা হিসেবে দুটি কাজেই আনন্দ পাই। একটি আরেকটির পরিপূরক বলে আমার কাছে মনে হয়। লেখালেখির আগ্রহ থেকেই সাংবাদিকতায় এসেছি। আবার সাংবাদিকতা করেই লেখালেখির আগ্রহ বাড়ছে। বলা যায়, সাংবাদিকতা আমার লেখালেখির পথ তৈরিতে সহযোগিতা করছে।

জাগো নিউজ: পরের লেখা...

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: পরিকল্পনা করে লেখালেখি হয় না। এরপর যে কী লিখবো নিজেও জানি না। যখন যা মনে আসে, লিখে রাখি। এমনও সময় যায়, কিছুই লিখতে পারি না। তবে মনে মনে কিছু পরিকল্পনা করে রেখেছি। সেসব জানিয়ে দিলে রহস্য থাকবে না। আসলে লেখকের পরিকল্পনা প্রকাশ করতে নেই। লেখা শেষ করেই তবে পাঠকের সামনে আনতে হয়। ইচ্ছা আছে, প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা করার। আগামী বইমেলায় আরেকটি উপন্যাস প্রকাশ করার চিন্তা আছে। প্লট খুঁজছি। কাহিনি সাজানোর চেষ্টা করছি। ব্যাটে-বলে মিলে গেলে বাউন্ডারি হাঁকাবো।

এএসএস/এইচএ/এএসএম

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও তার বইয়ের বিজ্ঞাপন দিতেন। এখন লেখকরা ফেসবুক-টুইটারের মাধ্যমে বইয়ের প্রচার করেন। একটি বিষয় ভাবতে হবে, কাগজের বই থেকে ই-বুক, ই-বুক থেকে অডিও বুক—এভাবে ধরন পাল্টে যেতে পারে। একসময় হয়তো কাগজের বই থাকবেই না। সবাই ই-বুক পড়বে বা অডিও বুক শুনবে। যখন যে ট্রেন্ড আসবে, সেটাকে গ্রহণ করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। মূলত লেখালেখিকে আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়ে থাকি

পরিকল্পনা করে লেখালেখি হয় না। এরপর যে কী লিখবো নিজেও জানি না। যখন যা মনে আসে, লিখে রাখি। এমনও সময় যায়, কিছুই লিখতে পারি না। তবে মনে মনে কিছু পরিকল্পনা করে রেখেছি। সেসব জানিয়ে দিলে রহস্য থাকবে না। আসলে লেখকের পরিকল্পনা প্রকাশ করতে নেই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।