ফার্মেসিতে স্নাতক কেন করবেন
অনেককেই বলতে শুনবেন, ফার্মাসিস্টরা আসলে কী করেন? কারণ, আমাদের দেশের অনেক মানুষই জানেন না যে, চিকিৎসা ক্ষেত্রে একজন ফার্মাসিস্ট কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন!
বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ একটি পছন্দের ঠিকানা। এটি মূলত স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের একটি বিশেষ শাখা এবং মাল্টি ডিসিপ্লিনারি একটি বিষয়। সহজভাবে বললে ফার্মেসি হলো ওষুধবিজ্ঞান। ওষুধ বানানো, এর মান নির্ধারণ, ব্যবহার, বিতরণ, পরিবেশন িনয়ে পড়ানো হয় এই বিভাগে। একজন ফার্মাসিস্ট হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফার্মেসি, কমিউনিটি ফার্মেসি, অনলাইন ফার্মেসি, ভেটেরিনারি ফার্মেসি প্রভৃতি বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখেন।
একজন ফার্মাসিস্টকে যেসব কাজ করতে হয়
হাসপাতালে নিরাপদ ওষুধ ব্যবহার নিশ্চিত করেন ফার্মাসিস্ট। একই সঙ্গে অন্য পেশাজীবীদের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেন।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে রোগীদের জন্য ওষুধ থেরাপি অপ্টিমাইজ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ হলেন ক্লিনিক্যাল ফার্মাসিস্ট। ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফার্মাসিস্টরা ওষুধ আবিষ্কার, উৎপাদন, বিতরণ ও বিতরণ-পরবর্তী পর্যালোচনা, পর্যবেক্ষণে অবদান রাখেন। গবেষণা ফার্মাসিস্টরা একাডেমিয়া, ফার্মাসিউটিক্যালস বা সরকারের মধ্যে ওষুধ সম্পর্কিত গবেষণায় নিযুক্ত হন। ফার্মাসিউটিক্যাল বিক্রয় প্রতিনিধিরা স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের কাছে ওষুধ বিষয়ক প্রচার করেন। একাডেমিক ফার্মাসিস্টরা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা পরিচালনা এবং গবেষণার প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেন।
কোথায় পড়বেন
১৯৬৪ সালে বাংলাদেশে ফার্মেসি বিষয়ে শিক্ষার যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে অনেকগুলো পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি প্রোগ্রাম পড়ানো হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
টাঙ্গাইল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি
স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
নর্দান ইউনিভার্সিটি
ইউনিভার্সিটি অব ইনফর্মেশন টেকনোলজি এ্যান্ড সায়েন্স
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়
ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
এ ছাড়া অনেক পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ফার্মেসিতে চার বছরের ডিপ্লোমা করা যাবে। আবার চাইলে তিন মাসে ফার্মেসি সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন কোর্স করতে পারবেন। এই কোর্স করে মূলত ওষুধ বিপণনের কাজে যুক্ত হওয়া যায়। এ জন্য মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পাশ হতে হবে।
- আরও পড়ুন
- বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয় নির্ধারণ করবেন কীভাবে
- কৃষিবিজ্ঞানে অনার্স, চাকরি কোথায়
- কী আশায় পড়বো আইন?
পড়ে কী করতে পারেন
দুনিয়াজুড়ে এ পেশায় কাজের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। কমিউনিটি ফার্মাসিস্ট, হসপিটাল ফার্মাসিস্ট, ক্লিনিক্যাল ফার্মাসিস্ট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফার্মাসিস্ট, রিসার্স ফার্মাসিস্ট, রেগুলেটরি অ্যাফেয়ারস স্পেশালিস্ট, ফার্মাসিউটিক্যাল, সেলস রিপ্রেজেনটেটিভের মতো পদে একজন ফার্মাসিস্ট সরাসরি স্বাস্থ্যসেবায় যুক্ত থাকেন। ফার্মেসি প্রোগ্রামে পড়া শেষে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার সুযোগ রয়েছে। ভালো ফলাফল করে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হওয়ার সুযোগও রয়েছে। বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি ওষুধ কোম্পানিতে ওষুধের ফর্মুলেশন, উৎপাদন, মান উন্নয়ন, নিয়ন্ত্রণ, নিশ্চিতকরণ, স্থিতিশীলতা—বিভিন্ন ক্ষেত্রে ফার্মাসিস্টরা কাজ করেন। ফার্মেসিগুলোতে পণ্য ব্যবস্থাপনা, পণ্যের মানোন্নয়ন, মান নিয়ন্ত্রণ, প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিভাগে স্নাতক ফার্মাসিস্টদের চাহিদা রয়েছে।
সরকারি বিভিন্ন কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা, সশস্ত্র বাহিনী, সরকারি হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে ফার্মাসিস্ট নিয়োগ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সরকারের ড্রাগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে চাকরির সুযোগ রয়েছে। কিছু বেসরকারি হাসপাতাল এবং ক্লিনিকে ফার্মাসিস্ট, ক্লিনিক্যাল ফার্মাসিস্ট, ফার্মেসি ম্যানেজার বা তথ্য বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া শিক্ষকতা, গবেষণা বা দেশের বাইরে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। ফার্মেসির ব্যবসাগুলো তদারকি করার জন্য দেশের প্রতিটি জেলা শহরে রয়েছে ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক সংস্থা। সেখানে চাকরির সুযোগ রয়েছে। রোগ বিষয়ক গবেষণা সংস্থা বিসিএসআইআরে চাকরির সুযোগ রয়েছে।
১৯৭২ সালে দেশের বার্ষিক চাহিদার ৮০-৯০ শতাংশ ওষুধ আমদানি করা হতো। এখন বাংলাদেশের বার্ষিক চাহিদার ৯৮ শতাংশ ওষুধ দেশেই তৈরি হচ্ছে, সেই সঙ্গে এখন পৃথিবীর ১৬৬টি দেশে বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানির জন্য অনুমোদিত। এর মধ্যে ১৪৫টি দেশে ওষুধ রপ্তানির পাশাপাশি কিছু কাঁচামালও বর্তমানে দেশে উৎপাদন হচ্ছে। দেশের এ খাতের উন্নতির পেছনে ফার্মেসি বিভাগের গ্র্যাজুয়েটরা অবদান রাখছেন।
- আরও পড়ুন
- কেন পড়বেন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি
- গণিত কেন পড়বেন
- পরিবেশবিজ্ঞান পড়া কেনো যুগোপযোগী
- লোক প্রশাসন পড়ার সুবিধা-অসুবিধা
এএমপি/আরএমডি/জিকেএস