এবার ৪০ কোটি পাঠ্যবই ছাপছে এনসিটিবি, খরচ ১২০০ কোটি
এবারও বছরের প্রথম দিনে বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দিতে চায় সরকার। বর্তমানে সংশোধন ও পরিমার্জন করে বইয়ের পাণ্ডুলিপি প্রস্তুতের কাজ করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। শিগগির এসব পাণ্ডুলিপি ছাপাখানায় পাঠানো হবে। এরপর শুরু হবে বই ছাপার কর্মযজ্ঞ।
এনসিটিবি সূত্র জানায়, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে সারাদেশের প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, ইবতেদায়ি, মাধ্যমিক ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায় ৪০ কোটি ১৬ লাখ বই ছাপা হবে। এরমধ্যে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিকের বইয়ের সংখ্যা ১২ কোটি ৮ লাখ ৬৭ হাজার ৭৫২টি।
আর ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির অর্থাৎ, মাধ্যমিক পর্যায়ের বইয়ের সংখ্যা ২৮ কোটি ৬ লাখ ২২ হাজার ৩৩৭টি। তাছাড়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য সাড়ে ৮ হাজারের বেশি ব্রেইল বই ছাপা হচ্ছে। অন্যদিকে শিক্ষকদের জন্য প্রায় ৪১ লাখ ‘শিক্ষক সহায়িকা’ দেওয়া হবে। মুদ্রণকারীদের কাছে কয়েকটি লটে এসব বই ছাপাতে দেওয়া হবে।
মুদ্রণকারীদের কাছে দুই শতাধিক লটে এসব বই ছাপাতে দেওয়া হবে। বই ছাপার কাজে সরকারের খরচ হবে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
এবার বই বেড়েছে সাড়ে ৯ কোটি
২০২৪ শিক্ষাবর্ষে সারা দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭ কপি পাঠ্যবই ছাপা হয়েছিল। এবার ছাপা হচ্ছে ৪০ কোটি ১৬ লাখের বেশি। সেই হিসাবে এবার প্রায় সাড়ে ৯ কোটি বই বেশি ছাপা হচ্ছে।
এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের চেয়ে এবার যে শিক্ষার্থী বেড়েছে, তা নয়। নতুন শিক্ষাক্রমের চেয়ে পুরোনো শিক্ষাক্রমে বই বেশি। অন্তর্বর্তী সরকার যেহেতু আগের অর্থাৎ, ২০১২ সালে প্রণীত (সৃজনশীল) শিক্ষাক্রমে ফিরে গেছে, সেজন্য বইয়ের সংখ্যা বেড়েছে।
তাদের দেওয়া তথ্যমতে, নতুন যে শিক্ষাক্রম ২০২৩ সালে চালু হয়েছিল, সেখানে ষষ্ঠ শ্রেণিতে সব মিলিয়ে বই ছিল ১৫টি। আর পুরোনো অর্থাৎ, ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ শ্রেণিতে বইয়ের সংখ্যা ১৯টি। আবার নতুন শিক্ষাক্রমে নবম ও দশম শ্রেণিতে বিভাগ বিভাজন ছিল না। সবার জন্য একই বিষয় ছিল। আর পুরোনো শিক্ষাক্রমে বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের জন্য আলাদা করে বই রয়েছে। সবমিলিয়ে এবার সাড়ে ৯ কোটি বই বেশি ছাপতে হচ্ছে।
কাজে বিলম্ব, বছরের প্রথম দিনে বই বিতরণ নিয়ে শঙ্কা
চলতি বছরের মাত্র দুই মাস বাকি। এখনো পাঠ্যবই পরিমার্জনের কাজই শেষ করে ছাপার জন্য প্রস্তুত করতে পারেনি এনসিটিবি। ফলে বছরের শুরুতে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব নতুন বই তুলে দেওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাপাখানার একজন মালিক বলেন, কাগজ মিলের সিন্ডিকেট বন্ধ, ইন্সপেকশন এজেন্ট নিয়োগে সতর্কতা, গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে মনিটর, সেনাবাহিনীর হাতে বইয়ের কিছু অংশ ছাপার দায়িত্ব দেওয়াসহ কয়েকটি উদ্যোগের কারণে এবার ভালো মানের কাগজেই পাঠ্যবই যাবে বলে আশা করা যায়।
বছরের শুরুতেই নতুন বই সব শিক্ষার্থী পাবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, হাতে একেবারে সময় কম। স্বল্প সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে এনসিটিবির উচিত দ্রুত ছাপাখানাগুলোকে কাজ দেওয়া। সেটি তো করা হচ্ছে না। শেষ সময়ে একসঙ্গে সব লটের কার্যাদেশ দেওয়া হলে ছাপাখানার ওপর চাপ বাড়বে। ছাপাখানার মালিকদের এত দ্রুত বই ছাপিয়ে দেওয়ার সক্ষমতা নেই।
এনসিটিবি বলছে, সব পাঠ্যবইয়ের পরিমার্জন শেষ না হলেও এরই মধ্যে প্রাথমিকের প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির সব বইয়ের পাণ্ডুলিপি চূড়ান্ত করে ছাপাখানায় পাঠানো হয়েছে। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বইয়ের পাণ্ডুলিপির কাজ শেষে এক সপ্তাহের মধ্যে ছাপাখানায় যাবে। মাধ্যমিকে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির বইয়ের কাজ চলছে পুরোদমে। কবে নাগাদ এসব শ্রেণির বইয়ের পরিমার্জন শেষ হবে, তা এখনই জানাতে পারেনি এনসিটিবি।
জানতে চাইলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, আমরা বই পরিমার্জন ও সংশোধন করছি। তাছাড়া এবার এক দফা টেন্ডার বাতিল করতে হয়েছে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে এটা হয়েছে। তারপরও আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা রয়েছে। আশা করি, সব শিক্ষার্থী বছরের শুরুর দিনে নতুন বই হাতে পাবে।
২০১০ সাল থেকে সরকার বছরের শুরুতে সারাদেশের সব শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে পাঠ্যবই দিয়ে আসছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রতি বছর এ কাজ করে থাকে।
এবার অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিলেও কাজের প্রক্রিয়া একই থাকছে। শুধুমাত্র রাজনৈতিক সরকারের আমলে বই ছাপার কাজের টেন্ডার একচেটিয়াভাবে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পেলেও এবার তাতে কিছুটা স্বচ্ছতা আনা হচ্ছে। বই ছাপার কাজে সংশ্লিষ্টতা থাকছে সেনাবাহিনীরও।
এএএইচ/এমআরএম/জেআইএম