নতুন শিক্ষাক্রম
ষাণ্মাসিক মূল্যায়নে বসছে ষষ্ঠ-নবমের অর্ধকোটি শিক্ষার্থী
নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন শুরু হচ্ছে বুধবার (৩ জুলাই)। এদিন সকাল ১০টা থেকে এ মূল্যায়ন কার্যক্রম শুরু হবে, বিরতিসহ চলবে পাঁচ ঘণ্টা। প্রথম দিনে ষষ্ঠ শ্রেণিতে বাংলা, সপ্তমে ধর্ম, অষ্টমে জীবন ও জীবিকা এবং নবম শ্রেণিতে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের মূল্যায়ন করা হবে।
শিক্ষা প্রশাসন সূত্র জানায়, আমূল বদলে যাওয়া শিক্ষাক্রমে এবারই প্রথম সারাদেশে একসঙ্গে একই প্রশ্নপত্রে একযোগে মূল্যায়নে বসছে শিক্ষার্থীরা। এতে অংশ নিচ্ছে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ২০ হাজার ৬৩৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৫০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীদের যে প্রশ্নপত্রের ওপর মূল্যায়ন নেওয়া হবে, তা নৈপুণ্য অ্যাপ থেকে পরীক্ষা শুরুর তিন ঘণ্টা আগে ডাউনলোড করা যাবে বলে জানিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
- আরও পড়ুন
‘পরীক্ষা’ ফিরলেও থাকছে না নম্বর, প্রশ্নপত্র হবে নতুন ধাঁচে
নতুন শিক্ষাক্রমে মাদরাসার বই রূপান্তরে ‘জুজুর ভয়’
এনসিটিবির চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্বে) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘শিক্ষকদের করণীয় কী, শিক্ষার্থীরা সঙ্গে কোন উপকরণ নিয়ে আসবে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কী দেবে, সব নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে। আশা করি, শিক্ষার্থীরা উৎসবমুখর পরিবেশে মূল্যায়নে অংশ নেবে।’
কোন পদ্ধতিতে মূল্যায়ন?
দুই বছর ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত করেছে এনসিটিবি। সোমবার (১ জুলাই) জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটি এ মূল্যায়ন পদ্ধতির চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। তবে দেরিতে অনুমোদন হওয়ায় নতুন এ পদ্ধতি ষাণ্মাসিক মূল্যায়নে পুরোপুরি প্রয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে এনসিটিবি সূত্র।
এনসিটিবির প্রস্তুত করে খসড়া মূল্যায়ন পদ্ধতির মাধ্যমে মূলত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে নির্দেশনা অনুযায়ী মূল্যায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে শিক্ষকদের নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ও মাদরাস শিক্ষা অধিদপ্তর।
এ প্রসঙ্গে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, ‘চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া কাঠামোর সঙ্গে আমাদের খসড়া প্রস্তুত করা কাঠামোতে খুব বেশি তফাৎ নেই। এটা যেহেতু প্রতিষ্ঠানভিত্তিক মূল্যায়ন, সেক্ষেত্রে সমস্যা হবে না।’
নৈপুণ্য অ্যাপ ব্যবহারে ভোগান্তিতে শিক্ষকরা
ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন শুরুর আগে শিক্ষার্থীদের শিখনকালীন অভিজ্ঞতার পারদর্শিতার নির্দেশকগুলো নৈপুণ্য অ্যাপে শিক্ষকদের ইনপুট দিতে হবে। তবে শিক্ষকরা নৈপুণ্য অ্যাপ ব্যবহারে বিড়ম্বনায় পড়ার অভিযোগ করেছেন।
অ্যাপে প্রবেশ করতে এবং তথ্য ইনপুট দিতে ভোগান্তিতে পড়ার অভিজ্ঞতার কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও শেয়ার করছেন শিক্ষকরা। বিশেষ করে মফস্বল এলাকার শিক্ষকরা বেশি বিপাকে পড়েছেন। ইন্টারনেটের ধীরগতিসহ নানা কারণে তাদের অ্যাপ ব্যবহার করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় দিতে হচ্ছে।
রতন কুমার নামে টাঙ্গাইলের একজন শিক্ষক জাগো নিউজকে বলেন, নৈপুণ্য অ্যাপ কাজই করছে না। তথ্য ইনপুট দেওয়ার কাজ শেষ করতে রাত-দিন শিক্ষকদের অ্যাপে প্রবেশের যুদ্ধ করতে হচ্ছে। এমন হলে শিক্ষকরা অল্প দিনে পাগল হয়ে যাবেন।
ষাণ্মাসিক মূল্যায়নের প্রশ্নপত্র ফেসবুকে!
পরীক্ষার তিন ঘণ্টা আগে ষাণ্মামিক মূল্যায়নের প্রশ্নপত্র ডাউনলোড করা যাবে বলে এনসিটিবি বিজ্ঞপ্তি দিলেও আগের দিনই অনেকে প্রশ্ন পেয়ে গেছেন। অনেক শিক্ষক তা না বুঝে ফেসবুকেও শেয়ার করছেন। অনেকে অ্যাপ থেকে প্রশ্নপত্র না নিয়ে অন্যদের কাছ থেকে পাওয়া প্রশ্নপত্র আগের দিনই প্রিন্ট করে রাখছেন বলে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেছে।
- আরও পড়ুন
নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন পদ্ধতির চূড়ান্ত অনুমোদন
নতুন কারিকুলামে মূল্যায়ন হবে শিক্ষার্থীর আচরণও
‘বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী ফোরাম’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে অনেক শিক্ষক ষষ্ঠ, সপ্তম ও নবম শ্রেণির প্রশ্নপত্রের ছবি শেয়ার করেছেন। এ প্রশ্ন ফেসবুক, ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রশ্নপত্রে শিক্ষার্থীকে কী ধরনের কাজ দেওয়া হবে, তা উল্লেখ রয়েছে। অনেক শিক্ষক এটি আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ বলে উল্লেখ করলেও তাতে কর্ণপাত করছেন না অনেকে।
প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, ‘এমনটা হওয়ার কথা নয়। যদিও মূল্যায়নের প্রশ্নপত্র প্রচলিত নিয়মের পরীক্ষার প্রশ্নের মতো নয়। কেউ হাতে পেলেই সে উত্তর করতে পারবে এমন না। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে দক্ষতা অর্জন করতেই হবে। তারপরও এটা ছড়িয়ে পড়লে আমরা খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবো।’
শিক্ষার্থী যা সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে
সাধারণ উপকরণের মধ্যে কলম, পেনসিল, ইরেজার, শার্পনার ও স্কেল নিয়ে যেতে হবে। ১৬ পৃষ্ঠার খাতা, শিক্ষার্থীর মূল্যায়ন নির্দেশিকা, সাইনপেন, মার্কার, স্ট্যাপলার, এ-ফোর সাইজের কাগজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সরবরাহ করা হবে। বাংলা পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রত্যেকের নিজ নিজ পাঠ্যবই নিয়ে যেতে হবে।
ধর্ম বিষয়ের মূল্যায়নের জন্য সপ্তম শ্রেণির জন্য পাঠ্যবই, অষ্টম ও নবমের জন্য ক্যালেন্ডারের খালি কাগজ শিক্ষার্থীকে নিয়ে যেতে হবে। আর প্রতিষ্ঠান থেকে চার-পাঁচটি রং পেনসিল বক্স দেবে। ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞানের জন্যও শুধুমাত্র পাঠ্যপুস্তক সঙ্গে নিতে হবে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১ অনুযায়ী, ২০২৩ সালে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। চলতি বছর দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে। ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে, ২০২৬ সালে একাদশ এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে এ প্রক্রিয়া চালু হবে।
এএএইচ/কেএসআর