শিক্ষাব্যবস্থার কারণে গণিতে আগ্রহ পায় না শিক্ষার্থীরা

শিক্ষা ডেস্ক
শিক্ষা ডেস্ক শিক্ষা ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:১৭ এএম, ১০ জানুয়ারি ২০২৫
ফাইল ছবি

বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত নিয়ে পড়তে আসার আগে একজন শিক্ষার্থীর ভেতরে ভীতি কাজ করে। তারা ভাবে, গণিত বাস্তবজীবনে কী কাজে লাগবে? গণিত পড়ে আমার কী চাকরি হবে? অথচ বাস্তবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যেমন গণিতের ব্যবহার আছে, তেমনই বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায়ও আছে গণিতের ব্যবহার। তাই গণিতকে বলা হয় মাদার অব সায়েন্স। বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগের পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আসাবুল হক

জাগো নিউজ: শিক্ষার্থীরা কেন গণিত পড়বেন?
আসাবুল হক: স্কুল-কলেজে অনেক সময় যেভাবে গণিত পড়ানো হয়, সেভাবে হয়তো শিক্ষার্থীদের আমরা আকৃষ্ট করতে পারি না। এর মূল কারণ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। ফলে আমরা শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে পারি না। কিন্তু আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের গণিত পড়াচ্ছি এবং গবেষণা করছি, আমরা মনে করি, গণিত ছাড়া আমাদের এক মুহূর্তও চলা সম্ভব না। তাই বিজ্ঞানের প্রতি, নতুন কিছু তৈরির প্রতি যাদের আগ্রহ আছে, তারা গণিত পড়লে নিশ্চয়ই উপভোগ করবে।

জাগো নিউজ: নতুন কিছু তৈরির বিষয়টি আরেকটু বিস্তারিত বলবেন?
আসাবুল হক: উদাহরণসহ বলি। জীবনের প্রতিটা সেক্টরেই এখন প্রোগ্রামিং প্রয়োজন হয়। যেমন, বিকাশের মতো মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ থেকে রেলওয়ের টিকেট কাটার অ্যাপ। অন্যদিকে কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষার্থীরা ছবিকে ডেটায় রূপান্তর করে বিভিন্ন ইমেজ অ্যানালাইসিস করে থাকে। সবগুলো ক্ষেত্রেই গণিতের ব্যবহার আছে। গণিতের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে এ ধরণের নিত্যনতুন উদ্ভাবন সম্ভব।

জাগো নিউজ: গণিতের এ ব্যবহার কি শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুমে শিখছে?
আসাবুল হক: বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া কিন্তু আগের মতো নেই। এখন আর পড়াশোনা শুধু শ্রেণিকক্ষে আটকে থাকে না। একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পড়তেই তার শিক্ষাকে কাজে লাগানোর রাস্তা খুঁজতে থাকে। আমরা বিভাগ হিসেবেও এ বিষয়ে গুরুত্ব দিই। বর্তমানে আমাদের বিভাগে তিনটি ল্যাব আছে। শিক্ষার্থীরা তাদের গণিতের শিক্ষা হাতেকলমে ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে সেখানে। ক্লাসরুমে শেখা গণিতকে তারা ছবি ও গ্রাফে রূপান্তর করছে। একটা মানুষের ছবিকে অ্যানালাইসিস করে তথ্য বের করছে। আবার অনেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগেও শিখছে অনেক কিছু।

জাগো নিউজ: গণিতের শিক্ষার্থীদের চাকরির সুযোগ কেমন?
আসাবুল হক: একজন শিক্ষার্থী যখন বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলে পড়তে আসে এবং মাস্টার্স শেষ করে, তার ভালো একটা চাকরি পাওয়ার লক্ষ্য থাকে। পাশ করে বের হয়ে একজন শিক্ষার্থী কী করবেন, তা যদি আগে থেকে জানা থাকে, তাহলে সে এ বিভাগে পড়াশোনা করার বিষয়ে আরো উৎসাহী হবে। দেশে অনেকগুলো সেক্টরেই কাজের সুযোগ আছে। ব্যাংকিং সেক্টরে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকমের অ্যাপস্ ও সফটওয়্যার ব্যবহৃত হচ্ছে, এসবের মূলে রয়েছে গণিতের ব্যবহার বা প্রোগ্রামিং। আমদের শিক্ষার্থীরা এ ধরণের কাজে সফলতার পরিচয় দিচ্ছে। আমাদের দেশে প্রতিটা স্কুল-কলেজেই গণিত একটি আবশ্যক বিষয়, যারা শিক্ষকতায় যেতে চায়, তাদের জন্য রাস্তা খোলাই আছে। অন্যদিকে আবহাওয়া অফিস, কোস্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং জাতীয় প্রতিষ্ঠানে গণিতের শিক্ষার্থীরা যেতে পারে।

জাগো নিউজ: গণিত কোন কোন খাতে চাকরির ব্যবস্থা করতে পারে?
আসাবুল হক: গণিতের অ্যাপ্লিকেশনের একটা বড় জায়গা আবার প্রকৌশলবিদ্যা বা ইঞ্জিনিয়ারিং। অর্থাৎ, গণিতে পড়ে কাজের অভাব হবে না, যদি, শিক্ষার্থী একটু আগে থেকে পরিকল্পনা শুরু করে যে সে কী করতে চায়। আর সেইসঙ্গে পরীক্ষার ফলাফলটা একটু ভালো রাখে। দেশের চেয়ে বিদেশে সুযোগ বেশি পাওয়া যাবে যদি গবেষণার মনোভাব থাকে। ইতোমধ্যে আমি গণিতের যে ব্যবহারগুলোর কথা বললাম, এর সবগুলো মাধ্যমেই পেশাগত উন্নতি সম্ভব। এগুলো তো গেল শুধু দেশের ভেতরের কথা। বিদেশে আরো কাজের সুযোগ আছে। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান, প্রোগ্রামিং ফার্ম, নাসার মতো প্রতিষ্ঠানে গণিতের বিপুল ব্যবহার রয়েছে। অর্থাৎ, একজন শিক্ষার্থী গণিত নিয়ে পড়তে আসলে তাদের কাজের অভাব হবে না।

জাগো নিউজ: যেসব প্রযুক্তির কথা বললেন, আর কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে এসব প্রযুক্তি?
আসাবুল হক: আমাদের পুলিশ প্রশাসনে ছবি অ্যানালাইসিস গুরুত্বপূর্ণ। কোনো ব্যক্তিকে শনাক্ত করা, এমনকি চোর ধরার জন্যেও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায়। কোন ব্যক্তি যদি ছদ্মবেশ নেওয়ার জন্য তার চেহারায় কোন পরিবর্তন করে, বা চুল কেটে ফেলে, তাহলে কিন্তু সেই ব্যক্তিকে সহজে আর চেনা যাবে না। কিন্তু ছবি বিশ্লেষণে গণিতের এই ব্যবহারের মাধ্যমে ওই ব্যক্তি চুলসহ দেখতে কেমন হবে, সেটারও ছবি তৈরি করে দেখিয়ে দেবে। ম্যাট্রিক্সের ব্যবহারের মাধ্যমে এটি করা হয়। ম্যাট্রিক্স গণিতের একটি বেসিক কোর্স। আমাদের আরও যে কোর্সগুলো আছে, যেমন, ন্যানোটেকনোলজি, বায়োফিজিক্স, বায়োম্যাথমেটিক্সের ছাত্ররা হাতেকলমে অনেক কিছু শিখতে পারছে।

আরও পড়ুন

জাগো নিউজ: কয়েকটির কথা বলবেন?
আসাবুল হক: যেমন, হাসপাতালে যখন একজন ব্যক্তির ইসিজি করা হচ্ছে, তখন রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে ঢেউ খেলানো একধরনের কার্ভ। এই কার্ভটি যখন সরলরেখা হয়ে যায়, তখন ডাক্তার ঘোষণা দেন যে রোগী মারা গেছেন। এই মেডিকেল টেস্টটির ভিত্তি কিন্তু একটি সফটওয়্যার যা গণিতের সাহায্যেই তৈরি করা হয়েছে। আগে মানুষ গণিতের সঙ্গে চিকিৎসাবিজ্ঞানের এই সম্পর্কের কথা জানতো না। আমি দুটো উদাহরণ দিলাম, ম্যাথমেটিক্সের এ রকম বহুবিধ ব্যবহার আছে। এসব কারণেই আমি মনে করি, একজন শিক্ষার্থীর গণিত পড়া উচিত। আবার গণিত পড়লে সে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োকেমিস্ট্রি বা ফার্মেসিতেও ভালো আবদান রাখতে পারবেন।

জাগো নিউজ: গণিতে গবেষণার ক্ষেত্রটি কেমন?
আসাবুল হক: আমাদের দেশে গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অনেক অভাব আছে। ‍পৃথিবীর অনেক দেশে একজন শিক্ষার্থী গণিতের অ্যাপ্লিকেশনের দিকটি শেখার পরে ওইসব গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কাজ করে। তারা ভালো গবেষণা ও পাবলিকেশন করে জ্ঞানের এ শাখার বিস্তারে ভূমিকা রাখছে। আবার আমাদের দেশ থেকে যারা ভালো ফলাফল করে পাশ করছে, তাদের বেশির ভাগই দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। আমি প্রতি বছর দেখছি ১০-১৫ জন করে চলে যাচ্ছে বিদেশের রিসার্চ ল্যাবে কাজ করতে। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্য আমাদের দেশেও এ ধরণের প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন।

আরও পড়ুন:

এএমপি/আরএমডি/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।