নেকাব না খোলায় ছাত্রীকে পরীক্ষা দিতে না দেওয়া অধ্যক্ষ ওএসডি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৩৪ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

নেকাব না খোলায় ছাত্রীকে পরীক্ষা দিতে না দেওয়ার অভিযোগ ওঠা খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. কামাল হোসেন মজুমদারকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। তাকে কলেজ থেকে প্রত্যাহার করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) সংযুক্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপন থেকে এ জানা গেছে।

গত ১৩ ডিসেম্বর বিকেলে কলেজ কেন্দ্রে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) সমাজতত্ত্ব পরীক্ষার দিন উম্মে আনজুমান আরা নামে এক ছাত্রী নেকাব না খোলায় পরীক্ষা দিতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় মাটিরাঙা সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ও পরীক্ষার কেন্দ্রসচিব কামাল হোসেন মজুমদারকে দায়ী করেন ওই ছাত্রী।

ফেসবুকের এক পোস্টে উম্মে আনজুমান আরা বলেন, ‘শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে পরীক্ষা শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যে কলেজের শিক্ষকরা আমার নেকাব খুলে মুখ দেখানোর জন্য বলেন। একজন নারী শিক্ষক বা নারী শিক্ষার্থীর সামনে নেকাব খোলার ইচ্ছে পোষণ করে শিক্ষকদের অনুরোধ করি। কিন্তু শিক্ষকরা আমার অনুরোধে সায় দেয়নি। বরং আমাকে হেনস্তা করার চেষ্টা করছিল। এসময় হলের অন্য শিক্ষার্থীরা আমার পরিচয় নিশ্চিত করেন। তারপরও অধ্যক্ষ এসে আমাকে নেকাব খোলার জন্য বলেন। আমি রাজি না হওয়ায় আমার পরীক্ষার খাতা নিয়ে নেন এবং বহিষ্কার করা হবে হুমকি দেন অধ্যক্ষ। পুলিশ ডেকে আমাকে পরীক্ষার হল থেকে বের করে দেন। পরে আমি পুলিশের হেল্পলাইন ৯৯৯-এ ফোন করি। এরপর মাটিরাঙা থানা থেকে পুলিশ আসে।’

তিনি আরও লিখেন, ‘পুলিশ ৩টা ৫৫ মিনিটের দিকে আমার পরীক্ষা কেন্দ্রে আসে। তখনও ১ ঘণ্টার বেশি পরীক্ষার সময় ছিল। এ সময় অধ্যক্ষ পুলিশ নিয়ে তার কক্ষে চলে যান। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ১০ থেকে ২০ মিনিট আগে অধ্যক্ষ তার রুম থেকে বের হয়ে মহিলা পুলিশ দিয়ে আমার পরিচয় নিশ্চিত করেন। ততক্ষণে আমার পরীক্ষার সময় শেষ।’

উম্মে আনজুমান আরা আরও বলেন, ‘আমি কোনো অসদুপায় অবলম্বন করিনি, খারাপ ব্যবহারও করিনি। তারপরও আমার সঙ্গে অন্যায় হয়েছে। আমি পরীক্ষা দিতে পারিনি। আমি এর প্রতিকার চাই।’

পরদিন ১৪ ডিসেম্বর এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে পার্বত্য নারী সংহতির আহ্বায়ক শাহেনা আক্তার ও সদস্যসচিব তানজিলা সুলতানা রুমার সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিক্ষার্থীর প্রতি অমানবিক ও বৈষম্যমূলক আচরণের জন্য দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে পুনরায় পরীক্ষার দেওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করার পাশাপাশি সুবিচার করতে হবে।

ঘটনার পর অধ্যক্ষ কামাল হোসেন মজুমদার বলেন, রাষ্ট্রীয় নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষার্থী শনাক্তকরণের জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও সামাজিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি ভুল হয়েছে।

ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটানোর অঙ্গীকারও করেন তিনি। তবে এ ঘটনার জেরে বৃহস্পতিবার অধ্যক্ষকে ওএসডি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এএএইচ/এমআইএইচএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।