প্রচ্ছদ শিল্পকে পেশা হিসেবে নেওয়া সম্ভব : ধ্রুব এষ
পাণ্ডুলিপি অবলম্বনে তুলির আঁচড়ে বইয়ের প্রচ্ছদ ও অলংকরণ করেন খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী ধ্রুব এষ। বইমেলা এলে তার দিন-রাত কাটে ভীষণ ব্যস্ততায়। শত ব্যস্তাতার মাঝেও জাগো নিউজের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাংবাদিক ও শিশুসাহিত্যিক মিজানুর রহমান মিথুন—
জাগো নিউজ: আপনার বইমেলার ব্যস্ততা শুরু হয়েছে কবে থেকে?
ধ্রুব এষ: আসলে বইমেলা নিয়ে আমার আলাদা কোন ব্যস্ততা নেই। সারা বছরই আমার তুমুল ব্যস্ততা। তবে বইমেলার প্রচ্ছদের কাজ শুরু করি প্রতি বছর নভেম্বরের পর থেকে এবং কাজ চলতে থাকে ফেব্রুয়ারির ২৮ তারিখ পর্যন্ত।
জাগো নিউজ: এবারের বইমেলায় এখন পর্যন্ত কতগুলো প্রচ্ছদ আঁকা হয়েছে এবং কোন কোন খ্যাতিমান লেখকের বইয়ের কাজ করেছেন?
ধ্রুব এষ: কতগুলো প্রচ্ছদ এখন পর্যন্ত করেছি তার সঠিক হিসেব এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। তবে হাজারের অধিক প্রচ্ছদের কাজ এরই মধ্যে করা হয়েছে। আমাদের বিখ্যাত বিখ্যাত লেখক যারা আছেন তাদের সবার প্রচ্ছদের কাজই করেছি। এরমধ্যে হুমায়ূন স্যারের (হুমায়ূন আহমেদ), মিলন ভাইয়ের (ইমদাদুল হক মিলন), আনিসুল হক মিঠুন ভাইয়ের (আনিসুল হক), রিটন ভাইয়ের (লুৎফর রহমান রিটন) বইয়ের প্রচ্ছদের কাজ করেছি।
জাগো নিউজ: তরুণ লেখকদের বইয়ের প্রচ্ছদ কেমন আসছে? এরমধ্যে গল্প না-কি কবিতার বই বেশি?
ধ্রুব এষ: তরুণদের বইয়ের প্রচ্ছদের প্রচুর কাজ পাচ্ছি। তাদের লেখা গল্প এং কবিতা দু’ধরনের বই-ই আসছে।
জাগো নিউজ: কোন ধরনের বইয়ের প্রচ্ছদ আঁকতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন?
ধ্রুব এষ: আমি সব ধরনের প্রচ্ছদ করে থাকি। এটা আমার প্রফেশন, তাই আমার ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্য দিয়ে কিছু যায় আসে না।
জাগো নিউজ: আপনি একজন খ্যাতিমান লেখকও, এ মেলায় আপনার কয়টি বই প্রকাশিত হয়েছে?
ধ্রুব এষ: এবারের মেলায় আমার ৩-৪টা বই প্রকাশিত হয়েছে। এরমধ্যে একটি থ্রিলার, নাম ‘কুজিকজিক’। এটি প্রকাশ করেছে পাঞ্জেরী। ‘রাস্তা হাঁটে আমি হাঁটি না’ প্রকাশিত হয়েছে নাগরী থেকে। ছোটদের বই ‘হলুদ রোবট সবুজ রোবট’ অধ্যয়ন থেকে। অনুপম প্রকাশনী থেকে পাঁচটি কিশোর উপন্যাসের একটি সংকলন।
> আরও পড়ুন- তরুণরা সাহিত্যের প্রেমে পড়ছে : শামসুজ্জামান খান
জাগো নিউজ: আপনার বইয়ের প্রচ্ছদ কি আপনি করেছেন?
ধ্রুব এষ: না, আমার বইয়ের প্রচ্ছদ আমি করি না। তবে এবারের থ্রিলার বইটির (কুজিকজিক) প্রচ্ছদ আমি করেছি। আমার বইয়ের বেশিরভাগ প্রচ্ছদ করে সব্য (সব্যসাচী হাজরা)। পাঁচ কিশোর উপন্যাসের প্রচ্ছদ করেছে সব্য। ‘হলুদ রোবট সবুজ’র প্রচ্ছদ করেছে মেহেদী।
জাগো নিউজ: বইমেলায় কবে যাবেন?
ধ্রুব এষ: বইমেলায় আমার যাওয়া হয় না। কীভাবে যাবো? রাত-দিন কাজের চাপে থাকি। মন চাইলেও যেতে পারি না।
জাগো নিউজ: আপনার ক্যারিয়ারে প্রথম কার বইয়ের প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন?
ধ্রুব এষ: আমার করা প্রচ্ছদ হচ্ছে ছড়ার বই। মোশতাক আহমেদ নামে একজন এটি লিখেছিলেন। বইয়ের নাম হচ্ছে ‘ছুটোছুটি’। এর বেশি আর মনে নেই।
জাগো নিউজ: আগের চেয়ে প্রচ্ছদের কাজ বেড়েছে না-কি কমেছে?
ধ্রুব এষ: আগের থেকে বইয়ের প্রচ্ছদের কাজ অনেক অনেক গুণ বেড়েছে। এক হাজার প্রচ্ছদ করা—তুমি কী মনে করছো! দিন দিন প্রচ্ছদের কাজ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জাগো নিউজ: দেশে প্রচ্ছদশিল্পীর সংকট আছে বলে আপনি মনে করেন?
ধ্রুব এষ: আমাদের দেশে এখন আর প্রচ্ছদশিল্পীর সংকট নেই। অনেক প্রতিভাবান লোকজন এ অঙ্গনে কাজ করছে।
জাগো নিউজ: আপনার দৃষ্টিতে এখন কারা ভালো কাজ করছেন?
ধ্রুব এষ: খুব ভালো শিল্পীর মধ্যে সব্য (সব্যসাচী হাজরা) একজন। এছাড়া মোস্তাফিজ কারিগর আছে। নতুন একটি ছেলে আছে রাজিব দত্ত।
> আরও পড়ুন- বইয়ের কাছে গেলেই অস্থির মন স্থির হয়
জাগো নিউজ: ছোটদের বইয়ের প্রচ্ছদ ভালো আঁকছে এমন শিল্পীদের নাম যদি বলতেন—
ধ্রুব এষ: মানবেন্দ্র গোলদার, বিপ্লব চক্রবর্তী, মামুন হোসাইনরা খুবই ভালো আঁকছে। আর একটা কথা তো তোমাকে বলা-ই হয়নি, রজত তো আমার এবারের বইমেলার একটি বইয়ের প্রচ্ছদ করেছে। ‘ভূতরা কোথায় থাকে’ বইটি প্রকাশ করেছে আলোঘর। এটি ছোটদের বই।
জাগো নিউজ: বইমেলার প্রচ্ছদ আঁকা অন্য শিল্পীদের প্রচ্ছদের মান কেমন বলে মনে করছেন?
ধ্রুব এষ: আমি তো আসলে বইমেলায় যেতে পারি না। তাই সবার কাজ দেখার সুযোগও হয় না। তবে পত্র-পত্রিকায় যেসব প্রচ্ছদ দেখছি—তার মান খুব-ই ভালো।
জাগো নিউজ: বইয়ের প্রচ্ছদ এবং অলংকরণ করে এখন কতটা স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব?
ধ্রুব: অবশ্যই সম্ভব। আমি নিজেই তো এ কাজ করে স্বাবলম্বী। এটা করেই তো আমি জীবিকা নির্বাহ করি। অন্য যারা প্রচ্ছদ-অলংকরণ করছেন, তারাও স্বাবলম্বী। এখন অনেক বই হচ্ছে। মোট কথা হচ্ছে, প্রচ্ছদ শিল্পকে এখন পেশা হিসেবে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে।
জাগো নিউজ: আগে অধিকাংশ প্রচ্ছদ হাতে আঁকা হতো। এখন আঁকা-আঁকিতে ব্যাপক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে প্রচ্ছদের মান কমেছে না-কি বেড়েছে?
ধ্রুব এষ: বইয়ের কাজ হচ্ছে চিরকালই প্রযুক্তি নির্ভর। ছাপার কাজও হচ্ছে প্রযুক্তি নির্ভর। প্রযুক্তি যত ডেভেলপ করবে, তুমি কিভাবে এটার উপর নির্ভর করবে তা তোমার ব্যাপার। প্রযুক্তি দিয়ে মানটান কিছু ঠিকঠাক হয় না। মানটা থাকে যার যার মাথায়।
জাগো নিউজ: এত ব্যস্ততার মাঝেও সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ধ্রুব এষ: তোমাকেও ধন্যবাদ।
এসইউ/এমকেএইচ