এইচএসসি
পরীক্ষায় বসার আগেই কেন্দ্রে প্রবেশের আরেক ‘পরীক্ষা’
ঢাকার রাস্তায় চিরচেনা যানজট। সঙ্গে বাড়তি ভোগান্তি বয়ে এনেছে সকালের মুষলধারে বৃষ্টি। সেটাও ঠিক সকাল ৯টা থেকে প্রায় পৌনে ১০টা পর্যন্ত। যানজট ও বৃষ্টিতে কেন্দ্রে পৌঁছানোটা যেন এবারের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষায় বসার আগে এক দফা ‘পরীক্ষা’ হয়ে ওঠে।
চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার প্রথম দিনে রাজধানীর বেশ কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দুর্ভোগের চিত্র দেখা গেছে। বিশেষ করে একেবারে ‘পিক আওরে (মূল সময়)’ বৃষ্টির কারণে কয়েকগুণ বেড়ে যায় এ ভোগান্তি।
রাজধানীর তেজগাঁও কলেজ, দনিয়া কলেজ, গুলশান মডেল কলেজ, রামপুরার একরামুন্নেছা স্কুল অ্যান্ড কলেজের কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টি ও যানজটের ভোগান্তি পেরিয়ে যারা যথাসময়ে কেন্দ্রে পৌঁছাতে পেরেছেন, তারাও হাঁপিয়ে উঠেছেন। অনেকে বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে কেন্দ্রে ঢুকছিলেন। পরনে ভেজা কাপড় নিয়ে তিন ঘণ্টা পরীক্ষা দিতে হবে তাদের।
রামপুরা একরামুন্নেছা স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষার আসন পড়েছে ফাহিমা খাতুনের। বাবা আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে মোটরসাইকেলে আসেন ফাহিমা। বাবা-মেয়ে দুজনই পুরোপুরি ভিজে গেছেন। প্লাস্টিকের ছোট ব্যাগে শুধুমাত্র প্রবেশপত্রটা বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা করেছেন।
মেয়েকে কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখছিলেন আশরাফুল ইসলাম। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘আমরা মহাখালী থেকে এসেছি। ভাবলাম রাস্তায় যানজট থাকবে, মোটরসাইকেলে মেয়েকে কেন্দ্রে নিয়ে যাই। পুলিশ প্লাজার সামনে বৃষ্টিতে আটকা পড়ি। সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম। দেখি প্রায় সাড়ে ৯টা বেজে যাচ্ছে। দ্রুত বৃষ্টিতে ভিজে এক টানে কেন্দ্রে এসেছি।’
তিনি বলেন, ‘মেয়েটা পুরোপুরি ভিজে গেছে। ভেজা কাপড়ে পরীক্ষা দেবে। শরীর খারাপ হলে সামনের পরীক্ষাগুলো কীভাবে দেবে সেটাই ভাবছি এখন।’
আরও পড়ুন
- ‘পরীক্ষা দিতে না পারলে আমার মায়ের স্বপ্ন নষ্ট হয়ে যাবে’
- বৃষ্টিতে কেন্দ্রে যেতে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ভোগান্তি
আগারগাঁও থেকে একই কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে আসা আকিব বিন জাভেদের মা সানজিদা পারভীন জাগো নিউজকে বলেন, ‘এমন সময়ে বৃষ্টিটা শুরু হয়েছে যে, সব ছেলে-মেয়ে ভিজে চুপসে গেছে। কেন্দ্রে তো কোনোরকমে পৌঁছেছি, এখন পরীক্ষা দিয়ে অসুখ হয়ে যায় কি না, তা নিয়ে চিন্তায় আছি।’
বৃষ্টিতে রাস্তায় আটকা পড়ে অনেক পরীক্ষার্থীকে কাঁদতেও দেখা গেছে। খিলগাঁও মডেল কলেজে পরীক্ষাকেন্দ্র আসিফ হাসানের। সকালে সাইকেলে করে পরীক্ষা দিতে বের হন। ৯টার দিকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে আটকা পড়েন রামপুরা বাজার এলাকায়। সেখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর রাস্তার পাশে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে সাইকেলে তালা লাগিয়ে বাসে উঠে রওনা হন আসিফ।
যাওয়ার আগে কান্নাজড়িত কণ্ঠে আসিফ জাগো নিউজকে বলেন, ‘সময়মতো কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারবো কি না জানি না। যদি পরীক্ষা দিতে না পারি আমার মায়ের স্বপ্নটা নষ্ট হয়ে যাবে।’
পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশের নির্দেশনা থাকলেও বৃষ্টির কারণে কিছুটা ছাড় দিয়েছেন সব কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। গুলশান মডেল কলেজ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুস্তফা জামান মিয়া বলেন, নির্দেশনা ছিল ৩০ মিনিট আগেই কেন্দ্রে প্রবেশ করার। কিন্তু আজ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া। অনেকে বৃষ্টি ও যানজটের কারণে পরীক্ষার কেন্দ্রে আসতে দেরি করেছে। এটা যৌক্তিক কারণ হওয়ায় আমরা সুযোগ দিয়েছি। যারা ১০টার পর কেন্দ্রে এসেছে, তাদের দেরি হওয়ার কারণ ও সময় রেজিস্ট্রারে লিখে রেখেছি। আজই বোর্ডের পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
চলতি বছর ৯টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ড, কারিগরি বোর্ড ও মাদরাসা বোর্ডের এইচএসসি, আলিম, এইচএসসি (বিএম/বিএমটি), এইচএসসি (ভোকেশনাল), ডিপ্লোমা ইন কমার্স পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন। এরমধ্যে ছাত্র ৭ লাখ ৫০ হাজার ২৮১ এবং ছাত্রী ৭ লাখ ৫০৯ জন। ২০২৩ সালের তুলনায় এবার পরীক্ষার্থী বেড়েছে ৯১ লাখ ৪৪৮ জন।
তবে বন্যা পরিস্থিতির কারণে সিলেট অঞ্চলের চারটি জেলার এইচএসসি, আলিম, এইচএসসি (বিএম/বিএমটি), এইচএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষা ৮ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। ৯ জুলাই থেকে এসব জেলায় পূর্বঘোষিত সময়সূচি মেনে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। স্থগিত পরীক্ষাগুলোর সময়সূচি পরবর্তীতে প্রকাশ করবে স্ব স্ব বোর্ড।
এএএইচ/কেএসআর/এমএস