কেমন হতে পারে এবারের বইমেলা

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ সালাহ উদ্দিন মাহমুদ , লেখক ও সাংবাদিক
প্রকাশিত: ১২:৪৭ পিএম, ৩০ জানুয়ারি ২০২১

বাঙালি লেখক-পাঠক-প্রকাশকের প্রাণের উৎসব অমর একুশে বইমেলা। করোনার কারণে যথাসময়ে শুরু হচ্ছে না বইমেলা। তবে আগামী ১৮ মার্চ থেকে শুরু হবে অমর একুশে বইমেলা। বইমেলা চলবে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। সামনে যেহেতু রমজান মাস, তাই রোজা শুরুর আগেই মেলার সমাপনী অনুষ্ঠান করা হবে।

লেখক-পাঠকরা মনে করেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সতর্কতা অবলম্বন করলে এ সময় বইমেলা আয়োজনে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তাই কয়েকজন লেখক ও পাঠকের মতামত তুলে ধরছি আজ-

ইনজিনিয়ারিং ইউনিভারসিটি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী মাঈন উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘করোনার প্রভাবে স্বাভাবিক জীবন আজও স্থবির। যার প্রভাব পড়েছে অমর একুশে বইমেলায়ও। সচরাচর ফেব্রুয়ারির প্রথমদিন থেকে মেলা শুরু হলেও করোনার কারণে এ বছর পিছিয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মেলা সমাপ্ত করাটাই প্রধান চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়নে দরকার প্রত্যেকের সঠিক ভূমিকা।

মেলায় মানুষের ভিড় হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে তাদের প্রত্যেকে প্রকৃত পাঠক নন। কেউ আসেন ঘুরতে, কেউ প্রিয় লেখকের সাথে ছবি তুলতে। আবার কেউ কেউ আসেন স্টল বা বাতির সংখ্যা গুনতে। বলতে দ্বিধা নেই, প্রকৃত পাঠকের সংখ্যা সে তুলনায় কম। যেহেতু করোনার প্রভাব এখনো কমেনি। তাই আমি চাই, শুধু প্রকৃত পাঠকের পদচারণে জীবন্ত থাকুক গ্রন্থমেলা। শখ মেটাতে গ্রন্থমেলায় অনেক যাওয়া যাবে, কিন্তু জীবন সবার একটাই।’

তরুণ কবি সাজেদুর আবেদীন শান্ত বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাসে হয় বইমেলা। কিন্তু করোনার কারণে শঙ্কা ছিল বইমেলা হবে কি-না? তবে শঙ্কা উড়িয়ে বাংলা একাডেমি বইমেলা সময় ঘোষণা করেছে। আশা করছি, লেখক, প্রকাশক ও পাঠকের আনাগোনায় মুখরিত হবে বইমেলা চত্বর। প্রিয় লেখকের হাত থেকে অটোগ্রাফসহ বই নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়াবে পাঠক। বইমেলা প্রাঙ্গণে শিশুরা হাসবে, খেলবে। পছন্দমত লেখকের বই কিনবে।

তবে আরেকটি কথা না বললেই নয়, আমরা অনেকেই জনপ্রিয় ও পরিচিত লেখকদের বই কিনি। যারা তরুণ লেখালেখি করেন; তারা নজরে আসেন না। তাই আমার মনে হয়, স্টল ঘুরে ঘুরে তাদের পাশাপাশি নতুনদের বইও কেনা দরকার। এতে তরুণ লেখকদের বই যেমন নজরে আসবে; তরুণ লেখকদের আগ্রহ বাড়বে। তবে আশা করছি, করোনাভাইরাসের জন্য সবাই বাড়তি সতর্কতা গ্রহণ করবেন।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে সাধারণ সম্পাদক মো. সাঈদ মাহাদী সেকেন্দার বলেন, ‘বাঙালির প্রাণের উৎসব বইমেলা। শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির এক মেলবন্ধন সৃষ্টিতে মেলার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বৈশ্বিক মহামারী করোনায় বিপর্যস্ত বিশ্ব। সে প্রভাব ইতোমধ্যে পড়েছে বইমেলায়। অনিশ্চয়তার কালো মেঘ দূর হয়ে আশার কথা হলো এবারের বইমেলা হচ্ছে স্বশরীরে।

এবারের বইমেলায় নিশ্চয়ই ভিন্নতা থাকবে। বিশেষ করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মেলায় দর্শনার্থী প্রবেশ করবেন। আয়োজকরা স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে বিশেষ গুরুত্ব দেবেন। ফলে মহামারী কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করি না। মানুষের পদচারণা মেলায় উৎসবমুখর আবহ নিয়ে আসবে। সৃষ্টিশীলতা ও সাহিত্যচর্চার এ প্লাটফর্ম আমাদের সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করবে। সম্প্রীতির মেলবন্ধনে এগিয়ে যাবে বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতি।’

সংস্কৃতিকর্মী মমিন উদ্দিন বলেন, ‘বর্তমানে করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে সমগ্র বিশ্ব থমকে আছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। করোনার প্রভাব আমাদের দেশে সব ক্ষেত্রেই লক্ষণীয়। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসে অমর একুশে গ্রন্থমেলা আয়োজিত হলেও এ বছর করোনার কারণে গ্রন্থমেলা মার্চে নিতে বাধ্য হয় বাংলা একাডেমি। পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাংলা একাডেমি ঘোষণা করে ১৮ মার্চ থেকে গ্রন্থমেলা শুরু হবে।

করোনা মহামারীর মধ্যে গ্রন্থমেলা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে বাংলা একাডেমির প্রতি প্রত্যাশা থাকবে। তাই প্রবেশদ্বার সংখ্যা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানোর লক্ষ্যে প্রত্যেকের মাস্ক নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যেক স্টলসহ নির্দিষ্ট স্থানে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। সম্ভব হলে মেলার পরিসর বৃদ্ধি করে স্টল সংখ্যা কমাতে হবে।’

প্রবাসী কবি ও লেখক রাজুব ভৌমিক বলেন, ‘এ বছরের বইমেলাকে অন্যান্য বছরের বইমেলার সাথে তুলনা করাটা বোধ ভুল হবে। আমার মনে হয় না করোনা পরবর্তী সময়ে কোনো বইমেলা আগের মতো হবে। এবারের বইমেলায় হয়তো আগের মতো পরিবার নিয়ে বইপ্রেমিকদের তেমন সমাগম হবে না। তারপরও বইমেলা হচ্ছে জেনে আমি খুব উচ্ছ্বসিত। আমি নিশ্চিত, আমার মতো অন্যরাও এ বার্তা শুনে বেশ আনন্দিত। সেজন্য বাংলা একাডেমির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আশা করছি, এবারের বইমেলায়ও আগের মতো পাঠক সমাবেশ হবে।’

তরুণ কবি তারিক সামিন বলেন, ‘বাংলা একাডেমি আয়োজিত একুশে বইমেলা মূলত প্রকাশনা ব্যবসাকেন্দ্রিক। তবুও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের লেখকদের জন্য একুশে বইমেলা একমাত্র অবাধ বিচরণক্ষেত্র। ব্যতিক্রম বলতে দেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের পর থেকে কিছু লেখক বইমেলা পরিহার করে চলেন। এ ছাড়া প্রকাশকগণ টাকা নিয়ে বই প্রকাশ করায়। ভালো লেখকরা বইমেলা উপলক্ষে বই প্রকাশ করতে চান না। বইয়ের রয়্যালিটি কী জিনিস! গত পাঁচ বছরে চারটি বই প্রকাশ করে এখনো জানতে পারলাম না। অথচ ইংরেজি লেখা থেকে সামান্য কিছু সম্মানি ঠিকই জোটে। এসব অনিয়ম সার্বিকভাবে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জন্য ব্যাপক ক্ষতিকর। আশা করি, এসব দোষে দুষ্ট না হয়ে এবার অনুষ্ঠিত হবে লেখক, প্রকাশক ও পাঠকের প্রাণের মেলা।’

গবেষক ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘অবশেষে বইমেলা হচ্ছে, লেখক হিসেবে এ সংবাদ আমার জন্য আনন্দের। একইসাথে শঙ্কারও। কারণ যথাযথ স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে বিষয়টি ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। অনেকেই বলছেন, চারদিকে সবই খোলা। তাহলে কোভিডের ভয়ে বইমেলা বন্ধ থাকবে কেন? আমিও তাই বলি, বইমেলা হোক। তবে লেখক, পাঠক, প্রকাশক সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে হোক। অবশ্যই সবার মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করতে হবে। মেলার পরিসর আরও বাড়িয়ে দূরত্ব বজায় রেখে স্টল স্থাপন করা হোক। একটি বিষয় অবশ্যই আয়োজকরা মাথায় রাখবেন, তা হলো- মেলা যেহেতু মার্চ-এপ্রিলে গড়াচ্ছে, সেসময় বৃষ্টির সম্ভাবনা বেশি। তাই বিরূপ আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে স্টল নির্মাণ করতে হবে। যাতে প্রকাশকরা কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হন।’

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।