শিক্ষাক্রমের বিরুদ্ধে আন্দোলন

মামলা প্রত্যাহার ও ক্ষতিপূরণ চান ভুক্তভোগী শিক্ষক-অভিভাবকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:২৩ এএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

‘জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১’ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করায় আওয়ামী লীগ সরকারের রোষানলে পড়েন কয়েকজন অভিভাবক ও শিক্ষক। তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দিয়েছিল জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। গ্রেফতার করে দীর্ঘদিন কারাবন্দি রাখা হয়। অনেকে চাকরিও হারিয়েছেন। আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে দুঃসহ জীবনযাপন করতে হয়েছে তাদের।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে। দায়িত্ব নিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকার। এ সরকার আসার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিপত্র জারি করে জানিয়েছে, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নযোগ্য নয়। একই সঙ্গে এ শিক্ষাক্রম বাতিল করে আগের সৃজনশীল পদ্ধতিতে ফেরার ঘোষণাও দিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

অথচ আওয়ামী লীগ সরকারের প্রণীত শিক্ষাক্রম বাতিল চেয়ে আন্দোলন করা অভিভাবক ও শিক্ষকরা এখনো হয়রানিমূলক মামলা কাঁধে বয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে আর্থিক ক্ষতিপূরণ চেয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি তুলে ধরেন হয়রানির শিকার অভিভাবক ও শিক্ষকরা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবীর। তিনি বলেন, বিগত সরকার ২০২৩ সালে গণবিরোধী শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু করে। শিক্ষাক্রমটি চালু করার পর এর সঙ্গে জড়িত চক্র শত শত কোটি টাকা দুর্নীতি করে পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকেই ধ্বংসের মুখে ফেলে দেয়।

জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, আমরা দেখতে পেলাম ফিনল্যান্ডের কারিকুলামের আদলে আমাদের দেশের শিক্ষাক্রম করা হলো। যেহেতু বাংলাদেশ একটি অনুন্নত রাষ্ট্র এবং এ দেশের মানুষের জীবনমান ও সংস্কৃতির সঙ্গে এমন শিক্ষাব্যবস্থা যায় না, তাই বাংলাদেশের মানুষ এ বিতর্কিত শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার হলো। আমরা সরকারকে এ কারিকুলাম বাতিলের আহ্বান জানালাম এবং আমাদের ৮ দফা দাবিতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শিক্ষাক্রম চালুর প্রস্তাবনা দিলাম।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দাবিগুলো সংসদেও উত্থাপিত হলো। সারাদেশের মানুষ এ শিক্ষাক্রমের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করলো। কিন্তু আমাদের দাবিকে অযৌক্তিক বলে উড়িয়ে দিয়ে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল আমাদের কোচিং এবং গাইড ব্যবসায়ীর ট্যাগ লাগিয়ে দেন। একপর্যায়ে আমাদের নামে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। তিন মাসেরও বেশি সময় আমাদের কারাবাস করতে হয় এবং পরে আমরা জামিনে মুক্ত হই।

শিক্ষাক্রম বাতিলের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া এ শিক্ষক বলেন, আমাদের ওপর অমানবিক জুলুম ও নির্যাতন করা হয়েছে। দীর্ঘ সময় জেলে বন্দি রাখায় আমরা আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হই। অবিলম্বে আমাদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আমাদের প্রত্যেককে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

এদিকে, সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারে তারা ১৬ দফা দাবি তুলে ধরেন। তার মধ্যে শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি, কোচিং বাণিজ্য বন্ধ, ভারত থেকে নয় বাংলাদেশে বই ছাপানো, জানুয়ারিতে সব শ্রেণির বই বিতরণ, পাঠ্যবইয়ে ইতিহাস বিকৃতি না করা, শিক্ষার অংশীজনদের নিয়ে কমিশন গঠন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ এবং শিক্ষক নিয়োগে দলীয়করণ ও স্বজনপ্রীতি বন্ধ করা অন্যতম।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কাজী সাইফুল হক পনির, তাপসী খান, আল-আমিন হোসেন, খাদিজা বেগম, হুসনে আরা বেগম ও মাসুদ রানা প্রমুখ।

এএএইচ/এমকেআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।