পিএসসি-মন্ত্রণালয়ের ঠেলাঠেলিতে আটকা ২২৫ প্রধান শিক্ষকের গেজেট
উচ্চ আদালতের রায়ের পরও গেজেটেড কর্মকর্তা হতে পারেননি বিসিএস নন-ক্যাডার পাওয়া বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২২৫ প্রধান শিক্ষক। সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঠেলাঠেলির কারণে গত ছয় বছরেরও বেশি সময় ধরে তারা গেজেটভুক্ত হতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কিন্তু এখনো তারা দাবি আদায়ে ব্যর্থ।
জানা গেছে, ৩৪তম বিসিএস থেকে ক্যাডার পদের স্বল্পতার কারণে ২০১৬ সালে নন-ক্যাডার পদে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করে পিএসসি। এ ক্ষেত্রে নিয়োগবিধি ২০১০ (সংশোধিত-২০১৪) অনুযায়ী, প্রথম অথবা দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড পদে পদায়নের সুপারিশ করার কথা ছিল। কিন্তু নিয়ম ভেঙে সরাসরি তৃতীয় শ্রেণি ও নন-গেজেটেড পদে প্রধান শিক্ষকদের পদায়নের সুপারিশ করা হয়; যা পিএসসির ইতিহাসে একটি নেতিবাচক দৃষ্টান্ত। শুধু তাই নয়, মেধাতালিকায় পিছিয়ে থাকাদেরও পরে দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, ৩৪তম বিসিএস থেকে সুপারিশপ্রাপ্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (দশম গ্রেডের দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড পদ) এবং বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কেমিস্ট ও পরিদর্শক (দশম গ্রেডের দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড পদ) হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তরা প্রধান শিক্ষকদের পরের মেধাতালিকায় ছিলেন। নিয়োগ পরে হলেও তারা ৯ বছরের মধ্যে নবম গ্রেডের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হবেন। বিপরীতে নামে দ্বিতীয় শ্রেণি হলেও প্রধান শিক্ষকরা ১২তম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন। পরে তাদের সরাসরি পদোন্নতির আর কোনো সুযোগও নেই।
এদিকে, নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চাপে তাড়াহুড়ো করে ২০১৭ সালের অক্টোবরের শেষে চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর প্রধান শিক্ষকরা এ নিয়ে পিএসসির চেয়াম্যান, তৎকালীন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী এবং সচিবের কাছে বারবার আবেদন করেও সুরাহা পাননি। পরে ২০১৮ সালে হাইকোর্টে ২২৫ জন প্রধান শিক্ষক রিট করেন।
হাইকোর্ট ওই বছর ডিসেম্বরে রিটকারীদের মন্ত্রণালয়ের অধীনে দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড পদমর্যাদার সহকারী উপজেলা শিক্ষা কমর্কর্তা (বর্তমানে সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা) বা সমমানের অন্য পদে পদায়নের নির্দেশ দেন। রায়ের বিপরীতে সরকার ও পিএসসি উচ্চ আদালতে আপিল করলে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপরও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং পিএসসি বিভিন্ন অজুহাতে রায় বাস্তবায়নে গড়িমসি করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রিটকারীদের। অথচ সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বা সমমর্যাদার পদে ২২৫ জনের বিপরীতে এক হাজার পদ শূন্য রয়েছে। ফলে রায় বাস্তবায়নে পিএসসি বা মন্ত্রণালয়ের কারও সমস্যা থাকার কথা নয়।
- আরও পড়ুন
- ক্যাডার পদে নিয়োগ পেলেন বাদ পড়া ২৫৯ জন
- নন-ক্যাডার থেকে নিয়োগের দাবিতে পিএসসি ভবনে বিক্ষোভ
- চাকরিতে ৭ শতাংশ কোটা পদ্ধতি কার্যকর শুরু করলো পিএসসি
৩৪তম বিসিএস নন-ক্যাডার প্রধান শিক্ষক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও নওগাঁ সদরের খাস নওগাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেজবাউল হক বলেন, এ বৈষম্য পিএসসি, মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর স্বীকার করলেও সমাধানে কেউ এগিয়ে আসছেন না। এক প্রতিষ্ঠান অন্য প্রতিষ্ঠানের ওপর দায় চাপিয়ে দায়িত্ব এড়িয়ে যায়। সর্বশেষ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ বৈষম্য নিরসনে একটি নির্দেশনা দেন। তবুও তা দীর্ঘদিন আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে আছে। বিসিএসে উত্তীর্ণ হওয়ার পরও আমরা নন-ক্যাডার ২০১৪ নিয়োগবিধি অনুযায়ী শুধু সাংবিধানিক প্রাপ্যতা দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড পদ চেয়েছি, এর বেশি কিছু নয়। এটা সুস্পষ্ট, আমরা যারা কর্মরত, তার চেয়ে প্রায় চারগুণ দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড পদ শূন্য রয়েছে।
জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, নন-ক্যাডার থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা হাইকোর্টে যে আবেদন করেছিলেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে যে আদেশ দেওয়া হয়েছে, সেখানে পিএসসির চেয়ারম্যানকে তিন মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। পিএসসি অর্থ বিভাগের সঙ্গে কথা বলে আমাদের জানাতে পারে। আমরাও চাই, ২২৫ প্রধান শিক্ষক যেন দ্বিতীয় শ্রেণি এবং দশম গ্রেড পান।
জানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি দায়িত্বে আসার আগের ঘটনা এটি। পরে এটা নিয়ে কী কী ঘটেছে, তা এখন হঠাৎ বলতে পারবো না। যদি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এটাকে ইতিবাচকভাবে দেখে, আমাদেরও ইতিবাচকভাবে দেখতে আপত্তি নেই। বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখবো, কী করা যায়।’
এএএইচ/বিএ